মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
১১- হজ্জ্বের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৪ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ২৫৫৫

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৫৫। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় নয় বছর অতিবাহিত করিলেন হজ্জ না করিয়া, অতঃপর দশম বৎসর লোকের মধ্যে ঘোষণা করা হইল যে, 'রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বৎসর হজ্জে যাইবেন। সুতরাং মদীনায় বহু লোক আগমন করিল। অতঃপর আমরা তাহার সহিত হজ্জে রওয়ানা হইলাম এবং যখন যুলহুলায়ফা পর্যন্ত পৌঁছিলাম তখন (হযরত আবু বকরের স্ত্রী) আসমা বিনতে উমাইস মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকরকে প্রসব করিলেন। অতএব, আসমা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন যে, এখন আমি কি করিব? হুযুর বলিলেনঃ তুমি গোসল কর এবং কাপড়ের নেকড়া দ্বারা কমিয়া লেঙ্গুট পর, তৎপর এহরাম বাঁধ! জাবের বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (দুই রাকআত এহরামের) নামায পড়িলেন, অতঃপর কাসওয়া উটনীতে সওয়ার হইলেন—অবশেষে যখন বায়দা নামক স্থানে উটনী তাহাকে লইয়া সোজা হইয়া দাড়াইল, তিনি আল্লাহর তওহীদ সম্বলিত এই তালবিয়া পড়িলেন, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারীকা লাকা।”
জাবের (রাঃ) বলেন, তখন আমরা হজ্জ ছাড়া কিছুর নিয়ত করি নাই, আমরা উমরার কথা জানিতাম না। (উহা হজ্জের সাথে করা যাইতে পারে কিনা ?) অবশেষে যখন আমরা তাঁহার সাথে বায়তুল্লাহর হেরেমে পৌঁছিলাম, তিনি 'হাজারে আসওয়াদ' হাতে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন, অতঃপর সাত পাক বায়তুল্লাহ্ প্রদক্ষিণ করিলেন ; তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করিলেন এবং চারি পাক স্বাভাবিকভাবে চলিলেন। অতঃপর 'মাকামে ইবরাহীম'-এর দিকে অগ্রসর হইলেন এবং কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “এবং মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থানে পরিণত কর (অর্থাৎ, উহার নিকট নামায পড়)।" এ সময় হুযুর দুই রাকআত নামায পড়িলেন মাকামে ইবরাহীমকে নিজের ও বায়তুল্লাহর মধ্যখানে রাখিয়া (অর্থাৎ, তাহার সম্মুখে মাকামে ইবরাহীম আর উহার সম্মুখে বায়তুল্লাহ্)। অপর বর্ণনায় আছে, ঐ দুই রাকআতে হুযুর সুরা 'কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ' ও 'কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন পড়িয়াছিলেন। অতঃপর হাজারে আসওয়াদের দিকে প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং উহাকে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন। তৎপর দরজা দিয়া সাফা পর্বতের দিকে বাহির হইলেন এবং যখন সাফার নিকটে পৌঁছিলেন, কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত" এবং বলিলেন, আমি উহা ধরিয়া আরম্ভ করিব যাহা ধরিয়া আল্লাহ্ আরম্ভ করিয়াছেন। সুতরাং তিনি সাফা হইতে আরম্ভ করিলেন এবং উহার উপরে চড়িলেন যাহাতে তিনি আল্লাহর ঘর দেখিতে পাইলেন। তখন তিনি কেবলা অর্থাৎ, আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরিয়া আল্লাহর তওহীদের ঘোষণা করিলেন এবং তাঁহার মহিমা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বূদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়, তাহার কোন শরীক নাই, তাহারই শাসন এবং তাহারই সমস্ত প্রশংসা, তিনি হইতেছেন সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বুদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়। তিনি তাহার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়াছেন এবং তাহার বান্দাকে সাহায্য দান করিয়াছেন এবং একাকী সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করিয়াছেন। ইহা তিনি তিনবার বলিলেন এবং ইহাদের মধ্যখানে কিছু দো'আ করিলেন। অতঃপর সাফা হইতে অবতরণ করিলেন এবং ত্বরিতে মারওয়া অভিমুখে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না তাহার পা মোবারক উপত্যকা সমতলে। অতঃপর তিনি দৌড়াইয়া চলিলেন, যাবৎ না উপত্যকা