নির্বাচিত হাদীস
দেনা পরিশোধে অসচ্ছল দেনাদারকে অবকাশ বা ছাড় দানে আরশের ছায়ায় আশ্রয়লাভ -এর বিষয়সমূহ
১ টি হাদীস
সহীহ মুসলিম
হাদীস নং:৭২৪০
১৮. জাবির (রাযিঃ) এর সুদীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইউসরের ঘটনা
৭২৪০। হারুন ইবনে মারুফ ও মুহাম্মাদ ইবনে আব্বাদ (রাহঃ) ......... উবাদা ইবনে ওয়ালীদ ইবনে উবাদা ইবনে সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আনসারী সাহাবীদের শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে আমি এবং আমার পিতা দীন শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে আনসারী সাহাবীদের এই মহল্লায় বের হলাম। প্রথমে আমাদের যার সাথে সাক্ষাত হল, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবী আবুল ইউসর (রাযিঃ)। এক বোঝা কিতাব নিয়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক গোলাম। তখন আবুল ইউসুর (রাযিঃ) এর গায়ে ছিল একটি চাঁদর এবং একটি মুআফিরী কাপড়। অনুরূপভাবে তার গোলামের গায়েও ছিল একটি চাঁদর এবং একটি মুআফিরী কাপড়।
অতঃপর আমার আব্বা তাঁকে বললেন, হে চাচাজান! আপনার চেহারায় যে ক্রোধের নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, হ্যাঁ, কারণ বনী হারাম গোত্রের অমুকের পূত্র অমুকের নিকট আমি মাল পাওনা আছি। তাগাদার উদ্দেশ্যে আমি তার বাড়ীতে গিয়েছি। অতঃপর আমি সালাম দিয়ে বললাম, অমুক কোথায়, সে বাড়ী আছে কি? বাড়ীর ভেতর হতে তারা বলল, সে বাড়ীতে নেই। এমতাবস্থায় তার এক কিশোর ছেলে বাইরে আমার নিকট এলো। আমি তাকে বললাম, তোমার বাবা কোথায়? সে বলল, আপনার আওয়াজ শুনে আমার আম্মার খাটের ভেতর পালিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বললাম, আমার কাছে এসো। অবশ্যই আমি জানি তুমি কোথায় আছে।
অতঃপর সে বেরিয়ে আসল। আমি তাকে বললাম, আমার থেকে আত্মগোপন করার ব্যাপারে কিসে তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে বলব, তবে মিথ্যা বলব না। আল্লাহর কসম, আপনি তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবী, তাই এ বিষয়টিকে আমি ভয়ানক মনে করেছি যে আমি আপনার সাথে মিথ্যা কথা বলব অথবা অঙ্গীকার করে অঙ্গীকার ভঙ্গ করব। আল্লাহর কসম! আমি একজন অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি। আমি বললাম, সত্যই তুমি আল্লাহর কসম করে বলছো? সে বলল, হ্যাঁ। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি। আমি বললাম, আল্লাহর কসম করে বলছো? সে বলল, হ্যাঁ আল্লাহর কসম করে বলছি। আমি আবারো বললাম, আল্লাহর কসম করে বলছো? সে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম করে বলছি।
অতঃপর এতদসশ্লিষ্ট দলীল আনা হল এবং আবুল ইউসর নিজ হাতে উহা মুছে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমার ঋণ পরিশোধের মত টাকা যদি তোমার ব্যবস্থা হয় তবে তুমি তা পরিশোধ করবে। অন্যথায় তুমি আমার পক্ষ হতে মুক্ত। অতঃপর আবুল ইউসর (রাযিঃ) দুটি আঙ্গুল তার চক্ষুদ্বয়ের উপর রেখে বললেন, আমার উভয় চোখের দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে, আমার উভয় কান শ্রবণ করেছে এবং হৃদয় ধমনীর প্রতি ইশারা করে তিনি বললেন, আমার হৃদয় তা সংরক্ষণ করেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় বা মাফ করে দেয় আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর স্বীয় ছায়ার নীচে আশ্রয় প্রদান করবেন।
উবাদা (রাযিঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, চাচাজান! যদি আপনি আপনার গোলামের শরীর থেকে চাঁদরটি নিয়ে তাকে আপনার মুআফিরী কাপড়টি দিয়ে দেন অথবা তার মুআফিরী কাপড়টি নিয়ে আপনি যদি তাকে আপনার চাঁদরটি দিয়ে দেন তবে তো আপনার এক জোড়া কাপড় এবং তারও এক জোড়া কাপড় হয়ে যায়। এ কথা শুনে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! আপনি এ বাচ্চার মধ্যে বরকত দিন। এরপর বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমার এ দু’চোখ প্রত্যক্ষ করেছে, আমার এ দু’কান শ্রবণ করেছে এবং হদয় ধমনীর প্রতি ইশারা করে তিনি বললেন, আমার এ হৃদয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে সংরক্ষণ করেছে, তিনি বলেছেনঃ তোমরা যা খাও, তাদেরকেও তা খাওয়াও, তোমরা যা পরিধান কর তাদেরকেও তা পরিধান করাও। অধিকন্তু তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন তার আমার নেকী নিয়ে যাওয়ার চেয়ে আমার তাকে পার্থিব সামগ্রী যা একেবারেই তুচ্ছ তা দান করা খুবই সহজ ব্যাপার।
অতঃপর আমরা সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) এর নিকট মসজিদে আসলাম। তখন তিনি এক কাপড় শরীরে জড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন। এ দেখে আমি লোকদের ডিঙ্গিয়ে তার ও কিবলার মাঝামাঝি স্থানে গিয়ে বসলাম অতঃপর আমি বললাম, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আপনি এক কাপড় পরিহিত অবস্থায় নামায আদায় করছেন। অথচ আপনার পাশেই আপনার চাঁদর পড়ে আছে। এ কথা শুনে তিনি আঙ্গুলগুলো প্রশস্ত করতঃ সেগুলো কামানের মত বাকা করে আমার বক্ষের দিকে ইশারা করে বললেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে তোমার মত কোন আহমক (নির্বোধ) ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমি যা করছি তা প্রত্যক্ষ করবে এবং পরে তার অনুরূপ করবে।
শোন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইবনে তাবের (খেজুর গাছের) একটি ডাল হাতে আমাদের এ মসজিদে আসলেন এবং মসজিদের পশ্চিম দিকে কফ দেখে তিনি ডাল দ্বারা ঘষে উহা পরিস্কার করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে, আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? জাবির (রাযিঃ) বলেন, এতে আমরা তীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম। অতঃপর তিনি আবার বললেনঃ তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি যে, আল্লাহ তাআলা তার থেকে তার মুখ ফিরিয়ে নেন? তিনি বলেন, এবারও আমরা শংকিত হয়ে গেলাম, তৎপর পূনরায় তিনি বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে তার থেকে আল্লাহ তাআলা মুখ ফিরিয়ে নেন? উত্তরে আমরা বললাম, না! হে আল্লাহর রাসুল! (আমাদের কেউ এমনটি চায়না)।
অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়াবে, তখন আল্লাহ তাআলা তার চেহারামুখী থাকেন। সুতরাং মুসল্লী যেন সম্মুখের দিকে, ডান দিকে থু-থু না ফেলে; বরং সে যেন বাম দিকে বাম পায়ের নীচে থু-থু ফেলে আর যদি তড়িৎ কফ চলে আসে তবে সে যেন কাপড়ের উপর এভাবে থু-থু ফেলে, এবং পরে যেন এক অংশকে অন্য অংশের উপর এভাবে গুটিয়ে নেয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমার নিকট আবির (সুগন্ধি) নিয়ে আসো। তখন আমাদের গোত্রের একজন যুবক লম্ফ দিয়ে উঠে দৌড়িয়ে তার বাড়ীতে গেল এবং হাতের তালুতে করে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার থেকে সুগন্ধি নিয়ে ডালার মাথায় মেখে যেখানে কফের দাগ ছিল তাতে তা লাগিয়ে দিলেন। জাবির (রাযিঃ) বলেন, এখান থেকেই তোমরা তোমাদের মসজিদে সুগন্ধি মাখতে আরম্ভ করেছ।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে বুওয়াত প্রান্তরের যুদ্ধে রওয়ানা হলাম। তিনি মাজদী ইবনে আমর জুহানী কাফিরকে তালাশ করছিলেন। অবস্থা এই ছিল যে, আমাদের পাঁচ পাঁচ, ছয় ছয়, সাত সাত ব্যক্তি পালাক্রমে একটি উটের উপর আরোহণ করতো। অতঃপর এক আনসারী ব্যক্তির আরোহণের পালা আসলে সে তার উটটিকে বসিয়ে এর উপর আরোহণ করল এবং উহাকে চালাল। চলমাল অবস্থায় উটটি তার উপর কিছু ধূলাবালি উড়াল। ফলে সে ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠল- আল্লাহ তোমার প্রতি লানত করেন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এ লোকটি কে যে তার উটের প্রতি অভিসম্পাত করল? সে বলল, আমি, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি এর থেকে নেমে যাও! আর অভিশপ্ত উটটি আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। তোমাদের সন্তানদের উপর বদ দুআ করোনা এবং নিজের ধন-সম্পদের উপরও না। এমন যেন না হয় যে, তোমরা এমন মুহুর্তে বদ দুআ করবে যখন আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া হয় এবং গ্রহণযোগ্যও হয়।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে আমরা আবার চললাম, সন্ধ্যা হলে আমরা আরবের এক জল স্থানের নিকট পৌছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ কে আছে, যে আমাদের আগে গিয়ে হাউজটি ঠিকঠাক করবে এবং নিজেও পান করবে আর আমাদেরকেও পান করাবে। জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমি দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এই ব্যক্তি অগ্রে যাবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ জাবিরের সাথে আর কে যাবে? তখন জাব্বার ইবনে সাখর (রাযিঃ) দাঁড়ালেন। অতঃপর আমরা দু’জন কুয়ার ধারে গেলাম এবং এক বা দু’বালতি তুললাম। এরপর আমরা সে (হাউজ) টি মাটি দ্বারা লেপলাম। পরে আমরা কুয়া হতে পানি উঠাতে আরম্ভ করলাম এবং পানি দ্বারা উহা কানায় কানায় ভরে দিলাম।
অতঃপর সর্ব প্রথম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সামনে এলেন এবং বললেন, তোমরা কি আমাকে অনুমতি দাও? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসুল! অতঃপর তিনি তাঁর উট ছাড়লেন পানি পানের জন্য। উট পানি পান করল। অতঃপর তিনি তাঁর উটকে টান দিলে উহা পানি পান বন্ধ করল এবং পেশাব করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পরে উহাকে আলাদা স্থানে নিয়ে গেলেন এবং বসালেন। এরপর পুনরায় তিনি হাউজের নিকট এসে উযু করলেন, আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম এবং পরে আমিও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উযুর স্থান হতে উযু করলাম। জাব্বার ইবনে সাখর (রাযিঃ) সৌচকার্যের উদ্দেশ্যে গমন করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। আমার গায়ে ছিল একটি চাঁদর। আমি তার উভয় আচল বিপরীত দিকে দেয়ার চেষ্টা করলাম; কিন্তু তা সংকুলান হলনা। তবে উহাতে কতগুলো রেশমের থোবা ছিল। তাই তাকে আমি তা উল্টো দিকে করলাম ও এর দুই পার্শ্ব বিপরীতভাবে দুই কাঁধের উপর রাখলাম এবং গর্দানের সাথে তাকে বাঁধলাম।
