یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ جَآءَتۡکُمۡ جُنُوۡدٌ فَاَرۡسَلۡنَا عَلَیۡہِمۡ رِیۡحًا وَّجُنُوۡدًا لَّمۡ تَرَوۡہَا ؕ وَکَانَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرًا ۚ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
১০. এখান থেকে আহযাবের যুদ্ধ বর্ণিত হচ্ছে। ২৭ নং আয়াত পর্যন্ত এ যুদ্ধের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যুদ্ধের ঘটনাটি সংক্ষেপে নিম্নরূপ-
প্রসিদ্ধ ইয়াহুদী গোত্র বনু নাজীরের চক্রান্তে কুরাইশ পৌত্তলিকগণ সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল যে, তারা আরবের বিভিন্ন গোত্রকে একাট্টা করে সকলে যৌথভাবে মদীনা মুনাওয়ারায় হামলা চালাবে। সেমতে কুরাইশ গোত্র ছাড়াও বনু গাতফান, বনু আসলাম, বনু মুররা, বনু আশজা, বনু কিনানা ও বনু ফাযারা এ গোত্রসমূহ সম্মিলিতভাবে এক বিশাল বাহিনী তৈরি করে ফেলল। তাদের সংখ্যা বার হাজার থেকে পনের হাজার পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এই বিপুল সশস্ত্র সেনাদল পূর্ণ প্রস্তুতি সহকারে মদীনা মুনাওয়ারার উদ্দেশে যাত্রা করল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ পাওয়া মাত্র সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে পরামর্শে বসলেন। হযরত সালমান ফারসী (রাযি.) পরামর্শ দিলেন, মদীনা মুনাওয়ারার উত্তর দিকে, যে দিক থেকে হানাদার বাহিনী আসতে পারে, একটি গভীর পরিখা খনন করা হোক, যাতে তারা নগরে প্রবেশ করতে সক্ষম না হয়। সুতরাং সমস্ত সাহাবী কাজে লেগে গেলেন। মাত্র ছয় দিনে তারা সাড়ে তিন মাইল দীর্ঘ ও পাঁচ গজ গভীর একটি পরিখা খনন করে ফেললেন। মুসলিমদের পক্ষে এ যুদ্ধটি পূর্ববর্তী সকল যুদ্ধ অপেক্ষা বেশি কঠিন ছিল। শত্রু সৈন্য ছিল তাদের চার গুণেরও বেশি। আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া স্বরূপ কুখ্যাত ইয়াহুদী গোত্র বনু কুরাইজা সম্পর্কে খবর পাওয়া গেল, তারা মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করে হানাদারদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তারা যেহেতু ছিল মুসলিমদের প্রতিবেশী, তাই তাদের দিক থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা ছিল অনেক বেশি। তখন ছিল প্রচণ্ড শীত কাল। খাদ্য সামগ্রীরও ছিল অভাব। এতটা দীর্ঘ পরিখার খনন কার্যে দিন-রাত ব্যস্ত থাকার দরুণ রোজগারেরও কোন সুযোগ মেলেনি। ফলে খাদ্য সংকট তীব্রাকার ধারণ করল। এ অবস্থায় হানাদার বাহিনী পরিখার কিনারায় এসে শিবির ফেলল। অতঃপর উভয় পক্ষে তীর ও পাথর ছোড়াছুড়ি চলতে থাকল। লাগাতার প্রায় এক মাস এ অবস্থা চলল। রাত-দিন একটানা পাহারা দিতে দিতে মুজাহিদগণ ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। পরিশেষে এক সময় সুদীর্ঘ এ কঠিন পরীক্ষার অবসান হল আর তা এভাবে যে, আল্লাহ তাআলা হানাদারদের ছাউনির উপর দিয়ে এক হিমশীতল তীব্র ঝড়ো হাওয়া বইয়ে দিলেন। তাতে তাদের তাঁবু ছিড়ে গেল, হাড়ি-পাতিল সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল, চুলা নিভে গেল এবং সওয়ারীর পশুগুলো ভয় পেয়ে চারদিকে ছোটাছুটি করতে লাগল। এভাবে তাদের গোটা শিবির জেরবার হয়ে গেল। অগত্যা তাদেরকে অবরোধ ত্যাগ করে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরে যেতে হল। আলোচ্য আয়াতে এই ঝড়ো হাওয়ার কথাই বলা হয়েছে। আয়াতে যে অদৃশ্য সেনাদলের কথা বলা হয়েছে, তা হল ফেরেশতার বাহিনী। তারাই বহুমুখী তৎপরতা দ্বারা শত্রুবাহিনীকে নাকাল করে ফেলেছিল। পরিশেষে তারা সম্পূর্ণ কিংকর্তব্যমিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং উপায়ান্তর না দেখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।