রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

৫. ঘুমানো ও মজলিসের আদব - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৩১ টি

হাদীস নং: ৮৩৩
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৩ মজলিস ও মজলিসের সঙ্গীদের সম্পর্কিত আদব-কায়দা
মজলিস শেষে পড়ার আরেকটি দু'আ
হাদীছ নং: ৮৩৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন, এমন কমই হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও মজলিস থেকে উঠেছেন আর এই দু'আগুলো পড়েননি-
اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيْكَ، وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ، وَمِنَ الْيَقِيْنِ مَا تُهَوِّنُ عَلَيْنَا مَصَائِبَ الدُّنْيَا، اللَّهُمَّ مَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا، وَأَبْصَارِنَا، وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا، وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا ، وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا، وَلَا تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا، وَلَا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا، وَلَا مَبْلَغَ عِلْمِنَا، وَلَا تُسَلِّطُ عَلَيْنَا مَنْ لَا يَرْحَمُنَا
হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার এ পরিমাণ ভীতি দান করো, যা আমাদের ও তোমার নাফরমানির মাঝখানে প্রতিবন্ধক হবে; আমাদেরকে তোমার এ পরিমাণ আনুগত্য দান করো, যা দ্বারা তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছাবে এবং এ পরিমাণ ইয়াকীন ও বিশ্বাস দান করো, যা আমাদের জন্য দুনিয়ার বালা- মসিবতকে সহজ করে দেবে। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে যতদিন জীবিত রাখ, ততোদিন আমাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য শক্তি দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করো এবং এগুলোকে আমাদের ওয়ারিছ বানিয়ে দিয়ো। যে আমাদের উপর জুলুম করেছে, আমাদের পক্ষে তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করো। যে আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করে, তার বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো। আমাদের দীনের কোনও বিষয়ে আমাদেরকে বিপদ দিয়ো না। দুনিয়াকে বানিয়ো না আমাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ও আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমানা। যারা আমাদের প্রতি সদয় নয়, তাদেরকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ৩৫০২; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ১০১৬১; মুসনাদুল বাযযার: ৫৯৮৯; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লা ৪৪৬; আবূ বকর আহমাদ দীনাওয়ারী, আল মুজালাসা ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম: ৭২৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৩৭৪)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب في آداب المجلس والجليس
833 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: قَلَّمَا كَانَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يَقُومُ مِنْ مَجْلِسٍ حَتَّى يَدْعُوَ بِهؤلاء الدَّعَواتِ: «اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ، وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ، وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ عَلَيْنَا مَصَائِبَ الدُّنْيَا، اللَّهُمَّ مَتِّعْنَا [ص:261] بأسْمَاعِنا، وَأَبْصَارِنَا، وقُوَّتِنَا مَا أحْيَيْتَنَا، وَاجْعَلْهُ الوارثَ مِنَّا، وَاجْعَلْ ثَأرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا، وَلاَ تَجْعَلْ مُصيبَتَنَا فِي دِينِنَا، وَلاَ تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا، وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا، وَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لاَ يَرْحَمُنَا». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
হাদীস নং: ৮৩৪
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৩ মজলিস ও মজলিসের সঙ্গীদের সম্পর্কিত আদব-কায়দা
আল্লাহ তা'আলার যিকিরবিহীন মজলিস ও এরূপ মজলিসে অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টান্ত
হাদীছ নং: ৮৩৪

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারাই এমন কোনও মজলিস থেকে ওঠে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করে না, তারা যেন ওঠে গাধার মড়া থেকে। আর সে মজলিস তাদের জন্য হবে আক্ষেপ। -আবু দাউদ'
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮৫৫; মুসনাদুল বাযযার: ৯০৯৯)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب في آداب المجلس والجليس
834 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى فِيهِ، إِلاَّ قَامُوا عَنْ مِثْل جِيفَةِ حِمَارٍ، وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةٌ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح. (1)
হাদীস নং: ৮৩৫
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৩ মজলিস ও মজলিসের সঙ্গীদের সম্পর্কিত আদব-কায়দা
যে মজলিসে যিকির ও দরূদ পড়া হয় না
হাদীছ নং: ৮৩৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারাই এমন কোনও মজলিসে বসে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করে না এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদ পড়ে না, তাদের জন্য সে মজলিস ক্ষতির কারণ হবে। আল্লাহ চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আর চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।-তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ৩৩৮০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ৭৭৫১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক : ২০৭১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৫৭৭২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১২৫৪)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب في آداب المجلس والجليس
835 - وعنه، عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا الله تَعَالَى فِيهِ، وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ فِيهِ، إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةٌ؛ فَإنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ، وَإنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
হাদীস নং: ৮৩৬
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৩ মজলিস ও মজলিসের সঙ্গীদের সম্পর্কিত আদব-কায়দা
যে মজলিসে যিকির ও দরূদ পড়া হয় না
হাদীছ নং: ৮৩৬

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা। ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও বৈঠকে বসল অথচ আল্লাহর যিকির করল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে। যে ব্যক্তি কোনও স্থানে শুইল আল্লাহর যিকির করল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে। -আবু দাউদ
(সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৫৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ১০৫৮৫; তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়‍্যীন: ১৩২৪; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান ৫৪১)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب في آداب المجلس والجليس
836 - وعنه، عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ قَعَدَ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُر الله تَعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةٌ، وَمَنْ اضْطَجَعَ مَضْجَعًا لاَ يَذْكُرُ الله تَعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةٌ». رواه أَبُو داود. (1)
وَقَدْ سبق قريبًا، وشَرَحْنَا «التِّرَة» فِيهِ.
হাদীস নং: ৮৩৭
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি

الرؤيا এর অর্থ দেখা। এর মূল ধাতু رؤية । সাধারণভাবে যে-কোনও দেখাকে رؤية বলে। মানুষ যেমন জাগ্রত অবস্থায় দেখে,তেমনি ঘুমন্ত অবস্থায়ও। যেমন কুরআন মাজীদে আছে, হযরত ইয়সুফ আলাইহিস সালাম বলেছিলেন-

إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ …
'আমি স্বপ্নে দেখছি...।' (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২)
ঘুমন্ত অবস্থায় দেখাকে স্বপ্ন বলে। তাই দুই দেখার জন্য শব্দটির দুই রূপ ব্যবহৃত হয়। জাগ্রত অবস্থায় দেখার অর্থে 'رؤية আর ঘুমন্ত অবস্থায় দেখার অর্থে رؤيا ।
স্বপ্ন অর্থে আরও একটি শব্দের ব্যবহার আছে। তা হল حُلُم, বহুবচনে أحلام। তবে رؤيا ও حلم এর মধ্যে পার্থক্য আছে। حلم বলা হয় ভয় ও উদ্বেগ জাতীয় স্বপ্নকে, যার সম্পর্ক অতীত ও বর্তমান উভয় অবস্থার সঙ্গে হয়ে থাকে। মানুষ ক্লান্ত, অসুস্থ কিংবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে এ জাতীয় স্বপ্ন দেখে। সাধারণত এ জাতীয় স্বপ্ন হয় অসংলগ্ন ও বিক্ষিপ্ত ধরনের। পক্ষান্তরে رؤيا 'বলা হয় এমন স্বপ্নকে, যার সম্পর্ক হয় ভবিষ্যতের সঙ্গে, অতীতের সঙ্গে নয়।
স্বপ্ন কখনও হয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আবার কখনও হয় তা শয়তানের কারসাজি। অনেক সময় অবচেতন মন জাগ্রত অবস্থার বিভিন্ন বিষয় কল্পনা করে। এরূপ কল্পনাকেও আমরা স্বপ্ন বলে থাকি। তাহলে স্বপ্ন তিন রকম হল। হাদীছেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
الرُّؤْيَا ثَلاَثَةٌ فَرؤْيَا الصَّالِحَة بُشْرَى مِنَ اللهِ وَالرُّؤْيَا تَحْزِينٌ مِنَ الشَّيْطَانِ وَالرُّؤْيَا مِنَ الشَّيْءِ يُحَدِّثُ بِهِ المرؤ نَفْسَهُ
'স্বপ্ন তিন প্রকার। সত্য-সঠিক স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। শয়তাদে পক্ষ থেকে দুশ্চিন্তাজনক স্বপ্ন। ওই স্বপ্ন, যা মানুষ নিজ মনে কল্পনা করে।'
(সহীহ মুসলিম: ২২৬৩; সুনানে আবূ দাউদ: ৫০১৯; জামে তিরমিযী: ২২৭০: নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১০৬৮০; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮১৭৪; মুসনাদে আহমাদ: ৭৬৩০ সুনানে দারিমী: ২১৮৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩০৫০৯; মুসনাদুল বাযযার: ৯৮২৮। বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৪৪৩০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩২৭৯)
অর্থাৎ সব স্বপ্নই সত্যিকারের স্বপ্ন নয়। তাই যে-কোনও স্বপ্নের ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। ব্যাখ্যা থাকেও না। ব্যাখ্যা থাকে কেবল সেই স্বপ্নের, যা সত্যিকারের স্বপ্ন অর্থাৎ যা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হয়। যে স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে নয় তা দেখলে শুধু শুধু পেরেশান হতে নেই। তাকে অবাস্তব ঠাওরিয়ে শান্তমনে আপন কাজে লেগে থাকাই শ্রেয়।
সত্য-সঠিক স্বপ্ন এরকম যে, মানুষ ঘুমের ভেতর তার রূহানী দৃষ্টি দ্বারা ভবিষ্যতে ঘটবে এমন বিভিন্ন বিষয় জানতে পারে এবং বাস্তবে তা সত্যও হয়ে থাকে। এরূপ স্বপ্ন তিন প্রকার।
(ক) এমন সত্য স্বপ্ন, যা ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না। বাস্তবে যেমন ঘটবে হুবহু। তেমনই দেখা হয়। যেমন পুত্র জবাই সম্পর্কে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্বপ্ন।
(খ) এমন সত্য স্বপ্ন, যার কিছুটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়। যেমন হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্ন। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন এগারোটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্র তাঁকে সিজদা করছে। পরে ঘটেছিল এমন যে, তাঁর সম্মানার্থে তাঁর পিতা-মাতাও এগারো ভাই তাঁর সামনে সিজদা করে।
(গ) এমন সত্য স্বপ্ন, যা পুরোপুরি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উপর নির্ভরশীল। যেমন কারাগারে হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালামের দুই সঙ্গীর দেখা স্বপ্ন কিংবা মিশরের বাদশার দেখা স্বপ্ন। সে স্বপ্ন ও হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাম কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা সূরা ইয়ূসুফে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বপ্ন দেখেছেন। তার প্রতিটি বাস্তবে ঘটেছে। তাঁর নবুওয়াতের সূচনাও সত্যস্বপ্ন দ্বারাই হয়েছিল। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন-
أول ما بدئ به رسول الله صلى الله عليه وسلم من الوحي الرؤيا الصالحة في النوم، فكان لا يرى رؤيا إلا جاءت مثل فلق الصبح
'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সর্বপ্রথম যে ওহী আসে তা ছিল ঘুমের ভেতর সত্য-সঠিক স্বপ্ন। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা ভোরের আলোর মতো সঠিক হয়ে দেখা দিত’।
(সহীহ বুখারী: ৩; সহীহ মুসলিম: ১৬০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৩৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ৯৭১৯; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহূয়াহ: ৮৪০; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৪৮৪৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৭৭২১)
সত্য ও নবী-রাসুলগণের স্বপ্ন ওহীর মর্যাদা রাখে। তাঁদের স্বপ্ন হত সর্বাপেক্ষা উচ্চপর্যায়ের। তাই তাঁদের স্বপ্ন দ্বারা বিধান প্রতিষ্ঠিত হত এবং তা অনুসরণযোগ্য হত। সত্য ও সঠিক স্বপ্ন সাধারণ মানুষও দেখে থাকে। তবে তা ওই মর্যাদা রাখে না। তাই তাদের স্বপ্ন ভালো কিছুর প্রতি ইঙ্গিতবাহী হয় বটে, কিন্তু তার অনুসরণ অপরিহার্য হয় না। এমনকি শরী'আতের পরিপন্থি হয়, তবে জায়েযই হয় না।
স্বপ্ন প্রত্যেকেই দেখে। এটা মানবজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। ভালো হোক বা মন্দ, যে-কোনও প্রকারের স্বপ্ন মানুষ মাত্রই দেখে থাকে। তা মানুষকে প্রভাবিতও করে। মানুষ ভালো স্বপ্ন দেখলে খুশি হয়। মন্দ স্বপ্ন দেখলে মন খারাপ হয়। কখনও আতঙ্কিতও হয়। স্বপ্ন দেখে মানুষ কাজে উজ্জীবিত হয়। আবার স্বপ্ন দেখে দমেও যায়। যেহেতু মানবজীবনে স্বপ্নের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে, তাই ইসলাম একে উপেক্ষা করেনি; বরং ভারসাম্যপূর্ণ একটা গুরুত্বও দিয়েছে। একদম উড়িয়েও দেয়নি, যেমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়। আবার একে এমন বড় করেও দেখেনি যে, সবকিছুকে এর উপর নির্ভরশীল করে রাখা হবে। ইসলাম স্বপ্নকে একটা মাঝামাঝি অবস্থান দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষ ভবিষ্যৎ বিষয়ে কোনও সুসংবাদ লাভ করতে পারে। পেতে পারে সতর্ক সংকেতও। স্বপ্নে দেখা বিষয় শরী'আতবিরোধী না হলে মানুষ তা অনুসরণও করতে পারে। মোটকথা শরী'আতের মর্যাদাসম্পন্ন না হলেও এক পর্যায়ের জ্ঞান মানুষ স্বপ্ন দ্বারা অর্জন করতে পারে। বস্তুত সবকিছু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকেই হয়। তিনি যেমন জাগ্রত অবস্থায় মানুষের অন্তরে ইলম ও জ্ঞান সঞ্চারিত করে থাকেন, তেমনি ঘুমন্ত মানুষের অন্তরেও যে-কোনও বিষয়ের অনুভূতি দান করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে অনুভূতিশক্তি কার্যকর রাখা বা বিলোপ করা ঘুম ও জাগরণের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এটা সম্পূর্ণই আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাধীন। তিনি চাইলে জাগ্রত অবস্থায়ও মানুষের ইন্দ্রিয়সমূহ নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন আবার চাইলে ঘুমন্ত অবস্থায়ও অনুভূতির শক্তি দিতে পারেন।
মোটকথা স্বপ্নের একটা বাস্তবতা অবশ্যই আছে। তবে মনে রাখতে হবে দীনের এমন কোনও বিষয় নয়, যার ভিত্তিতে কারও বিশেষ কোনও মর্যাদা নিরূপিত হতে পারে। স্বপ্ন যত ভালোই হোক, তা দ্বারা কেউ শ্রেষ্ঠ হয়ে যায় না। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত তাকওয়া-পরহেযগারীর মধ্যে। কারও মধ্যে যদি তাকওয়া-পরহেযগারী থাকে, কিন্তু জীবনেও কোনও ভালো স্বপ্ন না দেখে, তবুও সে আল্লাহ তা'আলার কাছে একজন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ভালো ভালো স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সে সুন্নাতের অনুসরণ করে না এবং তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেযগারীও নেই, তবে শরী’আতের দৃষ্টিতে তার কোনও বিশেষ মর্যাদাও নেই। তাই স্বপ্ন দ্বারা স্বপ্নদ্রষ্টার নিজের বা অন্য কারও বিভ্রান্ত হলে চলবে না। এ বিষয়ে স্বপ্নব্যাখ্যায় শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি বিখ্যাত তাবি’ঈ মুহাম্মাদ সীরীন রহ.-এর একটি বাণী খুবই মূল্যবান। তিনি বলেন, স্বপ্ন মুমিনদের আনন্দ দেয়, ধোঁকায় ফেলে না। একবার এক ব্যক্তি ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি আপনি জান্নাতে। তিনি বললেন, শোনো হে! স্বপ্ন মুমিনকে আনন্দ দেয়, তাকে ধোঁকায় ফেলে না। অমুক ব্যক্তি সম্পর্কেও এমন স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, যেমনটা তুমি বলছ। কিন্তু দেখো আজ সে খারিজী সম্প্রদায়ের মতো আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করে। সুতরাং স্বপ্ন সম্পর্কে অবশ্যই মাত্রাজ্ঞানের পরিচয় দিতে। হবে। বাড়াবাড়ি করা চলবে না।
যাহোক ইসলামে স্বপ্নের এক পর্যায়ের গুরুত্ব রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থা দ্বারা সে গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। তাঁর অভ্যাস ছিল প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর সাহাবায়ে কেরামের স্বপ্নের তা'বীর করে দেওয়া। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, আজ রাতে তোমাদের মধ্যে কেউ কি কোনও স্বপ্ন দেখেছে? কেউ দেখে থাকলে তা প্রকাশ করত এবং তিনি তার ব্যাখ্যা দিতেন। বিভিন্ন হাদীছে ভালো ও মন্দ স্বপ্ন সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া আছে। ভালো স্বপ্ন দেখলে কী করণীয়, মন্দ স্বপ্ন দেখলে কী করতে হবে, তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের উচিত তা জেনে নিয়ে আপন আপন স্বপ্নের বেলায় তা অনুসরণ করা।

'স্বপ্ন...' সম্পর্কিত একটি আয়াত
وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
অর্থ: এবং তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে রাত ও দিনে তোমাদের ঘুম।(সূরা রূম, আয়াত ২৩)

ব্যাখ্যা
ঘুম আল্লাহ তা'আলার কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ তা'আলা মানবদেহ নির্মাণে যে বিস্ময়কর কৌশল অবলম্বন করেছেন, তারই এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল ঘুম। এর দ্বারা দেহের ক্লান্তি ও অবসন্নতা দূর হয়। ঘুমের পর শরীর-মন সজীবতা লাভ করে। ফলে নতুন উদ্যমে কাজকর্মে লেগে পড়া সম্ভব হয়। শরীর ও মস্তিষ্কের যে প্রক্রিয়ায় ঘুম আসে, তা চিন্তা করলে এর ভেতর আল্লাহ তা'আলার কুদরতের কিছুটা আভাস লক্ষ করা যায়। তাছাড়া ঘুমের দ্বারা যেভাবে মানুষ এক পর্যায়ে নিষ্ক্রিয় ও অচেতন হয়ে পড়ে, তারপর ঘুম ভাঙলে সে পূর্ণ সক্রিয় ও সচেতন হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ করলে মানুষের মৃত্যু এবং তারপর কিয়ামতে পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠা সম্পর্কে কিছু ধারণাও লাভ হয়। এটাও মানুষকে আল্লাহর কুদরত স্মরণ করিয়ে দেয়।
ঘুমের একটা সম্পর্ক রয়েছে স্বপ্নের সঙ্গেও। জাগ্রত অবস্থায় মানুষ দৃশ্যজগতে বিচরণ করে। ঘুমের ভেতর সে চলে যায় আরেক জগতে। স্বপ্নের জগৎ। সে জগতে কখনও তার অবচেতন মন চেতনার জগৎ নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় দৃশ্যমান জগতের বস্তুরাজি ও ঘটনাবলি নানা রূপে তার সামনে ভেসে ওঠে। এটা অবচেতন মনের কল্পনা। কখনও তার শারীরিক ও মানসিক স্থবিরতার সুযোগে শয়তান তাকে নিয়ে মেতে ওঠে। তখন অপ্রীতিকর ও ভয়ংকর নানা দৃশ্য সে দেখতে পায়। সে আতঙ্কিত হয়। ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। এটা দুঃস্বপ্ন। আবার কখনও এ উভয় হতে মুক্ত থেকে তার সম্পর্ক স্থাপিত হয় ঊর্ধ্বজগতের সঙ্গে। তখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তার সামনে নতুন নতুন দিগন্ত খুলে যায়। সে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে পায় নানা বার্তা। হয়তো লাভ করে কোনও সুখবর। পায় আশুবিপদের কোনও সতর্কসংকেত। তাকে দেওয়া হয় কোনও কর্তব্যকর্মের নির্দেশনা। এমনকি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঊর্ধ্বজগতের পরিভ্রমণে। সবই হয় ঘুমের ভেতর। সুতরাং ঘুম মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের এক বিস্ময়কর নিদর্শন।
মৌলিকভাবে রাতই ঘুমের উপযুক্ত সময়। দিন কর্মব্যস্ততার জন্য। তবে দিনের প্রথমার্ধের পরিশ্রমের পর শরীরে কিছুটা ক্রান্তি দেখা দেয়। ফলে দুপুরবেলা অনেকেরই ঘুম পায়। কেউ কেউ এ সময় ঘুমায়ও। খানিকটা ঘুমিয়ে নিলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ফের তাজা শরীরে কাজের উদ্যম তৈরি হয়। কাজেই ঘুম যেমন আল্লাহ তা'আলার কুদরতের এক নিদর্শন, তেমনি বান্দার পক্ষে এটা এক বিরাট নি'আমতও বটে।

আয়াতটির শিক্ষা
ক. ঘুম আল্লাহ তা'আলার কুদরতের নিদর্শন। ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়া, ঘুমের পর শরীর ও মন-মস্তিষ্ক পূর্ণোদ্যমে সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং ঘুম সম্পর্কিত শরীর ও মস্তিষ্কের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়ার প্রতি লক্ষ করলে আল্লাহ তা'আলার কুদরত ও সৃষ্টিকৌশলের পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. ঘুম আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় এক নি'আমত। এর জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত।
গ. রাতই ঘুমের আসল সময়। তাই মৌলিকভাবে ঘুমের জন্য রাতকেই বেছে নেওয়া উচিত।
ঘ. দিনের বেলায়ও খানিকটা বিশ্রাম করা ভালো।
স্বপ্নের হাকীকত
হাদীছ নং: ৮৩৭

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নবুওয়াতের কিছুই অবশিষ্ট নেই মুবাশশিরাত ছাড়া। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন, সঠিক স্বপ্ন। -বুখারী ৩২
(সহীহ বুখারী : ৬৯৯০; জামে’ তিরমিযী: ২২৭২; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৮৯৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৩০৫১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩২৭২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮১৭১)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها: قَالَ الله تَعَالَى: {وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ} [الروم: 23].
837 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبوَّةِ إِلاَّ المُبَشِّرَاتِ» قالوا: وَمَا المُبَشِّرَاتُ؟ قَالَ: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ». رواه البخاري (1).
হাদীস নং: ৮৩৮
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি
স্বপ্ন সম্পর্কে মৌলিক কিছু নির্দেশনা
হাদীছ নং: ৮৩৮

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন কাল কাছাকাছি হবে (বা কাছাকাছি হয়), তখন মুমিনের স্বপ্ন মিথ্যা প্রায় হবেই না। মুমিনের স্বপ্ন নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৭০১৭; সহীহ মুসলিম: ২২৬৩; সুনানে আবু দাউদ: ৫০১৯; জামে তিরমিযী: ২২৭০; সুনানে দারিমী : ২১৯০; মুসনাদুল বাযযার: ৯৮২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৬০৪০; শু'আবুল ঈমান : ৪৪৩০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩২৭৯)
অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তির স্বপ্ন বেশি সত্য হবে, যে কথায় বেশি সত্যবাদী।
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها
838 - وعنه: أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدْ رُؤيَا المُؤْمِنِ تَكْذِبُ، وَرُؤْيَا الْمُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وفي رواية: «أصْدَقُكُمْ رُؤْيَا، أصْدَقُكُمْ حَدِيثًا».
হাদীস নং: ৮৩৯
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখা
হাদীছ নং: ৮৩৯

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখল, সে অচিরেই জাগ্রত অবস্থায় আমাকে দেখতে পাবে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন জাগ্রত অবস্থায় আমাকে দেখল। শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৯৯৩; সহীহ মুসলিম: ২২৬৬; সুনানে আবূ দাউদ : ৫০২৩; জামে তিরমিযী: ২২৭৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯০১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৫৮২; মুসনাদে আহমাদ:৩৭৯৫, মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ৩০৪৬৭; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী : ২৫৪২: মুসনাদুল বাযযার: ১০০৩৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা : ৬৪৮৮)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها
839 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ رَآنِي في المَنَامِ فَسَيَرَانِي في اليَقَظَةِ - أَوْ كَأنَّما رَآنِي في اليَقَظَةِ - لاَ يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِي (1)». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
হাদীস নং: ৮৪০
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি
ভালো ও মন্দ স্বপ্ন দেখলে যা করণীয়
হাদীছ নং: ৮৪০

হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার পসন্দনীয় স্বপ্ন দেখে, তখন বুঝবে তা আল্লাহ তা'আলারই পক্ষ থেকে। কাজেই সে যেন তার জন্য আল্লাহর তা’আলারই পক্ষ থেকে। কাজেই সে যেন তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তা বিবৃত করে তার প্রিয় মানুষের কাছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সে যেন তা তার প্রিয় লোক ছাড়া অন্য কারও কাছে বর্ণনা না করে। আর যখন সে এর বিপরীত স্বপ্ন দেখবে, যা সে পসন্দ করে না, তখন বুঝবে তা শয়তানেরই পক্ষ থেকে। কাজেই সে যেন তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং তা কারও কাছে প্রকাশ না করে। তাহলে তা তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।
-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৯৮৫; সহীহ মুসলিম: ২২৬১; জামে তিরমিযী: ৩৪৫৩; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৬০৫; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ১৩৬৩)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها
840 - وعن أَبي سعيدٍ الخدرِيِّ - رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إِذَا رَأى أحَدُكُمْ رُؤيَا يُحِبُّهَا، فَإنَّمَا هِيَ مِنَ اللهِ تَعَالَى، فَلْيَحْمَدِ اللهَ عَلَيْهَا، وَلْيُحَدِّثْ بِهَا - وفي رواية: فَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا إِلاَّ مَنْ يُحِبُّ - وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ، فإنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ؛ فَإنَّهَا لا تَضُرُّهُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৮৪১
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি
ভালো ও মন্দ স্বপ্ন দেখলে যা করণীয়
হাদীছ নং: ৮৪১

হযরত আবু কাতাদা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সত্য স্বপ্ন, অপর এক বর্ণনায় আছে- ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কাজেই যে ব্যক্তি অপ্রীতিকর কিছু দেখবে, সে যেন তার বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং শয়তানের থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে। তাহলে তা তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৯৯৫; সহীহ মুসলিম: ২২৬১; সুনানে আবূ দাউদ: ৫০২১; জামে তিরমিযী: ২২৭৭: সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৫৪৪; সুনানে দারিমী: ২১৮৭; মুসনাদুল বাযযার: ৭৬৩০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৭৫৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৬০৫৯; শুআবুল ঈমান: ৪৪২৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩২৭৫)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها
841 - وعن أَبي قَتَادَة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ - وفي رواية: الرُّؤْيَا الحَسَنَةُ - مِنَ اللهِ، وَالحُلُمُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَمَنْ رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَنْفُثْ عَن شِمَالِهِ ثَلاَثًا، وَلْيَتَعَوَّذْ مِنَ الشَّيْطَانِ؛ فإنَّهَا لا تَضُرُّهُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«النَّفْثُ»: نَفْخٌ لَطِيفٌ لا رِيقَ مَعَهُ.
হাদীস নং: ৮৪২
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি
ভালো ও মন্দ স্বপ্ন দেখলে যা করণীয়
হাদীছ নং: ৮৪২

হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন অপ্রীতিকর স্বপ্ন দেখবে, তখন সে যেন বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে তিনবার আর সে যে কাতে শোওয়া ছিল তা পরিবর্তন করে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২২৬২; সুনানে আবু দাউদ: ৫০২২; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৫৪৫; মুসনাদে আবু ইয়া'লা : ২২৬৩; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৬০৬০; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮১৮১; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৪৪২৯)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها
842 - وعن جابر - رضي الله عنه - عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا رَأى أحَدُكُمْ الرُّؤْيَا يَكْرَهُهَا، فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاثًا، وَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ثَلاَثًا، وَلْيَتَحَوَّل عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৮৪৩
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ:৪ স্বপ্ন ও স্বপ্ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি
তিনটি কঠিনতম মিথ্যাচার
হাদীছ নং: ৮৪৩

হযরত আবুল আসকা' ওয়াছিলা ইবনুল আসকা' রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, গুরুতর মিথ্যাচারের একটি হল নিজের পিতা ছাড়া অন্য কারও পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করা অথবা নিজ চোখকে দেখানো যা সে দেখেনি কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে এমন কথা বলা, যা তিনি বলেননি। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৩৫০৯; মুসনাদে আহমাদ : ৫৯৯৯; মুসনাদুল বাযযার : ৬১২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৩২; তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়্যীন: ১০৫৩; আল মু'জামুল কাবীর: ১৭৮; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৪৪৯০ )
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب الرؤيا وَمَا يتعلق بها
843 - وعن أَبي الأسقع واثِلةَ بن الأسقعِ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ مِنْ أَعْظَمِ الفِرَى أَنْ يَدَّعِيَ الرَّجُلُ إِلَى غَيرِ أبِيهِ، أَوْ يُرِي عَيْنَهُ مَا لَمْ تَرَ (1)، أَوْ يَقُولَ عَلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَا لَمْ يَقُلْ». رواه البخاري. (2)
(5) -