আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

২৮- কসম-শপথ করার বিধান

হাদীস নং: ৪১৩০
৩. যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে এর বিপরীত বিষয়কে তার চেয়ে উত্তম মনে করে তবে তার জন্য উত্তমটিই করা এবং কসমের কাফফারা দেওয়া মুস্তাহাব
৪১৩০। উবাইদুল্লাহ ইবনে মু’আয (রাহঃ) ......... আদী ইবনে হাতিম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কসম করে, এরপর তার বিপরীতকে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন উত্তমটিই করে, এবং কসম পরিত্যাগ (ভঙ্গ) করে।
باب نَدْبِ مَنْ حَلَفَ يَمِينًا فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا أَنْ يَأْتِيَ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَيُكَفِّرَ عَنْ يَمِينِهِ
وَحَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ، عَنْ تَمِيمِ بْنِ طَرَفَةَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَلْيَتْرُكْ يَمِينَهُ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারাও তাকওয়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ইসলামে কসম রক্ষার বিশেষ তাকীদ করা হয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ

'তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কর।

শপথ বা কসম যেহেতু করা হয় আল্লাহর নামে, তাই আল্লাহর নামের মর্যাদা রক্ষার্থে কসম রক্ষা করাও জরুরি। অবশ্য এটা সে ক্ষেত্রে, যখন কসম করা হয় জায়েয কাজ সম্পর্কে এবং তার বিপরীত কাজটি তার চেয়ে উত্তম না হয়। পক্ষান্তরে নাজায়েয কাজের কসম করলে তখন সে কসম রক্ষা না করে ভেঙে ফেলাই জরুরি। এ হাদীছে বলা হয়েছে- কোনও বিষয়ে কসম করার পর যদি দেখা যায় যে কাজ করার কসম করেছে সেটি তাকওয়ার পরিপন্থী ও নাজায়েয কাজ এবং তার বিপরীত কাজই তাকওয়ার অনুকূল, তবে তার কর্তব্য কসম ভেঙে ফেলা এবং তাকওয়ার অনুকূল কাজটিই করা। কেননা তাকওয়ার পরিপন্থী বা নাজায়েয কাজ করা পাপ ও আল্লাহর অবাধ্যতা। কসম রক্ষার চেয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা পরিহার করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। তাই এরূপ ক্ষেত্রে অবাধ্যতা থেকে বাঁচার জন্য কসম ভাঙাই জরুরি। যেমন কেউ কসম করল সে তার ভাই বা বোনের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। অথচ ভাইবোনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা ফরয এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। তো এ ক্ষেত্রে কসমের বিপরীত কাজটি অর্থাৎ ভাইবোনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা তাকওয়ার অনুকূল। সুতরাং তার কর্তব্য কসম ভেঙে ফেলা ও ভাইবোনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা।

যদি এমন কোনও কাজের কসম করে, যে কাজটি করা জায়েয বটে কিন্তু তার বিপরীত কাজ উত্তম ও মুস্তাহাব, সে ক্ষেত্রেও কসম ভেঙে মুস্তাহাব কাজটি করাই শ্রেয়। যেমন এক হাদীছে বর্ণিত আছে-

من خلف على يمين فرأى غيرها خيرا منها قليات الذي هُوَ خَيْرٌ وَلي عَنْ يَمِينِهِ

যে ব্যক্তি কোনও কাজের কসম করে, তারপর তার বিপরীত কাজটি উত্তম দেখতে
পায়, তবে যে কাজটি উত্তম সেটিই যেন করে এবং তার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দেয়। কসম ভাঙার কাফফারা হল দশজন মিসকীনকে দু'বেলা খাবার খাওয়ানো। খাবার খাওয়ানোর সংগতি না থাকলে একাধারে তিনটি রোযা রাখা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সকল কাজকর্মে অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি জাগরুক রাখা চাই।

খ. কসম রক্ষা করা বা ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রেও তাকওয়াকেই মানদণ্ড বানানো উচিত।

গ. কসম রক্ষার খাতিরে নাজায়েয বা তুলনামূলক অনুত্তম কাজটিই করতে হবে এ ধারণা ঠিক নয়, যেহেতু তা করা তাকওয়ার পরিপন্থী। সে ক্ষেত্রে কসম ভেঙে কাফ্ফারা দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৪১৩০ | মুসলিম বাংলা