অতিক্রম করিলেন, যখন চড়াইতে উঠিলেন স্বাভাবিকভাবে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না মারওয়ায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি ঐরূপই করিলেন, যেরূপ সাফার উপর করিয়াছিলেন। এমন কি যখন মারওয়ার শেষ চলা সমাপ্ত হইল, মারওয়ার উপর দাড়াইয়া লোকদের সম্বোধন করিলেন। আর লোকেরা ছিল তখন তাহার নীচে। তিনি বলিলেন, যদি আমি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝিতে পারিতাম যাহা আমি পরে বুঝিতে পারিয়াছি, তাহা হইলে কখনও আমি কোরবানীর পশু সঙ্গে আনিতাম না এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করিতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহার সঙ্গে কোরবানীর পশু নাই, সে যেন এহরাম খুলিয়া ফেলে এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করে। এ সময় সুরাকা ইবনে মালেক ইবনে জুশুম দাড়াইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ । ইহা কি আমাদের এ বৎসরের জন্যই, না চিরকালের জন্য ? তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হাতের অঙ্গুলীসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকাইয়া দুইবার বলিলেন, উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করিল। না; বরং চিরকালের—চিরকালের জন্য।
এ সময় হযরত আলী ইয়ামন হইতে (যিনি তথায় বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোরবানীর পশু লইয়া আসিলেন। তখন হুযূর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যখন তুমি এহরাম বাঁধিয়াছিলে কিসের এহরাম বাঁধিয়াছিলে? (হজ্জের না উমরার না উভয়ের?) তিনি বলিলেন, আমি এইরূপ বলিয়াছি—“হে খোদা! আমি এহরাম বাঁধিতেছি যেভাবে এহরাম বাঁধিয়াছেন তোমার রাসূল।" তখন হুযুর বলিলেন, তবে তুমি এহরাম খুলিও না। কেননা, আমার সাথে কোরবানীর পশু রহিয়াছে। হযরত জাবের বলেন, যেসকল পশু হযরত আলী ইয়ামন হইতে আনিয়াছিলেন, আর যাহা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাথে আনিয়াছিলেন তাহা একত্রে হইল একশত। জাবের বলেন, সুতরাং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাহাদের সাথে তাহার ন্যায় কোরবানীর পশু ছিল তাহারা ব্যতীত সকল লোকই এহরাম খুলিয়া ফেলিল এবং মাথা ছাঁটাইল। অতঃপর যখন (৮ই যিলহজ্জ) তরবিয়ার দিন আসিল, (যাহারা এহরাম খুলিয়া ফেলিয়াছিলেন তাহারা সকলেই নূতনভাবে এহরাম বাঁধিলেন এবং মিনার দিকে রওয়ানা হইলেন এবং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সওয়ার হইয়া গেলেন এবং তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তথায় সামান্য সময় অপেক্ষা করিলেন, যাহাতে সূর্য উঠিল। এ সময় তিনি হুকুম করিলেন, কেহ যাইয়া যেন নামেরায় তাঁহার জন্য একটি পশমের তাবু খাটায় এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে রওয়ানা হইয়া গেলেন। তখন কুরাইশরা নিঃসন্দেহ ছিল যে, হুজুর নিশ্চয়ই মাশআরুল হারামের নিকটেই অবস্থান করিবেন, যেমন কুরাইশরা জাহেলিয়াতে করিত (এবং সাধারণের সাথে আরাফাতে অবস্থান করিবেন না। যাহাতে তাহাদের মান হানি হয়); কিন্তু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অগ্রসর হইতে রহিলেন, যাবৎ না আরাফার নিকট যাইয়া পৌঁছিলেন এবং দেখিলেন, তথায় নামেরায় তাহার জন্য তাঁবু খাটান হইয়াছে। সুতরাং তিনি প্রায় অবতরণ করিলেন ও অবস্থান গ্রহণ করিলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলিল তিনি তাহার কাসওয়া উটনী সাজাইতে আদেশ দিলেন, আর উহা সাজানো হইল এবং তিনি 'বতনে ওয়াদী' বা আরানা উপত্যকায় পৌঁছিলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করিলেন এবং বলিলেন:
"তোমাদের একের জান ও মাল তোমাদের অপরের প্রতি (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে) হারাম—যেভাবে এই দিনে, এই মাসে, এই শহরে হারাম। শুন, মূর্খতার যুগের সকল অপকাজ রহিত হইল এবং মূর্খতার যুগের রক্তের দাবীসমূহও রহিত হইল, আর আমাদের রক্তের দাবীসমূহের যে দাবী আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার নিজ বংশের আয়াস) ইবনে রবীয়া ইবনে হারেসের রক্তের দাবী। সে বনী সা'দ গোত্রে দুধপান অবস্থায় ছিল, এমন অবস্থায় হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাহাকে হত্যা করে। এভাবে মূর্খতার যুগের সুদ রহিত হইল, আর আমাদের সুদসমূহের যে সুদ আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার চাচা ) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। উহা সমস্ত রহিত হইল।"
দ্বিতীয় কথা হইল, “তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করিবে। কেননা, তোমরা তাহাদিগকে গ্রহণ করিয়াছ আল্লাহর জামানতে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাহাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করিয়াছ। তাহাদের উপর তোমাদের হক হইল, তাহারা যেন তোমাদের জেনানা মহলে অপর কাহাকেও যাইতে না দেয়, যাহা তোমরা না পছন্দ করিয়া থাক। যদি তাহারা তাহা করে, তবে তাহাদিগকে মারিবে অকঠোর মার, আর তোমাদের উপর তাহাদের হক হইল, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাহাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করিবে ( বাসস্থানসহ)। "
তৃতীয় কথা হইল, "আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক (মূল) জিনিস রাখিয়া যাইতেছি, যদি তোমরা উহা ধরিয়া থাক, তবে তোমরা আমার পর কখনও বিপথগামী হইবে না—তাহা হইতেছে আল্লাহর কিতাব।"
হে লোকসকল, তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে, তখন তোমরা কি বলিবে? তাহারা উত্তর করিল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি নিশ্চয় আমাদিগকে আল্লাহর বাণী পৌঁছাইয়াছেন, আপন কর্তব্য সম্পাদন করিয়াছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করিয়াছেন। তখন তিনি আপন শাহাদত অঙ্গুলী আকাশের দিকে উঠাইয়া এবং উহা দ্বারা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করিয়া তিনবার বলিলেন, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক।
অতঃপর বেলাল আযান দিলেন ও একামত বলিলেন এবং হুযুর যোহর পড়িলেন। বেলাল পুনরায় একামত বলিলেন এবং হুযূর আসর পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে অপর কোন নফল পড়িলেন না। তৎপর তিনি কাওয়া উটনীতে সওয়ার হইয়া মাওকেফে (অবস্থানস্থলে) পৌঁছিলেন এবং উহার পিছন দিক (জাবালে রহমতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মাশাতকে আপন সম্মুখে করিয়া কেবলার দিকে হইলেন। এইভাবে তিনি দাড়াইয়া রহিলেন, যাবৎ না সূর্য ডুবিয়া গেল এবং পিতাভ বর্ণ কিছুটা চলিয়া গেল। অবশেষে সূর্য গোলক সম্পূর্ণ নীচে অদৃশ্য হইয়া গেল। অতঃপর তিনি উসামাকে আপন সওয়ারীর পিছনে সওয়ার বসাইলেন এবং সওয়ারী চালাইতে রহিলেন, যাবৎ না মুখদালেফায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি এক আযান ও দুই একামতের সহিত মাগরিব ও এশা পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে কোন না পড়িলেন না। অতঃপর শুইয়া রহিলেন, যাবৎ না উষার উদয় হইল। তৎপর যখন উষা পরিষ্কার হইয়া গেল আযান ও একামতের সাথে ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তিনি কাসওয়ায় সওয়ার হইলেন, যাহাতে তিনি মাশআরুল হারাম নামক স্থানে পৌঁছিলেন। তথায় তিনি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর নিকট দো'আ করিলেন, তাঁহার মহত্ত্ব ঘোষণা করিলেন, কলেমায়ে তওহীদ পড়িলেন। এবং তাহার একত্ব ঘোষণা করিলেন। তিনি তথায় দাড়াইয়া এইরূপ করিতে রহিলেন, যাবৎ না আকাশ খুব ফর্সা হইয়া গেল। অতঃপর তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই সওয়ারী চালাইয়া দিলেন এবং (আপন চাচাত ভাই) ফযল ইবনে আব্বাসকে সওয়ারীর পিছনে বসাইলেন, যাহাতে তিনি 'বনে মুহাসসির' নামক স্থানে পৌঁছিলেন এবং সওয়ারীকে কিছু উত্তেজিত করিলেন। অতঃপর তিনি মধ্যম পথ ধরিলেন যাহা বড় জামরার দিকে গিয়াছে, সুতরাং তিনি ঐ জামরার নিকট পৌঁছিলেন, যাহা গাছের নিকটে আছে (অর্থাৎ, বড় জামরা) এবং বাতনে ওয়াদী অর্থাৎ, নীচের খালি জায়গা হইতে উহার উপর সাতটি কাঁকর মারিলেন, মর্মর দানার মত কাকর এবং প্রত্যেক কাকরের সাথে আল্লাহু আকবর বলিলেন। অতঃপর তথা হইতে ফিরিলেন কোরবানগাহের দিকে এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কোরবানী করিলেন, আর যাহা বাকী রহিল তাহা হযরত আলীকে দিলেন, তিনি তাহা কোরবানী করিলেন। তিনি আপন পশুতে আলীকেও শরীক করিলেন। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যাহাতে প্রত্যেক পশু হইতে কিছু অংশ লওয়া হয় এবং একত্রে পাকানো হয়। সেমতে একটি ডেগে উহা পাকানো হইল এবং তাহারা উভয়ে উহার গোশত খাইলেন ও শুরুয়া পান করিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হইলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হইলেন এবং মক্কায় যাইয়া যোহর পড়িলেন। অতঃপর তিনি (আপন গোত্র) বনী আব্দুল মুত্তালিবের নিকট পৌঁছিলেন, যাহারা যমযমের পাড়ে দাঁড়াইয়া লোকদেরে পানি পান করাইতেছিলেন। তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, হে বনী আব্দুল মুত্তালিব। টান, টান, যদি আমি আশংকা না করিতাম যে, পানি পান করানো ব্যাপারে লোক তোমাদিগকে পরাভূত করিয়া দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি টানিতাম। তখন তাহারা তাহাকে এক বালতি পানি দিলেন এবং উহা হইতে তিনি কিছু পান করিলেন।
জাবের (রাঃ) বলেন, তখন আমরা হজ্জ ছাড়া কিছুর নিয়ত করি নাই, আমরা উমরার কথা জানিতাম না। (উহা হজ্জের সাথে করা যাইতে পারে কিনা ?) অবশেষে যখন আমরা তাঁহার সাথে বায়তুল্লাহর হেরেমে পৌঁছিলাম, তিনি 'হাজারে আসওয়াদ' হাতে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন, অতঃপর সাত পাক বায়তুল্লাহ্ প্রদক্ষিণ করিলেন ; তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করিলেন এবং চারি পাক স্বাভাবিকভাবে চলিলেন। অতঃপর 'মাকামে ইবরাহীম'-এর দিকে অগ্রসর হইলেন এবং কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “এবং মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থানে পরিণত কর (অর্থাৎ, উহার নিকট নামায পড়)।" এ সময় হুযুর দুই রাকআত নামায পড়িলেন মাকামে ইবরাহীমকে নিজের ও বায়তুল্লাহর মধ্যখানে রাখিয়া (অর্থাৎ, তাহার সম্মুখে মাকামে ইবরাহীম আর উহার সম্মুখে বায়তুল্লাহ্)। অপর বর্ণনায় আছে, ঐ দুই রাকআতে হুযুর সুরা 'কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ' ও 'কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন পড়িয়াছিলেন। অতঃপর হাজারে আসওয়াদের দিকে প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং উহাকে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন। তৎপর দরজা দিয়া সাফা পর্বতের দিকে বাহির হইলেন এবং যখন সাফার নিকটে পৌঁছিলেন, কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত" এবং বলিলেন, আমি উহা ধরিয়া আরম্ভ করিব যাহা ধরিয়া আল্লাহ্ আরম্ভ করিয়াছেন। সুতরাং তিনি সাফা হইতে আরম্ভ করিলেন এবং উহার উপরে চড়িলেন যাহাতে তিনি আল্লাহর ঘর দেখিতে পাইলেন। তখন তিনি কেবলা অর্থাৎ, আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরিয়া আল্লাহর তওহীদের ঘোষণা করিলেন এবং তাঁহার মহিমা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বূদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়, তাহার কোন শরীক নাই, তাহারই শাসন এবং তাহারই সমস্ত প্রশংসা, তিনি হইতেছেন সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বুদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়। তিনি তাহার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়াছেন এবং তাহার বান্দাকে সাহায্য দান করিয়াছেন এবং একাকী সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করিয়াছেন। ইহা তিনি তিনবার বলিলেন এবং ইহাদের মধ্যখানে কিছু দো'আ করিলেন। অতঃপর সাফা হইতে অবতরণ করিলেন এবং ত্বরিতে মারওয়া অভিমুখে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না তাহার পা মোবারক উপত্যকা সমতলে। অতঃপর তিনি দৌড়াইয়া চলিলেন, যাবৎ না উপত্যকা অতিক্রম করিলেন, যখন চড়াইতে উঠিলেন স্বাভাবিকভাবে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না মারওয়ায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি ঐরূপই করিলেন, যেরূপ সাফার উপর করিয়াছিলেন। এমন কি যখন মারওয়ার শেষ চলা সমাপ্ত হইল, মারওয়ার উপর দাড়াইয়া লোকদের সম্বোধন করিলেন। আর লোকেরা ছিল তখন তাহার নীচে। তিনি বলিলেন, যদি আমি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝিতে পারিতাম যাহা আমি পরে বুঝিতে পারিয়াছি, তাহা হইলে কখনও আমি কোরবানীর পশু সঙ্গে আনিতাম না এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করিতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহার সঙ্গে কোরবানীর পশু নাই, সে যেন এহরাম খুলিয়া ফেলে এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করে। এ সময় সুরাকা ইবনে মালেক ইবনে জুশুম দাড়াইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ । ইহা কি আমাদের এ বৎসরের জন্যই, না চিরকালের জন্য ? তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হাতের অঙ্গুলীসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকাইয়া দুইবার বলিলেন, উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করিল। না; বরং চিরকালের—চিরকালের জন্য।
এ সময় হযরত আলী ইয়ামন হইতে (যিনি তথায় বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোরবানীর পশু লইয়া আসিলেন। তখন হুযূর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যখন তুমি এহরাম বাঁধিয়াছিলে কিসের এহরাম বাঁধিয়াছিলে? (হজ্জের না উমরার না উভয়ের?) তিনি বলিলেন, আমি এইরূপ বলিয়াছি—“হে খোদা! আমি এহরাম বাঁধিতেছি যেভাবে এহরাম বাঁধিয়াছেন তোমার রাসূল।" তখন হুযুর বলিলেন, তবে তুমি এহরাম খুলিও না। কেননা, আমার সাথে কোরবানীর পশু রহিয়াছে। হযরত জাবের বলেন, যেসকল পশু হযরত আলী ইয়ামন হইতে আনিয়াছিলেন, আর যাহা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাথে আনিয়াছিলেন তাহা একত্রে হইল একশত। জাবের বলেন, সুতরাং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাহাদের সাথে তাহার ন্যায় কোরবানীর পশু ছিল তাহারা ব্যতীত সকল লোকই এহরাম খুলিয়া ফেলিল এবং মাথা ছাঁটাইল। অতঃপর যখন (৮ই যিলহজ্জ) তরবিয়ার দিন আসিল, (যাহারা এহরাম খুলিয়া ফেলিয়াছিলেন তাহারা সকলেই নূতনভাবে এহরাম বাঁধিলেন এবং মিনার দিকে রওয়ানা হইলেন এবং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সওয়ার হইয়া গেলেন এবং তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তথায় সামান্য সময় অপেক্ষা করিলেন, যাহাতে সূর্য উঠিল। এ সময় তিনি হুকুম করিলেন, কেহ যাইয়া যেন নামেরায় তাঁহার জন্য একটি পশমের তাবু খাটায় এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে রওয়ানা হইয়া গেলেন। তখন কুরাইশরা নিঃসন্দেহ ছিল যে, হুজুর নিশ্চয়ই মাশআরুল হারামের নিকটেই অবস্থান করিবেন, যেমন কুরাইশরা জাহেলিয়াতে করিত (এবং সাধারণের সাথে আরাফাতে অবস্থান করিবেন না। যাহাতে তাহাদের মান হানি হয়); কিন্তু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অগ্রসর হইতে রহিলেন, যাবৎ না আরাফার নিকট যাইয়া পৌঁছিলেন এবং দেখিলেন, তথায় নামেরায় তাহার জন্য তাঁবু খাটান হইয়াছে। সুতরাং তিনি প্রায় অবতরণ করিলেন ও অবস্থান গ্রহণ করিলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলিল তিনি তাহার কাসওয়া উটনী সাজাইতে আদেশ দিলেন, আর উহা সাজানো হইল এবং তিনি 'বতনে ওয়াদী' বা আরানা উপত্যকায় পৌঁছিলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করিলেন এবং বলিলেন:
"তোমাদের একের জান ও মাল তোমাদের অপরের প্রতি (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে) হারাম—যেভাবে এই দিনে, এই মাসে, এই শহরে হারাম। শুন, মূর্খতার যুগের সকল অপকাজ রহিত হইল এবং মূর্খতার যুগের রক্তের দাবীসমূহও রহিত হইল, আর আমাদের রক্তের দাবীসমূহের যে দাবী আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার নিজ বংশের আয়াস) ইবনে রবীয়া ইবনে হারেসের রক্তের দাবী। সে বনী সা'দ গোত্রে দুধপান অবস্থায় ছিল, এমন অবস্থায় হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাহাকে হত্যা করে। এভাবে মূর্খতার যুগের সুদ রহিত হইল, আর আমাদের সুদসমূহের যে সুদ আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার চাচা ) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। উহা সমস্ত রহিত হইল।"