অতঃপর আমি এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। অতঃপর জাব্বার ইবনে সাখর (রাযিঃ) এসে উযু করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাম পাশে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের উভয়ের হাত ধরে আমাদেরকে পেছনের দিকে সরিয়ে দিলেন এবং আমাদেরকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার প্রতি তীক্ষ্ণভাবে তাকাতে আরম্ভ করলেন; কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, অবশেষে আমি বুঝতে পারলাম। তখন তিনি আমাকে তার হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন, তুমি তোমার চাদর (কোমরে) বেঁধে নাও।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামাযান্তে বললেনঃ হে জাবির! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি উপস্থিত। তিনি বললেনঃ চাঁদর যদি প্রশস্ত হয় তবে এর উভয় প্রান্ত বিপরীতভারে উভয় কাঁধের উপর রেখে দিবে আর চাঁদর যদি সংকীর্ণ হয় তবে উহাকে তোমার কোমরে বেঁধে নিবে।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, (আর একবার) আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে চলতে আরম্ভ করলাম। তখন জীবিকা হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেই একটি করে খেজুর পেত, উহা সে চুষত এবং পরে আবার উহা কাপড়ের মধ্যে রেখে দিত। তখন আমরা আমাদের ধনূকের দ্বারা গাছের পাতা পাড়তাম এবং উহা ভক্ষণ করতাম। ফলে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে গেল। এ সময় এক দিন এক ব্যক্তি খেজুর বন্টন করল এবং বন্টনের সময় এক ব্যক্তিকে ভুলে গেল। আমরা তাকে নিয়ে চললাম এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বললাম, তাকে খেজুর দেয়া হয়নি। অবশেষে তাকেও খেজুর দেয়া হল। সে দাঁড়িয়ে খেজুর গ্রহণ করল।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, (একবার) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে আমরা চলতে আরম্ভ করলাম। যেতে যেতে আমরা এক প্রশস্ত উপত্যকায় অবতরণ করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শৌচকার্য সমাধানের উদ্দেশ্যে গমন করলেন আমিও পানির পাত্র নিয়ে তার পেছনে পেছনে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নযর করে দেখলেন; কিন্তু পর্দা করবার জন্য কিছুই পেলেন না। হঠাৎ উপত্যকার এক প্রান্তে দুটি বৃক্ষ দেখতে পেলেন। তাই তিনি এর একটির নিকট গেলেন এবং এর একটি ডাল হাতে নিয়ে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তুমি আমার আনুগত্য কর। ডালটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বশ্যতা স্বীকার করে নিল, লাগাম পরিহিত ঐ উটের ন্যায় যা তার চালকের অনুসরণ করে।
অতঃপর তিনি দ্বিতীয় গাছটির নিকট এসে এর একটি ডাল হাতে নিয়ে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তুমি আমার আনুগত্য কর। এটিও অনুরূপ তার আনুগত্য করল। অতঃপর তিনি যখন দুই গাছের মধ্যবর্তী ছুরতে পৌছলেন, তখন তিনি ডাল দু’টো এক সাথে মিলিয়ে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তোমরা আমার সন্মুখে (একত্রিত হয়ে যাও) মিলে যাও। তারা উভয়ই একত্রিত হয়ে গেল, মিলে গেল। জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমি এই ভয়ে দৌড়িয়ে চলে এলাম যে, না জানি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার সন্নিকটে হবার বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং আরো দুরে চলে যান।
ইবনে আব্বাদ (রাযিঃ)يَبْتَعِدَ এর স্থলেفَيَتَبَعَّ উল্লেখ করেছেন। অতঃপর আমি বসে মনে মনে কিছু বলছিলাম। এমতাবস্থায় নযর উঠিয়েই আমি দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্মুখ দিক হতে তাশরীফ আনছেন। উভয় বৃক্ষই তখন আলাদা হয়ে স্বীয় কান্ডের উপর দণ্ডায়মান অবস্থায় ছিল। অতঃপর আমি দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাথা দ্বারা ডানে ও বামে ইশারা করলেন। এ স্থলে বর্ণনাকারী আবু ইসমাঈলও তার মাথা দ্বারা ইশারা করেছেন। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে এসে আমার পর্যন্ত পৌছে আমাকে বললেন, হে জাবির! তুমি তো আমার অবস্থানের স্থান দেখেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, তুমি ঐ গাছ দু’টির নিকট যাও এবং উহাদের প্রত্যেকটির একটি একটি ডাল কেটে নিয়ে এসো। অতঃপর তুমি আমার এ স্থানে পৌছে একটি ডাল ডান দিকে এবং অপরটি বাম দিকে রেখে দিবে।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, আমি উঠলাম এবং একটি পাথর হাতে নিয়ে উহাকে ভেঙ্গে তীক্ষ্ণ করলাম। ফলে উহা ভীষণ ধারাল হল। অতঃপর আমি গাছ দুটির নিকট আসলাম এবং এক এক গাছ হতে এক একটি করে ডাল কাটলাম। এরপর ডাল দুটো হেঁচড়িয়ে নিয়ে আমি রওয়ানা হলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অবস্থান স্থলে পৌছে একটি ডাল আমার ডান দিকে এবং অন্য ডালটি আমার বাম দিকে রেখে দিলাম। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যা বলেছেন আমি তা পূর্ণ করেছি। তবে এর কারণ কি?
জবাবে তিনি বললেনঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম কালে আমি দেখেছি, তাদের কবরে আযাব হচ্ছে। আমি তাদের জন্য সুপারিশ করার ইচ্ছা করছি। সম্ভবত এ তাদের আযাবকে লঘু করে দিবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এ ডাল দুটো তরতাজা থাকবে। জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমরা সৈন্যদের মাঝে আসলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ হে জাবির! ঘোষণা দাও, উযু করার জন্য। আমি ঘোষণা করলাম, হে লোক সকল! উযু কর, উযু কর, উযু কর। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কাফেলার নিকট এক ফোটা পানিও নেই। কাফেলায় এক আনসারী সাহাবী ছিলেন। তিনি কাষ্ঠের ডালাতে ঝুলন্ত পুরাতন মশকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য পানি ঠাণ্ডা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেনঃ তুমি অমুকের ছেলে অমুক আনসারীর নিকট যাও এবং দেখ তার মশকে কিছু পানি আছে কিনা? আমি তার নিকট গেলাম এবং দেখলাম, মশকের মুখে শুধু এক ফোটা পানি আছে। উহা যদি আমি মাশকের ভেতর ফেলে দেই তবে শুষ্ক মশকই উহা খেয়ে নিঃশেষ করে দিবে। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! মশকের মুখে এক ফোটা পানি ব্যতীত আর কোন পানই মশকের ভেতর নেই। উহাও যদি মশকের ভেতর ঢেলে দেয়া হয় তবে মশকের শুষ্ক অংশই উহা খেয়ে নিঃশেষ করে দিবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ যাও, উহা নিয়ে এসো।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, উহা আমি নিয়ে আসলাম। তিনি উহা হাতে নিয়ে কি যেন পড়তে শুরু করলেন। আমি তা বুঝতে পারাছিলাম না। এবং সাথে সাথে নিজ হাত দ্বারা উহা টিপতে আরম্ভ করলেন। অতঃপর তিনি মশকটি আমার হাতে দিয়ে বললেন, হে জাবির! একটি বড় পাত্র নিয়ে আবার ঘোষণা দাও। আমি ঘোষণা করলাম। হে কাফেলা! একটি বড় পাত্র, একটি বড় পাত্র অতঃপর আমার কাছে একটি বড় পাত্র নিয়ে আসা হলো। আমি তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে নিয়ে রাখলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাত দ্বারা উক্ত পাত্রের উপর এভাবে ইঙ্গিত করলেন এবং পাত্রের তলায় নিজের হাত রেখে আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে রাখলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে জাবির! ঐ মশকটি নিয়ে এসো এবং বিসমিল্লাহ বলে উহার পানি আমার হাতের উপর ঢালো।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ মোতাবিক ’বিসমিল্লাহ’ বলে আমি উহার পানি ঢাললাম। অমনি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আঙ্গুল সমূহের মধ্য হতে পানি উথলিয়ে উঠছে। অবশেষে পাত্রও উথলিয়ে উঠল এবং ঘুরতে শুরু করল। পরে তা পানিতে ভরপূর হয়ে গেল। তখন আবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ হে জাবির! ঘোষণা দাও, যার যার পানির প্রয়োজন আছে। জাবির (রাযিঃ) বলেন, লোকজন সকলেই আসলো, পানি পান করলো এবং তৃপ্ত হলো। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, পানির প্রযোজন আছে, এমন কোন লোক বাকী রয়েছে কি? অতঃপর পাত্র পানিতে ভরপুর এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাত্র হতে নিজ হাত উত্তোলন করলেন।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট ক্ষুধার ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, অচিরেই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে খাদ্য দান করবেন। অতঃপর আমরা সমুদ্র উপকুলে আসলাম। সমুদ্র তরং্গায়িত হয়ে একটি জন্তু (বিশাল মাছ) আমাদের সম্মুখে নিক্ষেপ করল। আমরা সমুদ্র তীরে আগুন জ্বালিয়ে তা পাকালাম, ভূনা করলাম এবং ভক্ষণ করলাম ও তৃপ্ত হয়ে ভক্ষণ করলাম।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, আমি এবং অমুক অমুক পাঁচ ব্যক্তি এর চোখের গোলাকৃতির মাঝে প্রবেশ করলাম। আমাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছিলোনা। অতঃপর আমরা বের হয়ে এলাম। এরপর এর পাঁজরের হাড়সমূহের একটি হাড় আমরা হাতে নিলাম এবং উহাকে ধনূকের মত বানিয়ে বৃহৎ যীন পরিহিত অবস্থায় কাফেলার সর্ব বৃহৎ উটে আরোহণ করতঃ কাফেলার বৃহদকায় এক ব্যক্তিকে এর তলদেশ দিয়ে প্রবেশ করার জন্য আমরা আহবান জানালাম। সে এর তলদেশ দিয়ে মাথা অবনমিত করা ব্যতিরেকেই প্রবেশ করে চলে গেল।
باب حَدِيثِ جَابِرٍ الطَّوِيلِ وَقِصَّةِ أَبِي الْيَسَرِ
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، - وَتَقَارَبَا فِي لَفْظِ الْحَدِيثِ - وَالسِّيَاقُ لِهَارُونَ قَالاَ حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ مُجَاهِدٍ أَبِي حَزْرَةَ عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الْوَلِيدِ بْنِ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ خَرَجْتُ أَنَا وَأَبِي نَطْلُبُ الْعِلْمَ فِي هَذَا الْحَىِّ مِنَ الأَنْصَارِ قَبْلَ أَنْ يَهْلِكُوا فَكَانَ أَوَّلُ مَنْ لَقِينَا أَبَا الْيَسَرِ صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهُ غُلاَمٌ لَهُ مَعَهُ ضِمَامَةٌ مِنْ صُحُفٍ وَعَلَى أَبِي الْيَسَرِ بُرْدَةٌ وَمَعَافِرِيٌّ وَعَلَى غُلاَمِهِ بُرْدَةٌ وَمَعَافِرِيٌّ فَقَالَ لَهُ أَبِي يَا عَمِّ إِنِّي أَرَى فِي وَجْهِكَ سَفْعَةً مِنْ غَضَبٍ . قَالَ أَجَلْ كَانَ لِي عَلَى فُلاَنِ بْنِ فُلاَنٍ الْحَرَامِيِّ مَالٌ فَأَتَيْتُ أَهْلَهُ فَسَلَّمْتُ فَقُلْتُ ثَمَّ هُوَ قَالُوا لاَ . فَخَرَجَ عَلَىَّ ابْنٌ لَهُ جَفْرٌ فَقُلْتُ لَهُ أَيْنَ أَبُوكَ قَالَ سَمِعَ صَوْتَكَ فَدَخَلَ أَرِيكَةَ أُمِّي . فَقُلْتُ اخْرُجْ إِلَىَّ فَقَدْ عَلِمْتُ أَيْنَ أَنْتَ . فَخَرَجَ فَقُلْتُ مَا حَمَلَكَ عَلَى أَنِ اخْتَبَأْتَ مِنِّي قَالَ أَنَا وَاللَّهِ أُحَدِّثُكَ ثُمَّ لاَ أَكْذِبُكَ خَشِيتُ وَاللَّهِ أَنْ أُحَدِّثَكَ فَأَكْذِبَكَ وَأَنْ أَعِدَكَ فَأُخْلِفَكَ وَكُنْتَ صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكُنْتُ وَاللَّهِ مُعْسِرًا . قَالَ قُلْتُ آللَّهِ . قَالَ اللَّهِ . قُلْتُ آللَّهِ . قَالَ اللَّهِ . قُلْتُ آللَّهِ . قَالَ اللَّهِ . قَالَ فَأَتَى بِصَحِيفَتِهِ فَمَحَاهَا بِيَدِهِ فَقَالَ إِنْ وَجَدْتَ قَضَاءً فَاقْضِنِي وَإِلاَّ أَنْتَ فِي حِلٍّ فَأَشْهَدُ بَصَرُ عَيْنَىَّ هَاتَيْنِ - وَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى عَيْنَيْهِ - وَسَمْعُ أُذُنَىَّ هَاتَيْنِ وَوَعَاهُ قَلْبِي هَذَا - وَأَشَارَ إِلَى مَنَاطِ قَلْبِهِ - رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَقُولُ " مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْهُ أَظَلَّهُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ " . قَالَ فَقُلْتُ لَهُ أَنَا يَا عَمِّ لَوْ أَنَّكَ أَخَذْتَ بُرْدَةَ غُلاَمِكَ وَأَعْطَيْتَهُ مَعَافِرِيَّكَ وَأَخَذْتَ مَعَافِرِيَّهُ وَأَعْطَيْتَهُ بُرْدَتَكَ فَكَانَتْ عَلَيْكَ حُلَّةٌ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ . فَمَسَحَ رَأْسِي وَقَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ فِيهِ يَا ابْنَ أَخِي بَصَرُ عَيْنَىَّ هَاتَيْنِ وَسَمْعُ أُذُنَىَّ هَاتَيْنِ وَوَعَاهُ قَلْبِي هَذَا - وَأَشَارَ إِلَى مَنَاطِ قَلْبِهِ - رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَقُولُ " أَطْعِمُوهُمْ مِمَّا تَأْكُلُونَ وَأَلْبِسُوهُمْ مِمَّا تَلْبَسُونَ " . وَكَانَ أَنْ أَعْطَيْتُهُ مِنْ مَتَاعِ الدُّنْيَا أَهْوَنَ عَلَىَّ مِنْ أَنْ يَأْخُذَ مِنْ حَسَنَاتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ . ثُمَّ مَضَيْنَا حَتَّى أَتَيْنَا جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ فِي مَسْجِدِهِ وَهُوَ يُصَلِّي فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ مُشْتَمِلاً بِهِ فَتَخَطَّيْتُ الْقَوْمَ حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ فَقُلْتُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ أَتُصَلِّي فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَرِدَاؤُكَ إِلَى جَنْبِكَ قَالَ فَقَالَ بِيَدِهِ فِي صَدْرِي هَكَذَا وَفَرَّقَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ وَقَوَّسَهَا أَرَدْتُ أَنْ يَدْخُلَ عَلَىَّ الأَحْمَقُ مِثْلُكَ فَيَرَانِي كَيْفَ أَصْنَعُ فَيَصْنَعُ مِثْلَهُ . أَتَانَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي مَسْجِدِنَا هَذَا وَفِي يَدِهِ عُرْجُونُ ابْنِ طَابٍ فَرَأَى فِي قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ نُخَامَةً فَحَكَّهَا بِالْعُرْجُونِ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَقَالَ " أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يُعْرِضَ اللَّهُ عَنْهُ " . قَالَ فَخَشَعْنَا ثُمَّ قَالَ " أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يُعْرِضَ اللَّهُ عَنْهُ " . قَالَ فَخَشَعْنَا ثُمَّ قَالَ " أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يُعْرِضَ اللَّهُ عَنْهُ " . قُلْنَا لاَ أَيُّنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ يُصَلِّي فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قِبَلَ وَجْهِهِ فَلاَ يَبْصُقَنَّ قِبَلَ وَجْهِهِ وَلاَ عَنْ يَمِينِهِ وَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ تَحْتَ رِجْلِهِ الْيُسْرَى فَإِنْ عَجِلَتْ بِهِ بَادِرَةٌ فَلْيَقُلْ بِثَوْبِهِ هَكَذَا " . ثُمَّ طَوَى ثَوْبَهُ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ فَقَالَ " أَرُونِي عَبِيرًا " . فَقَامَ فَتًى مِنَ الْحَىِّ يَشْتَدُّ إِلَى أَهْلِهِ فَجَاءَ بِخَلُوقٍ فِي رَاحَتِهِ فَأَخَذَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَجَعَلَهُ عَلَى رَأْسِ الْعُرْجُونِ ثُمَّ لَطَخَ بِهِ عَلَى أَثَرِ النُّخَامَةِ . فَقَالَ جَابِرٌ فَمِنْ هُنَاكَ جَعَلْتُمُ الْخَلُوقَ فِي مَسَاجِدِكُمْ . سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ بَطْنِ بُوَاطٍ وَهُوَ يَطْلُبُ الْمَجْدِيَّ بْنَ عَمْرٍو الْجُهَنِيَّ وَكَانَ النَّاضِحُ يَعْتَقِبُهُ مِنَّا الْخَمْسَةُ وَالسِّتَّةُ وَالسَّبْعَةُ فَدَارَتْ عُقْبَةُ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ عَلَى نَاضِحٍ لَهُ فَأَنَاخَهُ فَرَكِبَهُ ثُمَّ بَعَثَهُ فَتَلَدَّنَ عَلَيْهِ بَعْضَ التَّلَدُّنِ فَقَالَ لَهُ شَأْ لَعَنَكَ اللَّهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ هَذَا اللاَّعِنُ بَعِيرَهُ " . قَالَ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " انْزِلْ عَنْهُ فَلاَ تَصْحَبْنَا بِمَلْعُونٍ لاَ تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَلاَ تَدْعُوا عَلَى أَوْلاَدِكُمْ وَلاَ تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ لاَ تُوَافِقُوا مِنَ اللَّهِ سَاعَةً يُسْأَلُ فِيهَا عَطَاءٌ فَيَسْتَجِيبُ لَكُمْ " . سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى إِذَا كَانَتْ عُشَيْشِيَةٌ وَدَنَوْنَا مَاءً مِنْ مِيَاهِ الْعَرَبِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ رَجُلٌ يَتَقَدَّمُنَا فَيَمْدُرُ الْحَوْضَ فَيَشْرَبُ وَيَسْقِينَا " . قَالَ جَابِرٌ فَقُمْتُ فَقُلْتُ هَذَا رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَىُّ رَجُلٍ مَعَ جَابِرٍ " . فَقَامَ جَبَّارُ بْنُ صَخْرٍ فَانْطَلَقْنَا إِلَى الْبِئْرِ فَنَزَعْنَا فِي الْحَوْضِ سَجْلاً أَوْ سَجْلَيْنِ ثُمَّ مَدَرْنَاهُ ثُمَّ نَزَعْنَا فِيهِ حَتَّى أَفْهَقْنَاهُ فَكَانَ أَوَّلَ طَالِعٍ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " أَتَأْذَنَانِ " . قُلْنَا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَأَشْرَعَ نَاقَتَهُ فَشَرِبَتْ شَنَقَ لَهَا فَشَجَتْ فَبَالَتْ ثُمَّ عَدَلَ بِهَا فَأَنَاخَهَا ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْحَوْضِ فَتَوَضَّأَ مِنْهُ ثُمَّ قُمْتُ فَتَوَضَّأْتُ مِنْ مُتَوَضَّإِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَذَهَبَ جَبَّارُ بْنُ صَخْرٍ يَقْضِي حَاجَتَهُ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيُصَلِّيَ وَكَانَتْ عَلَىَّ بُرْدَةٌ ذَهَبْتُ أَنْ أُخَالِفَ بَيْنَ طَرَفَيْهَا فَلَمْ تَبْلُغْ لِي وَكَانَتْ لَهَا ذَبَاذِبُ فَنَكَّسْتُهَا ثُمَّ خَالَفْتُ بَيْنَ طَرَفَيْهَا ثُمَّ تَوَاقَصْتُ عَلَيْهَا ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ ثُمَّ جَاءَ جَبَّارُ بْنُ صَخْرٍ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ جَاءَ فَقَامَ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدَيْنَا جَمِيعًا فَدَفَعَنَا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَرْمُقُنِي وَأَنَا لاَ أَشْعُرُ ثُمَّ فَطِنْتُ بِهِ فَقَالَ هَكَذَا بِيَدِهِ يَعْنِي شُدَّ وَسَطَكَ فَلَمَّا فَرَغَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَا جَابِرُ " . قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " إِذَا كَانَ وَاسِعًا فَخَالِفْ بَيْنَ طَرَفَيْهِ وَإِذَا كَانَ ضَيِّقًا فَاشْدُدْهُ عَلَى حِقْوِكَ " . سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ قُوتُ كُلِّ رَجُلٍ مِنَّا فِي كُلِّ يَوْمٍ تَمْرَةً فَكَانَ يَمَصُّهَا ثُمَّ يَصُرُّهَا فِي ثَوْبِهِ وَكُنَّا نَخْتَبِطُ بِقِسِيِّنَا وَنَأْكُلُ حَتَّى قَرِحَتْ أَشْدَاقُنَا فَأُقْسِمُ أُخْطِئَهَا رَجُلٌ مِنَّا يَوْمًا فَانْطَلَقْنَا بِهِ نَنْعَشُهُ فَشَهِدْنَا أَنَّهُ لَمْ يُعْطَهَا فَأُعْطِيَهَا فَقَامَ فَأَخَذَهَا . سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى نَزَلْنَا وَادِيًا أَفْيَحَ فَذَهَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْضِي حَاجَتَهُ فَاتَّبَعْتُهُ بِإِدَاوَةٍ مِنْ مَاءٍ فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يَرَ شَيْئًا يَسْتَتِرُ بِهِ فَإِذَا شَجَرَتَانِ بِشَاطِئِ الْوَادِي فَانْطَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى إِحْدَاهُمَا فَأَخَذَ بِغُصْنٍ مِنْ أَغْصَانِهَا فَقَالَ " انْقَادِي عَلَىَّ بِإِذْنِ اللَّهِ " . فَانْقَادَتْ مَعَهُ كَالْبَعِيرِ الْمَخْشُوشِ الَّذِي يُصَانِعُ قَائِدَهُ حَتَّى أَتَى الشَّجَرَةَ الأُخْرَى فَأَخَذَ بِغُصْنٍ مِنْ أَغْصَانِهَا فَقَالَ " انْقَادِي عَلَىَّ بِإِذْنِ اللَّهِ " . فَانْقَادَتْ مَعَهُ كَذَلِكَ حَتَّى إِذَا كَانَ بِالْمَنْصَفِ مِمَّا بَيْنَهُمَا لأَمَ بَيْنَهُمَا - يَعْنِي جَمَعَهُمَا - فَقَالَ " الْتَئِمَا عَلَىَّ بِإِذْنِ اللَّهِ " . فَالْتَأَمَتَا قَالَ جَابِرٌ فَخَرَجْتُ أُحْضِرُ مَخَافَةَ أَنْ يُحِسَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقُرْبِي فَيَبْتَعِدَ - وَقَالَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ فَيَتَبَعَّدَ - فَجَلَسْتُ أُحَدِّثُ نَفْسِي فَحَانَتْ مِنِّي لَفْتَةٌ فَإِذَا أَنَا بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُقْبِلاً وَإِذَا الشَّجَرَتَانِ قَدِ افْتَرَقَتَا فَقَامَتْ كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا عَلَى سَاقٍ فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَفَ وَقْفَةً فَقَالَ بِرَأْسِهِ هَكَذَا - وَأَشَارَ أَبُو إِسْمَاعِيلَ بِرَأْسِهِ يَمِينًا وَشِمَالاً - ثُمَّ أَقْبَلَ فَلَمَّا انْتَهَى إِلَىَّ قَالَ " يَا جَابِرُ هَلْ رَأَيْتَ مَقَامِي " . قُلْتُ نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " فَانْطَلِقْ إِلَى الشَّجَرَتَيْنِ فَاقْطَعْ مِنْ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا غُصْنًا فَأَقْبِلْ بِهِمَا حَتَّى إِذَا قُمْتَ مَقَامِي فَأَرْسِلْ غُصْنًا عَنْ يَمِينِكَ وَغُصْنًا عَنْ يَسَارِكَ " . قَالَ جَابِرٌ فَقُمْتُ فَأَخَذْتُ حَجَرًا فَكَسَرْتُهُ وَحَسَرْتُهُ فَانْذَلَقَ لِي فَأَتَيْتُ الشَّجَرَتَيْنِ فَقَطَعْتُ مِنْ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا غُصْنًا ثُمَّ أَقْبَلْتُ أَجُرُّهُمَا حَتَّى قُمْتُ مَقَامَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَرْسَلْتُ غُصْنًا عَنْ يَمِينِي وَغُصْنًا عَنْ يَسَارِي ثُمَّ لَحِقْتُهُ فَقُلْتُ قَدْ فَعَلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَعَمَّ ذَاكَ قَالَ " إِنِّي مَرَرْتُ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ فَأَحْبَبْتُ بِشَفَاعَتِي أَنْ يُرَفَّهَ عَنْهُمَا مَا دَامَ الْغُصْنَانِ رَطْبَيْنِ " . قَالَ فَأَتَيْنَا الْعَسْكَرَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا جَابِرُ نَادِ بِوَضُوءٍ " . فَقُلْتُ أَلاَ وَضُوءَ أَلاَ وَضُوءَ أَلاَ وَضُوءَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا وَجَدْتُ فِي الرَّكْبِ مِنْ قَطْرَةٍ وَكَانَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يُبَرِّدُ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَاءَ فِي أَشْجَابٍ لَهُ عَلَى حِمَارَةٍ مِنْ جَرِيدٍ قَالَ فَقَالَ لِيَ " انْطَلِقْ إِلَى فُلاَنِ بْنِ فُلاَنٍ الأَنْصَارِيِّ فَانْظُرْ هَلْ فِي أَشْجَابِهِ مِنْ شَىْءٍ " . قَالَ فَانْطَلَقْتُ إِلَيْهِ فَنَظَرْتُ فِيهَا فَلَمْ أَجِدْ فِيهَا إِلاَّ قَطْرَةً فِي عَزْلاَءِ شَجْبٍ مِنْهَا لَوْ أَنِّي أُفْرِغُهُ لَشَرِبَهُ يَابِسُهُ . فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَمْ أَجِدْ فِيهَا إِلاَّ قَطْرَةً فِي عَزْلاَءِ شَجْبٍ مِنْهَا لَوْ أَنِّي أُفْرِغُهُ لَشَرِبَهُ يَابِسُهُ قَالَ " اذْهَبْ فَأْتِنِي بِهِ " . فَأَتَيْتُهُ بِهِ فَأَخَذَهُ بِيَدِهِ فَجَعَلَ يَتَكَلَّمُ بِشَىْءٍ لاَ أَدْرِي مَا هُوَ وَيَغْمِزُهُ بِيَدَيْهِ ثُمَّ أَعْطَانِيهِ فَقَالَ " يَا جَابِرُ نَادِ بِجَفْنَةٍ " . فَقُلْتُ يَا جَفْنَةَ الرَّكْبِ . فَأُتِيتُ بِهَا تُحْمَلُ فَوَضَعْتُهَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ فِي الْجَفْنَةِ هَكَذَا فَبَسَطَهَا وَفَرَّقَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ ثُمَّ وَضَعَهَا فِي قَعْرِ الْجَفْنَةِ وَقَالَ " خُذْ يَا جَابِرُ فَصُبَّ عَلَىَّ وَقُلْ بِاسْمِ اللَّهِ " . فَصَبَبْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ بِاسْمِ اللَّهِ . فَرَأَيْتُ الْمَاءَ يَتَفَوَّرُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ فَارَتِ الْجَفْنَةُ وَدَارَتْ حَتَّى امْتَلأَتْ فَقَالَ " يَا جَابِرُ نَادِ مَنْ كَانَ لَهُ حَاجَةٌ بِمَاءٍ " . قَالَ فَأَتَى النَّاسُ فَاسْتَقَوْا حَتَّى رَوَوْا قَالَ فَقُلْتُ هَلْ بَقِيَ أَحَدٌ لَهُ حَاجَةٌ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَهُ مِنَ الْجَفْنَةِ وَهِيَ مَلأَى . وَشَكَا النَّاسُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْجُوعَ فَقَالَ " عَسَى اللَّهُ أَنْ يُطْعِمَكُمْ " . فَأَتَيْنَا سِيفَ الْبَحْرِ فَزَخَرَ الْبَحْرُ زَخْرَةً فَأَلْقَى دَابَّةً فَأَوْرَيْنَا عَلَى شِقِّهَا النَّارَ فَاطَّبَخْنَا وَاشْتَوَيْنَا وَأَكَلْنَا حَتَّى شَبِعْنَا . قَالَ جَابِرٌ فَدَخَلْتُ أَنَا وَفُلاَنٌ وَفُلاَنٌ حَتَّى عَدَّ خَمْسَةً فِي حِجَاجِ عَيْنِهَا مَا يَرَانَا أَحَدٌ حَتَّى خَرَجْنَا فَأَخَذْنَا ضِلَعًا مِنْ أَضْلاَعِهِ فَقَوَّسْنَاهُ ثُمَّ دَعَوْنَا بِأَعْظَمِ رَجُلٍ فِي الرَّكْبِ وَأَعْظَمِ جَمَلٍ فِي الرَّكْبِ وَأَعْظَمِ كِفْلٍ فِي الرَّكْبِ فَدَخَلَ تَحْتَهُ مَا يُطَأْطِئُ رَأْسَهُ .

তাহকীক:
তাহকীক চলমান

বর্ণনাকারী: