আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
المسند الصحيح لمسلم
৩৩- জিহাদের বিধানাবলী ও নবীজীর যুদ্ধাভিযানসমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৩ টি
অনুসন্ধান করুন...
হাদীস নং: ৪৫২৬
আন্তর্জাতিক নং: ১৮০৬
৪৫. যু-কারদ ও অন্যান্য যুদ্ধ
৪৫২৬। কুতাহাবা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... সালামা ইবনে আকওয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ফজরের আযানের আগেই বের হয়ে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দুধেল উঠনি তখন যু-কারদে (চারণ ভূমিতে) চরছিল। তখন আমার সাথে রহমান ইবনে আওফ (রাযিঃ) এর গোলামের সাক্ষাত হলে সে বলল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দুধেল উটনী সমুহকে নিয়ে গেছে। আমি বললাম, কে সেগুলো নিয়ে গেছে? সে বলল, গাতফান গোত্রের লোকেরা। রাবী বলন, তখন আমি উচ্চস্বরে তিনবার হাঁক দিলাম; আগমন! (ভোররাতে) (সাহায্য চাই, সাহায্য)। রাবী (সালামা ইবনে আকওয়া) বলেন, মদীনার উভয় প্রান্তের মধ্যবর্তী সবাইকে আমি আমার সে হাক শুনালাম তারপর সোজা বেরিয়ে পড়লাম এবং যু-কারদের গিয়ে তাদের (লুটেরাদের) নাগালে পেলাম।
তখন তারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিলাম। তখন আমি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। আমি ছিলাম একজন (দক্ষ) তীরন্দাজ। আর তখন আমি বীরত্ব সূচক কবিতা আবৃতি করছিলাম, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরদের ধ্বংসের দিন। (কিংবা আজ তার দিন, যে শৈশব থেকে যুদ্ধের স্তন্য পান করেছে)।
আমি আমার তীর নিক্ষেপ ও বীরত্বব্যঞ্জক কবিতা আবৃতি করতে থাকলাম। অবশেষে আমি উটনীগুলো মুক্ত করলাম এমনকি আমি তাদের ত্রিশটি (বড়) চাদরও ছিনিয়ে নিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও লোকজন এসে পড়লেন। তখন আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাদের পানির পথ রুদ্ধ করে রেখেছি, তাই তারা পিপাসার্ত। এবার আপনি একটি বাহিনী প্রেরণ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আকওয়া, যা বীরত্ব দেখানোর তুমি দেখিয়েছ, এবার ছেড়ে দাও। রাবী বলেন, তারপর আমরা ফিরে এলাম। রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে তারই উটনীর পিছনে বসিয়ে নিলেন। এভাবে আমরা মদীনায় পৌছলাম।
তখন তারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিলাম। তখন আমি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। আমি ছিলাম একজন (দক্ষ) তীরন্দাজ। আর তখন আমি বীরত্ব সূচক কবিতা আবৃতি করছিলাম, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরদের ধ্বংসের দিন। (কিংবা আজ তার দিন, যে শৈশব থেকে যুদ্ধের স্তন্য পান করেছে)।
আমি আমার তীর নিক্ষেপ ও বীরত্বব্যঞ্জক কবিতা আবৃতি করতে থাকলাম। অবশেষে আমি উটনীগুলো মুক্ত করলাম এমনকি আমি তাদের ত্রিশটি (বড়) চাদরও ছিনিয়ে নিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও লোকজন এসে পড়লেন। তখন আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাদের পানির পথ রুদ্ধ করে রেখেছি, তাই তারা পিপাসার্ত। এবার আপনি একটি বাহিনী প্রেরণ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আকওয়া, যা বীরত্ব দেখানোর তুমি দেখিয়েছ, এবার ছেড়ে দাও। রাবী বলেন, তারপর আমরা ফিরে এলাম। রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে তারই উটনীর পিছনে বসিয়ে নিলেন। এভাবে আমরা মদীনায় পৌছলাম।
باب غَزْوَةِ ذِي قَرَدٍ وَغَيْرِهَا
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا حَاتِمٌ، - يَعْنِي ابْنَ إِسْمَاعِيلَ - عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي، عُبَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ سَلَمَةَ بْنَ الأَكْوَعِ، يَقُولُ خَرَجْتُ قَبْلَ أَنْ يُؤَذَّنَ، بِالأُولَى وَكَانَتْ لِقَاحُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَرْعَى بِذِي قَرَدٍ - قَالَ - فَلَقِيَنِي غُلاَمٌ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ فَقَالَ أُخِذَتْ لِقَاحُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ مَنْ أَخَذَهَا قَالَ غَطَفَانُ قَالَ فَصَرَخْتُ ثَلاَثَ صَرَخَاتٍ يَا صَبَاحَاهْ . قَالَ فَأَسْمَعْتُ مَا بَيْنَ لاَبَتَىِ الْمَدِينَةِ ثُمَّ انْدَفَعْتُ عَلَى وَجْهِي حَتَّى أَدْرَكْتُهُمْ بِذِي قَرَدٍ وَقَدْ أَخَذُوا يَسْقُونَ مِنَ الْمَاءِ فَجَعَلْتُ أَرْمِيهِمْ بِنَبْلِي وَكُنْتُ رَامِيًا وَأَقُولُ أَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمَ يَوْمُ الرُّضَّعِ فَأَرْتَجِزُ حَتَّى اسْتَنْقَذْتُ اللِّقَاحَ مِنْهُمْ وَاسْتَلَبْتُ مِنْهُمْ ثَلاَثِينَ بُرْدَةً - قَالَ - وَجَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسُ فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنِّي قَدْ حَمَيْتُ الْقَوْمَ الْمَاءَ وَهُمْ عِطَاشٌ فَابْعَثْ إِلَيْهِمُ السَّاعَةَ فَقَالَ " يَا ابْنَ الأَكْوَعِ مَلَكْتَ فَأَسْجِحْ " . - قَالَ - ثُمَّ رَجَعْنَا وَيُرْدِفُنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى نَاقَتِهِ حَتَّى دَخَلْنَا الْمَدِينَةَ .

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৪৫২৭
আন্তর্জাতিক নং: ১৮০৭-২
৪৫. যু-কারদ ও অন্যান্য যুদ্ধ
৪৫২৭ আবু বকর ইবনে শায়বা, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান দারিমী (রাহঃ) ......... ইয়াস ইবনে সালামা (রাযিঃ) সূত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে হুদায়বিয়ায় পৌঁছলাম। তখন সংখ্যায় আমরা চৌদ্দশ। তদুপরি সেখানে ছিল পঞ্চাশটি বকরী, যাদের পানি পানের জন্য পর্যাপ্ত পানি ছিল না। রাবী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুয়ার কিনারায় বসলেন এবং দুআ করলেন অথবা তাতে থুথু দিলেন। রাবী বলেন, আর অমনি পানি উথলে উঠলো। তখন আমরাও পানি পান করলাম এবং (পশুদেরকেও) পানি পান করালাম।
রাবী বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বায়আতের জন্য গাছ তলায় ডাকলেন। রাবী বলেন, তারপর লোকদের মধ্যে আমি সর্বাগ্রে বায়আত হলাম। তারপর একে একে অন্যান্য লোকেরাও বায়আত হল। তিনি যখন বায়আত গ্রহণ করতে করতে লোকজনের মধ্যবর্তী স্থানে (অর্থাৎ অর্ধ পরিমাণে) পৌঁছলেন, তখন বললেন, হে সালামা! তুমি বায়আত হও। রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, লোকদের মধ্যে প্রথমেই আমি বায়াআত হয়েছি ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, আবারও হও না! রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে অস্ত্রহীন অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে একটি “জাহাদ” বা “দারাবা” (ঢাল) দান করলেন।
তিনি যখন বায়আত করতে করতে লোকদের শেষপ্রান্তে পৌঁছলেন এবং বললেন, তুমি কি আমার কাছে বায়আত হবে না, হে সালামা! রাবী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো লোকদের মধ্যে প্রথমভাগে এবং মধ্যভাগে (দু’বার) আপনার কাছে বায়আত হয়েছি। তিনি বললেন, আবারও হও না! তখন আমি তৃতীয়বার বায়আত হলাম। এরপর তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! তোমার সেই ঢালটি কোথায় যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম? রাবী (সালামা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার চাচা আমিরের সাথে অস্ত্রবিহীন অবস্থায় আমার দেখা হলে আমি তাকে তা দিয়ে দিয়েছি। রাবী বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি দেখছি পূর্ববর্তী যুগের সেই লোকদের মত, যে বলেছিল, হে আল্লাহ! আমি এমন একজন বন্ধু চাই, যে আমার প্রাণের চাইতেও আমার নিকট অধিক প্রিয় হবে।
এরপরে মুশরিকরা আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালো। আমাদের একপক্ষের লোকজন অন্যপক্ষের শিবিরে যাতায়াত করতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত আমরা উভয় পক্ষ পরস্পরে সন্ধিবদ্ধ হলাম। রাবী [সালাম (রাযিঃ)] বলেন, আমি তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমি তাঁর ঘোড়াকে পানি পান করাতাম এবং তাঁর পিঠ মালিশ করতাম (আঁছড়ে দিতাম) এবং তাঁর অন্যান্য খিদমত করতাম। আমি তার ওখানে খাওয়া দাওয়া করতাম। নিজের পরিবার পরিজন ও ধন সম্পদ পরিত্যাগ করে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের রাহে মুহাজির হয়েছিলাম। রাবী বলেন, তারপর যখন আমরা ও মক্কাবাসীরা সন্ধিতে আব্দ্ধ হলাম এবং আমাদের একপক্ষ অপর পক্ষের সাথে মেলামেশা করতে লাগলাম তখন আমি একটি গাছতলায় গিয়ে তাঁর নীচের কাঁটা প্রভৃতি পরিষ্কার করে তাঁর গোঁড়ায় একটু শুয়ে পড়ি। এমনসময় মক্কাবাসী চারজন মুশরিক এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে অপ্রীতিকর কথা বলতে লাগলো।
আমার কাছে ওদের কথাবার্তা অত্যন্ত খারাপ লাগলো এবং আমি স্থান পরিবর্তন করে আরেকটি গাছের তলায় চলে গেলাম। তারা তাদের অস্ত্র গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল। এমন সময় প্রান্তরের নিম্নাঞ্চল থেকে কে যেন চিৎকার করে বলল, হে মুহাজিরগণ! সাহায্য! ......... ইবনে যুনায়ম নিহত হয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার তরবারী উঠিয়ে ধরলাম এবং ঐ চারজনের উপর আক্রমণ চালালাম। তখন তারা ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাদের অস্ত্রগুলি হস্তগত করলাম এবং তা আটি বেঁধে আমার হাতে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, যে মহান সত্তা মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সম্মানিত করেছেন তাঁর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মাথা তুলে, তবে তাঁর সেই অঙ্গে আঘাত (করে বিচ্ছিন্ন) করব যেখানে তাঁর চোখদুটি রয়েছে (অর্থাৎ ঘাড়ে)।
রাবী বলেন, তারপর তাদেরকে আমি হাঁকিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, এমন সময় আমার চাচা আমির আবালাত’ গোত্রের একজনকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে এসেছেন। তাকে বলা হত মিকরায। সে ছিল আঘাত নিরোধক বস্ত্রাকৃত একটি ঘোড়ায় আসীন। আর তাঁর সাথে সত্তরজন মুশরিক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ “ওদেরকে ছেড়ে দাও, যাতে অপকর্মের সূচনা ওদের পক্ষ থেকেই হয় এবং পুনরাবৃত্তিও তারাই করে” একথা বলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ক্ষমা করে দিলেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ “সেই পবিত্র সত্তা যিনি মক্কা প্রান্তরে তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে বিরত রেখেছেন তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর” (সূরা আন নূরঃ ৪৮) আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
রাবী বলেন, তারপর মদীনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। পথে এমন একটি মনযিলে আমরা অবতরণ করলাম যেখানে আমদের ও লিহয়ান গোত্রের মধ্যে কেবল একটি পাহাড়ের ব্যবধান ছিল। আর তারা ছিল মুশরিক। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকটে দুআ করলেন, যে ব্যক্তি রাতে নবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের পক্ষ থেকে খবরদারীর জন্য পাহাড়ের উপরে আরোহণ করবে। সালামা বলেন, সে রাতে আমি দুই কি তিনবার ঐ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলাম। তারপর আমরা মদীনায় এলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর গোলাম রাবাহকে দিয়ে তাঁর উটগুলি পাঠালেন। আর আমিও তালহা (রাযিঃ) এর ঘোড়ায় চলে তাঁর সাথে সাথে উটগুলি চারণ ভুমির দিকে নিয়ে গেলাম সেটাকে ঘাস পানি খাওয়ানোর জন্য। যখন আমাদের ভোর হল, আব্দুর রহমান ফাজারী চড়াও হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর (বিচরণকৃত) সমস্ত উট ছিনিয়ে নিয়ে গেল এবং তাঁর রাখালকে হত্যা করল। আমি তখন রাবাহকে বললাম, হে রাবাহ! লও এই ঘোড়া নিয়ে তুমি তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহকে পৌঁছে দিও আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সংবাদ দাও যে, মুশরিকরা তাঁর চারণভুমির উটগুলো লুটে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তখন আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম। তারপর মদীনার দিকে মুখ করে তিনবার হাক দিলাম, ইয়া সাবাহা! (ভোরের আক্রমণ)
তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম এবং তাদের উপর তীর নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আর আমি মুখে এই চরণ উচ্চারণ করছিলাম, “আমি আকওয়ার পুত্র, আজ সেই দিন, আজ ইতরকে (শায়েস্তা করার) দিন। আজকে কেমন মায়ের দুধ (খেয়েছ তা স্মরণের দিন)”। তখন আমি তাদের যে কাউকে পেয়েছি, তাঁর উপর এরকমভাবে তীর নিক্ষেপ করেছি যে, তীরের অগ্রভাগ তাঁর কাঁধের কোমল হাড় ছেদ করে বেরিয়েছে। তিনি বলেন, আমি বলতে লাগলাম, এ আঘাত নাও, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরের দিন (দুধপান স্মরণের দিন)। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম এবং ঘায়েল করতে লাগলাম এবং যখনই কোন ঘোড় সওয়ার আমার দিকে ফেরত তখনই আমি গাছের আড়ালে এসে তাঁর গোঁড়ায় বসে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করতাম আর তাকে জখম করে ফেলতাম।
অবশেষে যখন তারা পাহাড়ের সংকীর্ণ পথে আসে এবং তারা সে সংকীর্ণ পথে ঢোকে আমি তখন পাহাড়ের উপর উঠে সেখান থেকে (অবিরাম) তাদের উপর পাথর গড়িয়ে দিতে থাকলাম। তিনি বলেন, এভাবে আমি তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে থাকলাম যে পর্যন্ত না আল্লাহর সৃষ্ট উটগুলোর প্রতিটি উট যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভারবাহী রূপে ছিল তা আমার পিছনে রেখে না যাই। তারা এগুলি আমার আওতায় ফেলে চলে গেল। তারপরও আমি তাদের অনুসরণ করে তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। এমনকি তারা ত্রিশটির বেশী চাঁদর এবং ত্রিশটি বল্লম নিজেদের বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্য ফেলে গেল। তারা যে সব বস্তু ফেলে যাচ্ছিল আমি তাঁর প্রত্যেকটিকে পাথর দিয়ে চিহ্নিত করে যাচ্ছিলাম, যাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ তা চিনতে পারেন।
অবশেষে তারা পাহাড়ের একটি সংকীর্ণ স্থানে গিয়ে পৌঁছল। এমন সময় বদর ফাজারির অমুক পুত্র এসে তাদের সাথে মিলিত হল। এবার তারা সকলে মিলে সকালের খাবার খেতে বসল। আমি পাহাড়ের একটি শৃঙ্গে বসে পড়লাম। তখন সে ফাজারি বলল, ঐ যে লোকটাকে দেখছি সে কে? তারা বলল, লোকটির হাতে আমরা অনেক দুর্ভোগ পোহায়েছি। আল্লাহর কসম! সেই রাতের আধার থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত লোকটা আমাদের পিছন থেকে সরছে না, সে আমাদের প্রতি (অবিরাম) তীর নিক্ষেপ করেছে, এমনকি আমাদের যথাসর্বস্ব সে কেড়ে নিয়েছে। তখন সে বলল, তোমাদের মধ্যকার চারজন উঠে গিয়ে তাঁর উপর চড়াও হও। তখন তাদের চার ব্যক্তি পাহাড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর তারা যখন আমার কথা শোনার মত নিকটবর্তী স্থানে এসে পৌঁছল, তখন আমি বললাম, তোমরা কি আমাকে চেন? তারা বলল, না। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি সালামা ইবনে আকওয়া। কসম সেই পবিত্র সত্তার, যিনি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সম্মানিত করেছেন। আমি তোমাদের যাকেই পেতে চাইব (লক্ষ্য বানাব) তাকে ধরে ফেলব। কিন্তু তোমাদের কেউ চাইলেই আমাকে ধরতে পারবে না।
তখন তাদের একজন বলল, আমিও তাই মনে করি। তিনি বলেন, তারপর তারা ফিরে গেল। আর আমি সেই স্থানেই বসে রইলাম। অবশেষে আমি গাছ গাছালির মাঝ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অশ্বারোহীদের অগ্রসর হতে দেখলাম। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আখারাম আসাদী। তাঁর পিছনে আবু কাতাদা আনসারী। তাঁর পিছনে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ কিন্দী। তিনি বলেন, আমি তখন আখরামের ঘোড়ার লাগাম ধরলাম। তিনি বলেন, তখন তারা (শত্রুরা) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে গেল। আমি বললাম, হে আখরাম! ওদের থেকে সতর্ক থাকবে। তারা যেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ এসে মিলিত হওয়ার পূর্বেই তোমাদের বিচ্ছিন্ন করে না ফেলে। আখারাম বললেন, যে সালামা! তুমি যদি আল্লাহ ও কিয়ামত দিনের প্রতি বিশ্বাসী হও এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে সত্য মনে কর তবে আমার এবং শাহাদতের মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি করো না। সালামা বলেন, তখন আমি তাঁর পথ ছেড়ে দিলাম।
তখন তিনি আব্দুর রহমানের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হলেন। আখরাম আব্দুর রহমানের ঘোড়াকে আহত করলেন, আর আব্দুর রহমান বর্শার আঘাতে তাকে কতল করে দিল এবং আখরামের ঘোড়ার উপর চড়ে বসল। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘোড় সওয়ার আবু কাতাদা (রাযিঃ) এসে পৌঁছলেন। তিনি আব্দুর রহমানকে বর্শার আঘাতে হত্যা করলেন। সেই পবিত্র সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে মর্যাদামণ্ডিত করেছেন, আমি তখন এতই দ্রুতগতিতে তাদের পিছু ধাওয়া করে যাচ্ছিলাম যে, আর পিছনে (অনেক দূর পর্যন্ত) মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কোন সাহাবীকেই দেখতে পেলাম না, এমনকি তাদের ঘোড়ার খুরের ধুলিও আমার দৃষ্টিগোচর হল না। এভাবে চলতে চলতে সূর্যাস্তের প্রাক্কালে তারা এমন একটি গিরিপথে উপনীত হল যেখানে যু-কারাদ নামক একটি প্রস্রবণ রয়েছে। অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তারা পানি পান করতে অবতরণ করল। তখন তারা আমাকে তাদের পিছু ধাওয়া করে দৌড়ে আসতে দেখতে পেল। এক জায়গায় পানি পান করার পূর্বেই আমি সেখান থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দিলাম। তখন তারা পাহাড়ের একটি ঢালু উপত্যকার দিকে দৌড়াতে লাগলো আর আমিও তাদের পিছু ধাওয়া করতে লাগলাম।
আমি তাদের যে কোন একজনের নিকটবর্তী হলে তাঁর কাঁধের অস্থিতে তীর নিক্ষেপ করে বললাম, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরদের (বোঝাবার) দিন (আজ দুধপান স্মরণের দিন)। সে তখন বলল, তাঁর মা (পুত্র হারা হয়ে) তাঁর জন্য কাঁদুক তুমি কি সে আকওয়া যে আমাদের সেই ভোর থেকে অতিষ্ঠ করে রেখেছ? আমি বললাম হ্যাঁ, তোমার জানের দুশমন, (আমি) সেই তোমার ভোরবেলার আকওয়াই। তিনি বলেন, অতঃপর তারা দুটি ক্লান্ত ঘোড়া উপত্যকায় ছেড়ে চলে গেল। তিনি বলেন, তখন আমি ঐ দুটোকে হাকিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে এলাম। তিনি বলেন, সেখানে একটি অল্প দুধভর্তি ‘সাতীহা’ (চামড়ার তৈরী পাত্র) এবং একটি পানিভর্তি সাতীহা নিয়ে এসে আমির আমার সাথে মিলিত হলেন। আমি তখন উযু করলাম এবং (দুধ) পান করলাম। তারপর এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলাম যখন তিনি ঐ পানির কাছে ছিলেন, যা থেকে আমি ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ সমস্ত উট ও মুশরিকদের নিকট থেকে আমার ছিনিয়ে আনা সব কিছু বর্শা ও চাদর প্রভৃতি হস্তগত করেছেন। তখন বিলাল, লোকদের কাছে থেকে আমার উদ্ধারকৃত একটি উট জবাই করেছেন এবং তাঁর কলিজা ও কুজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য ভুনছিলেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সুযোগ দিন, আমি আমাদের লোকদের থেকে একশ জনকে বাছাই করে নিয়ে সেই দুশমনদের পিছু ধাওয়া করি যাতে তাদের সকলকে এমনিভাবে হত্যা করব যে, তাদের খবর বয়ে নিয়ে যাওয়ার মত একটি লোকও অবশিষ্ট থাকবেনা। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনভাবে হাসলেন যে, চুলার আগুনের আভায় তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলি প্রকাশ পেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে সালামা! তুমি কি মনে কর যে, তুমি তা-ই করবে? আমি বললাম হ্যাঁ, সেই পবিত্র সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন। নবী (ﷺ) তখন বললেন, এতক্ষণে তো তারা গাতফান পল্লিতে আতিথ্য ভোগ করছে।
তিনি বলেন, পরে গাতফান গোত্রের একটি লোক এল, সে বলল, অমুক তাদের জন্য একটি উট জবেহ করেছে। তারা যখন তাঁর চামড়া ছড়াচ্ছিল তখন তারা ধুলোরাশি উড়তে দেখতে পায়। তখন তারা বলে উঠল ওরা (আকওয়া ও তাঁর বাহিনী) তোমাদের নিকট এসে পড়েছে। তখন তারা পালিয়ে যায়। এরপর আমাদের ভোর হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমাদের আজকের সেরা অশ্বারোহী হচ্ছে আবু কাতাদা আর আমাদের সেরা পদাতিক হচ্ছে সালামা। তিনি বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসাবে গণিমতের দুই অংশ দিলেন। আমাকে তিনি একত্রে দুই অংশ দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মদীনায় প্রত্যাবর্তন কালে আমাকে তাঁর সাথে তাঁর উটনী আদবার’ পিছনে বসিয়ে নিলেন। তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা পথ অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় আনসারের এমন এক ব্যক্তি যাকে দৌড়ে কেউ পরাজিত করতে পারতো না, সে বলতে লাগলোঃ কেউ কি আছে যে, মদীনায় সর্বপ্রথম পৌছার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করবে? এ কথাটি সে বারবার বলছিল। তিনি বলেন, যখন আমি তাঁর এ (চ্যালেঞ্জমূলক) কথাটি শুনলাম, তখন বললাম, তুমি কি কোন সম্মানিত লোককে সম্মান দিতে জানো না বা কোন ভদ্রলোককেই পরোয়া করবে না? সে বলল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতিত অন্য কাউকে নয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতা মাতা আপনার উপর কোরবান, আপনি আমায় ঐ ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দিন।
তখন তিনি বললেনঃ তোমার ইচ্ছা হলে। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, চল! তারপর আমি লাফ দিয়ে নীচে দৌড় দিলাম। তারপর এক বা দুই টিলা অতিক্রম করার দূরত্বে রইলাম তখন পর্যন্ত আমার দম নিয়ন্ত্রনে রেখে তাঁর পিছু পিছু দৌড় দিলাম। আরও দুই এক টিলা পর্যন্ত ধীরগতিতে চলার পর সাজোরে দৌড় দিয়ে তাঁর নিকট পৌঁছে গেলাম এবং তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘুষি মেরে বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! তুমি হেরে গেছ। তখন সে বলল, আমিও তাই মনে করছি। তিনি বলেন, অতএব আমি তাঁর পূর্বেই মদীনায় পৌঁছে গেলাম।
তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর আমরা তিনরাতের অধিক মদীনায় থাকতে পারিনি। এমনি সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে আমরা খায়বরের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। তিনি বলেন, তখন আমার চাচা আমির (রাযিঃ) প্রেরণামূলক কবিতা আবৃতি করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর অনুগ্রহ না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, সাদ্কাও দিতাম না আর নামাযও আদায় করতাম না। আমরা আপনার অনুগ্রহ থেকে কখনও বেপরওয়া হতে পারি না, তাই আপনি আমাদের কদম দৃঢ় রাখুন, যখন আমরা শত্রুদের সম্মুখীন হই এবং আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি বর্ষণ করুন।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এ ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আমি আমির। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমার রব তোমাকে ক্ষমা করুন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কারো জন্য বিশেষভাবে দুআ করতেন সে শহীদ হত। তিনি বলেন, তখন নিজ উটে বসা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) দুর থেকে আওয়াজ করে বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ! আমিরকে দিয়ে যদি না আমাদের আরো উপকার করতেন? তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা খায়বরে উপস্থিত হলাম, তখন খায়বর অধিপতি মুরাহহাব (মারহাব) তরবারি দোলাতে দোলাতে বেরিয়ে এল এবং বলল, খায়বর জানে যে, আমি মুরাহহাব, পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, অভিজ্ঞতাপূর্ণ এক বীরপুরুষ। রাবী বলেন, আমার চাচা আমির (রাযিঃ) কবিতা আবৃতি করতে করতে বললেন, “খায়বর জানে যে, আমি আমির অস্ত্রে শস্ত্রে সুসজ্জিত যুদ্ধে অবতীর্ণ বীর বাহাদুর নির্ভীক ব্যক্তি।
রাবী বলেন, তারপর তাদের মধ্যে আঘাত বিনিময় হল। আমির (রাযিঃ) নীচে থেকে যখন তাকে আঘাত করতে চাইলেন, তখন তা ফিরে এসে তাঁর নিজের উপরই লাগল। আর তাতে তাঁর পায়ের গোছার সংযোগ শিরা কেটে গিয়ে মৃত্যু হল। (রাবী) সালামা (রাযিঃ) বলেন, তখন আমি বেরোলাম। নবী কারিম (ﷺ) এর কয়েকজন সাহাবীকে বলাবলি করতে শুনলাম যে, আমিরের আমল বরবার হয়ে গেছে, সে আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমিরের আমলগুলি কি বরবার হয়ে গেল? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ (একথা) কে বলেছে? রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনারই কয়েকজন সাহাবী। তিনি বললেন, যারা এরূপ বলেছে তারা মিথ্যা বলেছে এবং তাঁর প্রতিদান সে দু’বার পাবে।
তারপর তিনি আমাকে আলী (রাযিঃ) এর নিকটে পাঠালেন। তখন তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমি এমন এক ব্যক্তিকে (আজ) পতাকা সমর্পণ করব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে এবং (অথবা বলেলন) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। তিনি বলেন, তারপর আমি আলী (রাযিঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম। তখন তাঁর চোখ ব্যাথাগ্রস্থ ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর চোখে থুথু দিলেন আর তাতেই তিনি সুস্থ হলেন। তখন তিনি তাঁর হাতে পতাকা দিলেন।
এবারো মুরাহহাব বেরিয়ে এল এবং কবিতা আওড়াতে লাগল খায়বর জানে যে, আমি মুরাহহাব, যুদ্ধের অস্ত্রে সজ্জিত এক অভিজ্ঞতাপূর্ণ বীর বাহাদুর ব্যক্তি। যখন যুদ্ধ তাঁর লেলিহান শিখা নিয়ে অগ্রসর হয়, তখন আলী (রাযিঃ) বললেন, “আমি সে ব্যক্তি যাকে আমার মা ‘হায়দর’ (সিংহ) নাম রেখেছেন, যার দর্শন বন্য সিংহের মত ভয়ঙ্কর। আমি তাদের (দুশমনদের) প্রতিদান দেই বড় বড় পাত্র দিয়ে (অর্থাৎ তাদের অবলীলায়) হত্যা করি”। এরপর তিনি মুরাহহাবের মাথায় তলোয়ার মারলেন এবং তাকে হত্যা করলেন। তারপর তারই হাতে (খায়বর) বিজয় হল।
ইবরাহীম ......... ইকরিমা ইবনে আম্মার সূত্রেও এই হাদীস সুদীর্ঘরূপে বর্ণনা করেছেন।
রাবী বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বায়আতের জন্য গাছ তলায় ডাকলেন। রাবী বলেন, তারপর লোকদের মধ্যে আমি সর্বাগ্রে বায়আত হলাম। তারপর একে একে অন্যান্য লোকেরাও বায়আত হল। তিনি যখন বায়আত গ্রহণ করতে করতে লোকজনের মধ্যবর্তী স্থানে (অর্থাৎ অর্ধ পরিমাণে) পৌঁছলেন, তখন বললেন, হে সালামা! তুমি বায়আত হও। রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, লোকদের মধ্যে প্রথমেই আমি বায়াআত হয়েছি ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, আবারও হও না! রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে অস্ত্রহীন অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে একটি “জাহাদ” বা “দারাবা” (ঢাল) দান করলেন।
তিনি যখন বায়আত করতে করতে লোকদের শেষপ্রান্তে পৌঁছলেন এবং বললেন, তুমি কি আমার কাছে বায়আত হবে না, হে সালামা! রাবী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো লোকদের মধ্যে প্রথমভাগে এবং মধ্যভাগে (দু’বার) আপনার কাছে বায়আত হয়েছি। তিনি বললেন, আবারও হও না! তখন আমি তৃতীয়বার বায়আত হলাম। এরপর তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! তোমার সেই ঢালটি কোথায় যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম? রাবী (সালামা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার চাচা আমিরের সাথে অস্ত্রবিহীন অবস্থায় আমার দেখা হলে আমি তাকে তা দিয়ে দিয়েছি। রাবী বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি দেখছি পূর্ববর্তী যুগের সেই লোকদের মত, যে বলেছিল, হে আল্লাহ! আমি এমন একজন বন্ধু চাই, যে আমার প্রাণের চাইতেও আমার নিকট অধিক প্রিয় হবে।
এরপরে মুশরিকরা আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালো। আমাদের একপক্ষের লোকজন অন্যপক্ষের শিবিরে যাতায়াত করতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত আমরা উভয় পক্ষ পরস্পরে সন্ধিবদ্ধ হলাম। রাবী [সালাম (রাযিঃ)] বলেন, আমি তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমি তাঁর ঘোড়াকে পানি পান করাতাম এবং তাঁর পিঠ মালিশ করতাম (আঁছড়ে দিতাম) এবং তাঁর অন্যান্য খিদমত করতাম। আমি তার ওখানে খাওয়া দাওয়া করতাম। নিজের পরিবার পরিজন ও ধন সম্পদ পরিত্যাগ করে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের রাহে মুহাজির হয়েছিলাম। রাবী বলেন, তারপর যখন আমরা ও মক্কাবাসীরা সন্ধিতে আব্দ্ধ হলাম এবং আমাদের একপক্ষ অপর পক্ষের সাথে মেলামেশা করতে লাগলাম তখন আমি একটি গাছতলায় গিয়ে তাঁর নীচের কাঁটা প্রভৃতি পরিষ্কার করে তাঁর গোঁড়ায় একটু শুয়ে পড়ি। এমনসময় মক্কাবাসী চারজন মুশরিক এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে অপ্রীতিকর কথা বলতে লাগলো।
আমার কাছে ওদের কথাবার্তা অত্যন্ত খারাপ লাগলো এবং আমি স্থান পরিবর্তন করে আরেকটি গাছের তলায় চলে গেলাম। তারা তাদের অস্ত্র গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল। এমন সময় প্রান্তরের নিম্নাঞ্চল থেকে কে যেন চিৎকার করে বলল, হে মুহাজিরগণ! সাহায্য! ......... ইবনে যুনায়ম নিহত হয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার তরবারী উঠিয়ে ধরলাম এবং ঐ চারজনের উপর আক্রমণ চালালাম। তখন তারা ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাদের অস্ত্রগুলি হস্তগত করলাম এবং তা আটি বেঁধে আমার হাতে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, যে মহান সত্তা মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সম্মানিত করেছেন তাঁর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মাথা তুলে, তবে তাঁর সেই অঙ্গে আঘাত (করে বিচ্ছিন্ন) করব যেখানে তাঁর চোখদুটি রয়েছে (অর্থাৎ ঘাড়ে)।
রাবী বলেন, তারপর তাদেরকে আমি হাঁকিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, এমন সময় আমার চাচা আমির আবালাত’ গোত্রের একজনকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে এসেছেন। তাকে বলা হত মিকরায। সে ছিল আঘাত নিরোধক বস্ত্রাকৃত একটি ঘোড়ায় আসীন। আর তাঁর সাথে সত্তরজন মুশরিক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ “ওদেরকে ছেড়ে দাও, যাতে অপকর্মের সূচনা ওদের পক্ষ থেকেই হয় এবং পুনরাবৃত্তিও তারাই করে” একথা বলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ক্ষমা করে দিলেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ “সেই পবিত্র সত্তা যিনি মক্কা প্রান্তরে তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে বিরত রেখেছেন তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর” (সূরা আন নূরঃ ৪৮) আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
রাবী বলেন, তারপর মদীনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। পথে এমন একটি মনযিলে আমরা অবতরণ করলাম যেখানে আমদের ও লিহয়ান গোত্রের মধ্যে কেবল একটি পাহাড়ের ব্যবধান ছিল। আর তারা ছিল মুশরিক। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকটে দুআ করলেন, যে ব্যক্তি রাতে নবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের পক্ষ থেকে খবরদারীর জন্য পাহাড়ের উপরে আরোহণ করবে। সালামা বলেন, সে রাতে আমি দুই কি তিনবার ঐ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলাম। তারপর আমরা মদীনায় এলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর গোলাম রাবাহকে দিয়ে তাঁর উটগুলি পাঠালেন। আর আমিও তালহা (রাযিঃ) এর ঘোড়ায় চলে তাঁর সাথে সাথে উটগুলি চারণ ভুমির দিকে নিয়ে গেলাম সেটাকে ঘাস পানি খাওয়ানোর জন্য। যখন আমাদের ভোর হল, আব্দুর রহমান ফাজারী চড়াও হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর (বিচরণকৃত) সমস্ত উট ছিনিয়ে নিয়ে গেল এবং তাঁর রাখালকে হত্যা করল। আমি তখন রাবাহকে বললাম, হে রাবাহ! লও এই ঘোড়া নিয়ে তুমি তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহকে পৌঁছে দিও আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সংবাদ দাও যে, মুশরিকরা তাঁর চারণভুমির উটগুলো লুটে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তখন আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম। তারপর মদীনার দিকে মুখ করে তিনবার হাক দিলাম, ইয়া সাবাহা! (ভোরের আক্রমণ)
তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম এবং তাদের উপর তীর নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আর আমি মুখে এই চরণ উচ্চারণ করছিলাম, “আমি আকওয়ার পুত্র, আজ সেই দিন, আজ ইতরকে (শায়েস্তা করার) দিন। আজকে কেমন মায়ের দুধ (খেয়েছ তা স্মরণের দিন)”। তখন আমি তাদের যে কাউকে পেয়েছি, তাঁর উপর এরকমভাবে তীর নিক্ষেপ করেছি যে, তীরের অগ্রভাগ তাঁর কাঁধের কোমল হাড় ছেদ করে বেরিয়েছে। তিনি বলেন, আমি বলতে লাগলাম, এ আঘাত নাও, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরের দিন (দুধপান স্মরণের দিন)। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম এবং ঘায়েল করতে লাগলাম এবং যখনই কোন ঘোড় সওয়ার আমার দিকে ফেরত তখনই আমি গাছের আড়ালে এসে তাঁর গোঁড়ায় বসে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করতাম আর তাকে জখম করে ফেলতাম।
অবশেষে যখন তারা পাহাড়ের সংকীর্ণ পথে আসে এবং তারা সে সংকীর্ণ পথে ঢোকে আমি তখন পাহাড়ের উপর উঠে সেখান থেকে (অবিরাম) তাদের উপর পাথর গড়িয়ে দিতে থাকলাম। তিনি বলেন, এভাবে আমি তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে থাকলাম যে পর্যন্ত না আল্লাহর সৃষ্ট উটগুলোর প্রতিটি উট যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভারবাহী রূপে ছিল তা আমার পিছনে রেখে না যাই। তারা এগুলি আমার আওতায় ফেলে চলে গেল। তারপরও আমি তাদের অনুসরণ করে তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। এমনকি তারা ত্রিশটির বেশী চাঁদর এবং ত্রিশটি বল্লম নিজেদের বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্য ফেলে গেল। তারা যে সব বস্তু ফেলে যাচ্ছিল আমি তাঁর প্রত্যেকটিকে পাথর দিয়ে চিহ্নিত করে যাচ্ছিলাম, যাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ তা চিনতে পারেন।
অবশেষে তারা পাহাড়ের একটি সংকীর্ণ স্থানে গিয়ে পৌঁছল। এমন সময় বদর ফাজারির অমুক পুত্র এসে তাদের সাথে মিলিত হল। এবার তারা সকলে মিলে সকালের খাবার খেতে বসল। আমি পাহাড়ের একটি শৃঙ্গে বসে পড়লাম। তখন সে ফাজারি বলল, ঐ যে লোকটাকে দেখছি সে কে? তারা বলল, লোকটির হাতে আমরা অনেক দুর্ভোগ পোহায়েছি। আল্লাহর কসম! সেই রাতের আধার থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত লোকটা আমাদের পিছন থেকে সরছে না, সে আমাদের প্রতি (অবিরাম) তীর নিক্ষেপ করেছে, এমনকি আমাদের যথাসর্বস্ব সে কেড়ে নিয়েছে। তখন সে বলল, তোমাদের মধ্যকার চারজন উঠে গিয়ে তাঁর উপর চড়াও হও। তখন তাদের চার ব্যক্তি পাহাড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর তারা যখন আমার কথা শোনার মত নিকটবর্তী স্থানে এসে পৌঁছল, তখন আমি বললাম, তোমরা কি আমাকে চেন? তারা বলল, না। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি সালামা ইবনে আকওয়া। কসম সেই পবিত্র সত্তার, যিনি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সম্মানিত করেছেন। আমি তোমাদের যাকেই পেতে চাইব (লক্ষ্য বানাব) তাকে ধরে ফেলব। কিন্তু তোমাদের কেউ চাইলেই আমাকে ধরতে পারবে না।
তখন তাদের একজন বলল, আমিও তাই মনে করি। তিনি বলেন, তারপর তারা ফিরে গেল। আর আমি সেই স্থানেই বসে রইলাম। অবশেষে আমি গাছ গাছালির মাঝ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অশ্বারোহীদের অগ্রসর হতে দেখলাম। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আখারাম আসাদী। তাঁর পিছনে আবু কাতাদা আনসারী। তাঁর পিছনে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ কিন্দী। তিনি বলেন, আমি তখন আখরামের ঘোড়ার লাগাম ধরলাম। তিনি বলেন, তখন তারা (শত্রুরা) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে গেল। আমি বললাম, হে আখরাম! ওদের থেকে সতর্ক থাকবে। তারা যেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ এসে মিলিত হওয়ার পূর্বেই তোমাদের বিচ্ছিন্ন করে না ফেলে। আখারাম বললেন, যে সালামা! তুমি যদি আল্লাহ ও কিয়ামত দিনের প্রতি বিশ্বাসী হও এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে সত্য মনে কর তবে আমার এবং শাহাদতের মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি করো না। সালামা বলেন, তখন আমি তাঁর পথ ছেড়ে দিলাম।
তখন তিনি আব্দুর রহমানের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হলেন। আখরাম আব্দুর রহমানের ঘোড়াকে আহত করলেন, আর আব্দুর রহমান বর্শার আঘাতে তাকে কতল করে দিল এবং আখরামের ঘোড়ার উপর চড়ে বসল। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘোড় সওয়ার আবু কাতাদা (রাযিঃ) এসে পৌঁছলেন। তিনি আব্দুর রহমানকে বর্শার আঘাতে হত্যা করলেন। সেই পবিত্র সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে মর্যাদামণ্ডিত করেছেন, আমি তখন এতই দ্রুতগতিতে তাদের পিছু ধাওয়া করে যাচ্ছিলাম যে, আর পিছনে (অনেক দূর পর্যন্ত) মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কোন সাহাবীকেই দেখতে পেলাম না, এমনকি তাদের ঘোড়ার খুরের ধুলিও আমার দৃষ্টিগোচর হল না। এভাবে চলতে চলতে সূর্যাস্তের প্রাক্কালে তারা এমন একটি গিরিপথে উপনীত হল যেখানে যু-কারাদ নামক একটি প্রস্রবণ রয়েছে। অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তারা পানি পান করতে অবতরণ করল। তখন তারা আমাকে তাদের পিছু ধাওয়া করে দৌড়ে আসতে দেখতে পেল। এক জায়গায় পানি পান করার পূর্বেই আমি সেখান থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দিলাম। তখন তারা পাহাড়ের একটি ঢালু উপত্যকার দিকে দৌড়াতে লাগলো আর আমিও তাদের পিছু ধাওয়া করতে লাগলাম।
আমি তাদের যে কোন একজনের নিকটবর্তী হলে তাঁর কাঁধের অস্থিতে তীর নিক্ষেপ করে বললাম, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরদের (বোঝাবার) দিন (আজ দুধপান স্মরণের দিন)। সে তখন বলল, তাঁর মা (পুত্র হারা হয়ে) তাঁর জন্য কাঁদুক তুমি কি সে আকওয়া যে আমাদের সেই ভোর থেকে অতিষ্ঠ করে রেখেছ? আমি বললাম হ্যাঁ, তোমার জানের দুশমন, (আমি) সেই তোমার ভোরবেলার আকওয়াই। তিনি বলেন, অতঃপর তারা দুটি ক্লান্ত ঘোড়া উপত্যকায় ছেড়ে চলে গেল। তিনি বলেন, তখন আমি ঐ দুটোকে হাকিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে এলাম। তিনি বলেন, সেখানে একটি অল্প দুধভর্তি ‘সাতীহা’ (চামড়ার তৈরী পাত্র) এবং একটি পানিভর্তি সাতীহা নিয়ে এসে আমির আমার সাথে মিলিত হলেন। আমি তখন উযু করলাম এবং (দুধ) পান করলাম। তারপর এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলাম যখন তিনি ঐ পানির কাছে ছিলেন, যা থেকে আমি ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ সমস্ত উট ও মুশরিকদের নিকট থেকে আমার ছিনিয়ে আনা সব কিছু বর্শা ও চাদর প্রভৃতি হস্তগত করেছেন। তখন বিলাল, লোকদের কাছে থেকে আমার উদ্ধারকৃত একটি উট জবাই করেছেন এবং তাঁর কলিজা ও কুজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য ভুনছিলেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সুযোগ দিন, আমি আমাদের লোকদের থেকে একশ জনকে বাছাই করে নিয়ে সেই দুশমনদের পিছু ধাওয়া করি যাতে তাদের সকলকে এমনিভাবে হত্যা করব যে, তাদের খবর বয়ে নিয়ে যাওয়ার মত একটি লোকও অবশিষ্ট থাকবেনা। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনভাবে হাসলেন যে, চুলার আগুনের আভায় তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলি প্রকাশ পেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে সালামা! তুমি কি মনে কর যে, তুমি তা-ই করবে? আমি বললাম হ্যাঁ, সেই পবিত্র সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন। নবী (ﷺ) তখন বললেন, এতক্ষণে তো তারা গাতফান পল্লিতে আতিথ্য ভোগ করছে।