দ্বিতীয় কথা হইল, “তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করিবে। কেননা, তোমরা তাহাদিগকে গ্রহণ করিয়াছ আল্লাহর জামানতে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাহাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করিয়াছ। তাহাদের উপর তোমাদের হক হইল, তাহারা যেন তোমাদের জেনানা মহলে অপর কাহাকেও যাইতে না দেয়, যাহা তোমরা না পছন্দ করিয়া থাক। যদি তাহারা তাহা করে, তবে তাহাদিগকে মারিবে অকঠোর মার, আর তোমাদের উপর তাহাদের হক হইল, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাহাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করিবে ( বাসস্থানসহ)। "
তৃতীয় কথা হইল, "আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক (মূল) জিনিস রাখিয়া যাইতেছি, যদি তোমরা উহা ধরিয়া থাক, তবে তোমরা আমার পর কখনও বিপথগামী হইবে না—তাহা হইতেছে আল্লাহর কিতাব।"
হে লোকসকল, তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে, তখন তোমরা কি বলিবে? তাহারা উত্তর করিল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি নিশ্চয় আমাদিগকে আল্লাহর বাণী পৌঁছাইয়াছেন, আপন কর্তব্য সম্পাদন করিয়াছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করিয়াছেন। তখন তিনি আপন শাহাদত অঙ্গুলী আকাশের দিকে উঠাইয়া এবং উহা দ্বারা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করিয়া তিনবার বলিলেন, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক।
অতঃপর বেলাল আযান দিলেন ও একামত বলিলেন এবং হুযুর যোহর পড়িলেন। বেলাল পুনরায় একামত বলিলেন এবং হুযূর আসর পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে অপর কোন নফল পড়িলেন না। তৎপর তিনি কাওয়া উটনীতে সওয়ার হইয়া মাওকেফে (অবস্থানস্থলে) পৌঁছিলেন এবং উহার পিছন দিক (জাবালে রহমতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মাশাতকে আপন সম্মুখে করিয়া কেবলার দিকে হইলেন। এইভাবে তিনি দাড়াইয়া রহিলেন, যাবৎ না সূর্য ডুবিয়া গেল এবং পিতাভ বর্ণ কিছুটা চলিয়া গেল। অবশেষে সূর্য গোলক সম্পূর্ণ নীচে অদৃশ্য হইয়া গেল। অতঃপর তিনি উসামাকে আপন সওয়ারীর পিছনে সওয়ার বসাইলেন এবং সওয়ারী চালাইতে রহিলেন, যাবৎ না মুখদালেফায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি এক আযান ও দুই একামতের সহিত মাগরিব ও এশা পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে কোন না পড়িলেন না। অতঃপর শুইয়া রহিলেন, যাবৎ না উষার উদয় হইল। তৎপর যখন উষা পরিষ্কার হইয়া গেল আযান ও একামতের সাথে ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তিনি কাসওয়ায় সওয়ার হইলেন, যাহাতে তিনি মাশআরুল হারাম নামক স্থানে পৌঁছিলেন। তথায় তিনি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর নিকট দো'আ করিলেন, তাঁহার মহত্ত্ব ঘোষণা করিলেন, কলেমায়ে তওহীদ পড়িলেন। এবং তাহার একত্ব ঘোষণা করিলেন। তিনি তথায় দাড়াইয়া এইরূপ করিতে রহিলেন, যাবৎ না আকাশ খুব ফর্সা হইয়া গেল। অতঃপর তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই সওয়ারী চালাইয়া দিলেন এবং (আপন চাচাত ভাই) ফযল ইবনে আব্বাসকে সওয়ারীর পিছনে বসাইলেন, যাহাতে তিনি 'বনে মুহাসসির' নামক স্থানে পৌঁছিলেন এবং সওয়ারীকে কিছু উত্তেজিত করিলেন। অতঃপর তিনি মধ্যম পথ ধরিলেন যাহা বড় জামরার দিকে গিয়াছে, সুতরাং তিনি ঐ জামরার নিকট পৌঁছিলেন, যাহা গাছের নিকটে আছে (অর্থাৎ, বড় জামরা) এবং বাতনে ওয়াদী অর্থাৎ, নীচের খালি জায়গা হইতে উহার উপর সাতটি কাঁকর মারিলেন, মর্মর দানার মত কাকর এবং প্রত্যেক কাকরের সাথে আল্লাহু আকবর বলিলেন। অতঃপর তথা হইতে ফিরিলেন কোরবানগাহের দিকে এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কোরবানী করিলেন, আর যাহা বাকী রহিল তাহা হযরত আলীকে দিলেন, তিনি তাহা কোরবানী করিলেন। তিনি আপন পশুতে আলীকেও শরীক করিলেন। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যাহাতে প্রত্যেক পশু হইতে কিছু অংশ লওয়া হয় এবং একত্রে পাকানো হয়। সেমতে একটি ডেগে উহা পাকানো হইল এবং তাহারা উভয়ে উহার গোশত খাইলেন ও শুরুয়া পান করিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হইলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হইলেন এবং মক্কায় যাইয়া যোহর পড়িলেন। অতঃপর তিনি (আপন গোত্র) বনী আব্দুল মুত্তালিবের নিকট পৌঁছিলেন, যাহারা যমযমের পাড়ে দাঁড়াইয়া লোকদেরে পানি পান করাইতেছিলেন। তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, হে বনী আব্দুল মুত্তালিব। টান, টান, যদি আমি আশংকা না করিতাম যে, পানি পান করানো ব্যাপারে লোক তোমাদিগকে পরাভূত করিয়া দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি টানিতাম। তখন তাহারা তাহাকে এক বালতি পানি দিলেন এবং উহা হইতে তিনি কিছু পান করিলেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৫৫৬

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৫৬। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায়ী হজ্জে রওয়ানা হইলাম, আমাদের মধ্যে কেহ উমরার এহরাম বাঁধিয়াছিল, আর কেহ হজ্জের এহরাম। যখন আমরা মক্কায় পৌঁছিলাম, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ যে উমরার এহরাম বাঁধিয়াছে এবং কোরবানীর পশু সাথে আনে নাই, সে যেন (উমরার কাজ শেষ করিয়া) এহরাম খুলিয়া ফেলে। আর যে উমরার এহরাম বাঁধিয়াছে এবং সাথে কোরবানীর পশু আনিয়াছে, সে যেন হজ্জের তালবিয়া বলে উমরার সাথে এবং এহরাম না খোলে, যাবৎ না হজ্জ ও উমরা উভয় হইতে অবসর গ্রহণ করে। অপর বর্ণনায় আছে, সে যেন এহরাম না খোলে যাবৎ না পশু কোরবানী করিয়া অবসর গ্রহণ করে, আর যে শুধু হজ্জের এহরাম বাঁধিয়াছে, সে যেন হজ্জের কাজ পূর্ণ করে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি হায়যগ্রস্তা হইয়া গেলাম এবং (উমরার জন্য) খানায়ে কা'বার তওয়াফ করিতে পারিলাম না এবং সাফা মারওয়ার মধ্যে সায়ীও করিতে পারিলাম না। আমার অবস্থা এইরূপ রহিল, যাবৎ না আরাফার দিন উপস্থিত হইল, অথচ আমি উমরা ছাড়া কিছুর (অর্থাৎ, হজ্জের এহরাম বাঁধি নাই। তখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ দিলেন — আমি যেন আমার মাথার চুল খুলিয়া দিই এবং উহাতে চিরুনি করি এবং হজ্জের এহরাম বাঁধি আর উমরা ত্যাগ করি। সুতরাং আমি এইরূপ করিলাম এবং আমার হজ্জ আদায় করিলাম। অতঃপর তিনি (আমার ভাই) আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরকে আমার সাথে পাঠাইলেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আমার সেই উমরার পরিবর্তে তানযীম হইতে উমরা করি।
হযরত আয়েশা বলেন, যাহারা শুধু উমরার এহরাম বাঁধিয়াছিল তাহারা খানায়ে কা'বার তওয়াফ করিল এবং সাফা মারওয়ার মধ্যে সায়ী করিল, অতঃপর তাহারা হালাল হইয়া গেল। অতঃপর তাহারা (হজ্জের জন্য) তওয়াফ করিল, যখন মিনা হইতে (১০ তারিখে) প্রত্যাবর্তন করিল; কিন্তু যাহারা হজ্জ ও উমরার এক সাথে এহরাম বাঁধিয়াছিল তাহারা শুধু (১০ তারিখে) একটি মাত্র তওয়াফ করিল। (তাহাদের উমরার প্রথম তওয়াফের আবশ্যক হয় নাই।) — মোত্তাঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি হায়যগ্রস্তা হইয়া গেলাম এবং (উমরার জন্য) খানায়ে কা'বার তওয়াফ করিতে পারিলাম না এবং সাফা মারওয়ার মধ্যে সায়ীও করিতে পারিলাম না। আমার অবস্থা এইরূপ রহিল, যাবৎ না আরাফার দিন উপস্থিত হইল, অথচ আমি উমরা ছাড়া কিছুর (অর্থাৎ, হজ্জের এহরাম বাঁধি নাই। তখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ দিলেন — আমি যেন আমার মাথার চুল খুলিয়া দিই এবং উহাতে চিরুনি করি এবং হজ্জের এহরাম বাঁধি আর উমরা ত্যাগ করি। সুতরাং আমি এইরূপ করিলাম এবং আমার হজ্জ আদায় করিলাম। অতঃপর তিনি (আমার ভাই) আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরকে আমার সাথে পাঠাইলেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আমার সেই উমরার পরিবর্তে তানযীম হইতে উমরা করি।
হযরত আয়েশা বলেন, যাহারা শুধু উমরার এহরাম বাঁধিয়াছিল তাহারা খানায়ে কা'বার তওয়াফ করিল এবং সাফা মারওয়ার মধ্যে সায়ী করিল, অতঃপর তাহারা হালাল হইয়া গেল। অতঃপর তাহারা (হজ্জের জন্য) তওয়াফ করিল, যখন মিনা হইতে (১০ তারিখে) প্রত্যাবর্তন করিল; কিন্তু যাহারা হজ্জ ও উমরার এক সাথে এহরাম বাঁধিয়াছিল তাহারা শুধু (১০ তারিখে) একটি মাত্র তওয়াফ করিল। (তাহাদের উমরার প্রথম তওয়াফের আবশ্যক হয় নাই।) — মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৫৫৭

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৫৭। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে তামাত্তু' করিয়াছিলেন হজ্জের সাথে উমরা মিলাইয়া। তিনি ফুলহুলায়ফা হইতে কোরবানীর পশু সাথে লইলেন এবং প্রথমে তালবিয়া বলিলেন উমরার, অতঃপর তালবিয়া বলিলেন হজ্জের। সুতরাং লোকেরাও তামাত্তু' করিল নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজ্জের সাথে উমরা মিলাইয়া। তাহাদের মধ্যে কেহ কোরবানীর পশু সঙ্গে লইল, আর কেহ তাহা সাথে লইল না। অতঃপর যখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌঁছিলেন, লোকদের বলিলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানীর পশু সাথে আনিয়াছ, সে যেন হালাল মনে না করে এমন কোন বিষয়কে, যাহা (এহরামের কারণে) তাহার প্রতি হারাম হইয়া গিয়াছে (অর্থাৎ, এহরাম না খোলে), যাবৎ না সে আপন হজ্জ সম্পন্ন করে, আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানীর পশু সাথে আনে নাই, সে যেন বায়তুল্লাহর তওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী করে এবং মাথা ছাটাইয়া হালাল হইয়া যায়। অতঃপর হজ্জের এহরাম বাধে এবং কোরবানীর পশু লয়। আর যে কোরবানীর পশু লইতে পারিল না, সে যেন তিন দিন রোযা রাখে হজ্জের মওসুমে, আর সাত দিন যখন বাড়ীতে ফিরে।
অতএব হুযূর প্রথমে উমরার জন্য বায়তুল্লাহর তওয়াফ করিলেন, যখন মক্কায় পৌঁছিলেন এবং হাজারে আসওয়াদে চুমা দিলেন। তিনি তওয়াফে তিনবার জোরে চলিলেন, আর চারিবার স্বাভাবিকভাবে হ্যাঁটিলেন। যখন তিনি বায়তুল্লাহর তওয়াফ শেষ করিলেন মাকামে ইবরাহীমের নিকট দুই রাকআত (তওয়াফের নামায পড়িলেন এবং সালাম ফিরাইলেন। অতঃপর রওয়ানা হইলেন এবং সাফা মারওয়ায় যাইয়া সাতবার সাফা মারওয়ার সায়ী করিলেন; কিন্তু তৎপর তিনি হালাল করিলেন না (এহরামের কারণে) যাহা তাঁহার প্রতি হারাম হইয়া গিয়াছিল, যাবৎ না আপন হজ্জ সমাপন করিলেন অর্থাৎ, কোরবানীর তারিখে কোরবানী করিলেন এবং (মিনা হইতে) মক্কায় যাইয়া বায়তুল্লাহর তওয়াফ করিলেন। অতঃপর পূর্ণ হালাল হইয়া গেলেন এহরামের কারণে যাহা তাহার প্রতি হারাম হইয়া গিয়াছিল তাহা হইতে। আর লোকদের মধ্যে যে কোরবানীর পশু সাথে লইয়াছিল সেও সেই অনুরূপ করিল যাহা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করিয়াছিলেন। মোত্তাঃ
অতএব হুযূর প্রথমে উমরার জন্য বায়তুল্লাহর তওয়াফ করিলেন, যখন মক্কায় পৌঁছিলেন এবং হাজারে আসওয়াদে চুমা দিলেন। তিনি তওয়াফে তিনবার জোরে চলিলেন, আর চারিবার স্বাভাবিকভাবে হ্যাঁটিলেন। যখন তিনি বায়তুল্লাহর তওয়াফ শেষ করিলেন মাকামে ইবরাহীমের নিকট দুই রাকআত (তওয়াফের নামায পড়িলেন এবং সালাম ফিরাইলেন। অতঃপর রওয়ানা হইলেন এবং সাফা মারওয়ায় যাইয়া সাতবার সাফা মারওয়ার সায়ী করিলেন; কিন্তু তৎপর তিনি হালাল করিলেন না (এহরামের কারণে) যাহা তাঁহার প্রতি হারাম হইয়া গিয়াছিল, যাবৎ না আপন হজ্জ সমাপন করিলেন অর্থাৎ, কোরবানীর তারিখে কোরবানী করিলেন এবং (মিনা হইতে) মক্কায় যাইয়া বায়তুল্লাহর তওয়াফ করিলেন। অতঃপর পূর্ণ হালাল হইয়া গেলেন এহরামের কারণে যাহা তাহার প্রতি হারাম হইয়া গিয়াছিল তাহা হইতে। আর লোকদের মধ্যে যে কোরবানীর পশু সাথে লইয়াছিল সেও সেই অনুরূপ করিল যাহা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করিয়াছিলেন। মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৫৫৮

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৫৮। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন ইহা উমরা, যাহা দ্বারা আমরা তামাত্তু করিলাম (অর্থাৎ, লাভবান হইলাম)। সুতরাং যাহার নিকট কোরবানীর পশু নাই, সে যেন পূর্ণভাবে হালাল হইয়া যায়। মনে রাখিও, উমরা হজ্জের মাসে প্রবেশ করিল কেয়ামত পর্যন্তের জন্য। মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান