কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

كتاب السنن للإمام أبي داود

২. নামাযের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন...

হাদীস নং:৩৯৩
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯৩
২. নামাযের ওয়াক্তসমূহ সম্পর্কে
৩৯৩. মুসাদ্দাদ ইবনে মুসারহাদ ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বায়তুল্লাহ্ শরীফের নিকটে দুইবার আমার নামাযে ইমামতি করেছেন। প্রথমবার তিনি আমাকে নিয়ে যোহরের নামায আদায় করেন, যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে সামান্য ঢলে পড়েছিল এবং সেন্ডেলের এক ফিতা পরিমাণ সামান্য ছায়া বায়তুল্লাহর পূর্ব দিকে দেখা দিয়েছিল।

অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে আসরের নামায আদায় করেন যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তাঁর সম পরিমাণ হয়। পরে তিনি আমাকে নিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করেন, যখন রোযাদার ইফতার করে। অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশে এশার নামায আদায় করেন। পরে তিনি আমাকে নিয়ে ফজরের নামায ঐ সময় আদায় করেন-যখন দিগন্ত উজ্জ্বল হয়ে যায়। অতঃপর তিনি (জিবরাঈল) আমাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ ইয়া মুহাম্মাদ! আপনার পূর্ববর্তী আম্বিয়াদের জন্য এটাই নামাযের নির্ধারিত সময় এবং এই সময়ের মাঝখানেই নামাযের সময়।*

* এতে বুঝা যায় যে, নামায আদায়ের নিয়ম পদ্ধতি এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য নির্ধারিত সময় ইত্যাদি আল্লাহ পাকের নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আ) কর্তৃক মহনবী (স)-কে জামাআতের সাথে ব্যবহারিকভাবে শিক্ষা দান করা হয়েছিল। এ হতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রথম ও শেষ সময় নির্ধারিত হয়েছে যা সারা দুনিয়ায় মুসলমানগণ অনুসরণ করে থাকে। জামাআতের সাথে নামায আদায়ের গুরুত্বও এ দ্বারা প্রমাণিত হয়। —(অনুবাদক)
باب الْمَوَاقِيتِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ، حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ فُلاَنِ بْنِ أَبِي رَبِيعَةَ، - قَالَ أَبُو دَاوُدَ هُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَيَّاشِ بْنِ أَبِي رَبِيعَةَ - عَنْ حَكِيمِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنْ نَافِعِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَمَّنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَتْ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِيَ - يَعْنِي الْمَغْرِبَ - حِينَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِيَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ حِينَ حَرُمَ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ عَلَى الصَّائِمِ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ صَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَيْهِ وَصَلَّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِينَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِيَ الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَىَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ هَذَا وَقْتُ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ " .
হাদীস নং:৩৯৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯৪
২. নামাযের ওয়াক্তসমূহ সম্পর্কে
৩৯৪. মুহাম্মাদ ইবনে সালামা ..... উসামা ইবনে যায়দ আল-লায়ছী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে শিহাব তাকে জানিয়েছেন যে, একদা উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) মিম্বরে বসে (রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায়) আসরের নামাযে (নামায আদায়ে) কিছু বিলম্ব করেন। তখন উরওয়া ইবনুস যুবায়ের (রাহঃ) তাকে বলেন, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) মুহাম্মাদ (ﷺ)কে নামাযের সময় সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

তখন উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) বলেন, তুমি যা বলছ তা আমি জানি। তখন উরওয়া বলেন, আমি বশীর ইবনে আবু মাসউদকে বলতে শুনেছি, আমি আবু মাসউদ আনসারী (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এসে আমাকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবগত করেছেন। তিনি তাঁর অঙ্গুলী গণনা করে বলেন, আমি তাঁর (জিবরাঈল) সাথে একে একে পাঁচ ওয়াক্তে নামায আদায় করেছি।

রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে যোহরের নামায সূর্য একটু পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার পর পড়তে দেখেছি এবং প্রখর গরমের দিনে তিনি কখনও একই বিলম্ব করেও পড়েছেন। আমি তাকে আসরের নামায সূর্য উপরে উজ্জ্বল বর্ণ থাকা অবস্থায় আদায় করতে দেখেছি- সূর্যের কিরণে হলুদ রং প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে। কোন ব্যক্তি অসেরের নামায আদায় করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ‘যুল হুলাইফা’* নামক স্থানে পৌছে যেত।

