یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُقَدِّمُوۡا بَیۡنَ یَدَیِ اللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
১. সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াত এক বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরবের বিভিন্ন গোত্র থেকে প্রতিনিধি দল আসত। তিনি প্রতিটি প্রতিনিধি দলের একজনকে ভবিষ্যতের জন্য তাদের গোত্রের আমীর বানিয়ে দিতেন। একবার তাঁর কাছে তামীম গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল আসল। তাদের মধ্যে কাকে গোত্রের আমীর বানানো হবে সে সম্পর্কে কোন কথা শুরু না হতেই বা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সম্বন্ধে পরামর্শ চাওয়ার আগেই হযরত আবু বকর সিদ্দীক ও হযরত উমর (রাযি.) নিজেদের পক্ষ হতে প্রস্তাবনা শুরু করে দিলেন। হযরত আবু বকর (রাযি.) এক ব্যক্তির নাম নিয়ে বললেন, তাকে আমীর বানানো হবে আর হযরত উমর (রাযি.) অন্য এক ব্যক্তির পক্ষে রায় দিলেন। তারপর উভয়ে আপন-আপন প্রস্তাবের সপক্ষে এভাবে যুক্তি-তর্ক শুরু করে দিলেন যে, তা কিছুটা বাক-বিতণ্ডার রূপ নিয়ে নিল এবং তাতে উভয়ের আওয়াজও চড়া হয়ে গেল। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম তিন আয়াত নাযিল হয়।
প্রথম আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যেসব বিষয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই কোন সিদ্ধান্ত নেবেন, সেসব বিষয়ে তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত পরামর্শ না চান, ততক্ষণ পর্যন্ত নীরবতা অবলম্বন জরুরী। যদি নিজেরা আগে বেড়ে কোন রায় স্থির করে নেওয়া হয় এবং তার পক্ষে যুক্তি-তর্কের অবতারণা বা তা মানানোর জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়, তবে তা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আদবের খেলাফ কাজ হবে। যদিও প্রথম আয়াতটি এই বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে, কিন্তু এতে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ, যাতে এটা সকলের জন্য একটা মূলনীতি হয়ে যায়। মূলনীতিটির সারকথা হল, কোনও বিষয়েই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আগে বেড়ে যাওয়া কোন মুসলিমের জন্য জায়েয নয়। এমনকি তার সঙ্গে যখন একত্রে চলাফেরা করা হবে, তখনও তার সামনে সামনে হাঁটা যাবে না। তাছাড়া জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি যে সীমারেখা স্থির করে দিয়েছেন তা অতিক্রম করার চেষ্টাও তার সঙ্গে বেয়াদবীর শামিল। কাজেই তা থেকেও বিরত থাকতে হবে। অতঃপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে বসা থাকাকালে নিজ কণ্ঠস্বরকে তাঁর কণ্ঠস্বর অপেক্ষা উঁচু করা উচিত নয় এবং তাঁর সঙ্গে কোন কথা বলতে হলে তাও উঁচু আওয়াজে বলা ঠিক নয়; বরং তাঁর মজলিসে নিজ কণ্ঠস্বর নিচু রাখার চেষ্টা করতে হবে।