আল আনফাল

সূরা নং: ৮, আয়াত নং: ৭২

তাফসীর
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَہَاجَرُوۡا وَجٰہَدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَاَنۡفُسِہِمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَالَّذِیۡنَ اٰوَوۡا وَّنَصَرُوۡۤا اُولٰٓئِکَ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَلَمۡ یُہَاجِرُوۡا مَا لَکُمۡ مِّنۡ وَّلَایَتِہِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ حَتّٰی یُہَاجِرُوۡا ۚ وَاِنِ اسۡتَنۡصَرُوۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ فَعَلَیۡکُمُ النَّصۡرُ اِلَّا عَلٰی قَوۡمٍۭ بَیۡنَکُمۡ وَبَیۡنَہُمۡ مِّیۡثَاقٌ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

উচ্চারণ

ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া হা-জারূ ওয়া জা-হাদূ বিআমওয়া-লিহিম ওয়া আনফুছিহিম ফী ছাবীলিল্লা-হি ওয়াল্লাযীনা আ-ওয়াওঁ ওয়া নাসারূউলাইকা বা‘দুহুম আওলিয়াউ বা‘দিওঁ ওয়াল্লাযীনা আ-মানূওয়া লাম ইউহা-জিরূমা-লাকুম মিওঁ ওয়ালা-ইয়াতিহিম মিন শাইয়িন হাত্তা-ইউহাজিরু ওয়া ইনিছ তানসারূকুম ফিদদীনি ফা‘আলাইকুমুন্নাসরু ইল্লা-‘আলা-কাওমিম বাইনাকুম ওয়াবাইনাহুম মীছা-কুওঁ ওয়াল্লা-হুবিমা-তা‘মালূনা বাসীর।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা (তাদেরকে মদীনায়) আশ্রয় দিয়েছে ও (তাদের) সাহায্য করেছে, তারা পরস্পরে একে অন্যের অলি-ওয়ারিশ। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করেনি, হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের সাথে তোমাদের উত্তরাধিকারের কোনও সম্পর্ক নেই। ৫৩ হাঁ দীনের কারণে তারা তোমাদের সাহায্য চাইলে (তাদেরকে) সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য, অবশ্য (সে সাহায্য) যদি এমন কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হয়, যাদের সঙ্গে তোমাদের কোন চুক্তি আছে, (তবে নয়)। ৫৪ তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ তা ভালোভাবে দেখেন।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৫৩. সূরা আনফালের শেষদিকের এ আয়াতসমূহে মীরাছ সংক্রান্ত কিছু বিধান বর্ণিত হয়েছে। এসব বিধান মক্কা মুকাররমা থেকে মুসলিমদের হিজরতের ফলশ্রুতিতে উদ্ভুত হয়েছিল। এ মূলনীতি তো আল্লাহ তাআলা শুরুতেই স্থির করে দিয়েছিলেন যে, মুসলিম ও কাফের একে অন্যের ওয়ারিশ হতে পারে না। হিজরতের পর অবস্থা এই হয়েছিল যে, যে সকল সাহাবী মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেছিলেন, তাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজন মক্কা মুকাররমায় রয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে এমনও ছিল, যারা ওয়ারিশ হতে পারত। কিন্তু তাদের অধিকাংশ যেহেতু ছিল কাফের, তখনও পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেনি, তাই ঈমান ও কুফরের প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা মুসলিমদের ওয়ারিশ হতে পারেনি। এ আয়াত দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, না তারা মুসলিমদের ওয়ারিশ হতে পারে, আর না মুসলিমগণ তাদের। মুহাজিরদের এমন কিছু আত্মীয়ও ছিল, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল বটে, কিন্তু তারা মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেনি। তাদের সম্পর্কেও এ আয়াত বিধান দিয়েছে যে, মুহাজির মুসলিমদের সঙ্গে তাদেরও উত্তরাধিকার প্রাপ্তির কোনও সূত্র নেই। তার এক কারণ তো এই যে, তখন মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করা সকল মুসলিমের উপর ফরয ছিল। তারা হিজরত করে তখনও পর্যন্ত এ ফরয আদায় করেনি। আর দ্বিতীয় কারণ হল, মুহাজিরগণ ছিলেন মদীনা মুনাওয়ারায়, যা ছিল দারুল ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্র; আর তাদের ওই মুসলিম আত্মীয়গণ ছিলেন মক্কা মুকাররমায়, যা তখন দারুল হারব বা অমুসলিম রাষ্ট্র ছিল এবং উভয়ের মধ্যে বিশাল প্রতিবন্ধক বিদ্যমান ছিল। যা হোক, মুহাজিরগণের যেসব আত্মীয় মক্কা মুকাররমায় ছিল, তারা মুসলিম হোক বা অমুসলিম, তাদের সাথে মুহাজিরদের উত্তরাধিকার সূত্র ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাদের কোনও আত্মীয় যদি মক্কা মুকাররমায় মারা যেত, তবে তার রেখে যাওয়া সম্পদে মুহাজিরদের কোনও অংশ থাকত না। আর যদি কোন মুহাজির মদীনায় মারা যেতেন, তার রেখে যাওয়া সম্পদেও তার মক্কাস্থ কোনও আত্মীয় অংশ লাভ করত না। এদিকে যে সকল মুহাজির মদীনায় চলে এসেছিলেন, মদীনার আনসারগণ তাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি একজন আনসারী সাহাবীর সাথে একেকজন মুহাজির সাহাবীর ভ্রাতৃ-বন্ধন গড়ে দিয়েছিলেন। পরিভাষায় একে ‘মুআখাত’ বলে। এ আয়াতে বিধান দেওয়া হয়েছে যে, এখন প্রত্যেক মুহাজিরের ওয়ারিশ হবে তার মুআখাত ভিত্তিক আনসারী ভাই, মক্কাস্থ আত্মীয়গণ নয়।
সূরা আল আনফাল, আয়াত ১২৩২ | মুসলিম বাংলা