অতঃপর তিনি সূর্যাস্তের পরপরই মাগরিবের নামায আদায় করতেন। পরে তিনি এশার নামায ঐ সময় আদায় করতেন যখন পশ্চিমাকাশে কালোবর্ণে আচ্ছাদিত হত এবং কখনও কখনও মানুষের একত্রিত হওয়ার জন্য বিলম্ব করতেন। তিনি একবার ফজরের নামায অন্ধকার থাকতেই আদায় করেন এবং পরের বার দিগন্ত উজ্জ্বল হওয়ার পর সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণে আদায় করেন। তিনি তাঁর ইন্‌তিকালের পূর্ব পর্যন্ত পুনরায় আর কখনও অপেক্ষা করেন নাই।

*মদিনা হতে 'যুল হুলাইফা' নামক স্থানের দূরত্ব ৬ মাইল। - অনুবাদক
باب الْمَوَاقِيتِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ اللَّيْثِيِّ، أَنَّ ابْنَ شِهَابٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ كَانَ قَاعِدًا عَلَى الْمِنْبَرِ فَأَخَّرَ الْعَصْرَ شَيْئًا فَقَالَ لَهُ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَمَا إِنَّ جِبْرِيلَ صلى الله عليه وسلم قَدْ أَخْبَرَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم بِوَقْتِ الصَّلاَةِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ اعْلَمْ مَا تَقُولُ . فَقَالَ عُرْوَةُ سَمِعْتُ بَشِيرَ بْنَ أَبِي مَسْعُودٍ يَقُولُ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " نَزَلَ جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَنِي بِوَقْتِ الصَّلاَةِ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ " . يَحْسُبُ بِأَصَابِعِهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى الظُّهْرَ حِينَ تَزُولُ الشَّمْسُ وَرُبَّمَا أَخَّرَهَا حِينَ يَشْتَدُّ الْحَرُّ وَرَأَيْتُهُ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ قَبْلَ أَنْ تَدْخُلَهَا الصُّفْرَةُ فَيَنْصَرِفُ الرَّجُلُ مِنَ الصَّلاَةِ فَيَأْتِي ذَا الْحُلَيْفَةِ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ وَيُصَلِّي الْمَغْرِبَ حِينَ تَسْقُطُ الشَّمْسُ وَيُصَلِّي الْعِشَاءَ حِينَ يَسْوَدُّ الأُفُقُ وَرُبَّمَا أَخَّرَهَا حَتَّى يَجْتَمِعَ النَّاسُ وَصَلَّى الصُّبْحَ مَرَّةً بِغَلَسٍ ثُمَّ صَلَّى مَرَّةً أُخْرَى فَأَسْفَرَ بِهَا ثُمَّ كَانَتْ صَلاَتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ التَّغْلِيسَ حَتَّى مَاتَ وَلَمْ يَعُدْ إِلَى أَنْ يُسْفِرَ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى هَذَا الْحَدِيثَ عَنِ الزُّهْرِيِّ مَعْمَرٌ وَمَالِكٌ وَابْنُ عُيَيْنَةَ وَشُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ وَاللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ وَغَيْرُهُمْ لَمْ يَذْكُرُوا الْوَقْتَ الَّذِي صَلَّى فِيهِ وَلَمْ يُفَسِّرُوهُ وَكَذَلِكَ أَيْضًا رَوَاهُ هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ وَحَبِيبُ بْنُ أَبِي مَرْزُوقٍ عَنْ عُرْوَةَ نَحْوَ رِوَايَةِ مَعْمَرٍ وَأَصْحَابِهِ إِلاَّ أَنَّ حَبِيبًا لَمْ يَذْكُرْ بَشِيرًا وَرَوَى وَهْبُ بْنُ كَيْسَانَ عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقْتَ الْمَغْرِبِ قَالَ ثُمَّ جَاءَهُ لِلْمَغْرِبِ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ - يَعْنِي مِنَ الْغَدِ - وَقْتًا وَاحِدًا . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَلِكَ رُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ثُمَّ صَلَّى بِيَ الْمَغْرِبَ يَعْنِي مِنَ الْغَدِ وَقْتًا وَاحِدًا وَكَذَلِكَ رُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ مِنْ حَدِيثِ حَسَّانَ بْنِ عَطِيَّةَ عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নং:৩৯৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯৫
২. নামাযের ওয়াক্তসমূহ সম্পর্কে
৩৯৫. মুসাদ্দাদ ..... আবু মুসা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। এক প্রশ্নকারী নবী (ﷺ)কে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তিনি তাকে কোন জবাব না দিয়ে বিলাল (রাযিঃ)-কে সুবহে-সাদিকের সময় ফজরের নামাযের জন্য ইকামত দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং ফজরের নামায এমন সময় আদায় করেন যখন কোন মুসল্লী তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে (অন্ধকার থাকার ফলে) ভালভাবে চিনতে পারত না। অতঃপর তিনি সূর্য পশ্চিম দিকে সামান্য হেলার পরপরই অর্থাৎ দ্বিপ্রহরের সময় বিলাল (রাযিঃ)-কে যোহরের নামাযের জন্য ইকামত প্রদানের নির্দেশ দেন যখন কেবল দিনের অর্ধেক হয়েছে। অতঃপর সূর্য যখন উর্ধ্বাকাশে উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছিল সে সময় তিনি বিলালকে আসরের নামাযের ইকামত দেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি ইকামত দেন। অতঃপর সূর্যাস্তের পরপরই তিনি বেলাল (রাযিঃ)-কে মাগরিবের নামাযের জন্য ইকামত দিতে বললে তিনি ইকামত দেন।

অতঃপর পশ্চিমাকাশের শাফাক* স্তিমিত হওয়ার পর তিনি বিলাল (রাযিঃ)-কে এশার নামাযের ইকামত দিতে বললে- তিনি ইকামত দেন। পরের দিন সকালে ফজরের নামায আদায় করে যখন আমরা প্রত্যাবর্তন করছিলাম, তখন আমরা বলি সূর্য উদয় হয়েছে না কি, অর্থাৎ ফজরের নামায সুর্যোদয়ের কিছু পূর্বে সমাপ্ত হয়েছে। পূর্ববর্তী দিন তিনি যে সময় আসরের নামায আদায় করেছিলেন- এদিন সেই সময় যোহরের নামায আদায় করেন, (অর্থাৎ যোহরের সর্বশেষ ও আসরের প্রারম্ভিক সময়ে)। অতঃপর পশ্চিমাকাশের সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে তখন তিনি আসরের নামায আদায় করেন, এবং সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের শাফাক স্তিমিত হওয়ার কিছু পূর্বে তিনি মাগরিবের নামায আদায় করেন; এবং এশার নামায রাতের এক-তৃতীয়াংশ অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর আদায় করেন।

অতঃপর তিনি বলেনঃ নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী ব্যক্তি কোথায়? পূর্ববর্তী দিন ও পরের দিনে যে যে সময়ে নামায আদায় করা হয়েছে- তার মাঝেই রয়েছে (প্রারম্ভিক ও শেষ সময়) নামাযের ওয়াক্ত।

* পূর্ব দিগন্তে সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার সাথে সাথে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্য উদিত হওয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয়ে যায়। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথে যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ (মূল ছায়া বাদে) হওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয়ে যায় এবং আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য মাযহাব মতে কোন বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় এবং আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আসরের নামাযের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং শাফাক অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত তা অবশিষ্ট থাকে। ইমাম শাফিঈ এবং অধিকাংশ আলেমের মতে, সূর্যাস্তের পর পশ্চিম দিগন্তে যে লাল আভা দেখা দেয় তাকে শাফাক বলে। ইমাম আবু হানীফার প্রসিদ্ধ মতে লাল আভা দূরীভূত হওয়ার পর যে শুদ্ৰতা উদিত হয় তাকে শাফাক বলে। এশার নামাযের ওয়াক্ত শাফাক অন্তর্হিত হওয়ার পর থেকে সঠিক মত অনুযায়ী সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।

মুস্তাহাব ওয়াক্ত
শাফিঈ মাযহাব মতে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযে জলদি করা, অর্থাৎ ওয়াক্তের প্রথম ভাগে নামায আদায় করা মুস্তাহাব। কিন্তু হানাফী মাযহাবে ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে কোন কোন নামায ওয়াক্তের প্রথম ভাগে পড়া মুস্তাহাব এবং কোন কোন নামায একটু বিলম্বে পড়া মুস্তাহাব। যেমন, গ্রীষ্মকালে যোহরের নামাম বিলম্বে পড়ার নির্দেশ রয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেনঃ "যোহরের নামায ঠাণ্ডা করে আদায় কর। কেননা গরমের তীব্রতা দোযখের নিঃশ্বাস বিশেষ"। কিন্তু শীতকালে এই নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব। আসরের নামায সূর্যালোক ঝলসে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা মুস্তাহাব। সূর্যালোক ঝলসে যাওয়ার সাথে সাথে আসরের মাকরূহ (অপছন্দনীয়) ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। সমস্ত ইমামদের মতে যে কোন ঋতুতে মাগরিবের নামায় প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব। অতএব সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথেই মাগরিবের নামায আদায় করা উচিৎ। কেননা এই নামাযের ওয়াক্ত খুবই সংকীণ।

রাতের এক-তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত এশার নামায বিলম্ব করা মুস্তাহাব। অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এশার নামায় বিলম্ব করা মাকরূহ। বেতের নামাযের ওয়াক্ত এশার নামাযের পরপরই শুরু হয় এবং সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু শেষ রাতে বেতের পড়া মুস্তাহাব। তবে যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগতে পারবে না বলে আশংকা করছে সে শোয়ার পূর্বেই বেতের পড়ে নেবে।

ইমাম আবু হানীফা ও সাহেবাইনের মতে রাতের অন্ধকার দূরীভূত করে ফজরের নামায পড়া মুস্তাহাব। কেননা রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ "ফজরের নামায আলোকিত করে পড়, কেননা এর মধ্যেই তোমাদের জন্য অধিক পুরুষ্কার রয়েছে।" (ইমাম আবু হানীফার দুই সাথী ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবু ইউসুফকে ফিকাহবিদদের পরিভাষায় 'সাহেবাইন' বলা হয়)। কিন্তু ইমাম শাফিঈ ও অপরাপর ইমামদের মতে অন্ধকার বাকী থাকতেই ফজরের নামায পড়া মুস্তাহাব। তাঁরা নিজেদের মতের সমর্থনে হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্ধকার থাকতেই ফজরের নামায় পড়তেন।

হানাফী এবং শাফিঈ মাযহাবের মত অনুযায়ী যোহরের নামাযের ওয়াক্তই জুমআর নামাযের ওয়াক্ত। মালেকী মাযহাব মতে, যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকে মাগরিবের নামাযের এতটা পূর্ব পর্যন্ত জুমুআর ওয়াক্ত থাকে যাতে সূর্যাস্তের পূর্বেই খুতবা এবং নামায শেষ করা যেতে পারে। হাম্বলী মাযহাব মতে, সকালের সূর্য কিছুটা উপরে উঠার পর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত জুমআর ওয়াক্ত বাকী থাকে। তবে পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে তাঁদের মতে জুমআর নামায পড়া কেবল জায়েয, কিন্তু পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ার পর জুমআর নামায পড়া ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব।

মাকরূহ ও নিষিদ্ধ ওয়াক্ত
ফজরের ফরজ নামাযের পর থেকে সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত এবং আসরের ফরজ নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত নামায পড়া মারুরূহ। তবে কারো ফরজ নামাযের কাযা থাকলে সে তা এ সময়ে পড়ে নিতে পারে, বরং পড়ে নিবে। সূর্য উঠার ঠিক দিপ্রহরে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যে কোন নামায পড়া নিষিদ্ধ- (ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর আল-মুওয়াত্তা গ্রন্থের বাংলা সংস্করণ থেকে)।
باب الْمَوَاقِيتِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، حَدَّثَنَا بَدْرُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِي مُوسَى، أَنَّ سَائِلاً، سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ شَيْئًا حَتَّى أَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ لِلْفَجْرِ حِينَ انْشَقَّ الْفَجْرُ فَصَلَّى حِينَ كَانَ الرَّجُلُ لاَ يَعْرِفُ وَجْهَ صَاحِبِهِ أَوْ إِنَّ الرَّجُلَ لاَ يَعْرِفُ مَنْ إِلَى جَنْبِهِ ثُمَّ أَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ حَتَّى قَالَ الْقَائِلُ انْتَصَفَ النَّهَارُ . وَهُوَ أَعْلَمُ ثُمَّ أَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ وَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ الْمَغْرِبَ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ وَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ صَلَّى الْفَجْرَ وَانْصَرَفَ فَقُلْنَا أَطَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَقَامَ الظُّهْرَ فِي وَقْتِ الْعَصْرِ الَّذِي كَانَ قَبْلَهُ وَصَلَّى الْعَصْرَ وَقَدِ اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ - أَوْ قَالَ أَمْسَى - وَصَلَّى الْمَغْرِبَ قَبْلَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ وَصَلَّى الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ ثُمَّ قَالَ " أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ وَقْتِ الصَّلاَةِ الْوَقْتُ فِيمَا بَيْنَ هَذَيْنِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى عَنْ عَطَاءٍ عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَغْرِبِ بِنَحْوِ هَذَا قَالَ ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ قَالَ بَعْضُهُمْ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِلَى شَطْرِهِ . وَكَذَلِكَ رَوَاهُ ابْنُ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নং:৩৯৬
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯৬
২. নামাযের ওয়াক্তসমূহ সম্পর্কে
৩৯৬. উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মুআয ..... আব্দুল্লাহ্ আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ আসরের নামাযের সময় আরম্ভের পূর্ব পর্যন্ত যোহরের নামাযের সময় অবশিষ্ট থাকে এবং সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পূর্ব পর্যন্ত আসরের নামাযের সময় থাকে। মাগরিবের নামাযের সময়সীমা হল পশ্চিম আকাশের শাফাক অস্তমিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এশার নামাযের ওয়াক্ত রাতের অর্ধেক সময় পর্যন্ত, এবং সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত হল ফজরের নামাযের সময়।
باب الْمَوَاقِيتِ
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، سَمِعَ أَبَا أَيُّوبَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ " وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ تَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَسْقُطْ فَوْرُ الشَّفَقِ وَوَقْتُ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ " .