মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
২- ঈমানের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১৯ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ১৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৯। হযরত আবু সাঈদ* খুদরী (রাযিঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) ঈদুল আযহা বা ঈদুল-ফিতরে ঈদগাহে বের হয়ে এলেন এবং মহিলাদের নিকট গিয়ে বললেন- হে নারী সমাজ! তোমরা বেশী বেশী দান খয়রাত কর। কেননা আমাকে দেখান হয়েছে, তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামী। তারা বলল, কেন হে আল্লাহর রাসূল! উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা বেশী বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীদের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তোমরা জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনদারীতে ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিচক্ষণ বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের জ্ঞান বুদ্ধিহরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখি না। তারা প্রশ্ন করল, আমাদের দ্বীনে ও বুদ্ধিতে ত্রুটি কোথায় হে আল্লাহর রাসূল! হুযুর বললেন, মহিলাদের সাক্ষ্য পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয় কি? তারা বলল, হ্যাঁ। হুযুর বললেন, এটাই তার বুদ্ধির ত্রুটি। তিনি বললেন, ঋতুবতী হলে তারা নামায পড়ে না, রোযা রাখে না, (এটা কি সত্যি নয়?), তারা বলল, হ্যাঁ। হুযুর বললেন, এটাই তাদের দ্বীনদারীর ত্রুটি। (বোখারী-মুসলিম)
* হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) এর নামঃ সা'দ, উপনাম আবু সাঈদ, এ নামেই তিনি বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পিতার নাম মালিক ইবনে সিনান। তিনি একজন বিখ্যাত সাহাবী ছিলেন। তিনি হিজরী ৭৪ সালে ৮৪ বছর বয়সে পবিত্র মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করেন।
* হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) এর নামঃ সা'দ, উপনাম আবু সাঈদ, এ নামেই তিনি বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পিতার নাম মালিক ইবনে সিনান। তিনি একজন বিখ্যাত সাহাবী ছিলেন। তিনি হিজরী ৭৪ সালে ৮৪ বছর বয়সে পবিত্র মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক বলেন- বনী আদম আমার উপর মিথ্যা আরোপ করেছে যা তার উচিত ছিল না। সে আমাকে গালি দিয়েছে যা তার উচিৎ ছিল না। আমার উপর তার মিথ্যারোপ হল তার এ কথা, আমাকে তিনি পুনঃ সৃষ্টি করবেন না যেভাবে প্রথম বার করেছেন। অথচ প্রথমবারের সৃষ্টি দ্বিতীয়বারের সৃষ্টির চাইতে কোন অংশেই সহজ নয়। আর আমাকে তার গালি দেয়া হল তার এ উক্তি, “আল্লাহ সন্তান নিয়েছেন।” অথচ আমি একা, স্বনির্ভর, আমি জন্ম দিই নি এবং জন্ম গ্রহণও করি নি। নেই আমার কোন সমকক্ষ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২১। হযরত ইবনে আব্বাসের অন্য হাদীসে আছে, তবে তারা আমাকে গালি দেয়, আমার সন্তান আছে। আমি স্ত্রী-পুত্র গ্রহণ করা থেকে পবিত্র। (বোখারী)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক বলেছেন- বনি আদম আমাকে কষ্ট ও পীড়া দেয়, তারা কাল বা যুগকে গালি দেয় অথচ আমিই হলাম কাল বা যুগ। হুকুম আমার হাতে। রাতদিনকে আমিই ঘুরাই। (বোখারী-মুসলিম)
وَأَنَا الدَّهْرُ 'আমি কাল' এ বাক্যটির অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে- ইমাম রাগেব ইস্পাহানী (রহ) বলেন, কালের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, যা কিছু প্রকাশ পায় তার মূল আমিই, অতএব কালকে গালমন্দ করার অর্থ আমাকেই মন্দ বলা।
وَأَنَا الدَّهْرُ 'আমি কাল' এ বাক্যটির অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে- ইমাম রাগেব ইস্পাহানী (রহ) বলেন, কালের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, যা কিছু প্রকাশ পায় তার মূল আমিই, অতএব কালকে গালমন্দ করার অর্থ আমাকেই মন্দ বলা।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৩। হযরত আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, কষ্টদায়ক কথা শুনে ধৈর্য ধারণকারী আল্লাহ অপেক্ষা বেশী আর কেউ নেই। মানুষ তাঁর পুত্র আছে বলে মন্তব্য করে, তারপরও তিনি তাদের মাফ করেন এবং রিযিক দান করেন। (বোখারী-মুসলিম)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৪। হযরত মু'য়ায* (রাযিঃ) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিছনে গাধার পিঠে আরোহী ছিলাম, আমার এবং হুযুর (ﷺ)-এর মাঝখানে গদির শেষ কাষ্ঠ ছাড়া কিছুই ছিল না। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে-মুয়ায! তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে, আর আল্লাহর উপর বান্দার কি হক আছে? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহর হক বান্দার উপর এই যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে, তার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর বান্দার হক আল্লাহর উপর এই– যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না, তাকে আযাব দিবেন না। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তা হলে আমি কি এ সুসংবাদ লোকদের কাছে পৌঁছে দিব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না, তুমি তাদের এ সুখবর দিলে তারা (আমল ছেড়ে খালি) তাওয়াক্কুল করবে। (বোখারী-মুসলিম)
*নাম মু'আয উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। পিতার নাম জাবাল ইবনে আমর। তিনি মদীনার খাযরাজ বংশে জন্ম লাভ করেন। তিনি নবুয়াতের দ্বাদশ সালে আঠার বছর বয়সে মদীনায় ইসলাম প্রচারের সূচনাকাশে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি একজন বদরী সাহাবী ছিলেন।
*নাম মু'আয উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। পিতার নাম জাবাল ইবনে আমর। তিনি মদীনার খাযরাজ বংশে জন্ম লাভ করেন। তিনি নবুয়াতের দ্বাদশ সালে আঠার বছর বয়সে মদীনায় ইসলাম প্রচারের সূচনাকাশে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি একজন বদরী সাহাবী ছিলেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৫। হযরত আনাস (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও হযরত মুআয (রাযিঃ) একই বাহনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিছনে বসা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে মুআয! মুআয (রাযিঃ) উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাজির, আমি শুনছি। এভাবে তিনবার মুয়াযকে ডাকলেন এবং মুয়ায (রাযিঃ) একইভাবে জবাব দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন- যে কেউ অন্তরে সত্য জেনে সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। হযরত মুআয (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এ কথা কি আমি লোকদের জানিয়ে দিব না যাতে তারা সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তাহলে তো লোকেরা তাওয়াক্কুল করে বসবে। বর্ণনাকারী হযরত আনাস (রাযিঃ) বললেন, মৃত্যুকালে হয়রত মুআয (রাযিঃ) গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য উক্ত হাদীসটি প্রকাশ করে গেছেন। (বোখারী-মুসলিম)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৬। হযরত আবু যর (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে দেখি তিনি সাদা কাপড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন। অতঃপর পুনরায় গিয়ে দেখি তিনি জেগেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে কোন বান্দা, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই' একথা বলে এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। আমি বললাম, যদি সে চুরি করে এবং যদিও যেনা করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হ্যাঁ, যদিও সে চুরি এবং যদিও সে যেনা করে। আমি বললাম, যদি সে চুরি করে যেনা করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যদিও সে চুরি করে যেনা করে। আবু যর এর নাক ধূলি-ধূসরিত হলেও। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আবু যর (রাযিঃ) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন তখন এ অংশটি অবশ্যই বলতেন “আবু যর-এর নাক ধুলায় ধূসরিত হলেও।”

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৭। হযরত উবাদা বিন সামেত (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর নিশ্চয়ই হযরত ঈসা (আ) ও আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর দাসীর পুত্র ও কালেমা, যা তিনি মারয়ামকে নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর নিকট থেকে প্রেরিত রূহ মাত্র। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন তার আমল যাই হোক না কেন। (বোখারী-মুসলিম)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৮। হযরত আমর বিন আ'স (রাযিঃ) বলেন, আমি হুযুর (ﷺ)-এর নিকট এলাম এবং বললাম, আপনার ডান হাত বাড়ান যেন আমি আপনার হাতে বাইয়াত করতে পারি। অতঃপর হুযুর নিজ হাত বাড়ালেন, কিন্তু আমি আমার হাতখানা গুটিয়ে ফেললাম। হুযুর (ﷺ) বললেন, হে আমর! তোমার কি হল? বললাম, আমি একটা শর্ত করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি শর্ত করতে চাও? আমি বললাম, আমাকে যেন মাফ করা হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে আমর! তুমি কি জান না, 'ইসলাম তার পূর্বেকার সব কিছু বিলীন করে দেয় এবং হিজরত তার পূর্বেকার সব কিছু মিটিয়ে দেয়? (মুসলিম)
মিশকাত প্রণেতা বলেন হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে যে দু'টি হাদীস বর্ণিত আছে, একটি হল- قال الله تعالى انا أغنا الشركاء عن الشرك
আর অন্যটি হল- الكبرياء ردائي
হাদীস দু'টি আমি রিয়া ও অহঙ্কার অধ্যায়ে বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।
মিশকাত প্রণেতা বলেন হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে যে দু'টি হাদীস বর্ণিত আছে, একটি হল- قال الله تعالى انا أغنا الشركاء عن الشرك
আর অন্যটি হল- الكبرياء ردائي
হাদীস দু'টি আমি রিয়া ও অহঙ্কার অধ্যায়ে বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৯। হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) বলেন, আমি এক সফরে নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে ছিলাম। এক সকালে আমি তাঁর খুব নিকটবর্তী হলাম তখন আমরা চলছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে দাখিল করবে এবং দোযখ থেকে দূরে রাখবে। নবী করীম (ﷺ) বললেন, তুমি এক কঠিন প্রশ্ন করেছ, তবে বিষয়টি সহজ, যার জন্য আল্লাহ তা সহজ করেন। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানে রোযা রাখবে, বায়তুল্লাহর হজ্জ করবে। তারপর নবী করীম (ﷺ) বললেন, আমি কি তোমাকে কল্যাণের দ্বারগুলো সম্পর্কে ওয়াকিফহাল করব না? রোযা হল ঢাল, আর সদকা গুনাহকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে ফেলে এবং মধ্যরাতের নামায। এরপর তিনি তেলাওয়াত করেন, “তারা তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা রাখে, তারা ভয় এবং প্রত্যাশায় তাদের প্রভুকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা কিছু দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। অথচ কেউ অবগত নয় তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ পরকালে তাদের জন্য কি চক্ষু জুড়ানো বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) বলেন, আমি কি তোমাকে বাতলে দিব না যে, দ্বীনের শিরবস্তু, খুঁটি ও উচ্চশিখর কি? হযরত মুআয বলেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, দ্বীনের শির হল ইসলাম, তার খুঁটিগুলো হল নামায, তার উচ্চ শিখর হল জিহাদ। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) বললেন, আমি কি তোমাকে সবকিছুর গোড়ার কথা বলে দিব না? বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর নবী। তখন তিনি স্বীয় জিহ্বা ধরে বললেন, এটাকে সংযত রাখবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমাদের জিহ্বা দ্বারা যা কিছু বলি, আমরা কি তা দ্বারা পাকড়াও হবো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! কিয়ামতের দিন মানুষকে শুধু তাদের জিহ্বার কথাবার্তার কারণেই মুখের বা নাকের উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩০। হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে একমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসে, আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করে এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে দান করে, আবার আল্লাহর জন্যই দান বন্ধ করে, সে অবশ্যই ঈমান পরিপূর্ণ করেছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩১। হযরত মুয়ায বিন আনাসের বর্ণনায় কিছুটা আগ-পিছ করে বলা হয়েছে। তন্মধ্যে আছে সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিয়েছে।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৯

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৯। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেন, একদা আমরা হযরত আবু বকর ও উমর (রাযিঃ) সহ একদল লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চতুষ্পার্শ্বে বসেছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মধ্য হতে উঠে চলে গেলেন এবং ফিরে আসতে এত দেরি করলেন যে, আমরা শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম, না জানি আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি কোন বিপদে পড়লেন? এতে আমরা সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম এবং তাঁর খোঁজে বের হলাম। অবশ্য সর্বপ্রথম আমিই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এবং আমি তার খোঁজে বের হয়ে পড়লাম। এমনিভাবে আমি বনি নাজ্জার গোত্রের জনৈক আনসারীর বাগানের প্রাচীরের নিকট এলাম। আমি তার চতুর্দিকে ঘুরে দেখলাম কোন দরজা আছে কি না, কিন্তু পেলাম না। এক জায়গায় হঠাৎ দেখলাম বাইরের একটা কূপ থেকে একটি ছোট নালা বাগানের ভিতরে প্রবেশ করেছে। শিয়াল যেভাবে আমি নিজেকে সংকুচিত করে তাতে প্রবেশ করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, আবু হুরায়রাহ না-কি? বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, কি হাল তোমার? আমি বললাম, আপনি আমাদের মাঝে ছিলেন এবং উঠে এলেন, কিন্তু এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা ভয় পেলাম। আল্লাহ না করুক, আপনি আমাদের অনুপস্থিতিতে কোন বিপদে পড়লেন কি না? এ জন্য আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম এবং আমিই সর্বপ্রথম ব্যস্ত হয়েছিলাম। অবশেষে আপনার খোঁজে এ বাগানের কাছে আসি এবং আমার দেহ শৃগালের ন্যায় গুটিয়ে এতে প্রবেশ করি। আর বাকী সব লোক আমার পেছনে রয়েছে। অতঃপর হুযুর (ﷺ) তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বললেন, হে আবু হুরায়রাহ! আমার জুতা দু'খানা নিয়ে যাও, আর বাগানের বাইরে যাকে পাবে যে স্থির বিশ্বাসে 'আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই' বলে সাক্ষ্য দেয়, তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবে। আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেন, বাইরে আসতেই সর্বপ্রথম হযরত উমর (রাযিঃ)-এর সাথে আমার দেখা হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ জুতা জোড়া কেন? বললাম, এ জুতা দু'খানা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর। এ জুতা জোড়াসহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে পাঠিয়েছেন, যার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে, সে যদি স্থির বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দেয়, “আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই” আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেব। এ কথা শুনার সাথে সাথে হযরত উমর (রাযিঃ) আমার বুকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, আমি চিৎ হয়ে পড়ে গেলাম। তারপর বললেন, হে আবু হুরায়রাহ! ফিরে যাও। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে ফিরে গেলাম এবং কেঁদে ফেললাম। দেখলাম, হযরত উমর (রাযিঃ) আমার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আছেন এবং আমার পেছনে পেছনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রাহ! তোমার কি হয়েছে? বললাম, আমি উমর (রাযিঃ)-এর সাক্ষাৎ পাই এবং আপনি আমাকে যে জন্য পাঠিয়েছেন সে কথা তাঁকে বলি। তখন তিনি আমার বুকে এত জোরে আঘাত করেন যে, আমি চিৎ হয়ে পড়ে যাই। তিনি আমাকে বলেন, ফিরে যাও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে ওমর, তুমি কেন এরূপ করলে? উমর (রাযিঃ) বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আপনি কি আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ)-কে আপনার জুতাদ্বয় দিয়ে পাঠিয়েছিলেন যে যাকে সে পাবে এমতাবস্থায় যে, স্থির অন্তরে যে সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিতে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ। উমর (রাযিঃ) বললেন, এ কাজ করবেন না। কেননা আমার ভয় হয় তা হলে লোকজন এর উপর তাওয়াক্কুল করে বসবে; বরং তাদের আমল করতে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তাদের আমল করতে দাও। (মুসলিম)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪০

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪০। হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেছেন, বেহেশতের চাবি হল “আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই "এ সাক্ষ্য দেয়া। (আহমদ)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪১। হযরত উসমান (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওফাতের পর কিছুসংখ্যক সাহাবী ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন, এমনকি কারো মনে খটকা জাগতে লাগল। আমিও তাদের একজন। এমনি অবস্থায় আমি এক স্থানে বসে ছিলাম। হযরত উমর (রাযিঃ) আমার নিকট দিয়ে গেলেন এবং আমাকে সালামও করলেন, অথচ আমি তা টের পেলাম না। অতঃপর হযরত উমর (রাযিঃ) আমার বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রাযিঃ)-এর নিকট অভিযোগ করেন। পরে তারা উভয়ে এসে আমাকে সালাম দিলেন এবং হযরত আবু বকর (রাযিঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে উসমান! তোমার কি হয়েছিল যে, তুমি তোমার ভাই উমর (রাযিঃ)-এর সালামের জবাব দিলে না। আমি বললাম, না, আমি তো এরূপ কিছুই করি নি। তখন হযরত উমর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি নিশ্চয় এরূপ করেছেন। হযরত উসমান (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি টেরও পাই নি যে, আপনি আমার নিকট দিয়ে গেছেন এবং আমাকে সালাম করেছেন। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) তখন বললেন, ওসমান সত্যই বলেছেন। নিশ্চয় কোন বিরাট দুশ্চিন্তা আপনাকে এ বেখেয়াল করে রেখেছিল। আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, তবে তা কি? আমি বললাম, আল্লাহ পাক তাঁর নবী করীম (ﷺ)-কে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন, অথচ আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপায় জিজ্ঞেস করে নিতে পারলাম না। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমি এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। তখন আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং বললাম, আমার মা-বাপ আপনার উপর কোরবান হোক, আপনিই এর হকদার বটে। তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমি বলছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল। এ ব্যাপারে মানুষের নাজাতের উপায় কি? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি আমার তরফ থেকে সে কালেমা গ্রহণ করবে, যা আমি আমার চাচাকে পেশ করেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তা-ই তার নাজাতের উপায়। (আহমদ)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪২। হযরত মিক্দাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, জমিনের উপর কোন মাটির ঘর বা তাঁবুর ঘর অবশিষ্ট থাকবে না, যেখানে আল্লাহ তা'আলা ইসলামের বাণী পৌঁছে দিবেন না, সম্মানিতদের সম্মানের সাথে অথবা অসম্মানিতদের অপদস্থতার সাথে। হয়তোবা আল্লাহ তাদের সম্মান দেবেন এবং তাদের সম্মানের অধিকারী বানাবেন, অথবা অসম্মানিত করে অতঃপর তারা আল্লাহর কালেমার অধীনস্থ হয়ে যাবে। আমি বললাম, তবে তো দীন পুরোটাই আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে। (আহমদ)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৩

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩। ওয়াহব ইবনে মুনাব্বিহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, "আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই" কালেমাটি কি বেহেশতের চাবি নয়? (যদি তাই হয় তবে আপনি আমলের জন্য এত বেশী তাগিদ করেন কেন?) তিনি বললেন, নিশ্চয় (তা বেহেশতের চাবি)। তবে প্রত্যেক চাবিরই কয়েকটি দাঁত রয়েছে। তুমি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে গেলেই তোমার জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হবে। নচেৎ তা তোমার জন্য খোলা হবে না। (জেনে রাখ কালেমারূপ চাবির দাঁত হল আমল।) (বুখারী)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৪

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৪। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পূর্ণরূপে মুসলমান হয়, তখন তার জন্য (তার) কৃত প্রত্যেক সৎকাজ তার দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। আর তাঁর কৃত অসৎ কাজ তার অনুরূপই (অর্থাৎ মাত্র একগুণই) লিপিবদ্ধ হয়-এমনিভাবেই সে আল্লাহর দরবারে চলে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)

তাহকীক:
তাহকীক চলমান