কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

كتاب السنن للإمام أبي داود

১৫. কর-খাজনা, প্রশাসনিক দায়িত্ব ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংক্রান্ত - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন...

হাদীস নং:২৯৯৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩০০৪
১৬১. বনু নযীরের ঘটনা সম্পর্কে।
২৯৯৪. মুহাম্মাদ ইবনে দাউদ ইবনে সুফিয়ান (রাহঃ) ....... আব্দুর রহমান ইবনে কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) নবী (ﷺ)-এর জনৈক সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশ কাফিররা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার মূর্তি-পূজক সাথীদের, যারা আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোক, এ মর্মে পত্র লেখে, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বদর যুদ্ধের আগে মদীনায় অবস্থান করছিলেনঃ তোমরা আমাদের সাথী (মুহাম্মাদ) কে জায়গা দিয়েছ। এ জন্য আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, হয়তো তাঁর সাথে যুদ্ধ কর, নয়তো তাঁকে বের করে দাও। অন্যথায় আমরা সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে তোমাদের যোদ্ধাদের হত্যা করব এবং তোমাদের স্ত্রীদের আমাদের দখলে আনব।

আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার মূর্তিপূজারী সাথীরা এ খবর পাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এ খবর নবী (ﷺ)-এর কাছে পৌছবার পর তিনি তাদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং বলেনঃ তোমরা কুরাইশদের নিকট হতে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী চিঠি পেয়েছ, কিন্তু তা তোমাদের জন্য এত মারাত্মক নয়, যত না ক্ষতি তোমরা নিজেরা নিজেদের করবে। কেননা, তোমরা তো তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সংকল্প করছ।

তারা যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এরূপ কথা শুনলো, তখন তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। এ খবর কুরাইশ কাফিরদের কাছে পৌছলে তারা বদর যুদ্ধের পর ইয়াহুদীদের নিকট লিখলোঃ তোমরা ঘরবাড়ী ও দুর্গের অধিকারী। কাজেই তোমাদের উচিত আমাদের সাথী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সাথে যুদ্ধ করা। অন্যথায় আমরা তোমাদের সাথে এরূপ করব, সেরূপ করব। আর আমাদের ও তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না।[১]

যখন নবী (ﷺ) সম্পর্কে তারা এরূপ চিঠি পেল, তখন বনু নযীরের ইয়াহুদীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো এবং তারা নবী (ﷺ)কে এ মর্মে অবহিত করে যে, আপনি আপনার সাথীদের থেকে ত্রিশজন নিয়ে আমাদের কাছে আসুন এবং আমাদের ত্রিশজন আলিম আপনার সঙ্গে এক আলাদা স্থানে দেখা করবে। তারা আপনার কথা শুনবে, যদি তারা আপনার উপর ঈমান আনে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে আমরা আপনার উপর ঈমান আনব।

পরদিন সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদল সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের উপর হামলা করেন এবং তাদের অবরোধ করে বলেনঃ আল্লাহর শপথ! তোমরা যতক্ষণ অঙ্গীকার না করবে, ততক্ষণ আমি তোমাদের ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তখন তারা (ইয়াহুদীরা) অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করে। ফলে তিনি সেদিন তাদের সাথে দিনভর যুদ্ধে রত থাকেন। পরদিন তিনি বনু নযীরকে বাদ দিয়ে বনু কুরাইযার উপর আক্রমণ করেন এবং তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে বলেন। ফলে তারা তাঁর সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। তখন তিনি তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় বনু নযীরকে অবরোধ করেন এবং তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করেন, যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়।

বনু নযীরের লোকেরা তাদের উটের পিঠে ঘরের দরজা, চৌকাঠ ইত্যাদি যে পরিমাণ মালামাল নেয়া সম্ভব ছিল, তা নিয়ে যায়। এবার বনু নযীরের খেজুরের বাগান রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধিকারে আসে, যা আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে প্রদান করেন। যেমন আল্লাহ বলেনঃ

وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ

অর্থাৎ আল্লাহ কাফিরদের মাল হতে যে সস্পদ তাঁর রাসূলকে প্রদান করেন, তা হাসিলের জন্য তোমরা তোমাদের ঘোড়া অথবা উট হাঁকাও নি, অর্থাৎ ঐ সম্পদ বিনা যুদ্ধে হাসিল হয়।

অতঃপর নবী (ﷺ) ঐ মালের অধিকাংশই মুহাজিরদের মাঝে বণ্টন করে দেন এবং অভাবগ্রস্ত দু’জন আনসারকে তা হতে অংশ প্রদান করেন। এ দু’জন ছাড়া অন্য আনসার সাহাবীদের মাঝে এ মাল বিতরণ করা হয়নি। অবশিষ্ট মাল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য সাদ্‌কা স্বরূপ ছিল, যা বনু ফাতিমার নিয়ন্ত্রণে ছিল।

[১] অর্থাৎ আমরা তোমাদের হত্যা করব এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীদের মালিক হয়ে যাব।
باب فِي خَبَرِ النَّضِيرِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ كَتَبُوا إِلَى ابْنِ أُبَىٍّ وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ مَعَهُ الأَوْثَانَ مِنَ الأَوْسِ وَالْخَزْرَجِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ بِالْمَدِينَةِ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ إِنَّكُمْ آوَيْتُمْ صَاحِبَنَا وَإِنَّا نُقْسِمُ بِاللَّهِ لَتُقَاتِلُنَّهُ أَوْ لَتُخْرِجُنَّهُ أَوْ لَنَسِيرَنَّ إِلَيْكُمْ بِأَجْمَعِنَا حَتَّى نَقْتُلَ مُقَاتِلَتَكُمْ وَنَسْتَبِيحَ نِسَاءَكُمْ . فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَىٍّ وَمَنْ كَانَ مَعَهُ مِنْ عَبَدَةِ الأَوْثَانِ اجْتَمَعُوا لِقِتَالِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَقِيَهُمْ فَقَالَ " لَقَدْ بَلَغَ وَعِيدُ قُرَيْشٍ مِنْكُمُ الْمَبَالِغَ مَا كَانَتْ تَكِيدُكُمْ بِأَكْثَرَ مِمَّا تُرِيدُونَ أَنْ تَكِيدُوا بِهِ أَنْفُسَكُمْ تُرِيدُونَ أَنْ تُقَاتِلُوا أَبْنَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ " . فَلَمَّا سَمِعُوا ذَلِكَ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تَفَرَّقُوا فَبَلَغَ ذَلِكَ كُفَّارَ قُرَيْشٍ فَكَتَبَتْ كُفَّارُ قُرَيْشٍ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ إِلَى الْيَهُودِ إِنَّكُمْ أَهْلُ الْحَلْقَةِ وَالْحُصُونِ وَإِنَّكُمْ لَتُقَاتِلُنَّ صَاحِبَنَا أَوْ لَنَفْعَلَنَّ كَذَا وَكَذَا وَلاَ يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَدَمِ نِسَائِكُمْ شَىْءٌ - وَهِيَ الْخَلاَخِيلُ - فَلَمَّا بَلَغَ كِتَابُهُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَجْمَعَتْ بَنُو النَّضِيرِ بِالْغَدْرِ فَأَرْسَلُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اخْرُجْ إِلَيْنَا فِي ثَلاَثِينَ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِكَ وَلْيَخْرُجْ مِنَّا ثَلاَثُونَ حَبْرًا حَتَّى نَلْتَقِيَ بِمَكَانِ الْمَنْصَفِ فَيَسْمَعُوا مِنْكَ . فَإِنْ صَدَّقُوكَ وَآمَنُوا بِكَ آمَنَّا بِكَ فَقَصَّ خَبَرَهُمْ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ غَدَا عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْكَتَائِبِ فَحَصَرَهُمْ فَقَالَ لَهُمْ " إِنَّكُمْ وَاللَّهِ لاَ تَأْمَنُونَ عِنْدِي إِلاَّ بِعَهْدٍ تُعَاهِدُونِي عَلَيْهِ " . فَأَبَوْا أَنْ يُعْطُوهُ عَهْدًا فَقَاتَلَهُمْ يَوْمَهُمْ ذَلِكَ ثُمَّ غَدَا الْغَدُ عَلَى بَنِي قُرَيْظَةَ بِالْكَتَائِبِ وَتَرَكَ بَنِي النَّضِيرِ وَدَعَاهُمْ إِلَى أَنْ يُعَاهِدُوهُ فَعَاهَدُوهُ فَانْصَرَفَ عَنْهُمْ وَغَدَا عَلَى بَنِي النَّضِيرِ بِالْكَتَائِبِ فَقَاتَلَهُمْ حَتَّى نَزَلُوا عَلَى الْجَلاَءِ فَجَلَتْ بَنُو النَّضِيرِ وَاحْتَمَلُوا مَا أَقَلَّتِ الإِبِلُ مِنْ أَمْتِعَتِهِمْ وَأَبْوَابِ بُيُوتِهِمْ وَخَشَبِهَا فَكَانَ نَخْلُ بَنِي النَّضِيرِ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَاصَّةً أَعْطَاهُ اللَّهُ إِيَّاهَا وَخَصَّهُ بِهَا فَقَالَ ( وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ ) يَقُولُ بِغَيْرِ قِتَالٍ فَأَعْطَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَكْثَرَهَا لِلْمُهَاجِرِينَ وَقَسَمَهَا بَيْنَهُمْ وَقَسَمَ مِنْهَا لِرَجُلَيْنِ مِنَ الأَنْصَارِ وَكَانَا ذَوِي حَاجَةٍ لَمْ يَقْسِمْ لأَحَدٍ مِنَ الأَنْصَارِ غَيْرَهُمَا وَبَقِيَ مِنْهَا صَدَقَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الَّتِي فِي أَيْدِي بَنِي فَاطِمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا .
tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

rabi
বর্ণনাকারী:
হাদীস নং:২৯৯৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩০০৫
১৬১. বনু নযীরের ঘটনা সম্পর্কে।
২৯৯৫. মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহয়া ইবনে ফারিস (রাহঃ) ..... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। বনু নযীর ও বনু কুরায়যার ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বনু নযীরকে (দেশ হতে) বের করে দেন এবং বনু কুরায়যার লোকেরা, যারা তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করেছিল, তারা তাদের স্বস্থানে অবস্থিত ছিল। অবশেষে বনু কুরায়যার ইয়াহুদীরা যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন তাদের পুরুষদের হত্যা করা হয় এবং তাদের স্ত্রী, মালামাল ও সন্তানদের মুসলমানদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করলে, তিনি তাদের নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং পরে তারা ইসলাম কবুল করে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বনু কায়নুকার ইয়াহুদী, যারা আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের গোত্রের লোক ছিল, তাছাড়া বনু হারিছার ইয়াহুদী এবং অন্যান্য যে ইয়াহুদীরা মদীনায় বসবাস করতো, সকলকে মদীনা হতে বের করে দেন।
باب فِي خَبَرِ النَّضِيرِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ يَهُودَ بَنِي النَّضِيرِ، وَقُرَيْظَةَ، حَارَبُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَجْلَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَنِي النَّضِيرِ وَأَقَرَّ قُرَيْظَةَ وَمَنَّ عَلَيْهِمْ حَتَّى حَارَبَتْ قُرَيْظَةُ بَعْدَ ذَلِكَ فَقَتَلَ رِجَالَهُمْ وَقَسَمَ نِسَاءَهُمْ وَأَوْلاَدَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ إِلاَّ بَعْضَهُمْ لَحِقُوا بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَمَّنَهُمْ وَأَسْلَمُوا وَأَجْلَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَهُودَ الْمَدِينَةِ كُلَّهُمْ بَنِي قَيْنُقَاعَ وَهُمْ قَوْمُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلاَمٍ وَيَهُودَ بَنِي حَارِثَةَ وَكُلَّ يَهُودِيٍّ كَانَ بِالْمَدِينَةِ .
tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান