মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৮ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৬০৭৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৪। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন (লোকদিগকে) “বায়আতে রেওয়ানে"র নির্দেশ দিলেন, সেই সময় হযরত ওসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর দূত হিসাবে মক্কায় গিয়াছিলেন। লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর হাতে বায়আত করিল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ ওসমান, আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসূলের কাজে (মক্কায়) গিয়াছেন। ইহার পর রাসূলুল্লাহ্ [(ﷺ) ওসমানের বায়আতস্বরূপ] নিজেরই এক হাত অপর হাতে রাখিলেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর হাত হযরত ওসমানের জন্য অতি উত্তম হইল লোকদের আপন হাত অপেক্ষা। —তিরমিযী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৭৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৫। হযরত সুমামা ইবনে হায়ন কোশাইরী (রহঃ) বলেন, [যখন বিদ্রোহীগণ হযরত ওসমান (রাঃ)-কে গৃহবন্দী অবস্থায় অবরোধ করিয়া রাখিয়াছিল, এই সময়] আমি তাঁহার গৃহের কাছে উপস্থিত ছিলাম। যখন ওসমান গৃহের উপর হইতে লোকদের প্রতি তাকাইয়া বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি— তোমরা কি এই ব্যাপারে অবগত আছ যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হিজরত করিয়া যখন মদীনায় আগমন করিলেন, তখন “রুমার কূপ” ব্যতীত অন্য কোথাও মিষ্টি পানি পাওয়া যাইত না? তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ যে রুমার কূপটি খরিদ করিয়া মুসলমানদের অবাধে ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করিয়া দিবে, বিনিময়ে সে বেহেশতে তদপেক্ষা উত্তম কূপ লাভ করিবে। তখন আমি উক্ত কূপটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অর্থে খরিদ করি। অথচ আজ তোমরা আমাকে উক্ত কূপের পানি পান করা হইতে বাধা দিতেছ। এমন কি আমি সমুদ্রের লোনা পানি পান করিতেছি। লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! — হ্যাঁ, আমরা জানি। ইহার পর তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি— তোমরা কি জান যে, যখন মসজিদে নববী মুসল্লীদের তুলনায় সংকীর্ণ হইয়া পড়িল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছিলেন, যে ব্যক্তি অমুকের বংশধর হইতে এই যমীনটি খরিদ করিয়া মসজিদখানি বৃদ্ধি করিয়া দিবে, উহার বিনিময়ে আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে উহা হইতে উত্তম ঘর জান্নাতে দান করিবেন। তখন আমিই উহা আমার ব্যক্তিগত অর্থ হইতে খরিদ করি অথচ আজ তোমরা আমাকে সেই মসজিদে দুই রাকআত নামায পড়া হইতেও বাধা দিতেছ। উত্তরে লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! — হ্যাঁ, আমরা জানি। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ ও ইসলামের নামে কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি — তোমরা কি অবগত আছ যে, দারুণ কষ্টের অভিযানে (অর্থাৎ, তবুক যুদ্ধে) সৈন্যদিগকে আমি আমার নিজস্ব সম্পদ হইতে যুদ্ধের সামান দিয়া সাজাইয়া দিয়াছিলাম? লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! — হ্যাঁ, আমরা জানি। তারপর তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ ও ইসলামের কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি— তোমরা এই কথাটিও অবগত আছ কি, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মক্কার অনতিদূরে “সাবীর” পাহাড়ের উপর দণ্ডায়মান ছিলেন, তাঁহার সঙ্গে তথায় আবু বকর, ওমর এবং জামিও ছিলাম। হঠাৎ পাহাড়টি নড়াচড়া করিতে লাগিল। এমন কি উহা হইতে কিছু পাথর নীচের দিকে পড়িতে লাগিল। তখন রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) উহাতে স্বীয় পা ঠুকিয়া বলিলেন, স্থির হইয়া যাও, হে সাবীর। তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দুইজন শহীদই তো রহিয়াছেন। উত্তরে লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! – হ্যাঁ, আমরা জানি। অতঃপর হযরত ওসমান বলিয়া উঠিলেন, আল্লাহু আকবর, লোকেরা সত্য সাক্ষ্যই দিয়াছে। অতঃপর তিনি তিনবার বলিলেন, কা'বার রবের কসম! নিশ্চয় আমি একজন শহীদ ব্যক্তি। —তিরমিযী, নাসায়ী ও দারা কুতনী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৭৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৬। হযরত মুররাহ ইবনে কা'ব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে একদা ফেতনা সম্পর্কে আলোচনা করিতে শুনিয়াছি। আর উহা যে অতি নিকটবর্তী তিনি তাহাও বর্ণনা করিয়াছেন। (তিনি এই বিষয়ে কথাবার্তা বলিতেছিলেন—) এমন সময় এক ব্যক্তি মাথার উপর কাপড় ঢালিয়া সেই পথে যাইতেছিলেন। তখন তিনি সেই ব্যক্তির দিকে ইংগিত করিয়া বলিলেন, ঐ যে লোকটি যাইতেছে, সে ঐ ফেতনার দিনে সঠিক পথের উপর থাকিবে। (বর্ণনাকারী মুররাহ বলেন,) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর এই কথা শুনিয়া আমি লোকটির দিকে গেলাম। দেখিলাম, তিনি হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান। অতঃপর আমি ওসমানের চেহারাখানি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর দিকে ফিরাইয়া বলিলাম, ইনিই কি তিনি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। —তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্ এবং তিরমিযী বলিয়াছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৭৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৭। হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা নবী (ﷺ) হযরত ওসমান (রাঃ)-কে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ হে ওসমান! হয়তো আল্লাহ্ তা'আলা তোমাকে একটি জামা পরিধান করাইবেন। পরে লোকেরা যদি তোমার জামাটি খুলিয়া ফেলিতে চায়, তখন তুমি তাহাদের ইচ্ছানুযায়ী সেই জামাটি খুলিয়া ফেলিবে না। —তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্ এবং তিরমিযী বলিয়াছেন, অত্র হাদীসটির প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ ঘটনা আছে।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৭৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৮। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফেতনা সম্পর্কে অলোচনা করিলেন এবং হযরত ওসমান (রাঃ)-এর প্রতি ইংগিত করিয়া বলিলেনঃ এই লোকটি উক্ত ফেতনায় মযলুম অবস্থায় নিহত হইবে। —তিরমিযী, তিনি বলিয়াছেন, এই হাদীসটির সনদ হাসান ও গরীব।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৭৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৯। হযরত আবু সাহ্লা (রাঃ) বলেন, হযরত ওসমান যেই সময় গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন, তখন তিনি আমাকে বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার প্রতি একটি বিশেষ অসিয়ত করিয়াছেন, অতএব, আমি উক্ত অসিয়তের উপর ধৈর্যধারণ করিব। —তিরমিযী এবং তিনি বলিয়াছেন, হাদীসটি হাসান, সহীহ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৮০

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮০। ওসমান ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মওয়াহব (রহঃ) বলেন, একদা মিসরের এক ব্যক্তি হজ্জে বায়তুল্লাহ্র উদ্দেশ্যে (মক্কায়) আসিল। তখন সে সেইখানে একদল লোককে উপবিষ্ট দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ইহারা কে? লোকেরা বলিল, ইহারা কোরাইশ। সে আবার জিজ্ঞাসা করিল, ইহাদের মধ্যে এই প্রবীণ বয়স্ক ব্যক্তি কে? লোকেরা বলিল, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ)। তখন সে বলিল, হে ইবনে ওমর! আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করিতে চাই। আপনি আমাকে বলুন, আপনি কি জানেন যে, ওহুদ যুদ্ধের দিন হযরত ওসমান (যুদ্ধক্ষেত্র হইতে) পলায়ন করিয়াছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি ইহাও জানেন যে, ওসমান বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হন নাই? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি জানেন যে, ওসমান বায়আতে রেযওয়ান (হোদায়বিয়াতে অনুষ্ঠিত বায়আত) হইতে অনুপস্থিত ছিলেন এবং উহাতে যোগদান করেন নাই। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। [ঐ লোকটি ছিল হযরত ওসমান (রাঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী, তাই ওসমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের স্বীকৃতি শুনিয়া আনন্দে] সে বলিয়া উঠিল, “আল্লাহু আকবর।” তখন ইবনে ওমর (রাঃ) বলিলেন, এইবার আস! প্রকৃত ব্যাপারটি তোমাকে বুঝাইয়া দিতেছি। ওহুদের দিন তাঁহার পলায়নের ব্যাপারটি—সেই সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তাঁহার সেই ত্রুটিটি আল্লাহ্ তা'আলা মাফ করিয়া দিয়াছেন। আর বদর যুদ্ধ হইতে তাহার অনুপস্থিতির ব্যাপার হইল, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর কন্যা হযরত রোকাইয়া ছিলেন হযরত ওসমানের স্ত্রী। আর তিনি ছিলেন ঐ সময় রোগশয্যায়। তাই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (তাঁহার সেবা-শুশ্রূষার জন্য) ওসমানকে বলিয়াছিলেনঃ এই যুদ্ধে যাহারা যোগদান করিবে, তাহাদের সমপরিমাণ সওয়াব তুমি পাইবে এবং (অনুরূপভাবে) গনীমতের অংশ হইতেও তাহাদের সমপরিমাণ অংশ তুমি লাভ করিবে।
আর “বায়আতে রেযওয়ান” হইতে তাঁহার অনুপস্থিতির ব্যাপার হইল——মক্কার অধিবাসীদের নিকট ওসমান অপেক্ষা অধিকতর সম্মানিত যদি অপর কেহ থাকিত, তাহা হইলে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ওসমানের স্থলে নিশ্চয় তাহাকেই পাঠাইতেন। (কিন্তু ঐরূপ কোন ব্যক্তিই ছিল না।) তাই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (দূত হিসাবে) ওসমানকেই পাঠাইয়াছিলেন। ওসমানের মক্কায় চলিয়া যাওয়ার পর “বায়আতুর রেফওয়ান” অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপন ডান হাতের দিকে ইংগিত করিয়া বলিলেন, ইহা ওসমানের হাত। তারপর তিনি সেই হাতটি নিজের অপর হাতের উপর স্থাপন করিয়া বলিলেন, “ইহা ওসমানের বায়আত।” অতঃপর ইবনে ওমর (রাঃ) লোকটিকে বলিলেন, এখন তুমি এই বিবরণ সঙ্গে লইয়া যাও। —বুখারী
আর “বায়আতে রেযওয়ান” হইতে তাঁহার অনুপস্থিতির ব্যাপার হইল——মক্কার অধিবাসীদের নিকট ওসমান অপেক্ষা অধিকতর সম্মানিত যদি অপর কেহ থাকিত, তাহা হইলে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ওসমানের স্থলে নিশ্চয় তাহাকেই পাঠাইতেন। (কিন্তু ঐরূপ কোন ব্যক্তিই ছিল না।) তাই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (দূত হিসাবে) ওসমানকেই পাঠাইয়াছিলেন। ওসমানের মক্কায় চলিয়া যাওয়ার পর “বায়আতুর রেফওয়ান” অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপন ডান হাতের দিকে ইংগিত করিয়া বলিলেন, ইহা ওসমানের হাত। তারপর তিনি সেই হাতটি নিজের অপর হাতের উপর স্থাপন করিয়া বলিলেন, “ইহা ওসমানের বায়আত।” অতঃপর ইবনে ওমর (রাঃ) লোকটিকে বলিলেন, এখন তুমি এই বিবরণ সঙ্গে লইয়া যাও। —বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৬০৮১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮১। হযরত ওসমান (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবু সাহলা বলেন, একদা নবী (ﷺ) হযরত ওসমানকে চুপে চুপে কিছু কথা বলিতেছিলেন, আর হযরত ওসমানের চেহারার রং বিবর্ণ হইতে লাগিল। অতঃপর যখন গৃহের (অবরোধের ঘটনার) দিন আসিল, তখন আমরা বলিলাম, আমরা কি উহাদের বিরুদ্ধে লড়াই করিব না? জওয়াবে তিনি বলিলেন ; না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে একটি অসিয়ত করিয়াছেন, সুতরাং আমি তদনুযায়ী ধৈর্য্যধারণ করিয়া অবিচল থাকিব।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান