মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
১৯- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১৭ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৩৬৯৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৭। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যেই ব্যক্তি দশ জন লোকেরও শাসক হইবে, কিয়ামতের দিন তাহাকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হইবে যে, তাহার গলায় রশি লাগান হইবে। সেই গলবন্ধন হইতে তাহার ন্যায় ইন্সাফ তাহাকে মুক্ত করিবে অথবা তাহার কৃত যুলম ও নির্যাতন তাহাকে ধ্বংস করিবে।—দারেমী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৬৯৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ অভিসম্পাত শাসকদের উপর, অভিসম্পাত মাতব্বরদের উপর, অভিসম্পাত আমানতদারদের উপর। বহু লোক কিয়ামতের দিন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করিবে, কতই না উত্তম হইত যদি তাহার কপালের চুল ধ্রুবতারার সাথে বাঁধিয়া দেওয়া হইত আর সে আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলিতে থাকিত, তবুও তাহাদিগকে সেই সব নেতৃত্ব না দেওয়া হইত। —শরহে সুন্নাহ্ ও আহমদ। আর আহমদের এক রেওয়ায়তে আছে, যদি তাহাদের কপালের কেশগুচ্ছ ধ্রুবতারার সাথে বাঁধিয়া দেওয়া হইত আর তাহারা আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলিতে থাকিত, ঐসমস্ত নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা লাভ করার চাইতে অনেক উত্তম হইত।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৬৯৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৯। গালেবুল কাত্তান একজন রাবী হইতে, তিনি তাহার পিতার মাধ্যমে তাহার দাদা হইতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ সরদারী ও মাতব্বরী একটি সত্য বস্তু। লোকদের মধ্যে কেহ সরদার হওয়াটা অপরিহার্যও বটে। তবে অধিকাংশ নেতা ও সরদার দোযখী হইবে। –আবু দাউদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০০। হযরত কা'ব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ আমি তোমাকে অর্বাচীন নির্বোধ শাসকদের নেতৃত্ব হইতে আল্লাহর হেফাযতে দিলাম। তিনি বলিলেন, উহা কিরূপ হইবে ইয়া রাসূলাল্লাহ্। উত্তরে তিনি বলিলেন, অচিরেই আমার পরে তাহাদের আবির্ভাব ঘটিবে। যেই ব্যক্তি তাহাদের কাছে যাইবে, তাহাদের মিথ্যাকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিবে এবং তাহাদের অন্যায় কাজ কর্মে সাহায্য ও সহযোগিতা করিবে। আমার সাথে তাহাদের কোন সম্পর্ক নাই এবং তাহাদের সাথে আমারও কোন সম্পর্ক নাই। অবশেষে তাহারা হাউযে কাওসারে আমার কাছে আসিতেও পারিবে না। বস্তুতঃ যাহারা তাহাদের কাছে ঘেঁষিবে না, তাহাদের মিথ্যাকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিবে না এবং তাহাদের অন্যায় কাজে সহযোগিতাও করিবে না, সেই সমস্ত লোকেরা হইবে আমার দলভুক্ত এবং আমিও হইব তাহাদের দলভুক্ত। ইহারাই হাউযে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হইবে। – তিরমিযী ও নাসায়ী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০১। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যেই ব্যক্তি গ্রামে-গঞ্জে বসবাস করে, সে গোঁয়ার হয় (অর্থাৎ, সামাজিক অনেক কিছু শিক্ষা হইতে বঞ্চিত থাকে)। যে লোক শিকারের পিছনে দৌড়ায় সে গাফেল হয়। আর যেই ব্যক্তি রাজা-বাদশাহদের নিকট যায় সে ফেতনায় পতিত হয়। – আহমদ, তিরমিযী ও নাসায়ী। আবু দাউদের রেওয়ায়তে আছে, যে রাজা-বাদশাহর সংস্রবে থাকে সে ফেনায় পতিত হয়। আর বান্দা যতই বাদশাহর নৈকট্যের দিকে অগ্রসর হয়, ততই আল্লাহ্ তা'আলা হইতে তার দূরত্ব বাড়িয়া যায়।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০২। হযরত মেক্দাম ইবনে মা'দীকারাব (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহার কাঁধের উপর করাঘাত দিয়া বলিলেন, হে কোদায়ম! (মেকদামের সংক্ষেপ) যদি তুমি শাসক অথবা লিখক (পেশকার) অথবা মোড়ল সরদার ইত্যাদি পদে না থাকিয়া মৃত্যুবরণ কর, তাহা হইলে তুমি সফলকাম হইলে। –আবু দাউদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৩। হযরত ওকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ টেক্স আদায়কারী অর্থাৎ, অন্যায়ভাবে ওশর ও যাকাত আদায়কারী বেহেশতে প্রবেশ করিবে না। – আহমদ, আবু দাউদ ও দারেমী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৪। হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন ন্যায়পরায়ণ শাসকই হইবেন আল্লাহর কাছে সমস্ত লোকের চাইতে প্রিয়তম এবং তাঁহার নিকটতম মর্যাদার অধিকারী। আবার কিয়ামতের দিন অত্যাচারী ও যালেম শাসকই হইবে আল্লাহর কাছে সমস্ত মানুষের চাইতে ঘৃণিত ও কঠোরতম আযাবের অধিকারী। অন্য আরেক রেওয়ায়তে আছে, যালেম বাদশাহ্ মর্যাদায় আল্লাহর নিকট হইতে বহু দূরে। —তিরমিযী এবং তিনি বলিয়াছেন, এই হাদীসটি হাসান ও গরীব

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৫। হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ অত্যাচারী ও যালেম শাসকের সম্মুখে হক কথা বলাই হইল উত্তম জেহাদ। —তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ্ ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৬। অবশ্য আহমদ ও নাসায়ী হাদীসটি তারেক ইবনে শেহাব হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৭। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যদি আল্লাহ্ তা'আলা কোন শাসকের কল্যাণ করিতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাহার জন্য একজন নিষ্ঠাবান উযীরের (পরামর্শদাতা) ব্যবস্থা করিয়া দেন। যদি শাসক কোন কাজ করিতে ভুলিয়া যান তখন উযীর তাহাকে স্মরণ করাইয়া দেন। আর যদি তিনি উক্ত কাজ স্মরণে রাখেন, তখন উযীর তাঁহাকে সেই কাজে মদদ ও সাহায্য করেন। আর যদি আল্লাহ্ তা'আলা কোন শাসকের সাথে ইহার বিপরীত অন্য কিছু (অকল্যাণ) করিতে ইচ্ছা করেন, তখন তাহার জন্য একজন কুস্বভাবের উযীর নির্ধারণ করিয়া দেন। যদি শাসক কোন কাজ করিতে ভুলিয়া যান, উযীর তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দেয় না আর যদি তিনি স্মরণে রাখেনও, তবে উযীর তাঁহার সহযোগিতা করে না। –আবু দাউদ ও নাসায়ী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৮। হযরত আবু উমামা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ শাসক যখন জনসাধারণের দোষত্রুটি অন্বেষণ করে, তখন তাহাদেরে অনিষ্টের দিকে নিয়া যায়। —আবু দাউদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭০৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭০৯। হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ যদি তুমি মানুষের গোপন দোষত্রুটি তালাশ করিয়া বেড়াও তাহা হইলে তুমি তাহাদেরকে খারাপ করিয়া ফেলিলে। —বায়হাকী শোআবুল ঈমানে

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭১০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১০। হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (আমাকে লক্ষ্য করিয়া) বলিলেনঃ আমার (ওফাতের) পরে তোমরা তোমাদের ইমাম বা শাসকদের সহিত কি ধরনের ব্যবহার করিবে? যখন তাহারা কাফেরদের নিকট হইতে খেরাজ ও জিযিয়া (খাজনা ও কর) উসুল করিয়া এককভাবে নিজেরাই ভোগ করিবে বা স্বজনপ্রীতি করিবে, প্রকৃত হকদারদিগকে দিবে না। (অর্থাৎ, তখন কি তোমরা ধৈর্যধারণ করিবে, নাকি তাহাদের সহিত মোকাবেলা করিবে।) আবু যর (রাঃ) বলেন, উত্তরে আমি বলিলাম, সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য নবী করিয়া পাঠাইয়াছেন। অবশ্যই আমি আমার তলোয়ার নিজের কাঁধের উপর তুলিয়া নিব, অতঃপর আপনার সহিত সাক্ষাৎ লাভ করা (অর্থাৎ, মৃত্যু) পর্যন্ত তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিব। তখন হুযুর (ﷺ) বলিলেন, আমি কি তোমাকে উহা হইতে উত্তম কাজের কথা বর্ণনা করিব না ? তাহা হইল এই, আমার সহিত সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ, মৃত্যু পর্যন্ত) তুমি ধৈর্যধারণ কর। –আবু দাউদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭১১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১১। হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (একদিন সাহাবাদিগকে লক্ষ্য করিয়া) বলিলেনঃ তোমরা কি অবগত আছ যে, কিয়ামতের দিন সকলের আগে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা'আলার (আরশের) ছায়ায় কোন্ শ্রেণীর লোকেরা স্থান পাইবে ? সাহাবারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জ্ঞাত। তখন তিনি, বলিলেনঃ ঐসমস্ত (আমীর ও শাসক) লোকেরা, যাহাদিগকে হক কথা বলা হইলে তৎক্ষণাৎ তাহা কবুল করে। আর যখনই ন্যায্য হক ও অধিকার চাওয়া হয়, সাথে সাথেই তাহা দিয়া দেয় এবং মানুষের উপর অনুরূপভাবে শাসন করে, যেইরূপ নিজের উপর শাসন করে। (অর্থাৎ, শাসন ও বিচার ব্যাপারে নিজের ও অপরের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। )

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭১২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১২। হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ আমি আমার উম্মতের জন্য তিনটি জিনিসের আশংকা করি। (উহার দ্বারা পথভ্রষ্ট হইয়া যায় না কি ?) (ক) চাঁদের বা তারকার কক্ষপথ অতিক্রম করার হিসাব অনুযায়ী বৃষ্টির কামনা করা। (খ) বাদশাহ্ বা শাসকের যুগ্ম ও অত্যাচার এবং (খ) তকদীর (ভাগ্যলিপি)-কে অবিশ্বাস করা।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৭১৩

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৩। হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে বলিয়াছেন ছয় দিন তুমি অপেক্ষা কর। উহার পর আমি তোমাকে কিছু কথা বলিব। সপ্তম দিন তিনি আমাকে বলিলেন, আমি তোমাকে (১) খোদাকে ভয় করিবার জন্য অসিয়ত করিতেছি, চাই গোপনে হউক কিংবা প্রকাশ্যে। (২) যখন তুমি কোন মন্দ কাজ করিয়া বস তখন সঙ্গে সঙ্গে নেক (ভাল) কাজও করিয়া ফেলিবে। (কেননা, নেকী উক্ত মন্দ কাজকে ধ্বংস করিয়া দেয়।) (৩) কখনও কাহারও কাছে কোন কিছুর 'সওয়াল' করিও না, যদিও তোমার ছড়ি নীচে পড়িয়া যায়। (অর্থাৎ, তুমি সওয়ারীর উপরে আরোহিত, এমতাবস্থায় যদি তোমার হাতের চাবুকটি নীচে পড়িয়া যায়, তবুও উহা তুলিয়া দেওয়ার জন্য কাহারও নিকট সওয়াল করিও না।) (৪) তুমি কাহারও আমানত গ্রহণ করার দায়িত্ব লইও না। (কারণ, উহা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা মুশকিল; অন্যথায় তুমি আত্মসাৎকারীরূপে পরিণত হইবে।) (৫) দুইজনের মধ্যেও বিচারক হইও না। (কেননা, শাসক ন্যায়পরায়ণ না হইলে তাহার জন্য কঠোর ভীতি প্রদর্শন করা হইয়াছে।)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান