মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৬- জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৮ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ১৭৩৯

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৯। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জা'ফর (রাঃ) বলেন, যখন (মুতা হইতে, আমার পিতা) জা'ফর (ইবনে আবু তালেব)-এর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছিল, তখন নবী করীম (ﷺ) (আপন পরিবারকে) বলিলেনঃ জা'ফরের পরিবারের জন্য খানা তৈয়ার কর। কেননা, তাহাদের নিকট এমন দুঃসংবাদ পৌঁছিয়াছে যাহা তাহাদিগকে খানা তৈয়ার করা হইতে বিরত রাখিবে। – তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ্

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪০

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪০। হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হইবে, কিয়ামতের দিন তাহাকে বিলাপে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা দ্বারা শাস্তি দেওয়া হইবে। – মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪১

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪১। সাহাবিয়া হযরত আমরাহ্ বিনতে আব্দুর রহমান ইবনে সা'দ হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি হযরত আয়েশাকে বলিতে শুনিয়াছি, যখন তাঁহার নিকট বলা হইয়াছিল যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর বলিয়া থাকেন, মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়, তাহার জন্য জীবিত ব্যক্তিদের রোদনের কারণে। আল্লাহ্ আবু আব্দুর রহমানকে ক্ষমা করুন— তিনি (নবী করীমের নামে) মিথ্যা কথা বলিতেছেন না, তবে তিনি (তাঁহার কথা) ভুলিয়া গিয়াছেন অথবা (তাঁহার কথা) ভুল বুঝিয়াছেন। আসল ঘটনা হইল এই যে, একবার রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) একটি ইহুদী স্ত্রীলোকের কবরের নিকট দিয়া যাইতেছিলেন, যাহার জন্য রোদন করা হইতেছিল। তখন হুযূর (ﷺ) বলিলেনঃ তাহারা তাহার জন্য (তাহার গুণ গাহিয়া) রোদন করিতেছে, অথচ তাহাকে তাহার কবরে শাস্তি দেওয়া হইতেছে। — মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪২

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪২। তাবেয়ী আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবু মুলায়কা বলেন, মক্কায় হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফানের একটি মেয়ে মারা গেল এবং আমরা তাহার জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য গেলাম। হযরত ইবনে ওমর ও ইবনে আব্বাস (রাঃ)-ও তাহার জানাযায় হাজির হইয়াছিলেন, আর আমি তাঁহাদের উভয়ের মাঝখানে বসা ছিলাম; তখন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (হযরত ওসমানের পুত্র) আমর ইবনে ওসমানকে বলিলেন, আমর ইবনে ওসমান তখন তাঁহার সম্মুখে ছিল। তুমি কি (স্ত্রীলোকদিগকে) রোদন হইতে বারণ করিবে না? কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হইয়া থাকে, তাহার পরিবারের লোকদের রোদন করার দরুন। তখন ইবনে আব্বাস বলিলেন, (আপনার পিতা) হযরত ওমরও এ ধরনের কিছু বলিতেন। অতঃপর ইবনে আব্বাস একটি ঘটনা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, (ওমরের শাহাদতের কয়েকদিন পূর্বে) আমি ওমরের সহিত মক্কা হইতে (মদীনায়) ফিরিতেছিলাম ; যখন আমরা বায়দা নামক স্থান পর্যন্ত পৌঁছিলাম, তখন সামুরা গাছের ছায়ায় একদল আরোহীর সহিত হযরত ওমরের সাক্ষাৎ হইল। এ সময় তিনি (আমাকে) বলিলেন, দেখ! এই আরোহী দল কাহারা ? আমি যাইয়া দেখি তাহারা সাহাবী সুহায়ব রূমীর দল। ইবনে আব্বাস বলেন, আমি যাইয়া তাঁহাকে এ সংবাদ দিলাম। তিনি বলিলেন, তাঁহাকে ডাক। সুতরাং আমি সুহায়বের নিকট পুনঃ গেলাম এবং বলিলাম, উঠুন ! আমীরুল মু'মিনীনের সহিত মিলিত হউন! অতঃপর যখন (আমরা মদীনায় পৌঁছিলাম এবং) হযরত ওমর বিপদগ্রস্ত ( আহত) হইলেন, হযরত সুহায়ব কাঁদিতে কাঁদিতে আসিলেন এবং বলিতে লাগিলেন, হায় আমার ভাই! হায় আমার সাথী !! তখন হযরত ওমর বলিলেন, হে সুহায়ব, তুমি কাঁদিতেছ ? অথচ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হইয়া থাকে, তাহার পরিবারের লোকের তাহার জন্য রোদনের কারণে। ইবনে আব্বাস বলেন, যখন ওমর ইন্তেকাল করিলেন, আমি বিবি আয়েশাকে (ওমর ও সুহায়বের) এই ঘটনা বলিলাম, আয়েশা বলিলেন, আল্লাহ্ ওমরকে রহম করুন। কখনও না, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই কথা বলেন নাই যে, “মৃত ব্যক্তিকে তাহার প্রতি তাহার পরিবারের লোকের রোদনের কারণে শাস্তি দেওয়া হইয়া থাকে।” কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা কাফেরের প্রতি তাহার জন্য তাহার পরিবারের লোকের রোদনের দরুন শাস্তি বৃদ্ধি করেন (কারণ কাফের তাহার জন্য রোদনের নিমিত্ত ওসিয়ত করিয়া যায় বা উহাতে রাযী থাকে)। আয়েশা বলেন, (প্রমাণের জন্য) তোমাদের পক্ষে আল্লাহর কুরআনই যথেষ্ট, উহাতে রহিয়াছে, “কোন বোঝা বহনকারী অপর কাহারও (গোনাহর) বোঝা বহন করিবে না।” ইবনে আব্বাস এ সময় বলিলেন, আল্লাহ্ই (মানুষকে) হাসাইয়া থাকেন এবং কাঁদাইয়া থাকেন। ইবনে আবু মুলায়কা বলেন, (ইহা শুনিয়া) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর কিছুই বলিলেন না। – মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪৩

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট যখন (মুতার যুদ্ধে) হযরত যায়দ ইবনে হারেসা, জা'ফর ইবনে আবু তালেব ও আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহার নিহত হওয়ার সংবাদ পৌঁছিল, তিনি (মসজিদে যাইয়া) বসিলেন ; তখন তাহার চেহারায় শোকের চিহ্ন পরিলক্ষিত হইতেছিল এবং আমি উহা দরজার ফাঁক দিয়া লক্ষ্য করিতে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁহার নিকট আসিয়া বলিল, জাফরের ঘরের মহিলারা রোদন করি তেছে। ইহা শুনিয়া হুযূর তাহাকে তাহাদের বারণ করিতে বলিলেন। সুতরাং সে গেল। অতঃপর দ্বিতীয়বার আসিয়া বলিল, তাহারা তাহার কথা মানিল না। হুযূর বলিলেন, তাহাদের বারণ কর। অতঃপর সে তৃতীয়বার আসিল এবং বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহর কসম, তাহারা আমাকে পরাজিত করিয়া ফেলিয়াছে। হযরত আয়েশা বলেন, আমার ধারণা হুযূর (শেষবার) বলিয়াছেন, তাহাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ কর। (এবং তাহাদের মুখ বন্ধ করিয়া দাও !) হযরত আয়েশা বলেন, আমি (মনে মনে) বলিলাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তোমায় যাহা করিতে বলিয়াছিলেন, তাহা করিতে পারিলে না, অথচ (বারবার আসিয়া) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বিরক্ত করিতেও ছাড়িলে না। — মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪৪

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪৪। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, যখন (আমার প্রথম স্বামী) আবু সালামা মারা গেলেন, আমি বলিলাম, আহা, একজন পরদেশী মুসাফির পরদেশে মারা গেলেন, (অর্থাৎ, মক্কার মানুষ মদীনায় মারা গেলেন।) আমি তাঁহার জন্য এমন কাঁদা কাঁদিব যাহা (ভবিষ্যতে) আলো -চনার বস্তু হইয়া দাঁড়ায়। সুতরাং আমি তাঁহার জন্য কাঁদার নিমিত্ত প্রস্তুত হইয়া গেলাম। হঠাৎ দেখি, অপর একটি স্ত্রীলোকও আমার সাহায্যের ইচ্ছায় আগাইয়া আসিয়াছে। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহার দিকে অগ্রসর হইলেন এবং বলিলেনঃ তুমি কি এমন ঘরে শয়তান প্রবেশ করাইতে চাহ যাহা হইতে আল্লাহ্ তাহাকে বাহির করিয়া দিয়াছেন দুইবার। (উম্মে সালামা বলেন,) সুতরাং আমি কাঁদা হইতে বিরত রহিলাম, আর কাঁদিলাম না। —মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪৫

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪৫। হযরত নো'মান ইবনে বশীর (রাঃ) বলেন, একবার সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) রোগে বেহুঁশ হইয়া গেলেন। এ সময় তাহার ভগিনী আমরাহ্ কাঁদিতে লাগিল এবং বলিতে লাগিল, হে আমার পর্বততুল্য ভ্রাত, হে আমার এইরূপ ভ্রাত! এইরূপ ভ্রাত ! (অর্থাৎ,) এক এক করিয়া তাহার গুণাবলী উল্লেখ করিতে লাগিল। পরে যখন আব্দুল্লাহ্ হুঁশে আসিলেন, বলিলেন, যখনই তুমি আমাকে লক্ষ্য করিয়া যাহা বলিতে, তখনই আমাকে তদনুরূপ বলা হইত। (অর্থাৎ, তুমি কি এই গুণে গুণী ?) অপর এক বর্ণনায় রহিয়াছে, যখন তিনি (দশম হিজরীতে মুতার যুদ্ধে) মারা গেলেন, আমরাহ্ কাঁদিলেন না। —বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৭৪৬

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪৬। হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ যে কোন ব্যক্তি মরে, আর তাহার খান্দানের রোদনকারীরা তাহার জন্য রোদন আরম্ভ করে এবং বলে যে, হে আমার পর্বততুল্য অমুক! হে আমার মুরবী অমুক! অথবা ইহার অনুরূপ কিছু, তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাহার জন্য দুইজন ফিরিশতা নিযুক্ত করেন, যাহারা তাহার বুকে ঘুষি মারে এবং বলে যে, তুমি এইরূপ ছিলে নাকি ? —তিরমিযী, এবং তিনি বলিয়াছেন, ইহা গরীব; কিন্তু হাসান।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান