আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ২৯২০
আন্তর্জাতিক নং: ৩১৪১
১৯৫৮. নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল- সামানের খুমুস বের না করা; যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সেক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল- সামানের খুমুস বের না করেই তা তারই প্রাপ্য আর ইমাম কর্তৃক এরূপ আদেশ দান করা
২৯২০। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দণ্ডায়মান, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়স্ক দু’জন আনসার যুবকের মাঝখানে রয়েছি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাদের অপেক্ষা শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি, তখন তাঁদের একজন আমাকে খোচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, চাচা! আপনি কি আবু জাহ্‌লকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা; তাতে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে গালমন্দ করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমার দেহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে অবধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় বিস্মিত হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে অনুরূপ বলল। তৎক্ষণাত আমি আবু জাহেলকে দেখলাম, সে মানুষের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তখন আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করল। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর দিকে ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে তাঁকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করল, আমি তাকে হত্যা করেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের তরবারী তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার থেকে প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনু আমর ইবনে জামুহের জন্য। তারা দু’জন হল, মুআয ইবনে আফরা ও মুআয ইবনে আমর ইবনে জামূহ।
بَابُ مَنْ لَمْ يُخَمِّسِ الأَسْلاَبَ وَمَنْ قَتَلَ قَتِيلاً فَلَهُ سَلَبُهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُخَمِّسَ، وَحُكْمِ الإِمَامِ فِيهِ
3141 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ المَاجِشُونِ، عَنْ صَالِحِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ [ص:92]: بَيْنَا أَنَا وَاقِفٌ فِي الصَّفِّ يَوْمَ بَدْرٍ، فَنَظَرْتُ عَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي، فَإِذَا أَنَا بِغُلاَمَيْنِ مِنَ الأَنْصَارِ - حَدِيثَةٍ أَسْنَانُهُمَا، تَمَنَّيْتُ أَنْ أَكُونَ بَيْنَ أَضْلَعَ مِنْهُمَا - فَغَمَزَنِي أَحَدُهُمَا فَقَالَ: يَا عَمِّ هَلْ تَعْرِفُ أَبَا جَهْلٍ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، مَا حَاجَتُكَ إِلَيْهِ يَا ابْنَ أَخِي؟ قَالَ: أُخْبِرْتُ أَنَّهُ يَسُبُّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَئِنْ رَأَيْتُهُ لاَ يُفَارِقُ سَوَادِي سَوَادَهُ حَتَّى يَمُوتَ الأَعْجَلُ مِنَّا، فَتَعَجَّبْتُ لِذَلِكَ، فَغَمَزَنِي الآخَرُ، فَقَالَ لِي مِثْلَهَا، فَلَمْ أَنْشَبْ أَنْ نَظَرْتُ إِلَى أَبِي جَهْلٍ يَجُولُ فِي النَّاسِ، قُلْتُ: أَلاَ إِنَّ هَذَا صَاحِبُكُمَا الَّذِي سَأَلْتُمَانِي، فَابْتَدَرَاهُ بِسَيْفَيْهِمَا، فَضَرَبَاهُ حَتَّى قَتَلاَهُ، ثُمَّ انْصَرَفَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرَاهُ فَقَالَ: «أَيُّكُمَا قَتَلَهُ؟» ، قَالَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا: أَنَا قَتَلْتُهُ، فَقَالَ: «هَلْ مَسَحْتُمَا سَيْفَيْكُمَا؟» ، قَالاَ: لاَ، فَنَظَرَ فِي السَّيْفَيْنِ، فَقَالَ: «كِلاَكُمَا قَتَلَهُ، سَلَبُهُ لِمُعَاذِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الجَمُوحِ» ، وَكَانَا مُعَاذَ ابْنَ عَفْرَاءَ، وَمُعَاذَ بْنَ عَمْرِو بْنِ الجَمُوحِ، " قَالَ مُحَمَّدٌ: سَمِعَ يُوسُفُ صَالِحًا، وَإِبْرَاهِيمَ أَبَاهُ "
হাদীস নং: ২৯২১
আন্তর্জাতিক নং: ৩১৪২
১৯৫৮. নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল- সামানের খুমুস বের না করা; যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সেক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল- সামানের খুমুস বের না করেই তা তারই প্রাপ্য আর ইমাম কর্তৃক এরূপ আদেশ দান করা
২৯২১। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখী হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে ছুটোছুটি আরম্ভ হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চড়ে বসেছে। আমি ঘুরে তার পিছন দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত হানলাম। তখন সে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি তাতে মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম। মৃত্যু তাকেই পাকড়াও করল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। তারপর আমি উমর (রাযিঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বললাম, লোকদের কি হয়েছে? উমর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর হুকুম! এরপর লোকজন ফিরে এলো এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বসলেন, তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল- সামান তারই প্রাপ্য। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছে যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবার বললেন,যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল- সামান তারই প্রাপ্য। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৃতীয়বার অনুরূপ বললেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে আবু কাতাদা! তোমার কি হয়েছে? আমি তখন সম্পূর্ণ ঘটনা বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু কাতাদা (রাযিঃ) সত্য বলেছে। সে ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি আমার পক্ষ থেকে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) বলে উঠলেন, কখনো না, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহর সিংহদের মধ্য থেকে কোন সিংহ আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)- এর পক্ষে যুদ্ধ করবে আর রাসূল (ﷺ) নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তোমাকে দিবেন! তখন নবী (ﷺ) বললেন, আবু বকর (রাযিঃ) ঠিকই বলেছে। ফলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা আমাকে দিলেন। আমি তা থেকে একটি বর্ম বিক্রি করে বনু সালামায় একটি বাগান ক্রয় করি। এটাই ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রথম সম্পত্তি, যা আমি লাভ করি।
بَابُ مَنْ لَمْ يُخَمِّسِ الأَسْلاَبَ وَمَنْ قَتَلَ قَتِيلاً فَلَهُ سَلَبُهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُخَمِّسَ، وَحُكْمِ الإِمَامِ فِيهِ
3142 - حدثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنِ ابْنِ أَفْلَحَ، عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ رضي الله عنه قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ حُنَيْنٍ، فَلَمَّا التَقَيْنَا كَانَتْ لِلْمُسْلِمِينَ جَوْلَةٌ، فَرَأَيْتُ رَجُلًا مِنَ المُشْرِكِينَ عَلَا رَجُلًا مِنَ المُسْلِمِينَ فَاسْتَدَرْتُ حَتَّى أَتَيْتُهُ مِنْ وَرَائِهِ حَتَّى ضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ، ‌فَأَقْبَلَ ‌عَلَيَّ ‌فَضَمَّنِي ‌ضَمَّةً ‌وَجَدْتُ ‌مِنْهَا ‌رِيحَ ‌المَوْتِ، ثُمَّ أَدْرَكَهُ المَوْتُ فَأَرْسَلَنِي، فَلَحِقْتُ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ فَقُلْتُ: مَا بَالُ النَّاسِ؟ قَالَ: أَمْرُ اللَّهِ، ثُمَّ إِنَّ النَّاسَ رَجَعُوا، وَجَلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: "مَنْ قَتَلَ قَتِيلًا لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ". فَقُمْتُ فَقُلْتُ: مَنْ يَشْهَدُ لِي؟ ثُمَّ جَلَسْتُ، ثُمَّ قَالَ: "مَنْ قَتَلَ قَتِيلًا لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ". فَقُمْتُ فَقُلْتُ: مَنْ يَشْهَدُ لِي؟ ثُمَّ جَلَسْتُ، ثُمَّ قَالَ الثَّالِثَةَ مِثْلَهُ، فَقَالَ رَجُلٌ: صَدَقَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَ سَلَبُهُ عِنْدِي فَأَرْضِهِ عَنِّي، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ رضي الله عنه: لَاهَا اللَّهِ، إِذن يَعْمِدُ إِلَى أَسَدٍ مِنْ أُسْدِ اللَّهِ يُقَاتِلُ عَنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم يُعْطِيكَ سَلَبَهُ! فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: "صَدَقَ"، فَأَعْطَاهُ، فَبِعْتُ الدِّرْعَ فَابْتَعْتُ بِهِ مَخْرَفًا فِي بَنِي سَلِمَةَ، فَإِنَّهُ لَأَوَّلُ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ فِي الْإِسْلَامِ.