তিনি বলেন, পরে গাতফান গোত্রের একটি লোক এল, সে বলল, অমুক তাদের জন্য একটি উট জবেহ করেছে। তারা যখন তাঁর চামড়া ছড়াচ্ছিল তখন তারা ধুলোরাশি উড়তে দেখতে পায়। তখন তারা বলে উঠল ওরা (আকওয়া ও তাঁর বাহিনী) তোমাদের নিকট এসে পড়েছে। তখন তারা পালিয়ে যায়। এরপর আমাদের ভোর হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমাদের আজকের সেরা অশ্বারোহী হচ্ছে আবু কাতাদা আর আমাদের সেরা পদাতিক হচ্ছে সালামা। তিনি বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসাবে গণিমতের দুই অংশ দিলেন। আমাকে তিনি একত্রে দুই অংশ দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মদীনায় প্রত্যাবর্তন কালে আমাকে তাঁর সাথে তাঁর উটনী আদবার’ পিছনে বসিয়ে নিলেন। তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা পথ অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় আনসারের এমন এক ব্যক্তি যাকে দৌড়ে কেউ পরাজিত করতে পারতো না, সে বলতে লাগলোঃ কেউ কি আছে যে, মদীনায় সর্বপ্রথম পৌছার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করবে? এ কথাটি সে বারবার বলছিল। তিনি বলেন, যখন আমি তাঁর এ (চ্যালেঞ্জমূলক) কথাটি শুনলাম, তখন বললাম, তুমি কি কোন সম্মানিত লোককে সম্মান দিতে জানো না বা কোন ভদ্রলোককেই পরোয়া করবে না? সে বলল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতিত অন্য কাউকে নয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতা মাতা আপনার উপর কোরবান, আপনি আমায় ঐ ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দিন।
তখন তিনি বললেনঃ তোমার ইচ্ছা হলে। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, চল! তারপর আমি লাফ দিয়ে নীচে দৌড় দিলাম। তারপর এক বা দুই টিলা অতিক্রম করার দূরত্বে রইলাম তখন পর্যন্ত আমার দম নিয়ন্ত্রনে রেখে তাঁর পিছু পিছু দৌড় দিলাম। আরও দুই এক টিলা পর্যন্ত ধীরগতিতে চলার পর সাজোরে দৌড় দিয়ে তাঁর নিকট পৌঁছে গেলাম এবং তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘুষি মেরে বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! তুমি হেরে গেছ। তখন সে বলল, আমিও তাই মনে করছি। তিনি বলেন, অতএব আমি তাঁর পূর্বেই মদীনায় পৌঁছে গেলাম।
তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর আমরা তিনরাতের অধিক মদীনায় থাকতে পারিনি। এমনি সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে আমরা খায়বরের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। তিনি বলেন, তখন আমার চাচা আমির (রাযিঃ) প্রেরণামূলক কবিতা আবৃতি করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর অনুগ্রহ না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, সাদ্কাও দিতাম না আর নামাযও আদায় করতাম না। আমরা আপনার অনুগ্রহ থেকে কখনও বেপরওয়া হতে পারি না, তাই আপনি আমাদের কদম দৃঢ় রাখুন, যখন আমরা শত্রুদের সম্মুখীন হই এবং আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি বর্ষণ করুন।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এ ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আমি আমির। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমার রব তোমাকে ক্ষমা করুন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কারো জন্য বিশেষভাবে দুআ করতেন সে শহীদ হত। তিনি বলেন, তখন নিজ উটে বসা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) দুর থেকে আওয়াজ করে বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ! আমিরকে দিয়ে যদি না আমাদের আরো উপকার করতেন? তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা খায়বরে উপস্থিত হলাম, তখন খায়বর অধিপতি মুরাহহাব (মারহাব) তরবারি দোলাতে দোলাতে বেরিয়ে এল এবং বলল, খায়বর জানে যে, আমি মুরাহহাব, পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, অভিজ্ঞতাপূর্ণ এক বীরপুরুষ। রাবী বলেন, আমার চাচা আমির (রাযিঃ) কবিতা আবৃতি করতে করতে বললেন, “খায়বর জানে যে, আমি আমির অস্ত্রে শস্ত্রে সুসজ্জিত যুদ্ধে অবতীর্ণ বীর বাহাদুর নির্ভীক ব্যক্তি।
রাবী বলেন, তারপর তাদের মধ্যে আঘাত বিনিময় হল। আমির (রাযিঃ) নীচে থেকে যখন তাকে আঘাত করতে চাইলেন, তখন তা ফিরে এসে তাঁর নিজের উপরই লাগল। আর তাতে তাঁর পায়ের গোছার সংযোগ শিরা কেটে গিয়ে মৃত্যু হল। (রাবী) সালামা (রাযিঃ) বলেন, তখন আমি বেরোলাম। নবী কারিম (ﷺ) এর কয়েকজন সাহাবীকে বলাবলি করতে শুনলাম যে, আমিরের আমল বরবার হয়ে গেছে, সে আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমিরের আমলগুলি কি বরবার হয়ে গেল? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ (একথা) কে বলেছে? রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনারই কয়েকজন সাহাবী। তিনি বললেন, যারা এরূপ বলেছে তারা মিথ্যা বলেছে এবং তাঁর প্রতিদান সে দু’বার পাবে।
তারপর তিনি আমাকে আলী (রাযিঃ) এর নিকটে পাঠালেন। তখন তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমি এমন এক ব্যক্তিকে (আজ) পতাকা সমর্পণ করব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে এবং (অথবা বলেলন) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। তিনি বলেন, তারপর আমি আলী (রাযিঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম। তখন তাঁর চোখ ব্যাথাগ্রস্থ ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর চোখে থুথু দিলেন আর তাতেই তিনি সুস্থ হলেন। তখন তিনি তাঁর হাতে পতাকা দিলেন।
এবারো মুরাহহাব বেরিয়ে এল এবং কবিতা আওড়াতে লাগল খায়বর জানে যে, আমি মুরাহহাব, যুদ্ধের অস্ত্রে সজ্জিত এক অভিজ্ঞতাপূর্ণ বীর বাহাদুর ব্যক্তি। যখন যুদ্ধ তাঁর লেলিহান শিখা নিয়ে অগ্রসর হয়, তখন আলী (রাযিঃ) বললেন, “আমি সে ব্যক্তি যাকে আমার মা ‘হায়দর’ (সিংহ) নাম রেখেছেন, যার দর্শন বন্য সিংহের মত ভয়ঙ্কর। আমি তাদের (দুশমনদের) প্রতিদান দেই বড় বড় পাত্র দিয়ে (অর্থাৎ তাদের অবলীলায়) হত্যা করি”। এরপর তিনি মুরাহহাবের মাথায় তলোয়ার মারলেন এবং তাকে হত্যা করলেন। তারপর তারই হাতে (খায়বর) বিজয় হল।
ইবরাহীম ......... ইকরিমা ইবনে আম্মার সূত্রেও এই হাদীস সুদীর্ঘরূপে বর্ণনা করেছেন।
باب غَزْوَةِ ذِي قَرَدٍ وَغَيْرِهَا
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ، ح وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ، إِبْرَاهِيمَ أَخْبَرَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، كِلاَهُمَا عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ عَمَّارٍ، ح وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ، عَبْدِ الرَّحْمَنِ الدَّارِمِيُّ - وَهَذَا حَدِيثُهُ - أَخْبَرَنَا أَبُو عَلِيٍّ الْحَنَفِيُّ، عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْمَجِيدِ حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، - وَهُوَ ابْنُ عَمَّارٍ - حَدَّثَنِي إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ، قَدِمْنَا الْحُدَيْبِيَةَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً وَعَلَيْهَا خَمْسُونَ شَاةً لاَ تُرْوِيهَا - قَالَ - فَقَعَدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى جَبَا الرَّكِيَّةِ فَإِمَّا دَعَا وَإِمَّا بَسَقَ فِيهَا - قَالَ - فَجَاشَتْ فَسَقَيْنَا وَاسْتَقَيْنَا . قَالَ ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَعَانَا لِلْبَيْعَةِ فِي أَصْلِ الشَّجَرَةِ . قَالَ فَبَايَعْتُهُ أَوَّلَ النَّاسِ ثُمَّ بَايَعَ وَبَايَعَ حَتَّى إِذَا كَانَ فِي وَسَطٍ مِنَ النَّاسِ قَالَ " بَايِعْ يَا سَلَمَةُ " . قَالَ قُلْتُ قَدْ بَايَعْتُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فِي أَوَّلِ النَّاسِ قَالَ " وَأَيْضًا " . قَالَ وَرَآنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَزِلاً - يَعْنِي لَيْسَ مَعَهُ سِلاَحٌ - قَالَ فَأَعْطَانِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَجَفَةً أَوْ دَرَقَةً ثُمَّ بَايَعَ حَتَّى إِذَا كَانَ فِي آخِرِ النَّاسِ قَالَ " أَلاَ تُبَايِعُنِي يَا سَلَمَةُ " . قَالَ قُلْتُ قَدْ بَايَعْتُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فِي أَوَّلِ النَّاسِ وَفِي أَوْسَطِ النَّاسِ قَالَ " وَأَيْضًا " . قَالَ فَبَايَعْتُهُ الثَّالِثَةَ ثُمَّ قَالَ لِي " يَا سَلَمَةُ أَيْنَ حَجَفَتُكَ أَوْ دَرَقَتُكَ الَّتِي أَعْطَيْتُكَ " . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقِيَنِي عَمِّي عَامِرٌ عَزِلاً فَأَعْطَيْتُهُ إِيَّاهَا - قَالَ - فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ " إِنَّكَ كَالَّذِي قَالَ الأَوَّلُ اللَّهُمَّ أَبْغِنِي حَبِيبًا هُوَ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ نَفْسِي " . ثُمَّ إِنَّ الْمُشْرِكِينَ رَاسَلُونَا الصُّلْحَ حَتَّى مَشَى بَعْضُنَا فِي بَعْضٍ وَاصْطَلَحْنَا . قَالَ وَكُنْتُ تَبِيعًا لِطَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ أَسْقِي فَرَسَهُ وَأَحُسُّهُ وَأَخْدُمُهُ وَآكُلُ مِنْ طَعَامِهِ وَتَرَكْتُ أَهْلِي وَمَالِي مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَلَمَّا اصْطَلَحْنَا نَحْنُ وَأَهْلُ مَكَّةَ وَاخْتَلَطَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ أَتَيْتُ شَجَرَةً فَكَسَحْتُ شَوْكَهَا فَاضْطَجَعْتُ فِي أَصْلِهَا - قَالَ - فَأَتَانِي أَرْبَعَةٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَجَعَلُوا يَقَعُونَ فِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَبْغَضْتُهُمْ فَتَحَوَّلْتُ إِلَى شَجَرَةٍ أُخْرَى وَعَلَّقُوا سِلاَحَهُمْ وَاضْطَجَعُوا فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ نَادَى مُنَادٍ مِنْ أَسْفَلِ الْوَادِي يَا لَلْمُهَاجِرِينَ قُتِلَ ابْنُ زُنَيْمٍ . قَالَ فَاخْتَرَطْتُ سَيْفِي ثُمَّ شَدَدْتُ عَلَى أُولَئِكَ الأَرْبَعَةِ وَهُمْ رُقُودٌ فَأَخَذْتُ سِلاَحَهُمْ . فَجَعَلْتُهُ ضِغْثًا فِي يَدِي قَالَ ثُمَّ قُلْتُ وَالَّذِي كَرَّمَ وَجْهَ مُحَمَّدٍ لاَ يَرْفَعُ أَحَدٌ مِنْكُمْ رَأْسَهُ إِلاَّ ضَرَبْتُ الَّذِي فِيهِ عَيْنَاهُ . قَالَ ثُمَّ جِئْتُ بِهِمْ أَسُوقُهُمْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ - وَجَاءَ عَمِّي عَامِرٌ بِرَجُلٍ مِنَ الْعَبَلاَتِ يُقَالُ لَهُ مِكْرَزٌ . يَقُودُهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى فَرَسٍ مُجَفَّفٍ فِي سَبْعِينَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَنَظَرَ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " دَعُوهُمْ يَكُنْ لَهُمْ بَدْءُ الْفُجُورِ وَثِنَاهُ " فَعَفَا عَنْهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنْزَلَ اللَّهُ ( وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ) الآيَةَ كُلَّهَا . قَالَ ثُمَّ خَرَجْنَا رَاجِعِينَ إِلَى الْمَدِينَةِ فَنَزَلْنَا مَنْزِلاً بَيْنَنَا وَبَيْنَ بَنِي لَحْيَانَ جَبَلٌ وَهُمُ الْمُشْرِكُونَ فَاسْتَغْفَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمَنْ رَقِيَ هَذَا الْجَبَلَ اللَّيْلَةَ كَأَنَّهُ طَلِيعَةٌ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ - قَالَ سَلَمَةُ - فَرَقِيتُ تِلْكَ اللَّيْلَةَ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِظَهْرِهِ مَعَ رَبَاحٍ غُلاَمِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا مَعَهُ وَخَرَجْتُ مَعَهُ بِفَرَسِ طَلْحَةَ أُنَدِّيهِ مَعَ الظَّهْرِ فَلَمَّا أَصْبَحْنَا إِذَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْفَزَارِيُّ قَدْ أَغَارَ عَلَى ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَاقَهُ أَجْمَعَ وَقَتَلَ رَاعِيَهُ قَالَ فَقُلْتُ يَا رَبَاحُ خُذْ هَذَا الْفَرَسَ فَأَبْلِغْهُ طَلْحَةَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ وَأَخْبِرْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ الْمُشْرِكِينَ قَدْ أَغَارُوا عَلَى سَرْحِهِ - قَالَ - ثُمَّ قُمْتُ عَلَى أَكَمَةٍ فَاسْتَقْبَلْتُ الْمَدِينَةَ فَنَادَيْتُ ثَلاَثًا يَا صَبَاحَاهْ . ثُمَّ خَرَجْتُ فِي آثَارِ الْقَوْمِ أَرْمِيهِمْ بِالنَّبْلِ وَأَرْتَجِزُ أَقُولُ أَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمَ يَوْمُ الرُّضَّعِ فَأَلْحَقُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَصُكُّ سَهْمًا فِي رَحْلِهِ حَتَّى خَلَصَ نَصْلُ السَّهْمِ إِلَى كَتِفِهِ - قَالَ - قُلْتُ خُذْهَا وَأَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمُ يَوْمُ الرُّضَّعِ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا زِلْتُ أَرْمِيهِمْ وَأَعْقِرُ بِهِمْ فَإِذَا رَجَعَ إِلَىَّ فَارِسٌ أَتَيْتُ شَجَرَةً فَجَلَسْتُ فِي أَصْلِهَا ثُمَّ رَمَيْتُهُ فَعَقَرْتُ بِهِ حَتَّى إِذَا تَضَايَقَ الْجَبَلُ فَدَخَلُوا فِي تَضَايُقِهِ عَلَوْتُ الْجَبَلَ فَجَعَلْتُ أُرَدِّيهِمْ بِالْحِجَارَةِ - قَالَ - فَمَا زِلْتُ كَذَلِكَ أَتْبَعُهُمْ حَتَّى مَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ بَعِيرٍ مِنْ ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ خَلَّفْتُهُ وَرَاءَ ظَهْرِي وَخَلَّوْا بَيْنِي وَبَيْنَهُ ثُمَّ اتَّبَعْتُهُمْ أَرْمِيهِمْ حَتَّى أَلْقَوْا أَكْثَرَ مِنْ ثَلاَثِينَ بُرْدَةً وَثَلاَثِينَ رُمْحًا يَسْتَخِفُّونَ وَلاَ يَطْرَحُونَ شَيْئًا إِلاَّ جَعَلْتُ عَلَيْهِ آرَامًا مِنَ الْحِجَارَةِ يَعْرِفُهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ حَتَّى أَتَوْا مُتَضَايِقًا مِنْ ثَنِيَّةٍ فَإِذَا هُمْ قَدْ أَتَاهُمْ فُلاَنُ بْنُ بَدْرٍ الْفَزَارِيُّ فَجَلَسُوا يَتَضَحَّوْنَ - يَعْنِي يَتَغَدَّوْنَ - وَجَلَسْتُ عَلَى رَأْسِ قَرْنٍ قَالَ الْفَزَارِيُّ مَا هَذَا الَّذِي أَرَى قَالُوا لَقِينَا مِنْ هَذَا الْبَرْحَ وَاللَّهِ مَا فَارَقَنَا مُنْذُ غَلَسٍ يَرْمِينَا حَتَّى انْتَزَعَ كُلَّ شَىْءٍ فِي أَيْدِينَا . قَالَ فَلْيَقُمْ إِلَيْهِ نَفَرٌ مِنْكُمْ أَرْبَعَةٌ . قَالَ فَصَعِدَ إِلَىَّ مِنْهُمْ أَرْبَعَةٌ فِي الْجَبَلِ - قَالَ - فَلَمَّا أَمْكَنُونِي مِنَ الْكَلاَمِ - قَالَ - قُلْتُ هَلْ تَعْرِفُونِي قَالُوا لاَ وَمَنْ أَنْتَ قَالَ قُلْتُ أَنَا سَلَمَةُ بْنُ الأَكْوَعِ وَالَّذِي كَرَّمَ وَجْهَ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم لاَ أَطْلُبُ رَجُلاً مِنْكُمْ إِلاَّ أَدْرَكْتُهُ وَلاَ يَطْلُبُنِي رَجُلٌ مِنْكُمْ . فَيُدْرِكَنِي قَالَ أَحَدُهُمْ أَنَا أَظُنُّ . قَالَ فَرَجَعُوا فَمَا بَرِحْتُ مَكَانِي حَتَّى رَأَيْتُ فَوَارِسَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَخَلَّلُونَ الشَّجَرَ - قَالَ - فَإِذَا أَوَّلُهُمُ الأَخْرَمُ الأَسَدِيُّ عَلَى إِثْرِهِ أَبُو قَتَادَةَ الأَنْصَارِيُّ وَعَلَى إِثْرِهِ الْمِقْدَادُ بْنُ الأَسْوَدِ الْكِنْدِيُّ - قَالَ - فَأَخَذْتُ بِعِنَانِ الأَخْرَمِ - قَالَ - فَوَلَّوْا مُدْبِرِينَ قُلْتُ يَا أَخْرَمُ احْذَرْهُمْ لاَ يَقْتَطِعُوكَ حَتَّى يَلْحَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ . قَالَ يَا سَلَمَةُ إِنْ كُنْتَ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتَعْلَمُ أَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ وَالنَّارَ حَقٌّ فَلاَ تَحُلْ بَيْنِي وَبَيْنَ الشَّهَادَةِ . قَالَ فَخَلَّيْتُهُ فَالْتَقَى هُوَ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ - قَالَ - فَعَقَرَ بِعَبْدِ الرَّحْمَنِ فَرَسَهُ وَطَعَنَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ فَقَتَلَهُ وَتَحَوَّلَ عَلَى فَرَسِهِ وَلَحِقَ أَبُو قَتَادَةَ فَارِسُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِعَبْدِ الرَّحْمَنِ فَطَعَنَهُ فَقَتَلَهُ فَوَالَّذِي كَرَّمَ وَجْهَ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم لَتَبِعْتُهُمْ أَعْدُو عَلَى رِجْلَىَّ حَتَّى مَا أَرَى وَرَائِي مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم وَلاَ غُبَارِهِمْ شَيْئًا حَتَّى يَعْدِلُوا قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى شِعْبٍ فِيهِ مَاءٌ يُقَالُ لَهُ ذُو قَرَدٍ لِيَشْرَبُوا مِنْهُ وَهُمْ عِطَاشٌ - قَالَ - فَنَظَرُوا إِلَىَّ أَعْدُو وَرَاءَهُمْ فَحَلَّيْتُهُمْ عَنْهُ - يَعْنِي أَجْلَيْتُهُمْ عَنْهُ - فَمَا ذَاقُوا مِنْهُ قَطْرَةً - قَالَ - وَيَخْرُجُونَ فَيَشْتَدُّونَ فِي ثَنِيَّةٍ - قَالَ - فَأَعْدُو فَأَلْحَقُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَصُكُّهُ بِسَهْمٍ فِي نُغْضِ كَتِفِهِ . قَالَ قُلْتُ خُذْهَا وَأَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمَ يَوْمُ الرُّضَّعِ قَالَ يَا ثَكِلَتْهُ أُمُّهُ أَكْوَعُهُ بُكْرَةَ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ يَا عَدُوَّ نَفْسِهِ أَكْوَعُكَ بُكْرَةَ - قَالَ - وَأَرْدَوْا فَرَسَيْنِ عَلَى ثَنِيَّةٍ قَالَ فَجِئْتُ بِهِمَا أَسُوقُهُمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ - وَلَحِقَنِي عَامِرٌ بِسَطِيحَةٍ فِيهَا مَذْقَةٌ مِنْ لَبَنٍ وَسَطِيحَةٍ فِيهَا مَاءٌ فَتَوَضَّأْتُ وَشَرِبْتُ ثُمَّ أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ عَلَى الْمَاءِ الَّذِي حَلَّيْتُهُمْ عَنْهُ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أَخَذَ تِلْكَ الإِبِلَ وَكُلَّ شَىْءٍ اسْتَنْقَذْتُهُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَكُلَّ رُمْحٍ وَبُرْدَةٍ وَإِذَا بِلاَلٌ نَحَرَ نَاقَةً مِنَ الإِبِلِ الَّذِي اسْتَنْقَذْتُ مِنَ الْقَوْمِ وَإِذَا هُوَ يَشْوِي لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ كَبِدِهَا وَسَنَامِهَا - قَالَ - قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلِّنِي فَأَنْتَخِبُ مِنَ الْقَوْمِ مِائَةَ رَجُلٍ فَأَتَّبِعُ الْقَوْمَ فَلاَ يَبْقَى مِنْهُمْ مُخْبِرٌ إِلاَّ قَتَلْتُهُ - قَالَ - فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ فِي ضَوْءِ النَّارِ فَقَالَ " يَا سَلَمَةُ أَتُرَاكَ كُنْتَ فَاعِلاً " . قُلْتُ نَعَمْ وَالَّذِي أَكْرَمَكَ . فَقَالَ " إِنَّهُمُ الآنَ لَيُقْرَوْنَ فِي أَرْضِ غَطَفَانَ " . قَالَ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ غَطَفَانَ فَقَالَ نَحَرَ لَهُمْ فُلاَنٌ جَزُورًا فَلَمَّا كَشَفُوا جِلْدَهَا رَأَوْا غُبَارًا فَقَالُوا أَتَاكُمُ الْقَوْمُ فَخَرَجُوا هَارِبِينَ . فَلَمَّا أَصْبَحْنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كَانَ خَيْرَ فُرْسَانِنَا الْيَوْمَ أَبُو قَتَادَةَ وَخَيْرَ رَجَّالَتِنَا سَلَمَةُ " . قَالَ ثُمَّ أَعْطَانِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَهْمَيْنِ سَهْمُ الْفَارِسِ وَسَهْمُ الرَّاجِلِ فَجَمَعَهُمَا لِي جَمِيعًا ثُمَّ أَرْدَفَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَاءَهُ عَلَى الْعَضْبَاءِ رَاجِعِينَ إِلَى الْمَدِينَةِ - قَالَ - فَبَيْنَمَا نَحْنُ نَسِيرُ قَالَ وَكَانَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ لاَ يُسْبَقُ شَدًّا - قَالَ - فَجَعَلَ يَقُولُ أَلاَ مُسَابِقٌ إِلَى الْمَدِينَةِ هَلْ مِنْ مُسَابِقٍ فَجَعَلَ يُعِيدُ ذَلِكَ - قَالَ - فَلَمَّا سَمِعْتُ كَلاَمَهُ قُلْتُ أَمَا تُكْرِمُ كَرِيمًا وَلاَ تَهَابُ شَرِيفًا قَالَ لاَ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي وَأُمِّي ذَرْنِي فَلأُسَابِقَ الرَّجُلَ قَالَ " إِنْ شِئْتَ " . قَالَ قُلْتُ اذْهَبْ إِلَيْكَ وَثَنَيْتُ رِجْلَىَّ فَطَفَرْتُ فَعَدَوْتُ - قَالَ - فَرَبَطْتُ عَلَيْهِ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ أَسْتَبْقِي نَفَسِي ثُمَّ عَدَوْتُ فِي إِثْرِهِ فَرَبَطْتُ عَلَيْهِ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ ثُمَّ إِنِّي رَفَعْتُ حَتَّى أَلْحَقَهُ - قَالَ - فَأَصُكُّهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ - قَالَ - قُلْتُ قَدْ سُبِقْتَ وَاللَّهِ قَالَ أَنَا أَظُنُّ . قَالَ فَسَبَقْتُهُ إِلَى الْمَدِينَةِ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا لَبِثْنَا إِلاَّ ثَلاَثَ لَيَالٍ حَتَّى خَرَجْنَا إِلَى خَيْبَرَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَجَعَلَ عَمِّي عَامِرٌ يَرْتَجِزُ بِالْقَوْمِ تَاللَّهِ لَوْلاَ اللَّهُ مَا اهْتَدَيْنَا وَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا وَنَحْنُ عَنْ فَضْلِكَ مَا اسْتَغْنَيْنَا فَثَبِّتِ الأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَا وَأَنْزِلَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ هَذَا " . قَالَ أَنَا عَامِرٌ . قَالَ " غَفَرَ لَكَ رَبُّكَ " . قَالَ وَمَا اسْتَغْفَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لإِنْسَانٍ يَخُصُّهُ إِلاَّ اسْتُشْهِدَ . قَالَ فَنَادَى عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَهُوَ عَلَى جَمَلٍ لَهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ لَوْلاَ مَا مَتَّعْتَنَا بِعَامِرٍ . قَالَ فَلَمَّا قَدِمْنَا خَيْبَرَ قَالَ خَرَجَ مَلِكُهُمْ مَرْحَبٌ يَخْطِرُ بِسَيْفِهِ وَيَقُولُ قَدْ عَلِمَتْ خَيْبَرُ أَنِّي مَرْحَبُ شَاكِي السِّلاَحِ بَطَلٌ مُجَرَّبُ إِذَا الْحُرُوبُ أَقْبَلَتْ تَلَهَّبُ قَالَ وَبَرَزَ لَهُ عَمِّي عَامِرٌ فَقَالَ قَدْ عَلِمَتْ خَيْبَرُ أَنِّي عَامِرٌ شَاكِي السِّلاَحِ بَطَلٌ مُغَامِرٌ قَالَ فَاخْتَلَفَا ضَرْبَتَيْنِ فَوَقَعَ سَيْفُ مَرْحَبٍ فِي تُرْسِ عَامِرٍ وَذَهَبَ عَامِرٌ يَسْفُلُ لَهُ فَرَجَعَ سَيْفُهُ عَلَى نَفْسِهِ فَقَطَعَ أَكْحَلَهُ فَكَانَتْ فِيهَا نَفْسُهُ . قَالَ سَلَمَةُ فَخَرَجْتُ فَإِذَا نَفَرٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُونَ بَطَلَ عَمَلُ عَامِرٍ قَتَلَ نَفْسَهُ قَالَ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبْكِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بَطَلَ عَمَلُ عَامِرٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ قَالَ ذَلِكَ " . قَالَ قُلْتُ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِكَ . قَالَ " كَذَبَ مَنْ قَالَ ذَلِكَ بَلْ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ " . ثُمَّ أَرْسَلَنِي إِلَى عَلِيٍّ وَهُوَ أَرْمَدُ فَقَالَ " لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أَوْ يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ " . قَالَ فَأَتَيْتُ عَلِيًّا فَجِئْتُ بِهِ أَقُودُهُ وَهُوَ أَرْمَدُ حَتَّى أَتَيْتُ بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَسَقَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ وَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ وَخَرَجَ مَرْحَبٌ فَقَالَ قَدْ عَلِمَتْ خَيْبَرُ أَنِّي مَرْحَبُ شَاكِي السِّلاَحِ بَطَلٌ مُجَرَّبُ إِذَا الْحُرُوبُ أَقْبَلَتْ تَلَهَّبُ فَقَالَ عَلِيٌّ أَنَا الَّذِي سَمَّتْنِي أُمِّي حَيْدَرَهْ كَلَيْثِ غَابَاتٍ كَرِيهِ الْمَنْظَرَهْ أُوفِيهِمُ بِالصَّاعِ كَيْلَ السَّنْدَرَهْ قَالَ فَضَرَبَ رَأْسَ مَرْحَبٍ فَقَتَلَهُ ثُمَّ كَانَ الْفَتْحُ عَلَى يَدَيْهِ .
قَالَ إِبْرَاهِيمُ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَارِثِ، عَنْ عِكْرِمَةَ، بْنِ عَمَّارٍ بِهَذَا الْحَدِيثِ بِطُولِهِ
قَالَ إِبْرَاهِيمُ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَارِثِ، عَنْ عِكْرِمَةَ، بْنِ عَمَّارٍ بِهَذَا الْحَدِيثِ بِطُولِهِ

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৪৫২৮
আন্তর্জাতিক নং: ১৮০৭-২
৪৫. যু-কারদ ও অন্যান্য যুদ্ধ
৪৫২৮। আহমাদ ইবনে ইউসুফ আযদী সুলামী (রাহঃ) ......... ইকরিমা ইবনে আম্মার (রাযিঃ) এর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
باب غَزْوَةِ ذِي قَرَدٍ وَغَيْرِهَا
وَحَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْدِيُّ السُّلَمِيُّ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ، عَمَّارٍ بِهَذَا .

তাহকীক: