আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
الجامع الصحيح للبخاري
৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ২০ টি
হাদীস নং: ৩৬১৮
আন্তর্জাতিক নং: ৩৮৯৭
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মাদীনা হিজরত। আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ ও আবু হুরায়রা (রাযিঃ) নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, যদি হিজরতের ফযীলত না হত তবে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মক্কা থেকে মাদীনা হিজরত করছি এমন স্থানে যেখানে খেজুর বাগান রয়েছে। আমার ধারণা হল যে, তা হবে ইয়ামামা কিংবা হাজর। পরে প্রকাশ পেল যে, তা মাদীনা-ইয়াসরিব।
৩৬১৮। হুমায়দী (রাহঃ) .... আবু ওয়াইল (রাযিঃ) বলেন, আমরা পীড়িত খাব্বাব (রাযিঃ)- কে দেখতে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, আমরা নবী কারীম (ﷺ)- এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহর নিকট আমাদের সাওয়াব রয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কোন প্রতিদানের কিছু না নিয়েই চলে গেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মুস‘আব ইবনে উমায়ের (রাযিঃ)। তিনি ওহুদের দিন শহীদ হন। তিনি একখানা চাঁদর রেখে যান। আমরা যখন (কাফন হিসেবে) এটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দিতাম তখন তাঁর পা বেরিয়ে পড়ত, আর যখন আমরা পা ঢেকে দিতাম, তখন তাঁর মাথা বেরিয়ে পড়ত। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, আমরা যেন তাঁর মাথা ঢেকে দেই এবং তাঁর পায়ের উপর কিছু ইযখির (ঘাস) রেখে দই। আর আমাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ রয়েছেন, যাদের ফল পরিপক্ক হয়েছে এবং তাঁরা তা পেড়ে খাচ্ছেন।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ وَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ وَأَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ‘لَوْلاَ الْهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرَأً مِنَ الأَنْصَارِ’. وَقَالَ أَبُو مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ‘رَأَيْتُ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أُهَاجِرُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ، فَذَهَبَ وَهَلِي إِلَى أَنَّهَا الْيَمَامَةُ أَوْ هَجَرُ، فَإِذَا هِيَ الْمَدِينَةُ يَثْرِبُ
3897 - حَدَّثَنَا الحُمَيْدِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا وَائِلٍ، يَقُولُ: عُدْنَا خَبَّابًا فَقَالَ: «هَاجَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُرِيدُ وَجْهَ اللَّهِ، فَوَقَعَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ، فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْخُذْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا، مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ، قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَتَرَكَ نَمِرَةً، فَكُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ بَدَتْ رِجْلاَهُ وَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ بَدَا رَأْسُهُ، فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُغَطِّيَ رَأْسَهُ، وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ، شَيْئًا مِنْ إِذْخِرٍ، وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ، فَهُوَ يَهْدِبُهَا»
হাদীস নং: ৩৬১৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩৮৯৮
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬১৯। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি নবী কারীম (ﷺ)- কে বলতে শুনেছি যে, আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের উপর। সুতরাং যার হিজরত হয় দুনিয়া লাভের জন্য কিংবা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে তার। আর যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) উদ্দেশ্যে, তবে তাঁর হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ)- ই জন্য।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3898 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ هُوَ ابْنُ زَيْدٍ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَقَّاصٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:57]، يَقُولُ: «الأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ»
হাদীস নং: ৩৬২০
আন্তর্জাতিক নং: ৩৮৯৯ - ৩৯০০
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২০। ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ দামেশকী (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলতেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।
আওযায়ী আতা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি উবাইদা ইবনে উমায়র লাইসী এর সঙ্গে আয়েশা (রাযিঃ)- এর সাথে সাক্ষত করলাম। তারপর তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এখন হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতে মু’মিনদের কেউ তার দ্বীনের জন্য তার প্রতি ফিতনার ভয়ে আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)- এর প্রতি হিজরত করতেন আর আজ আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এখন কোন মু’মিন তার রবের ইবাদত যেখানে ইচ্ছে (নির্বিঘ্নে) করতে পারে। তবে জিহাদ ও নিয়ত (কল্যাণ ও ফযীলতের) রয়েছে।
আওযায়ী আতা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি উবাইদা ইবনে উমায়র লাইসী এর সঙ্গে আয়েশা (রাযিঃ)- এর সাথে সাক্ষত করলাম। তারপর তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এখন হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতে মু’মিনদের কেউ তার দ্বীনের জন্য তার প্রতি ফিতনার ভয়ে আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)- এর প্রতি হিজরত করতেন আর আজ আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এখন কোন মু’মিন তার রবের ইবাদত যেখানে ইচ্ছে (নির্বিঘ্নে) করতে পারে। তবে জিহাদ ও নিয়ত (কল্যাণ ও ফযীলতের) রয়েছে।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيدَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو عَمْرٍو الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ عَبْدَةَ بْنِ أَبِي لُبَابَةَ، عَنْ مُجَاهِدِ بْنِ جَبْرٍ الْمَكِّيِّ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ كَانَ يَقُولُ لاَ هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ.
وَحَدَّثَنِي الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، قَالَ زُرْتُ عَائِشَةَ مَعَ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ اللَّيْثِيِّ فَسَأَلْنَاهَا عَنِ الْهِجْرَةِ، فَقَالَتْ لاَ هِجْرَةَ الْيَوْمَ، كَانَ الْمُؤْمِنُونَ يَفِرُّ أَحَدُهُمْ بِدِينِهِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى وَإِلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم مَخَافَةَ أَنْ يُفْتَنَ عَلَيْهِ، فَأَمَّا الْيَوْمَ فَقَدْ أَظْهَرَ اللَّهُ الإِسْلاَمَ، وَالْيَوْمَ يَعْبُدُ رَبَّهُ حَيْثُ شَاءَ، وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ.
وَحَدَّثَنِي الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، قَالَ زُرْتُ عَائِشَةَ مَعَ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ اللَّيْثِيِّ فَسَأَلْنَاهَا عَنِ الْهِجْرَةِ، فَقَالَتْ لاَ هِجْرَةَ الْيَوْمَ، كَانَ الْمُؤْمِنُونَ يَفِرُّ أَحَدُهُمْ بِدِينِهِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى وَإِلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم مَخَافَةَ أَنْ يُفْتَنَ عَلَيْهِ، فَأَمَّا الْيَوْمَ فَقَدْ أَظْهَرَ اللَّهُ الإِسْلاَمَ، وَالْيَوْمَ يَعْبُدُ رَبَّهُ حَيْثُ شَاءَ، وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ.
হাদীস নং: ৩৬২১
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০১
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২১। যাকারিয়্যা ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (খন্দকের যুদ্ধে মারাত্নকভাবে আহত হওয়ার পর) সা‘দ (রাযিঃ) দুআ করলেন, ইয়া আল্লাহ আপনি তো জানেন, আমার নিকট আপনার রাহে এ কওমের বিরুদ্ধে যারা আপনার রাসূল (ﷺ)- কে অবিশ্বাস করেছে ও তাঁকে (মাতৃভূমি থেকে) বিতাড়িত করেছে জিহাদ করা এত প্রিয় যতটুকু অন্য কারো বিরুদ্ধে নয়। ইয়া আল্লাহ আমার ধারণা আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যকার লড়াই খতম করে দিয়েছেন।
আবান ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, সে কওম যারা তোমার নবী (ﷺ)- কে অবিশ্বাস করেছে এবং তাকে (স্বদেশ থেকে) বের করে দিয়েছে, তারা কুরাইশ গোত্রেই।
আবান ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, সে কওম যারা তোমার নবী (ﷺ)- কে অবিশ্বাস করেছে এবং তাকে (স্বদেশ থেকে) বের করে দিয়েছে, তারা কুরাইশ গোত্রেই।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3901 - حَدَّثَنِي زَكَرِيَّاءُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ: قَالَ هِشَامٌ: فَأَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: " أَنَّ سَعْدًا قَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوا رَسُولَكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَخْرَجُوهُ، اللَّهُمَّ فَإِنِّي أَظُنُّ أَنَّكَ قَدْ وَضَعْتَ الحَرْبَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ «
وَقَالَ أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، أَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ،» مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوا نَبِيَّكَ، وَأَخْرَجُوهُ مِنْ قُرَيْشٍ "
وَقَالَ أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، أَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ،» مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوا نَبِيَّكَ، وَأَخْرَجُوهُ مِنْ قُرَيْشٍ "

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২২
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০২
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২২। মাতার ইবনে ফযল (রাহঃ) .... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে নবুওয়াত দেওয়া হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান। এবং হিজরতের পর দশ বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3902 - حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ الفَضْلِ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «بُعِثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَرْبَعِينَ سَنَةً، فَمَكُثَ بِمَكَّةَ ثَلاَثَ عَشْرَةَ سَنَةً يُوحَى إِلَيْهِ، ثُمَّ أُمِرَ بِالهِجْرَةِ فَهَاجَرَ عَشْرَ سِنِينَ، وَمَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلاَثٍ وَسِتِّينَ»

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২৩
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০৩
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৩। মাতার ইবনে ফযল (রাহঃ) .... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3903 - حَدَّثَنِي مَطَرُ بْنُ الفَضْلِ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «مَكَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ ثَلاَثَ عَشْرَةَ، وَتُوُفِّيَ وَهُوَ ابْنُ ثَلاَثٍ وَسِتِّينَ»

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০৪
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৪। ইসমাঈল ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বারে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটির ইখতিয়ার দিয়েছেন। তাঁর একটি হল- দুনিয়ার ভোগ-সম্পদ, আর একটি হল আল্লাহর নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন। একথা শুনে, আবু বকর (রাযিঃ) কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক বান্দার সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ পার্থিব ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তাঁর কাছে যা হয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে ইখতিয়ার দিলেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম।
(প্রকৃতপক্ষে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবু বকর (রাযিঃ)-ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি তার সহচর্য ও মাল দিয়ে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবু বকর (রাযিঃ)। যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরং্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবু বকর (রাযিঃ)- এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।
(প্রকৃতপক্ষে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবু বকর (রাযিঃ)-ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি তার সহচর্য ও মাল দিয়ে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবু বকর (রাযিঃ)। যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরং্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবু বকর (রাযিঃ)- এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3904 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ أَبِي النَّضْرِ، مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ عُبَيْدٍ يَعْنِي ابْنَ حُنَيْنٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ عَلَى المِنْبَرِ فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ، وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ، فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ» فَبَكَى أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا، فَعَجِبْنَا لَهُ، وَقَالَ النَّاسُ: انْظُرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ، يُخْبِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللَّهُ [ص:58] بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا، وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ، وَهُوَ يَقُولُ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ المُخَيَّرَ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ هُوَ أَعْلَمَنَا بِهِ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِي صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبَا بَكْرٍ، وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا مِنْ أُمَّتِي لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ، إِلَّا خُلَّةَ الإِسْلاَمِ، لاَ يَبْقَيَنَّ فِي المَسْجِدِ خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةُ أَبِي بَكْرٍ»

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৩৬২৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০৫ - ৩৯০৬
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৫। ইয়াহয়া ইবনে বুকায়র (রাহঃ) .... নবী সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন পালন করতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন অতিবাহিত হয়নি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বাড়ীতে আসেন নি। যখন মুসলমানগণ (মুশরিকদের নির্যাতনে) অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবু বকর (রাযিঃ) হিজরত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন। অবশেষে বারকুল গিমাদ (নামক স্থানে) পোঁছলে ইবনে দাগিনার সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবু বকর, কথায় যাচ্ছেন? উত্তরে আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি পৃথিবী ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব।
ইবনে দাগিনা বলল, হে আবু বকর! আপনার মত ব্যক্তি (দেশ থেকে) বের হতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারী করে থাকেন, এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন।
আবু বকর (রাযিঃ) ফিরে এলেন। তাঁর সঙ্গে ইবনে দাগিনাও এল। ইবনে দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নিকট গেল এবং তাদের বলল, আবু বকরের মত লোক দেশ থেকে বের হতে পারে না এবং তাকে বের করে দেওয়া যায় না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং ন্যায়ের উপর থাকার দরুন বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইবনে দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল, এবং তারা ইবনে দাগিনাকে বলল, তুমি আবু বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। নামায তথায়ই আদায় করেন, ইচ্ছামাফিক কুরআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিতনায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করি।
ইবনে দাগিনা এসব কথা আবু বকর (রাযিঃ)-কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবু বকর (রাযিঃ) নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। নামায প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলওয়াত করতেন। এরপর আবু বকরের মনে (একটি মসজিদ নির্মাণের কথা) উদিত হল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পাশেই একটি মসজিদ তৈরী করে নিলেন। এতে তিনি নামায আদায় করতে এবং কুরআন তিলওয়াত করতেন। এতে তার কাছে মুশরিক মহিলা ও যুবকগণ ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবু বকর (রাযিঃ)- এর এ কাজে বিস্মিত হত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবু বকর (রাযিঃ) ছিলেন একজন ক্রন্দনশীল ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তের তখন তাঁর চোখের অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের আতঙ্কিত করে তুলল এবং তারা ইবনে দাগিনাকে ডেকে পাঠান।
সে এল। তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবু বকর কে আশ্রয় দিয়েছিলাম, এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি লংঘন করেছেন। এবং নিজ গৃহের পাশে একটি মসজিদ তৈরী করে প্রকাশ্যে নামায ও তিলওয়াত আরম্ভ করেছেন।
আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করলে তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অস্বীকার করে প্রকাশ্যে তা করতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্বকে প্রত্যার্পণ করতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় প্রদানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করাকে অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবু বকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না।
আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, ইবনে দাগিনা এসে আবু বকর (রাযিঃ)-কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফেরত দিবেন। আমি এ কথা আদৌ পছন্দ করিনা যে, আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হউক। আবু বকর (রাযিঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপরই সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নবী কারীম (ﷺ) মক্কায় ছিলেন। নবী কারীম (ﷺ) মুসলিমদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি প্রস্তরময় প্রান্তরে অবস্থিত। এরপর যারা হিজরত করতে চাইলেন, তাঁরা মদীনার দিকে হিজরত করলেন। আর যাঁরা হিজরত করে আবিশিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাদেরও অধিকাংশ সেখান থেকে ফিরে মদীনায় চলে আসলেন। আবু বকর (রাযিঃ)ও মদীনার দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান! আপনিও কি হিজরতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সহচর্য লাভের জন্য নিজেকে হিজরত থেকে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দু’টি উট ছিল এ দু’টি চার মাস পর্যন্ত (ঘরে রেখে) বাবলা গাছের পাতা (ইত্যাদি) খাওয়াতে থাকেন।
ইবনে শিহাব উরওয়া সূত্রে আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবু বকর (রাযিঃ)- এর ঘরে বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবু বকরকে সংবাদ দিল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাথা ঢাকা অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসেননি। আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর আগমন বার্তা শুনে বললেন, আমার মাতাপিতা তাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কারণেই আসছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পৌঁছে (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেওয়া হল। প্রবেশ করে নবী (ﷺ) আবু বকরকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানেতো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফরসঙ্গী হতে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ঠিক আছে। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দু’টি উট থেকে আপনি যে কোন একটি গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, (ঠিক আছে) তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা দ্রুততার সহিত সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে তাঁদের খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিঃ) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে ‘জাতুন নেতাক’ (কোমর বন্ধ বিশিষ্ট) বলা হত।
আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) (রওয়ানা হয়ে) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রাযিঃ) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান খেকে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সহিত ভোর বেলায় মিলিত হতেন এবং তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও স্মরণ রাখতেন। যখন আঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবু বকর (রাযিঃ)-এর গোলাম আমির ইবনে যুহাইরা তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চড়িয়ে বেড়াত। রাত্রের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে বকরীর পাল নিয়ে তাঁদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করতেন।
তারপর শেষ রাতে আমির ইবনে ফুহাইরা বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিনটি রাতের প্রত্যেক রাতে সে এরূপই করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) বনী আবদ ইবনে গোত্রের এক ব্যক্তিকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ‘খিররীত’ পথ প্রদর্শক হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। পারদর্শী পথ প্রদর্শককে ‘খিররীত’ বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দু’টি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দু’টি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনে ফুহাইরা ও পথ প্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাঁদের নিয়ে উপকূল পথ ধরে চলতে লাগল।
ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনে মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনে জু‘শুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশ কাফিরদের দূত আসল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) এ দুই জনের যে কোন একজনকে যে হত্যা অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে (একশ উট) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে বসা ছিলাম। তখন তাদের নিকট থেকে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলল, হে সুরাকা, আমি এই মাত্র উপকুলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা এরা মুহাম্মাদ ও তাঁর সহগামীগণ হবেন। সুরাকা বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, এরা তাঁরাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তারা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখেছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল।
তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে (বাড়ী) চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অন্য প্রান্ত মাটি সংলগ্ন অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় মাটি সংলগ্ন অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট নিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাঁকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাঁদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তাঁর পিঠ থেকে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকে হাত বাড়ালাম এবং তা থেকে তীরগুলো বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে, আমি তাঁদের কোন ক্ষতি করতে পারব কিনা।
তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমনটি হওয়া পছন্দ করিনা। আমি পুনরায় ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে, তাঁর তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি (আমার দিকে) ফিরে তাকাচ্ছিলেন কিন্তু আবু বকর (রাযিঃ) বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় আমার ঘোড়ার সামনের পা দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর থেকে পড়ে গেলাম। তখন আমি ঘোড়াকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দু’টি বের করতে পারছিলনা। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি যেস্থানে গেড়ে ছিল সেস্থান থেকে থেকে ধুঁয়ার ন্যায় ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম।
আমি যখন ইত্যাকার অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পতিত হচ্ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম। এবং আমি তাঁদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা থেকে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন না, আমাদের সংবাদটি গোপন রেখ। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লেখে দেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমের ইবনে ফুহাইরাকে আদেশ করলেন। তিনি একখণ্ড চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রওয়ানা দিলেন।
ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়েরর সঙ্গে নবী কারীম (ﷺ)- এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে সিরিয়া থেকে ফিরছিলেন। তখন জুবায়ের (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ)- কে সাদা রঙ্গের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদীনায় মুসলিমগণ শুনলেন যে, নবী কারীম (ﷺ) মক্কা থেকে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রত্যহ সকালে মদীনার (বাইরে) হাররা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করে থাকতেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তাঁরা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তাঁরা পূর্বাপেক্ষা অধিক সময় অপেক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় একজন ইয়াহুদী তার নিজ প্রয়োজনে একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন নবী (ﷺ) ও তাঁর সাথী সঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভুমির উপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল।
ইয়াহুদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি- যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে এবং মদীনার হাররার উপকন্ঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে বনী আমর ইবনে আউফ গোত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। আবু বকর (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিরব রইলেন। আনসারদের মধ্য থেকে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে দেখেননি তাঁরা আবু বকর (রাযিঃ)- এর কাছে সমবেত হতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রত্তাপ নবী কারীম (ﷺ)- এর উপর পড়তে লাগল এবং আবু বকর (রাযিঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর চাঁদর দিয়ে নবী কারীম (ﷺ) এর উপর ছায়া করে দিলেন। তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে চিনতে পারল।
নবী কারীম (ﷺ) আমর ইবনে আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশী সময় অতিবাহিত করলেন, এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা (কুরআনের ভাষায়) তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এতে নামায আদায় করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উঠে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদীনায় (বর্তমান) মসজিদে নব্বীর স্থানে পৌঁছে উটটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম নামায আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনে যুরারার আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে নিয়ে উটটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ, এ স্থানটিই হবে মানযিল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই বালক দু’টিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের নিকট জায়গাটির মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করলেন।
তাঁরা বলল ইয়া রাসুলাল্লাহ! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামুল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের কাছ থেকে বিনামুল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের থেকে খরিদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মসজিদ নির্মাণ করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদ নির্মাণ কালে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন এ বোঝা খায়বারের (খাদ্যদ্রব্য) বোঝা নয়। ইয়া রব, এর বোঝা অত্যন্ত পুন্যময় ও অতি পবিত্র। তিনি আরো বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান। সুরতাং আনসার ও মুজাহিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।
নবী কারীম (ﷺ) জনৈক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ কবিতাটি ছাড়া অপর কোন পূর্ণাঙ্গ কবিতা পাঠ করেছেন বলে, কোন বর্ণনা আমার কাছে পৌঁছেনি।
ইবনে দাগিনা বলল, হে আবু বকর! আপনার মত ব্যক্তি (দেশ থেকে) বের হতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারী করে থাকেন, এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন।
আবু বকর (রাযিঃ) ফিরে এলেন। তাঁর সঙ্গে ইবনে দাগিনাও এল। ইবনে দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নিকট গেল এবং তাদের বলল, আবু বকরের মত লোক দেশ থেকে বের হতে পারে না এবং তাকে বের করে দেওয়া যায় না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং ন্যায়ের উপর থাকার দরুন বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইবনে দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল, এবং তারা ইবনে দাগিনাকে বলল, তুমি আবু বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। নামায তথায়ই আদায় করেন, ইচ্ছামাফিক কুরআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিতনায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করি।
ইবনে দাগিনা এসব কথা আবু বকর (রাযিঃ)-কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবু বকর (রাযিঃ) নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। নামায প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলওয়াত করতেন। এরপর আবু বকরের মনে (একটি মসজিদ নির্মাণের কথা) উদিত হল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পাশেই একটি মসজিদ তৈরী করে নিলেন। এতে তিনি নামায আদায় করতে এবং কুরআন তিলওয়াত করতেন। এতে তার কাছে মুশরিক মহিলা ও যুবকগণ ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবু বকর (রাযিঃ)- এর এ কাজে বিস্মিত হত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবু বকর (রাযিঃ) ছিলেন একজন ক্রন্দনশীল ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তের তখন তাঁর চোখের অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের আতঙ্কিত করে তুলল এবং তারা ইবনে দাগিনাকে ডেকে পাঠান।
সে এল। তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবু বকর কে আশ্রয় দিয়েছিলাম, এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি লংঘন করেছেন। এবং নিজ গৃহের পাশে একটি মসজিদ তৈরী করে প্রকাশ্যে নামায ও তিলওয়াত আরম্ভ করেছেন।
আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করলে তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অস্বীকার করে প্রকাশ্যে তা করতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্বকে প্রত্যার্পণ করতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় প্রদানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করাকে অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবু বকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না।
আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, ইবনে দাগিনা এসে আবু বকর (রাযিঃ)-কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফেরত দিবেন। আমি এ কথা আদৌ পছন্দ করিনা যে, আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হউক। আবু বকর (রাযিঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপরই সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নবী কারীম (ﷺ) মক্কায় ছিলেন। নবী কারীম (ﷺ) মুসলিমদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি প্রস্তরময় প্রান্তরে অবস্থিত। এরপর যারা হিজরত করতে চাইলেন, তাঁরা মদীনার দিকে হিজরত করলেন। আর যাঁরা হিজরত করে আবিশিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাদেরও অধিকাংশ সেখান থেকে ফিরে মদীনায় চলে আসলেন। আবু বকর (রাযিঃ)ও মদীনার দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান! আপনিও কি হিজরতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সহচর্য লাভের জন্য নিজেকে হিজরত থেকে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দু’টি উট ছিল এ দু’টি চার মাস পর্যন্ত (ঘরে রেখে) বাবলা গাছের পাতা (ইত্যাদি) খাওয়াতে থাকেন।
ইবনে শিহাব উরওয়া সূত্রে আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবু বকর (রাযিঃ)- এর ঘরে বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবু বকরকে সংবাদ দিল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাথা ঢাকা অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসেননি। আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর আগমন বার্তা শুনে বললেন, আমার মাতাপিতা তাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কারণেই আসছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পৌঁছে (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেওয়া হল। প্রবেশ করে নবী (ﷺ) আবু বকরকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানেতো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফরসঙ্গী হতে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ঠিক আছে। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দু’টি উট থেকে আপনি যে কোন একটি গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, (ঠিক আছে) তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা দ্রুততার সহিত সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে তাঁদের খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিঃ) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে ‘জাতুন নেতাক’ (কোমর বন্ধ বিশিষ্ট) বলা হত।
আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) (রওয়ানা হয়ে) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রাযিঃ) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান খেকে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সহিত ভোর বেলায় মিলিত হতেন এবং তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও স্মরণ রাখতেন। যখন আঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবু বকর (রাযিঃ)-এর গোলাম আমির ইবনে যুহাইরা তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চড়িয়ে বেড়াত। রাত্রের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে বকরীর পাল নিয়ে তাঁদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করতেন।
তারপর শেষ রাতে আমির ইবনে ফুহাইরা বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিনটি রাতের প্রত্যেক রাতে সে এরূপই করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) বনী আবদ ইবনে গোত্রের এক ব্যক্তিকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ‘খিররীত’ পথ প্রদর্শক হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। পারদর্শী পথ প্রদর্শককে ‘খিররীত’ বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দু’টি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দু’টি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনে ফুহাইরা ও পথ প্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাঁদের নিয়ে উপকূল পথ ধরে চলতে লাগল।
ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনে মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনে জু‘শুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশ কাফিরদের দূত আসল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) এ দুই জনের যে কোন একজনকে যে হত্যা অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে (একশ উট) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে বসা ছিলাম। তখন তাদের নিকট থেকে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলল, হে সুরাকা, আমি এই মাত্র উপকুলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা এরা মুহাম্মাদ ও তাঁর সহগামীগণ হবেন। সুরাকা বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, এরা তাঁরাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তারা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখেছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল।
তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে (বাড়ী) চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অন্য প্রান্ত মাটি সংলগ্ন অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় মাটি সংলগ্ন অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট নিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাঁকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাঁদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তাঁর পিঠ থেকে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকে হাত বাড়ালাম এবং তা থেকে তীরগুলো বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে, আমি তাঁদের কোন ক্ষতি করতে পারব কিনা।
তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমনটি হওয়া পছন্দ করিনা। আমি পুনরায় ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে, তাঁর তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি (আমার দিকে) ফিরে তাকাচ্ছিলেন কিন্তু আবু বকর (রাযিঃ) বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় আমার ঘোড়ার সামনের পা দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর থেকে পড়ে গেলাম। তখন আমি ঘোড়াকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দু’টি বের করতে পারছিলনা। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি যেস্থানে গেড়ে ছিল সেস্থান থেকে থেকে ধুঁয়ার ন্যায় ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম।
আমি যখন ইত্যাকার অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পতিত হচ্ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম। এবং আমি তাঁদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা থেকে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন না, আমাদের সংবাদটি গোপন রেখ। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লেখে দেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমের ইবনে ফুহাইরাকে আদেশ করলেন। তিনি একখণ্ড চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রওয়ানা দিলেন।
ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়েরর সঙ্গে নবী কারীম (ﷺ)- এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে সিরিয়া থেকে ফিরছিলেন। তখন জুবায়ের (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ)- কে সাদা রঙ্গের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদীনায় মুসলিমগণ শুনলেন যে, নবী কারীম (ﷺ) মক্কা থেকে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রত্যহ সকালে মদীনার (বাইরে) হাররা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করে থাকতেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তাঁরা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তাঁরা পূর্বাপেক্ষা অধিক সময় অপেক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় একজন ইয়াহুদী তার নিজ প্রয়োজনে একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন নবী (ﷺ) ও তাঁর সাথী সঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভুমির উপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল।
ইয়াহুদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি- যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে এবং মদীনার হাররার উপকন্ঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে বনী আমর ইবনে আউফ গোত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। আবু বকর (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিরব রইলেন। আনসারদের মধ্য থেকে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে দেখেননি তাঁরা আবু বকর (রাযিঃ)- এর কাছে সমবেত হতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রত্তাপ নবী কারীম (ﷺ)- এর উপর পড়তে লাগল এবং আবু বকর (রাযিঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর চাঁদর দিয়ে নবী কারীম (ﷺ) এর উপর ছায়া করে দিলেন। তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে চিনতে পারল।
নবী কারীম (ﷺ) আমর ইবনে আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশী সময় অতিবাহিত করলেন, এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা (কুরআনের ভাষায়) তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এতে নামায আদায় করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উঠে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদীনায় (বর্তমান) মসজিদে নব্বীর স্থানে পৌঁছে উটটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম নামায আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনে যুরারার আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে নিয়ে উটটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ, এ স্থানটিই হবে মানযিল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই বালক দু’টিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের নিকট জায়গাটির মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করলেন।
তাঁরা বলল ইয়া রাসুলাল্লাহ! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামুল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের কাছ থেকে বিনামুল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের থেকে খরিদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মসজিদ নির্মাণ করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদ নির্মাণ কালে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন এ বোঝা খায়বারের (খাদ্যদ্রব্য) বোঝা নয়। ইয়া রব, এর বোঝা অত্যন্ত পুন্যময় ও অতি পবিত্র। তিনি আরো বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান। সুরতাং আনসার ও মুজাহিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।
নবী কারীম (ﷺ) জনৈক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ কবিতাটি ছাড়া অপর কোন পূর্ণাঙ্গ কবিতা পাঠ করেছেন বলে, কোন বর্ণনা আমার কাছে পৌঁছেনি।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ لَمْ أَعْقِلْ أَبَوَىَّ قَطُّ إِلاَّ وَهُمَا يَدِينَانِ الدِّينَ، وَلَمْ يَمُرَّ عَلَيْنَا يَوْمٌ إِلاَّ يَأْتِينَا فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم طَرَفَىِ النَّهَارِ بُكْرَةً وَعَشِيَّةً، فَلَمَّا ابْتُلِيَ الْمُسْلِمُونُ خَرَجَ أَبُو بَكْرٍ مُهَاجِرًا نَحْوَ أَرْضِ الْحَبَشَةِ، حَتَّى بَلَغَ بَرْكَ الْغِمَادِ لَقِيَهُ ابْنُ الدَّغِنَةِ وَهْوَ سَيِّدُ الْقَارَةِ. فَقَالَ أَيْنَ تُرِيدُ يَا أَبَا بَكْرٍ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ أَخْرَجَنِي قَوْمِي، فَأُرِيدُ أَنْ أَسِيحَ فِي الأَرْضِ وَأَعْبُدَ رَبِّي. قَالَ ابْنُ الدَّغِنَةِ فَإِنَّ مِثْلَكَ يَا أَبَا بَكْرٍ لاَ يَخْرُجُ وَلاَ يُخْرَجُ، إِنَّكَ تَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ، فَأَنَا لَكَ جَارٌ، ارْجِعْ وَاعْبُدْ رَبَّكَ بِبَلَدِكَ. فَرَجَعَ وَارْتَحَلَ مَعَهُ ابْنُ الدَّغِنَةِ، فَطَافَ ابْنُ الدَّغِنَةِ عَشِيَّةً فِي أَشْرَافِ قُرَيْشٍ، فَقَالَ لَهُمْ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ لاَ يَخْرُجُ مِثْلُهُ وَلاَ يُخْرَجُ، أَتُخْرِجُونَ رَجُلاً يَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَيَصِلُ الرَّحِمَ، وَيَحْمِلُ الْكَلَّ، وَيَقْرِي الضَّيْفَ، وَيُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ فَلَمْ تُكَذِّبْ قُرَيْشٌ بِجِوَارِ ابْنِ الدَّغِنَةِ، وَقَالُوا لاِبْنِ الدَّغِنَةِ مُرْ أَبَا بَكْرٍ فَلْيَعْبُدْ رَبَّهُ فِي دَارِهِ، فَلْيُصَلِّ فِيهَا وَلْيَقْرَأْ مَا شَاءَ، وَلاَ يُؤْذِينَا بِذَلِكَ، وَلاَ يَسْتَعْلِنْ بِهِ، فَإِنَّا نَخْشَى أَنْ يَفْتِنَ نِسَاءَنَا وَأَبْنَاءَنَا. فَقَالَ ذَلِكَ ابْنُ الدَّغِنَةِ لأَبِي بَكْرٍ، فَلَبِثَ أَبُو بَكْرٍ بِذَلِكَ يَعْبُدُ رَبَّهُ فِي دَارِهِ، وَلاَ يَسْتَعْلِنُ بِصَلاَتِهِ، وَلاَ يَقْرَأُ فِي غَيْرِ دَارِهِ، ثُمَّ بَدَا لأَبِي بَكْرٍ فَابْتَنَى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِهِ وَكَانَ يُصَلِّي فِيهِ وَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ، فَيَنْقَذِفُ عَلَيْهِ نِسَاءُ الْمُشْرِكِينَ وَأَبْنَاؤُهُمْ، وَهُمْ يَعْجَبُونَ مِنْهُ، وَيَنْظُرُونَ إِلَيْهِ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رَجُلاً بَكَّاءً، لاَ يَمْلِكُ عَيْنَيْهِ إِذَا قَرَأَ الْقُرْآنَ، وَأَفْزَعَ ذَلِكَ أَشْرَافَ قُرَيْشٍ مِنَ الْمُشْرِكِينَ، فَأَرْسَلُوا إِلَى ابْنِ الدَّغِنَةِ، فَقَدِمَ عَلَيْهِمْ. فَقَالُوا إِنَّا كُنَّا أَجَرْنَا أَبَا بَكْرٍ بِجِوَارِكَ، عَلَى أَنْ يَعْبُدَ رَبَّهُ فِي دَارِهِ، فَقَدْ جَاوَزَ ذَلِكَ، فَابْتَنَى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِهِ، فَأَعْلَنَ بِالصَّلاَةِ وَالْقِرَاءَةِ فِيهِ، وَإِنَّا قَدْ خَشِينَا أَنْ يَفْتِنَ نِسَاءَنَا وَأَبْنَاءَنَا فَانْهَهُ، فَإِنْ أَحَبَّ أَنْ يَقْتَصِرَ عَلَى أَنْ يَعْبُدَ رَبَّهُ فِي دَارِهِ فَعَلَ، وَإِنْ أَبَى إِلاَّ أَنْ يُعْلِنَ بِذَلِكَ فَسَلْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْكَ ذِمَّتَكَ، فَإِنَّا قَدْ كَرِهْنَا أَنْ نُخْفِرَكَ، وَلَسْنَا مُقِرِّينَ لأَبِي بَكْرٍ الاِسْتِعْلاَنَ. قَالَتْ عَائِشَةُ فَأَتَى ابْنُ الدَّغِنَةِ إِلَى أَبِي بَكْرٍ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتَ الَّذِي عَاقَدْتُ لَكَ عَلَيْهِ، فَإِمَّا أَنْ تَقْتَصِرَ عَلَى ذَلِكَ، وَإِمَّا أَنْ تَرْجِعَ إِلَىَّ ذِمَّتِي، فَإِنِّي لاَ أُحِبُّ أَنْ تَسْمَعَ الْعَرَبُ أَنِّي أُخْفِرْتُ فِي رَجُلٍ عَقَدْتُ لَهُ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ فَإِنِّي أَرُدُّ إِلَيْكَ جِوَارَكَ وَأَرْضَى بِجِوَارِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ. وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ بِمَكَّةَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلْمُسْلِمِينَ " إِنِّي أُرِيتُ دَارَ هِجْرَتِكُمْ ذَاتَ نَخْلٍ بَيْنَ لاَبَتَيْنِ ". وَهُمَا الْحَرَّتَانِ، فَهَاجَرَ مَنْ هَاجَرَ قِبَلَ الْمَدِينَةِ، وَرَجَعَ عَامَّةُ مَنْ كَانَ هَاجَرَ بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ إِلَى الْمَدِينَةِ، وَتَجَهَّزَ أَبُو بَكْرٍ قِبَلَ الْمَدِينَةِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " عَلَى رِسْلِكَ، فَإِنِّي أَرْجُو أَنْ يُؤْذَنَ لِي ". فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَهَلْ تَرْجُو ذَلِكَ بِأَبِي أَنْتَ قَالَ " نَعَمْ ". فَحَبَسَ أَبُو بَكْرٍ نَفْسَهُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيَصْحَبَهُ، وَعَلَفَ رَاحِلَتَيْنِ كَانَتَا عِنْدَهُ وَرَقَ السَّمُرِ وَهْوَ الْخَبَطُ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ قَالَ عُرْوَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ فَبَيْنَمَا نَحْنُ يَوْمًا جُلُوسٌ فِي بَيْتِ أَبِي بَكْرٍ فِي نَحْرِ الظَّهِيرَةِ قَالَ قَائِلٌ لأَبِي بَكْرٍ هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُتَقَنِّعًا ـ فِي سَاعَةٍ لَمْ يَكُنْ يَأْتِينَا فِيهَا ـ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ فِدَاءٌ لَهُ أَبِي وَأُمِّي، وَاللَّهِ مَا جَاءَ بِهِ فِي هَذِهِ السَّاعَةِ إِلاَّ أَمْرٌ. قَالَتْ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَأْذَنَ، فَأُذِنَ لَهُ فَدَخَلَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لأَبِي بَكْرٍ " أَخْرِجْ مَنْ عِنْدَكَ ". فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّمَا هُمْ أَهْلُكَ بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ " فَإِنِّي قَدْ أُذِنَ لِي فِي الْخُرُوجِ ". فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ الصَّحَابَةُ بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ ". قَالَ أَبُو بَكْرٍ فَخُذْ بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِحْدَى رَاحِلَتَىَّ هَاتَيْنِ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بِالثَّمَنِ ". قَالَتْ عَائِشَةُ فَجَهَّزْنَاهُمَا أَحَثَّ الْجَهَازِ، وَصَنَعْنَا لَهُمَا سُفْرَةً فِي جِرَابٍ، فَقَطَعَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ أَبِي بَكْرٍ قِطْعَةً مَنْ نِطَاقِهَا فَرَبَطَتْ بِهِ عَلَى فَمِ الْجِرَابِ، فَبِذَلِكَ سُمِّيَتْ ذَاتَ النِّطَاقِ ـ قَالَتْ ـ ثُمَّ لَحِقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ بِغَارٍ فِي جَبَلِ ثَوْرٍ فَكَمَنَا فِيهِ ثَلاَثَ لَيَالٍ، يَبِيتُ عِنْدَهُمَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ وَهْوَ غُلاَمٌ شَابٌّ ثَقِفٌ لَقِنٌ، فَيُدْلِجُ مِنْ عِنْدِهِمَا بِسَحَرٍ، فَيُصْبِحُ مَعَ قُرَيْشٍ بِمَكَّةَ كَبَائِتٍ، فَلاَ يَسْمَعُ أَمْرًا يُكْتَادَانِ بِهِ إِلاَّ وَعَاهُ، حَتَّى يَأْتِيَهُمَا بِخَبَرِ ذَلِكَ حِينَ يَخْتَلِطُ الظَّلاَمُ، وَيَرْعَى عَلَيْهِمَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ مِنْحَةً مِنْ غَنَمٍ، فَيُرِيحُهَا عَلَيْهِمَا حِينَ يَذْهَبُ سَاعَةٌ مِنَ الْعِشَاءِ، فَيَبِيتَانِ فِي رِسْلٍ وَهْوَ لَبَنُ مِنْحَتِهِمَا وَرَضِيفِهِمَا، حَتَّى يَنْعِقَ بِهَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ بِغَلَسٍ، يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ تِلْكَ اللَّيَالِي الثَّلاَثِ، وَاسْتَأْجَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ رَجُلاً مِنْ بَنِي الدِّيلِ، وَهْوَ مِنْ بَنِي عَبْدِ بْنِ عَدِيٍّ هَادِيًا خِرِّيتًا ـ وَالْخِرِّيتُ الْمَاهِرُ بِالْهِدَايَةِ ـ قَدْ غَمَسَ حِلْفًا فِي آلِ الْعَاصِ بْنِ وَائِلٍ السَّهْمِيِّ، وَهْوَ عَلَى دِينِ كُفَّارِ قُرَيْشٍ فَأَمِنَاهُ، فَدَفَعَا إِلَيْهِ رَاحِلَتَيْهِمَا، وَوَاعَدَاهُ غَارَ ثَوْرٍ بَعْدَ ثَلاَثِ لَيَالٍ بِرَاحِلَتَيْهِمَا صُبْحَ ثَلاَثٍ، وَانْطَلَقَ مَعَهُمَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ وَالدَّلِيلُ فَأَخَذَ بِهِمْ طَرِيقَ السَّوَاحِلِ.
قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَالِكٍ الْمُدْلِجِيُّ ـ وَهْوَ ابْنُ أَخِي سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ ـ أَنَّ أَبَاهُ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ سُرَاقَةَ بْنَ جُعْشُمٍ، يَقُولُ جَاءَنَا رُسُلُ كُفَّارِ قُرَيْشٍ يَجْعَلُونَ فِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ دِيَةَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا، مَنْ قَتَلَهُ أَوْ أَسَرَهُ، فَبَيْنَمَا أَنَا جَالِسٌ فِي مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ قَوْمِي بَنِي مُدْلِجٍ أَقْبَلَ رَجُلٌ مِنْهُمْ حَتَّى قَامَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ جُلُوسٌ، فَقَالَ يَا سُرَاقَةُ، إِنِّي قَدْ رَأَيْتُ آنِفًا أَسْوِدَةً بِالسَّاحِلِ ـ أُرَاهَا مُحَمَّدًا وَأَصْحَابَهُ. قَالَ سُرَاقَةُ فَعَرَفْتُ أَنَّهُمْ هُمْ، فَقُلْتُ لَهُ إِنَّهُمْ لَيْسُوا بِهِمْ، وَلَكِنَّكَ رَأَيْتَ فُلاَنًا وَفُلاَنًا انْطَلَقُوا بِأَعْيُنِنَا. ثُمَّ لَبِثْتُ فِي الْمَجْلِسِ سَاعَةً، ثُمَّ قُمْتُ فَدَخَلْتُ فَأَمَرْتُ جَارِيَتِي أَنْ تَخْرُجَ بِفَرَسِي وَهْىَ مِنْ وَرَاءِ أَكَمَةٍ فَتَحْبِسَهَا عَلَىَّ، وَأَخَذْتُ رُمْحِي، فَخَرَجْتُ بِهِ مِنْ ظَهْرِ الْبَيْتِ، فَحَطَطْتُ بِزُجِّهِ الأَرْضَ، وَخَفَضْتُ عَالِيَهُ حَتَّى أَتَيْتُ فَرَسِي فَرَكِبْتُهَا، فَرَفَعْتُهَا تُقَرَّبُ بِي حَتَّى دَنَوْتُ مِنْهُمْ، فَعَثَرَتْ بِي فَرَسِي، فَخَرَرْتُ عَنْهَا فَقُمْتُ، فَأَهْوَيْتُ يَدِي إِلَى كِنَانَتِي فَاسْتَخْرَجْتُ مِنْهَا الأَزْلاَمَ، فَاسْتَقْسَمْتُ بِهَا أَضُرُّهُمْ أَمْ لاَ فَخَرَجَ الَّذِي أَكْرَهُ، فَرَكِبْتُ فَرَسِي، وَعَصَيْتُ الأَزْلاَمَ، تُقَرِّبُ بِي حَتَّى إِذَا سَمِعْتُ قِرَاءَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ لاَ يَلْتَفِتُ، وَأَبُو بَكْرٍ يُكْثِرُ الاِلْتِفَاتَ سَاخَتْ يَدَا فَرَسِي فِي الأَرْضِ حَتَّى بَلَغَتَا الرُّكْبَتَيْنِ، فَخَرَرْتُ عَنْهَا ثُمَّ زَجَرْتُهَا فَنَهَضَتْ، فَلَمْ تَكَدْ تُخْرِجُ يَدَيْهَا، فَلَمَّا اسْتَوَتْ قَائِمَةً، إِذَا لأَثَرِ يَدَيْهَا عُثَانٌ سَاطِعٌ فِي السَّمَاءِ مِثْلُ الدُّخَانِ، فَاسْتَقْسَمْتُ بِالأَزْلاَمِ، فَخَرَجَ الَّذِي أَكْرَهُ، فَنَادَيْتُهُمْ بِالأَمَانِ فَوَقَفُوا، فَرَكِبْتُ فَرَسِي حَتَّى جِئْتُهُمْ، وَوَقَعَ فِي نَفْسِي حِينَ لَقِيتُ مَا لَقِيتُ مِنَ الْحَبْسِ عَنْهُمْ أَنْ سَيَظْهَرُ أَمْرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لَهُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ جَعَلُوا فِيكَ الدِّيَةَ. وَأَخْبَرْتُهُمْ أَخْبَارَ مَا يُرِيدُ النَّاسُ بِهِمْ، وَعَرَضْتُ عَلَيْهِمِ الزَّادَ وَالْمَتَاعَ، فَلَمْ يَرْزَآنِي وَلَمْ يَسْأَلاَنِي إِلاَّ أَنْ قَالَ أَخْفِ عَنَّا. فَسَأَلْتُهُ أَنْ يَكْتُبَ لِي كِتَابَ أَمْنٍ، فَأَمَرَ عَامِرَ بْنَ فُهَيْرَةَ، فَكَتَبَ فِي رُقْعَةٍ مِنْ أَدِيمٍ، ثُمَّ مَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ الزُّبَيْرَ فِي رَكْبٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ كَانُوا تِجَارًا قَافِلِينَ مِنَ الشَّأْمِ، فَكَسَا الزُّبَيْرُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ ثِيَابَ بَيَاضٍ، وَسَمِعَ الْمُسْلِمُونَ بِالْمَدِينَةِ مَخْرَجَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَكَّةَ، فَكَانُوا يَغْدُونَ كُلَّ غَدَاةٍ إِلَى الْحَرَّةِ فَيَنْتَظِرُونَهُ، حَتَّى يَرُدَّهُمْ حَرُّ الظَّهِيرَةِ، فَانْقَلَبُوا يَوْمًا بَعْدَ مَا أَطَالُوا انْتِظَارَهُمْ، فَلَمَّا أَوَوْا إِلَى بُيُوتِهِمْ، أَوْفَى رَجُلٌ مِنْ يَهُودَ عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِهِمْ لأَمْرٍ يَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَبَصُرَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ مُبَيَّضِينَ يَزُولُ بِهِمُ السَّرَابُ، فَلَمْ يَمْلِكِ الْيَهُودِيُّ أَنْ قَالَ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا مَعَاشِرَ الْعَرَبِ هَذَا جَدُّكُمُ الَّذِي تَنْتَظِرُونَ. فَثَارَ الْمُسْلِمُونَ إِلَى السِّلاَحِ، فَتَلَقَّوْا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِظَهْرِ الْحَرَّةِ، فَعَدَلَ بِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ حَتَّى نَزَلَ بِهِمْ فِي بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ، وَذَلِكَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الأَوَّلِ، فَقَامَ أَبُو بَكْرٍ لِلنَّاسِ، وَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَامِتًا، فَطَفِقَ مَنْ جَاءَ مِنَ الأَنْصَارِ مِمَّنْ لَمْ يَرَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحَيِّي أَبَا بَكْرٍ، حَتَّى أَصَابَتِ الشَّمْسُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى ظَلَّلَ عَلَيْهِ بِرِدَائِهِ، فَعَرَفَ النَّاسُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ، فَلَبِثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً وَأُسِّسَ الْمَسْجِدُ الَّذِي أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى، وَصَلَّى فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَهُ فَسَارَ يَمْشِي مَعَهُ النَّاسُ حَتَّى بَرَكَتْ عِنْدَ مَسْجِدِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ، وَهْوَ يُصَلِّي فِيهِ يَوْمَئِذٍ رِجَالٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَكَانَ مِرْبَدًا لِلتَّمْرِ لِسُهَيْلٍ وَسَهْلٍ غُلاَمَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي حَجْرِ أَسْعَدَ بْنِ زُرَارَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ " هَذَا إِنْ شَاءَ اللَّهُ الْمَنْزِلُ ". ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْغُلاَمَيْنِ، فَسَاوَمَهُمَا بِالْمِرْبَدِ لِيَتَّخِذَهُ مَسْجِدًا، فَقَالاَ لاَ بَلْ نَهَبُهُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ بَنَاهُ مَسْجِدًا، وَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَنْقُلُ مَعَهُمُ اللَّبِنَ فِي بُنْيَانِهِ، وَيَقُولُ وَهُوَ يَنْقُلُ اللَّبِنَ " هَذَا الْحِمَالُ لاَ حِمَالَ خَيْبَرْ هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَرْ ". وَيَقُولُ " اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الآخِرَهْ فَارْحَمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ ". فَتَمَثَّلَ بِشِعْرِ رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ لَمْ يُسَمَّ لِي. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَلَمْ يَبْلُغْنَا فِي الأَحَادِيثِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَمَثَّلَ بِبَيْتِ شِعْرٍ تَامٍّ غَيْرِ هذه الأبيات
قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَالِكٍ الْمُدْلِجِيُّ ـ وَهْوَ ابْنُ أَخِي سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ ـ أَنَّ أَبَاهُ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ سُرَاقَةَ بْنَ جُعْشُمٍ، يَقُولُ جَاءَنَا رُسُلُ كُفَّارِ قُرَيْشٍ يَجْعَلُونَ فِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ دِيَةَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا، مَنْ قَتَلَهُ أَوْ أَسَرَهُ، فَبَيْنَمَا أَنَا جَالِسٌ فِي مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ قَوْمِي بَنِي مُدْلِجٍ أَقْبَلَ رَجُلٌ مِنْهُمْ حَتَّى قَامَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ جُلُوسٌ، فَقَالَ يَا سُرَاقَةُ، إِنِّي قَدْ رَأَيْتُ آنِفًا أَسْوِدَةً بِالسَّاحِلِ ـ أُرَاهَا مُحَمَّدًا وَأَصْحَابَهُ. قَالَ سُرَاقَةُ فَعَرَفْتُ أَنَّهُمْ هُمْ، فَقُلْتُ لَهُ إِنَّهُمْ لَيْسُوا بِهِمْ، وَلَكِنَّكَ رَأَيْتَ فُلاَنًا وَفُلاَنًا انْطَلَقُوا بِأَعْيُنِنَا. ثُمَّ لَبِثْتُ فِي الْمَجْلِسِ سَاعَةً، ثُمَّ قُمْتُ فَدَخَلْتُ فَأَمَرْتُ جَارِيَتِي أَنْ تَخْرُجَ بِفَرَسِي وَهْىَ مِنْ وَرَاءِ أَكَمَةٍ فَتَحْبِسَهَا عَلَىَّ، وَأَخَذْتُ رُمْحِي، فَخَرَجْتُ بِهِ مِنْ ظَهْرِ الْبَيْتِ، فَحَطَطْتُ بِزُجِّهِ الأَرْضَ، وَخَفَضْتُ عَالِيَهُ حَتَّى أَتَيْتُ فَرَسِي فَرَكِبْتُهَا، فَرَفَعْتُهَا تُقَرَّبُ بِي حَتَّى دَنَوْتُ مِنْهُمْ، فَعَثَرَتْ بِي فَرَسِي، فَخَرَرْتُ عَنْهَا فَقُمْتُ، فَأَهْوَيْتُ يَدِي إِلَى كِنَانَتِي فَاسْتَخْرَجْتُ مِنْهَا الأَزْلاَمَ، فَاسْتَقْسَمْتُ بِهَا أَضُرُّهُمْ أَمْ لاَ فَخَرَجَ الَّذِي أَكْرَهُ، فَرَكِبْتُ فَرَسِي، وَعَصَيْتُ الأَزْلاَمَ، تُقَرِّبُ بِي حَتَّى إِذَا سَمِعْتُ قِرَاءَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ لاَ يَلْتَفِتُ، وَأَبُو بَكْرٍ يُكْثِرُ الاِلْتِفَاتَ سَاخَتْ يَدَا فَرَسِي فِي الأَرْضِ حَتَّى بَلَغَتَا الرُّكْبَتَيْنِ، فَخَرَرْتُ عَنْهَا ثُمَّ زَجَرْتُهَا فَنَهَضَتْ، فَلَمْ تَكَدْ تُخْرِجُ يَدَيْهَا، فَلَمَّا اسْتَوَتْ قَائِمَةً، إِذَا لأَثَرِ يَدَيْهَا عُثَانٌ سَاطِعٌ فِي السَّمَاءِ مِثْلُ الدُّخَانِ، فَاسْتَقْسَمْتُ بِالأَزْلاَمِ، فَخَرَجَ الَّذِي أَكْرَهُ، فَنَادَيْتُهُمْ بِالأَمَانِ فَوَقَفُوا، فَرَكِبْتُ فَرَسِي حَتَّى جِئْتُهُمْ، وَوَقَعَ فِي نَفْسِي حِينَ لَقِيتُ مَا لَقِيتُ مِنَ الْحَبْسِ عَنْهُمْ أَنْ سَيَظْهَرُ أَمْرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لَهُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ جَعَلُوا فِيكَ الدِّيَةَ. وَأَخْبَرْتُهُمْ أَخْبَارَ مَا يُرِيدُ النَّاسُ بِهِمْ، وَعَرَضْتُ عَلَيْهِمِ الزَّادَ وَالْمَتَاعَ، فَلَمْ يَرْزَآنِي وَلَمْ يَسْأَلاَنِي إِلاَّ أَنْ قَالَ أَخْفِ عَنَّا. فَسَأَلْتُهُ أَنْ يَكْتُبَ لِي كِتَابَ أَمْنٍ، فَأَمَرَ عَامِرَ بْنَ فُهَيْرَةَ، فَكَتَبَ فِي رُقْعَةٍ مِنْ أَدِيمٍ، ثُمَّ مَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ الزُّبَيْرَ فِي رَكْبٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ كَانُوا تِجَارًا قَافِلِينَ مِنَ الشَّأْمِ، فَكَسَا الزُّبَيْرُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ ثِيَابَ بَيَاضٍ، وَسَمِعَ الْمُسْلِمُونَ بِالْمَدِينَةِ مَخْرَجَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَكَّةَ، فَكَانُوا يَغْدُونَ كُلَّ غَدَاةٍ إِلَى الْحَرَّةِ فَيَنْتَظِرُونَهُ، حَتَّى يَرُدَّهُمْ حَرُّ الظَّهِيرَةِ، فَانْقَلَبُوا يَوْمًا بَعْدَ مَا أَطَالُوا انْتِظَارَهُمْ، فَلَمَّا أَوَوْا إِلَى بُيُوتِهِمْ، أَوْفَى رَجُلٌ مِنْ يَهُودَ عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِهِمْ لأَمْرٍ يَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَبَصُرَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ مُبَيَّضِينَ يَزُولُ بِهِمُ السَّرَابُ، فَلَمْ يَمْلِكِ الْيَهُودِيُّ أَنْ قَالَ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا مَعَاشِرَ الْعَرَبِ هَذَا جَدُّكُمُ الَّذِي تَنْتَظِرُونَ. فَثَارَ الْمُسْلِمُونَ إِلَى السِّلاَحِ، فَتَلَقَّوْا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِظَهْرِ الْحَرَّةِ، فَعَدَلَ بِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ حَتَّى نَزَلَ بِهِمْ فِي بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ، وَذَلِكَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الأَوَّلِ، فَقَامَ أَبُو بَكْرٍ لِلنَّاسِ، وَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَامِتًا، فَطَفِقَ مَنْ جَاءَ مِنَ الأَنْصَارِ مِمَّنْ لَمْ يَرَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحَيِّي أَبَا بَكْرٍ، حَتَّى أَصَابَتِ الشَّمْسُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى ظَلَّلَ عَلَيْهِ بِرِدَائِهِ، فَعَرَفَ النَّاسُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ، فَلَبِثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً وَأُسِّسَ الْمَسْجِدُ الَّذِي أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى، وَصَلَّى فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَهُ فَسَارَ يَمْشِي مَعَهُ النَّاسُ حَتَّى بَرَكَتْ عِنْدَ مَسْجِدِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ، وَهْوَ يُصَلِّي فِيهِ يَوْمَئِذٍ رِجَالٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَكَانَ مِرْبَدًا لِلتَّمْرِ لِسُهَيْلٍ وَسَهْلٍ غُلاَمَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي حَجْرِ أَسْعَدَ بْنِ زُرَارَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ " هَذَا إِنْ شَاءَ اللَّهُ الْمَنْزِلُ ". ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْغُلاَمَيْنِ، فَسَاوَمَهُمَا بِالْمِرْبَدِ لِيَتَّخِذَهُ مَسْجِدًا، فَقَالاَ لاَ بَلْ نَهَبُهُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ بَنَاهُ مَسْجِدًا، وَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَنْقُلُ مَعَهُمُ اللَّبِنَ فِي بُنْيَانِهِ، وَيَقُولُ وَهُوَ يَنْقُلُ اللَّبِنَ " هَذَا الْحِمَالُ لاَ حِمَالَ خَيْبَرْ هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَرْ ". وَيَقُولُ " اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الآخِرَهْ فَارْحَمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ ". فَتَمَثَّلَ بِشِعْرِ رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ لَمْ يُسَمَّ لِي. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَلَمْ يَبْلُغْنَا فِي الأَحَادِيثِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَمَثَّلَ بِبَيْتِ شِعْرٍ تَامٍّ غَيْرِ هذه الأبيات

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২৬
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০৭
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৬। আব্দুল্লাহ ইবনে আবী শাঈবা (রাহঃ) .... আসমা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী কারীম (ﷺ) এবং আবু বকর (রাযিঃ) যখন মদীনায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য সফরের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুত করলাম, আর আমার পিতাকে বললাম, থলের মুখ বেঁধে দেয়ার জন্য আমার কোমরবন্দ ব্যতীত অন্য কিছু পাচ্ছিনা (এখন কি করি) তিনি বললেন, এটি তুমি টুকরো করে নাও। আমি তাই করলাম। এ কারণে আমার নাম হয়ে গেল, ‘যাতুন নেতাকাইন’ (কোমরবন্দ দুই ভাগে বিভক্তকারিনী)।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3907 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، وَفَاطِمَةَ، عَنْ أَسْمَاءَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا " صَنَعْتُ سُفْرَةً لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ، حِينَ أَرَادَا المَدِينَةَ، فَقُلْتُ لِأَبِي: مَا أَجِدُ شَيْئًا أَرْبِطُهُ إِلَّا نِطَاقِي، قَالَ: فَشُقِّيهِ فَفَعَلْتُ فَسُمِّيتُ ذَاتَ النِّطَاقَيْنِ " قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَسْمَاءُ ذَاتَ النِّطَاقِ

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২৭
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০৮
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৭। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) .... বারা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী কারীম (ﷺ) মদীনার দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুশাম তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করে। নবী কারীম (ﷺ) তার জন্য বদদুআ করলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকেসহ মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলল, আপনি, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দুআ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। নবী কারীম (ﷺ) তার জন্য দুআ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পিপাসার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) বলেন, তখন আমি একটা পেয়ালা নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে নিয়ে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করলেন যে, আমি তাতে খুশী হলাম।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3908 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: سَمِعْتُ البَرَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " لَمَّا أَقْبَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى المَدِينَةِ تَبِعَهُ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ، [ص:62] فَدَعَا عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَاخَتْ بِهِ فَرَسُهُ قَالَ: ادْعُ اللَّهَ لِي وَلاَ أَضُرُّكَ، فَدَعَا لَهُ، قَالَ: فَعَطِشَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَرَّ بِرَاعٍ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ: فَأَخَذْتُ قَدَحًا فَحَلَبْتُ فِيهِ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ، فَأَتَيْتُهُ فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيتُ "

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২৮
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯০৯
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৮। যাকারিয়্যা ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) .... আসমা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তখন তাঁর গর্ভে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মদীনায় এসে কুবাতে অবতরণ করি। এ কুবায়ই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এসে তাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনলেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আব্দুল্লাহর পাকস্থলীতে প্রবেশ করল তা হল নবী কারীম (ﷺ)- এর থুথু। নবী কারীম (ﷺ) চিবান খেজুরের সামান্য অংশ নবজাতকের মুখের ভিতর-এর তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দুআ করলেন এবং বরকত কামনা করলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি (হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খালিদ ইবনে মাখলাদ (রাহঃ) উক্ত রেওয়ায়েত বর্ণনায় যাকারিয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ)- এর অনুসরণ করেছেন। এতে রয়েছে যে, আসমা (রাযিঃ) গর্ভাবস্থায় হিজরত করে রাসূল (ﷺ)- এর কাছে আসেন।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3909 - حَدَّثَنِي زَكَرِيَّاءُ بْنُ يَحْيَى، عَنْ أَبِي أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّهَا حَمَلَتْ بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَتْ: فَخَرَجْتُ وَأَنَا مُتِمٌّ فَأَتَيْتُ المَدِينَةَ فَنَزَلْتُ بِقُبَاءٍ فَوَلَدْتُهُ بِقُبَاءٍ، ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حَجْرِهِ، ثُمَّ «دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا، ثُمَّ تَفَلَ فِي فِيهِ، فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهُ رِيقُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ حَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ ثُمَّ دَعَا لَهُ، وَبَرَّكَ عَلَيْهِ وَكَانَ أَوَّلَ مَوْلُودٍ وُلِدَ فِي الإِسْلاَمِ» تَابَعَهُ خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ مُسْهِرٍ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا هَاجَرَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ حُبْلَى

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬২৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১০
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬২৯। কুতায়বা (রাহঃ) .... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মদীনায় হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে সর্বপ্রথম আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা তাকে নিয়ে নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এলেন। তিনি একটি খেজুর নিয়ে তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। সুতরাং সর্বপ্রথম যে বস্তুটি তার পেটে প্রবেশ করল তা নবী কারীম (ﷺ)- এর থুথু।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3910 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، عَنْ أَبِي أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَوَّلُ مَوْلُودٍ وُلِدَ فِي الإِسْلاَمِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ أَتَوْا بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَمْرَةً فَلاَكَهَا، ثُمَّ أَدْخَلَهَا فِي فِيهِ، فَأَوَّلُ مَا دَخَلَ بَطْنَهُ رِيقُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৩০
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১১
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩০। মুহাম্মাদ (রাহঃ) .... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) যখন মদীনায় এলেন তখন উটের পিঠে আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর পেছনে ছিলেন। আবু বকর (রাযিঃ) ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও পরিচিত। আর নবী কারীম (ﷺ) ছিলেন (দেখতে) জাওয়ান ও অপরিচিত তখন বর্ণনাকারী বলেন, যখন আবু বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাত হত, সে জিজ্ঞাসা করত হে আবু বকর (রাযিঃ) তোমার সম্মুখে বসা ঐ ব্যক্তি কে? আবু বকর (রাযিঃ) বলতেন তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারণ পথ মনে করত এবং তিনি (আবু বকর) সত্যপথ উদ্দেশ্য করতেন। তারপর একবার আবু বকর (রাযিঃ) পিছনে তাকিয়ে হঠাৎ দেখতে পেলেন একজন অশ্বারোহী তাঁদের প্রায় নিকটে এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে একজন অশ্বারোহী আমাদের পিছনে প্রায় নিকটে পৌঁছে গেছে।
তখন নবী কারীম (ﷺ) পিছনের দিকে তাকিয়ে দুআ করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণকারী।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনার হারারার একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ এবং মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নবী কারীম (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) উটে আরোহণ করলেন আর আনসারগণ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহর নবী এসেছেন, আল্লাহর নবী এসেছেন, লোকজন উচু যায়গায় উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নবী এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবু আইয়ুব (রাযিঃ)- এর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন।
আবু আইয়ুব (রাযিঃ) ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নবী কারীম (ﷺ)- এর খেদমতে হাযির হলেন এবং নবী কারীম (ﷺ)- এর কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবু আইয়ুব (রাযিঃ) বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ! এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা কর। তিনি বললেন আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী।
যখন নবী কারীম (ﷺ) তাঁর বাড়ী আসলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী সম্প্রদায় জানে যে, আমি তাদের সর্দার এবং আমি তাঁদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি একথাটা জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুণ, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নবী কারীম (ﷺ) (ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর, তিনি ছাড়া মা‘বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমি সত্য রাসূল। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানি না। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল, আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারে না।
নবী কারীম (ﷺ) আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নবী কারীম (ﷺ) বললেন, হে ইবনে সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন মা‘বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো তিনি সত্য রাসুল, হোক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী কারীম (ﷺ) তাদেরকে বের করে দিলেন।
তখন নবী কারীম (ﷺ) পিছনের দিকে তাকিয়ে দুআ করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণকারী।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনার হারারার একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ এবং মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নবী কারীম (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) উটে আরোহণ করলেন আর আনসারগণ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহর নবী এসেছেন, আল্লাহর নবী এসেছেন, লোকজন উচু যায়গায় উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নবী এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবু আইয়ুব (রাযিঃ)- এর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন।
আবু আইয়ুব (রাযিঃ) ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নবী কারীম (ﷺ)- এর খেদমতে হাযির হলেন এবং নবী কারীম (ﷺ)- এর কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবু আইয়ুব (রাযিঃ) বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ! এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা কর। তিনি বললেন আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী।
যখন নবী কারীম (ﷺ) তাঁর বাড়ী আসলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী সম্প্রদায় জানে যে, আমি তাদের সর্দার এবং আমি তাঁদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি একথাটা জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুণ, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নবী কারীম (ﷺ) (ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর, তিনি ছাড়া মা‘বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমি সত্য রাসূল। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানি না। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল, আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারে না।
নবী কারীম (ﷺ) আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নবী কারীম (ﷺ) বললেন, হে ইবনে সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন মা‘বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো তিনি সত্য রাসুল, হোক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী কারীম (ﷺ) তাদেরকে বের করে দিলেন।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3911 - حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَقْبَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى المَدِينَةِ وَهُوَ مُرْدِفٌ أَبَا بَكْرٍ، وَأَبُو بَكْرٍ شَيْخٌ يُعْرَفُ، وَنَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَابٌّ لاَ يُعْرَفُ، قَالَ: فَيَلْقَى الرَّجُلُ أَبَا بَكْرٍ فَيَقُولُ يَا أَبَا بَكْرٍ مَنْ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْكَ؟ فَيَقُولُ: هَذَا الرَّجُلُ يَهْدِينِي السَّبِيلَ، قَالَ: فَيَحْسِبُ الحَاسِبُ أَنَّهُ إِنَّمَا يَعْنِي الطَّرِيقَ، وَإِنَّمَا يَعْنِي سَبِيلَ الخَيْرِ، فَالْتَفَتَ أَبُو بَكْرٍ فَإِذَا هُوَ بِفَارِسٍ قَدْ لَحِقَهُمْ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا فَارِسٌ قَدْ لَحِقَ بِنَا، فَالْتَفَتَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اصْرَعْهُ» . فَصَرَعَهُ الفَرَسُ، ثُمَّ قَامَتْ تُحَمْحِمُ، فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، مُرْنِي بِمَا شِئْتَ، قَالَ: «فَقِفْ مَكَانَكَ، لاَ تَتْرُكَنَّ أَحَدًا يَلْحَقُ بِنَا» . قَالَ: " فَكَانَ أَوَّلَ النَّهَارِ جَاهِدًا عَلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ آخِرَ النَّهَارِ مَسْلَحَةً لَهُ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَانِبَ الحَرَّةِ، ثُمَّ بَعَثَ إِلَى الأَنْصَارِ فَجَاءُوا إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ فَسَلَّمُوا عَلَيْهِمَا، وَقَالُوا: ارْكَبَا آمِنَيْنِ مُطَاعَيْنِ. فَرَكِبَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ، وَحَفُّوا دُونَهُمَا بِالسِّلاَحِ، فَقِيلَ فِي المَدِينَةِ: جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَشْرَفُوا يَنْظُرُونَ وَيَقُولُونَ: جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، فَأَقْبَلَ يَسِيرُ حَتَّى نَزَلَ جَانِبَ دَارِ أَبِي أَيُّوبَ، فَإِنَّهُ لَيُحَدِّثُ أَهْلَهُ إِذْ سَمِعَ بِهِ عَبْدُ اللَّهِ [ص:63] بْنُ سَلاَمٍ، وَهُوَ فِي نَخْلٍ لِأَهْلِهِ، يَخْتَرِفُ لَهُمْ، فَعَجِلَ أَنْ يَضَعَ الَّذِي يَخْتَرِفُ لَهُمْ فِيهَا، فَجَاءَ وَهِيَ مَعَهُ، فَسَمِعَ مِنْ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّ بُيُوتِ أَهْلِنَا أَقْرَبُ» . فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: أَنَا يَا نَبِيَّ اللَّهِ، هَذِهِ دَارِي وَهَذَا بَابِي، قَالَ: «فَانْطَلِقْ فَهَيِّئْ لَنَا مَقِيلًا» ، قَالَ: قُومَا عَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ، فَلَمَّا جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنَّكَ جِئْتَ بِحَقٍّ، وَقَدْ عَلِمَتْ يَهُودُ أَنِّي سَيِّدُهُمْ وَابْنُ سَيِّدِهِمْ، وَأَعْلَمُهُمْ وَابْنُ أَعْلَمِهِمْ، فَادْعُهُمْ فَاسْأَلْهُمْ عَنِّي قَبْلَ أَنْ يَعْلَمُوا أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ، فَإِنَّهُمْ إِنْ يَعْلَمُوا أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ قَالُوا فِيَّ مَا لَيْسَ فِيَّ. فَأَرْسَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلُوا فَدَخَلُوا عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ اليَهُودِ، وَيْلَكُمْ، اتَّقُوا اللَّهَ، فَوَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا، وَأَنِّي جِئْتُكُمْ بِحَقٍّ، فَأَسْلِمُوا» ، قَالُوا: مَا نَعْلَمُهُ، قَالُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَهَا ثَلاَثَ مِرَارٍ، قَالَ: «فَأَيُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ؟» قَالُوا: ذَاكَ سَيِّدُنَا وَابْنُ سَيِّدِنَا، وَأَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا، قَالَ: «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ؟» ، قَالُوا: حَاشَى لِلَّهِ مَا كَانَ لِيُسْلِمَ، قَالَ: «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ؟» قَالُوا: حَاشَى لِلَّهِ مَا كَانَ لِيُسْلِمَ، قَالَ: «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ؟» ، قَالُوا: حَاشَى لِلَّهِ مَا كَانَ لِيُسْلِمَ، قَالَ: «يَا ابْنَ سَلاَمٍ اخْرُجْ عَلَيْهِمْ» ، فَخَرَجَ فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ اليَهُودِ اتَّقُوا اللَّهَ، فَوَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنَّهُ جَاءَ بِحَقٍّ، فَقَالُوا: كَذَبْتَ، فَأَخْرَجَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৩১
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১২
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩১। ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) .... উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে মুহাজিরদের জন্য চার কিস্তিতে বাৎসরিক চার হাজার দেরহাম ধার্য করলেন, এবং (তাঁর ছেলে) ইবনে উমরের জন্য ধার্য করলেন তিন হাজার পাঁচশ। তাঁকে বলা হল, তিনিও তো মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর জন্য চার হাজার থেকে কম কেন করলেন? তিনি বললেন। সে তো তাঁর পিতামাতার সাথে হিজরত করেছে। কাজেই ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারে না যে একাকী হিজরত করেছে।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3912 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا هِشَامٌ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ فَرَضَ لِلْمُهَاجِرِينَ الْأَوَّلِينَ أَرْبَعَةَ آلَافٍ فِي أَرْبَعَةٍ، وَفَرَضَ لِابْنِ عُمَرَ ثَلَاثَةَ آلَافٍ وَخَمْسَ مِائَةٍ، فَقِيلَ لَهُ هُوَ مِنَ المُهَاجِرِينَ فَلِمَ نَقَصْتَهُ مِنْ أَرْبَعَةِ آلاَفٍ، فَقَالَ: " إِنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أَبَوَاهُ يَقُولُ: لَيْسَ هُوَ كَمَنْ هَاجَرَ بِنَفْسِهِ "
হাদীস নং: ৩৬৩২
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১৩ - ৩৯১৪
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩২। মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর ও মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... খাব্বাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাথে হিজরত করেছি একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আমাদের প্রতিদান আল্লাহর নিকটই নির্ধারিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের ত্যাগ ও কুরবানীর ফল কিছুই ইহজগতে ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তন্মধ্যে মুসহাব ইবনে উমায়ের (রাযিঃ) অন্যতম। তিনি ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য তার একটি চাঁদর ব্যতীত আর অন্য কিছুই আমরা পাচ্ছিলাম না। আমরা চাঁদরটি দিয়ে তাঁর মাথা আবৃত করলাম তাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন আমরা তাঁর পা ঢাকতে গেলাম তখন তাঁর মাথা বের হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের আদেশ করলেন, চাঁদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দু’টির উপর ইযখির ঘাস রেখে দাও। আর আমাদের মধ্যে রয়েছেন যাদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তাঁরা তা আহরণ করছেন।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ خَبَّابٍ، قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ الأَعْمَشِ، قَالَ سَمِعْتُ شَقِيقَ بْنَ سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا خَبَّابٌ، قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَبْتَغِي وَجْهَ اللَّهِ، وَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ، فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا، مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ، قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ نَجِدْ شَيْئًا نُكَفِّنُهُ فِيهِ، إِلاَّ نَمِرَةً كُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلاَهُ، فَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ خَرَجَ رَأْسُهُ، فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُغْطِيَ رَأْسَهُ بِهَا، وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ مِنْ إِذْخِرٍ، وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهْوَ يَهْدِبُهَا.
وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ الأَعْمَشِ، قَالَ سَمِعْتُ شَقِيقَ بْنَ سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا خَبَّابٌ، قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَبْتَغِي وَجْهَ اللَّهِ، وَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ، فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا، مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ، قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ نَجِدْ شَيْئًا نُكَفِّنُهُ فِيهِ، إِلاَّ نَمِرَةً كُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلاَهُ، فَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ خَرَجَ رَأْسُهُ، فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُغْطِيَ رَأْسَهُ بِهَا، وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ مِنْ إِذْخِرٍ، وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهْوَ يَهْدِبُهَا.
হাদীস নং: ৩৬৩৩
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১৫
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩৩। ইয়াহয়া ইবনে বিশর (রাহঃ) .... আবু বুরদা ইবনে আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জানো আমার পিতা তোমার পিতাকে কি বলেছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার পিতা তোমার পিতাকে বলেছিলেন, হে আবু মুসা, তুমি কি ইহাতে সন্তুষ্ট আছ যে, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি, তাঁর সঙ্গে হিজরত করেছি, তাঁর সঙ্গে জিহাদ করেছি এবং তাঁর জীবদ্দশায় কৃত আমাদের প্রতিটি আমল যা করেছি তা আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক। তাঁর ওফাতের পর, আমরা যে সব আমল করেছি, তা (জবাবদিহি) আমাদের জন্য সমান সমান হউক। অর্থাৎ সাওয়াবও না হউক আযাবও না হউক।
তখন তোমার পিতা আবু মুসা (রাযিঃ) বললেন, না (আমি এতে সন্তুষ্ট নই) কেননা আল্লাহর কসম, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর পর জিহাদ করেছি, রোযা পালন করেছি এবং বহু নেক আমল করেছি। আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। আমরা এসব কাজের সাওয়াব-এর আশা রাখি। তখন আমার পিতা (উমর (রাযিঃ) বললেন, কিন্তু ঐ সত্তার কসম, যার হাতে উমরের প্রাণ, এতেই সন্তুষ্ট যে, (নবী (ﷺ) এর জীবদ্দশায় তাঁর সাথে কৃত আমল) আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক আর তাঁর ওফাতের পর আমরা যে সব আমল করেছি তা থেকে যেন আমরা অব্যাহতি পাই সমান সমান ভাবে। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম নিশ্চয়ই তোমার পিতা আমার পিতা থেকে উত্তম।
তখন তোমার পিতা আবু মুসা (রাযিঃ) বললেন, না (আমি এতে সন্তুষ্ট নই) কেননা আল্লাহর কসম, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর পর জিহাদ করেছি, রোযা পালন করেছি এবং বহু নেক আমল করেছি। আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। আমরা এসব কাজের সাওয়াব-এর আশা রাখি। তখন আমার পিতা (উমর (রাযিঃ) বললেন, কিন্তু ঐ সত্তার কসম, যার হাতে উমরের প্রাণ, এতেই সন্তুষ্ট যে, (নবী (ﷺ) এর জীবদ্দশায় তাঁর সাথে কৃত আমল) আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক আর তাঁর ওফাতের পর আমরা যে সব আমল করেছি তা থেকে যেন আমরা অব্যাহতি পাই সমান সমান ভাবে। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম নিশ্চয়ই তোমার পিতা আমার পিতা থেকে উত্তম।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3915 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ [ص:64] بِشْرٍ، حَدَّثَنَا رَوْحٌ، حَدَّثَنَا عَوْفٌ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: هَلْ تَدْرِي مَا قَالَ أَبِي لِأَبِيكَ؟ قَالَ: قُلْتُ: لاَ، قَالَ: فَإِنَّ أَبِي قَالَ لِأَبِيكَ: " يَا أَبَا مُوسَى، هَلْ يَسُرُّكَ إِسْلاَمُنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهِجْرَتُنَا مَعَهُ، وَجِهَادُنَا مَعَهُ، وَعَمَلُنَا كُلُّهُ مَعَهُ، بَرَدَ لَنَا، وَأَنَّ كُلَّ عَمَلٍ عَمِلْنَاهُ بَعْدَهُ نَجَوْنَا مِنْهُ، كَفَافًا رَأْسًا بِرَأْسٍ؟ فَقَالَ أَبِي: لاَ وَاللَّهِ، قَدْ جَاهَدْنَا بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَصَلَّيْنَا، وَصُمْنَا، وَعَمِلْنَا خَيْرًا كَثِيرًا، وَأَسْلَمَ عَلَى أَيْدِينَا بَشَرٌ كَثِيرٌ، وَإِنَّا لَنَرْجُو ذَلِكَ، فَقَالَ أَبِي: لَكِنِّي أَنَا، وَالَّذِي نَفْسُ عُمَرَ بِيَدِهِ، لَوَدِدْتُ أَنَّ ذَلِكَ بَرَدَ لَنَا، وَأَنَّ كُلَّ شَيْءٍ عَمِلْنَاهُ بَعْدُ نَجَوْنَا مِنْهُ كَفَافًا رَأْسًا بِرَأْسٍ، فَقُلْتُ: إِنَّ أَبَاكَ وَاللَّهِ خَيْرٌ مِنْ أَبِي "

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৩৬৩৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১৬
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩৪। মুহাম্মাদ ইবনে সাববাহ (রাহঃ) .... আবু উসমান (রাহঃ) বলেন, আমি ইবনে উমর (রাযিঃ)- কে বলতে শুনেছি যে, তাঁকে একথা বলা হলে, “আপনি আপনার পিতার আগে হিজরত করেছেন” তিনি রাগ করতেন। ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, (প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমি এবং উমর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর খেদমতে হাযির হলাম। তখন তাঁকে কায়লুলা অবস্থায় (দুপুরের বিশ্রাম) পেলাম। কাজেই আমরা আমাদের আবাসস্থলে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ পর উমর (রাযিঃ) আমাকে পাঠালেন এবং বললেন যাও; গিয়ে দেখ নবী কারীম (ﷺ) জেগেছেন কিনা? আমি এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কাছে বায়‘আত করলাম। তারপর উমর (রাযিঃ)- এর কাছে এসে তাঁকে খবর দিলাম যে, তিনি জেগে গেছেন। তখন আমরা তাঁর নিকট গেলাম দ্রুতবেগে। তিনি তাঁর কাছে প্রবেশ করে বায়‘আত করলেন। তারপর আমিও নবী কারীম (ﷺ)- এর হাতে (দ্বিত্বীয় বার উমর (রাযিঃ)) বায়‘আত করলাম।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3916 - حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ صَبَّاحٍ، أَوْ بَلَغَنِي عَنْهُ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، إِذَا قِيلَ لَهُ هَاجَرَ قَبْلَ أَبِيهِ يَغْضَبُ، قَالَ: " وَقَدِمْتُ أَنَا وَعُمَرُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَجَدْنَاهُ قَائِلًا، فَرَجَعْنَا إِلَى المَنْزِلِ فَأَرْسَلَنِي عُمَرُ، وَقَالَ: اذْهَبْ فَانْظُرْ هَلِ اسْتَيْقَظَ فَأَتَيْتُهُ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَبَايَعْتُهُ، ثُمَّ انْطَلَقْتُ إِلَى عُمَرَ فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّهُ قَدِ اسْتَيْقَظَ، فَانْطَلَقْنَا إِلَيْهِ نُهَرْوِلُ هَرْوَلَةً حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهِ، فَبَايَعَهُ ثُمَّ بَايَعْتُهُ "

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১৭ - ৩৯১৮
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩৫। আহমদ ইবনে উসমান (রাহঃ) .... আবু ইসহাক (রাহঃ) বলেন, আমি বারা (রাযিঃ)- কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবু বকর (রাযিঃ) আমার পিতা আযিব (রাযিঃ)- এর নিকট হাওদা খরিদ করলেন। আমি আবু বকরের সাথে খরীদা হওদাটি বহন করে নিয়ে চললাম। তখন আমার পিতা আযিব (রাযিঃ) নবী কারীম (ﷺ)- এর সহিত তাঁর হিজরতের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমাদের অনুসন্ধান করার জন্য মুশরিকরা লোক নিয়োগ করেছিল। অবশেষে আমরা রাত্রিকালে বেরিয়ে পড়লাম এবং একরাত ও একদিন অবিরাম চলতে থাকলাম। যখন দুপুর হয়ে গেল, তখন একটি বিরাটকায় (বড়ো আকারের) পাথর নযরে পড়ল। আমরা সেটির কাছে এলাম, পাথরটির কিছু ছায়া পড়ছিল।
আমি সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর জন্য আমার সঙ্গের চামড়াখানি বিছিয়ে দিলাম। নবী কারীম (ﷺ)- এর উপর শুয়ে পড়লেন। আমি এদিক-ওদিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক বকরী রাখালকে দেখতে পেলাম। সে তার বকরীগুলো নিয়ে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের (ছায়ায়) আশ্রয় নিতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি অমুকের। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ।
আমি বললাম, তুমি কি (আমাদের জন্য) কিছু দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। সে তার পাল থেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, বকরীর স্তন দু’টি ঝেড়ে মুছে সাফ করে নাও। সে একপাত্র ভর্তি দুধ দোহন করল। আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর জন্য কাপড় দিয়ে তার মুখ বেধে রেখেছিলাম। আমি তা থেকে দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। ফলে পাত্রের তলা পর্যন্ত শীতল হয়ে গেল। আমি তা নিয়ে নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এসে বললাম, পান করুন ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এতখানি পান করলেন যে, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমরা রওয়ানা হলাম এবং অনুসন্ধানকারী আমাদের পিছনে ছিল। বারা (রাযিঃ) বলেন, আমি আবু বকরের সঙ্গে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন দেখলাম তাঁর মেয়ে আয়েশা (রাযিঃ) বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর জ্বর হয়েছে। তাঁর পিতা আবু বকর (রাযিঃ)- কে দেখলাম তিনি মেয়ের গালে চুমু খেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, মা তুমি কেমন আছ?
আমি সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর জন্য আমার সঙ্গের চামড়াখানি বিছিয়ে দিলাম। নবী কারীম (ﷺ)- এর উপর শুয়ে পড়লেন। আমি এদিক-ওদিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক বকরী রাখালকে দেখতে পেলাম। সে তার বকরীগুলো নিয়ে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের (ছায়ায়) আশ্রয় নিতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি অমুকের। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ।
আমি বললাম, তুমি কি (আমাদের জন্য) কিছু দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। সে তার পাল থেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, বকরীর স্তন দু’টি ঝেড়ে মুছে সাফ করে নাও। সে একপাত্র ভর্তি দুধ দোহন করল। আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর জন্য কাপড় দিয়ে তার মুখ বেধে রেখেছিলাম। আমি তা থেকে দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। ফলে পাত্রের তলা পর্যন্ত শীতল হয়ে গেল। আমি তা নিয়ে নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এসে বললাম, পান করুন ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এতখানি পান করলেন যে, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমরা রওয়ানা হলাম এবং অনুসন্ধানকারী আমাদের পিছনে ছিল। বারা (রাযিঃ) বলেন, আমি আবু বকরের সঙ্গে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন দেখলাম তাঁর মেয়ে আয়েশা (রাযিঃ) বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর জ্বর হয়েছে। তাঁর পিতা আবু বকর (রাযিঃ)- কে দেখলাম তিনি মেয়ের গালে চুমু খেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, মা তুমি কেমন আছ?
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا شُرَيْحُ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ، يُحَدِّثُ قَالَ ابْتَاعَ أَبُو بَكْرٍ مِنْ عَازِبٍ رَحْلاً فَحَمَلْتُهُ مَعَهُ قَالَ فَسَأَلَهُ عَازِبٌ عَنْ مَسِيرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أُخِذَ عَلَيْنَا بِالرَّصَدِ، فَخَرَجْنَا لَيْلاً، فَأَحْثَثْنَا لَيْلَتَنَا وَيَوْمَنَا حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ، ثُمَّ رُفِعَتْ لَنَا صَخْرَةٌ، فَأَتَيْنَاهَا وَلَهَا شَىْءٌ مِنْ ظِلٍّ قَالَ فَفَرَشْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرْوَةً مَعِي، ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَانْطَلَقْتُ أَنْفُضُ مَا حَوْلَهُ، فَإِذَا أَنَا بِرَاعٍ قَدْ أَقْبَلَ فِي غُنَيْمَةٍ يُرِيدُ مِنَ الصَّخْرَةِ مِثْلَ الَّذِي أَرَدْنَا فَسَأَلْتُهُ لِمَنْ أَنْتَ يَا غُلاَمُ فَقَالَ أَنَا لِفُلاَنٍ. فَقُلْتُ لَهُ هَلْ فِي غَنَمِكَ مِنْ لَبَنٍ قَالَ نَعَمْ. قُلْتُ لَهُ هَلْ أَنْتَ حَالِبٌ قَالَ نَعَمْ. فَأَخَذَ شَاةً مِنْ غَنَمِهِ فَقُلْتُ لَهُ انْفُضِ الضَّرْعَ. قَالَ فَحَلَبَ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ، وَمَعِي إِدَاوَةٌ مِنْ مَاءٍ عَلَيْهَا خِرْقَةٌ قَدْ رَوَّأْتُهَا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَبَبْتُ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ، ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ اشْرَبْ يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَشَرِبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى رَضِيتُ، ثُمَّ ارْتَحَلْنَا وَالطَّلَبُ فِي إِثْرِنَا.
قَالَ الْبَرَاءُ فَدَخَلْتُ مَعَ أَبِي بَكْرٍ عَلَى أَهْلِهِ، فَإِذَا عَائِشَةُ ابْنَتُهُ مُضْطَجِعَةٌ، قَدْ أَصَابَتْهَا حُمَّى، فَرَأَيْتُ أَبَاهَا فَقَبَّلَ خَدَّهَا، وَقَالَ كَيْفَ أَنْتِ يَا بُنَيَّةُ
قَالَ الْبَرَاءُ فَدَخَلْتُ مَعَ أَبِي بَكْرٍ عَلَى أَهْلِهِ، فَإِذَا عَائِشَةُ ابْنَتُهُ مُضْطَجِعَةٌ، قَدْ أَصَابَتْهَا حُمَّى، فَرَأَيْتُ أَبَاهَا فَقَبَّلَ خَدَّهَا، وَقَالَ كَيْفَ أَنْتِ يَا بُنَيَّةُ

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৩৬
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১৯ - ৩৯২০
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩৬। সুলাইমান ইবনে আব্দুর রহমান (রাহঃ) .... নবী কারীম (ﷺ)- এর খাদেম আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ) (মদীনায়) আগমন করলেন। এই সময় তাঁর সাহাবীদের মধ্যে সাদা কাল চুল বিশিষ্ট আবু বকর (রাযিঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তাঁর চুলে মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ (এক প্রকার কালো ঘাস) লাগিয়েছিলেন।
দোহায়েম অন্য সূত্রে আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ) মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর (রাযিঃ) ছিলেন সব চাইতে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর চুল (ও দাঁড়ি) টকটকে লাল রং ধারণ করেছিল।
দোহায়েম অন্য সূত্রে আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ) মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর (রাযিঃ) ছিলেন সব চাইতে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর চুল (ও দাঁড়ি) টকটকে লাল রং ধারণ করেছিল।
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حِمْيَرَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ أَبِي عَبْلَةَ، أَنَّ عُقْبَةَ بْنَ وَسَّاجٍ، حَدَّثَهُ عَنْ أَنَسٍ، خَادِمِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلَيْسَ فِي أَصْحَابِهِ أَشْمَطُ غَيْرَ أَبِي بَكْرٍ، فَغَلَفَهَا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ.
وَقَالَ دُحَيْمٌ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، حَدَّثَنِي أَبُو عُبَيْدٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ وَسَّاجٍ، حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ، فَكَانَ أَسَنَّ أَصْحَابِهِ أَبُو بَكْرٍ، فَغَلَفَهَا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ حَتَّى قَنَأَ لَوْنُهَا.
وَقَالَ دُحَيْمٌ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، حَدَّثَنِي أَبُو عُبَيْدٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ وَسَّاجٍ، حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ، فَكَانَ أَسَنَّ أَصْحَابِهِ أَبُو بَكْرٍ، فَغَلَفَهَا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ حَتَّى قَنَأَ لَوْنُهَا.

তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৩৭
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯২১
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩৭। আসবাগ (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর (রাযিঃ) কালব গোত্রের উম্মে বকর নামে একজন মহিলাকে শাদী করলেন। যখন আবু বকর (রাযিঃ) হিজরত করেন, তখন তাকে তালাক দিয়ে যান। তারপর ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই শাদী করে নিল। এই ব্যক্তিটিই হল সেই কবি যে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফিরদের শোকগাঁথা রচনা করেছিল। “বদর প্রান্তে কালীব নামক কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ সব কাফিরগণ আজ কোথায় যাদের শিযা নামক কাঠের তৈরী খাদ্য-পাত্রে উটের কুঁজের গোশত সুসজ্জিত থাকত। বদরের কালীব কূপে নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগণ আজ কোথায় যারা গায়িকা ও সম্মানিত মদ্যপানকারী নিয়ে নিমগ্ন ছিল। উম্মে বকর শান্তির স্বাগত জানাচ্ছে। আর আমার কওমের (ধবংস হয়ে যাওয়ার) পর আমার জন্য শান্তি কোথায়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বলেছেন যে, অচিরেই আমাদের জীবিত করা হবে। কিন্তু উড়ে যাওয়া আত্মা ও মাথার খুলীর জীবন কেমন করে?”
باب هِجْرَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ
3921 - حَدَّثَنَا أَصْبَغُ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنْ كَلْبٍ يُقَالُ لَهَا أُمُّ بَكْرٍ، فَلَمَّا هَاجَرَ أَبُو بَكْرٍ طَلَّقَهَا، فَتَزَوَّجَهَا ابْنُ عَمِّهَا، هَذَا الشَّاعِرُ الَّذِي قَالَ هَذِهِ القَصِيدَةَ رَثَى كُفَّارَ قُرَيْشٍ:
[البحر الوافر]
وَمَاذَا بِالقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ... مِنَ الشِّيزَى تُزَيَّنُ بِالسَّنَامِ
وَمَاذَا بِالقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ... مِنَ القَيْنَاتِ وَالشَّرْبِ الكِرَامِ
تُحَيِّينَا السَّلاَمَةَ أُمُّ بَكْرٍ ... وَهَلْ لِي بَعْدَ قَوْمِي مِنْ سَلاَمِ
يُحَدِّثُنَا الرَّسُولُ بِأَنْ سَنَحْيَا ... وَكَيْفَ حَيَاةُ أَصْدَاءٍ وَهَامِ "
[البحر الوافر]
وَمَاذَا بِالقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ... مِنَ الشِّيزَى تُزَيَّنُ بِالسَّنَامِ
وَمَاذَا بِالقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ... مِنَ القَيْنَاتِ وَالشَّرْبِ الكِرَامِ
تُحَيِّينَا السَّلاَمَةَ أُمُّ بَكْرٍ ... وَهَلْ لِي بَعْدَ قَوْمِي مِنْ سَلاَمِ
يُحَدِّثُنَا الرَّسُولُ بِأَنْ سَنَحْيَا ... وَكَيْفَ حَيَاةُ أَصْدَاءٍ وَهَامِ "

তাহকীক: