আল মায়িদাহ

সূরা নং: ৫, আয়াত নং: ৪৫

তাফসীর
وَکَتَبۡنَا عَلَیۡہِمۡ فِیۡہَاۤ اَنَّ النَّفۡسَ بِالنَّفۡسِ ۙ وَالۡعَیۡنَ بِالۡعَیۡنِ وَالۡاَنۡفَ بِالۡاَنۡفِ وَالۡاُذُنَ بِالۡاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ ۙ وَالۡجُرُوۡحَ قِصَاصٌ ؕ فَمَنۡ تَصَدَّقَ بِہٖ فَہُوَ کَفَّارَۃٌ لَّہٗ ؕ وَمَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الظّٰلِمُوۡنَ

উচ্চারণ

ওয়া কাতাবনা-‘আলাইহিম ফীহাআন্নান্নাফছা বিন্নাফছি ওয়াল‘আইনা বিলা‘আইনি ওয়াল আনফা বিলআনফি ওয়ালউযুনা বিলউযুনি ওয়াছছিন্না বিছছিন্নি ওয়াল জুরূহা কিসা-সুন ফামান তাসাদ্দাকা বিহী ফাহুওয়া কাফফা-রাতুল্লা-হূ ওয়া মাল্লাম ইয়াহকুম বিমাআনঝালাল্লা-হু ফাউলাইকা হুমুজ্জা-লিমূন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি তাতে (তাওরাতে) তাদের জন্য বিধান লিখে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান ও দাঁতের বদলে দাঁত। আর জখমেও (অনুরূপ) বদলা নেওয়া হবে। অবশ্য যে ব্যক্তি তা (অর্থাৎ বদল) ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা (গুনাহের) কাফফারা হয়ে যাবে। যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালিম। ৪৩

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৪৩. আলোচ্য আয়াতসমূহ যে সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল, তার মধ্যে দ্বিতীয় ঘটনা এই যে, মদীনা মুনাওয়ারায় ইয়াহুদীদের দু’টি গোত্র বাস করত বনু নাযীর ও বনু কুরায়জা। বনু কুরায়জা অপেক্ষা বনু নাযীর বেশী ধনী ছিল। উভয় গোত্র ইয়াহুদী হওয়া সত্ত্বেও বনু নাযীর বনু কুরায়জার আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিল। তারা এই অন্যায় আইন তৈরি করেছিল যে, বনু নাযীরের কেউ যদি বনু কুরায়জার কাউকে হত্যা করে, তবে ‘প্রাণের বদলে প্রাণ’ এই নিয়ম অনুযায়ী হত্যাকারী থেকে কিসাস গ্রহণ করা যাবে না। বরং রক্তপণস্বরূপ সে সত্তর ওয়াসাক খেজুর দেবে। (ওয়াসাক এক রকমের পরিমাপ। এক ওয়াসাকে প্রায় পাঁচ মণ দশ সের হয়।) পক্ষান্তরে বনু কুরায়জার কেউ বনু নাযীরের কাউকে হত্যা করলে, কিসাসস্বরূপ হত্যাকারীকে হত্যা তো করা হবেই, সেই সঙ্গে তার থেকে রক্তপণও নেওয়া হবে এবং তাও দ্বিগুণ। মদীনা মুনাওয়ারায় যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমন হয়, তখন এ জাতীয় একটি ঘটনা ঘটে। বনু কুরায়জার এক ব্যক্তি বনু নাযীরের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে বসল। পূর্ব নিয়ম অনুসারে যখন বনু নাযীর কিসাস ও রক্তপণ উভয়ের দাবী করল, তখন বনু কুরায়জার লোক সে অন্যায় নিয়মের প্রতিবাদ করল এবং তারা প্রস্তাব দিল, এ বিষয়ে ফায়সালার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদালতে মামলা রুজু করা হোক। কেননা এতটুকু কথা তারাও জানত যে, তাঁর দীন ন্যায়নীতির দীন। বনু কুরায়জার পীড়াপীড়ির কারণে শেষ পর্যন্ত বনু নাযীর তাতে রাজি হল। তবে এ কাজে তারা কিছুসংখ্যক মুনাফিককে নিযুক্ত করল। তাদেরকে বলে দিল, তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতামত জানবে। যদি তাঁর রায় বনু নাযীরের অনুকূল হয়, তবে তাঁকে দিয়ে বিচার করাবে। অন্যথায় নয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, তাওরাতে তো স্পষ্টভাবে বিধান দেওয়া হয়েছে যে, প্রাণের বদলে প্রাণ নেওয়া হবে। এ হিসেবে বনু নাযীরের দাবী সম্পূর্ণ জুলুম ও তাওরাত বিরোধী।
﴾﴿