আল আহ্‌যাব

সূরা নং: ৩৩, আয়াত নং: ২৯

তাফসীর
وَاِنۡ کُنۡـتُنَّ تُرِدۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَالدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ فَاِنَّ اللّٰہَ اَعَدَّ لِلۡمُحۡسِنٰتِ مِنۡکُنَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

উচ্চারণ

ওয়া ইন কনতুন্না তুরিদনাল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূওয়াদ্দা-রাল আ-খিরাতা ফাইন্নাল্লা-হা আ‘আদ্দা লিলমুহছিনা-তি মিনকুন্না আজরান ‘আজীমা-।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখেরাতের নিবাস কামনা কর, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীলা, তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। ২৪

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

২৪. এ আয়াতসমূহের পটভূমি এই যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুণ্যবতী স্ত্রীগণ সম্পর্কে সকলেরই জানা তারা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তাঁর প্রতি পরম নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। কোন রকম কষ্টের অভিযোগ তাদের মুখে কখনও উচ্চারিত হয়নি। আহযাব ও বনু কুরাইজার যুদ্ধের পর কেবল এতটুকু ঘটেছিল যে, এসব যুদ্ধ জয়ের ফলে যখন মুসলিমদের কিছুটা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ হল, তখন উম্মত মাতাদের অন্তরে খেয়াল জাগল, এতদিন তারা যে দৈন্যদশার ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন, এখন তার ভেতর কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। সুতরাং একবার তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে বিষয়টা উত্থাপনও করলেন। কথা প্রসঙ্গে তারা কায়সার ও কিসরার রাণীদের উদাহরণও টানলেন যে, তারা কতটা জাঁকজমকপূর্ণ জীবন যাপন করে এবং তাদের প্রত্যেকের কত সেবক-সেবিকা রয়েছে। এখন যখন মুসলিমদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসে গেছে, তখন আমাদের খোরপোষও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও নবী-পত্নীদের অন্তরে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের এতটুকু চাহিদা জাগা কোন গুনাহের বিষয় ছিল না, কিন্তু শ্রেষ্ঠতম নবীর জীবনসঙ্গিনী হওয়ার সুবাদে তারা যে উচ্চতর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এরূপ চাহিদা পেশকে তাদের পক্ষে শোভন মনে করা হয়নি। সেই সঙ্গে রাজা-রাণীদের উদাহরণ টানায়ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনে কষ্ট লেগে থাকবে যে, তারা নিজেদেরকে রাণীদের সঙ্গে তুলনা করার মত অমর্যাদাকর উক্তি কেন করলেন। এ প্রেক্ষাপটেই আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের এ আয়াতসমূহ দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশনা দান করলেন যে, আপনি আপনার স্ত্রীগণকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন, তারা যদি নবীর সঙ্গে থাকতে চায়, তবে তাদের জীবনদৃষ্টির পরিবর্তন করতে হবে। অন্যান্য নারীদের মত দুনিয়ার ডাটফাট যেন তাদের লক্ষ্যবস্তু না হয়; বরং তাদের লক্ষ্যবস্তু থাকতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং তার ফলশ্রুতিতে আখেরাতের সফলতা। সেই সঙ্গে তাদের সামনে এ বিষয়টাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, তারা যদি দুনিয়ায় ভোগ-সামগ্রী কামনা করে তবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পূর্ণ এখতিয়ার তাদের রয়েছে। আর তারা তা চাইলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম যে তাদেরকে তিক্ততার সাথে বিদায় দেবেন তা নয়; বরং সুন্নত মোতাবেক উপঢৌকনাদি দিয়ে অত্যন্ত সৌজন্যের সাথেই তাদেরকে বিদায় দেবেন। সুতরাং এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ স্ত্রীগণের সামনে এ প্রস্তাবনা রাখলেন, কিন্তু তারাও তো ছিলেন নবী-পত্নী। নবীর নুরানী সান্নিধ্যে থেকে থেকে ইতোমধ্যেই তো পার্থিব মোহমুক্তি তাদের অর্জিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলার ও তাঁর নবীর মহব্বতে তাদের অন্তর ছিল প্লাবিত। কাজেই তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যে থাকাকেই প্রাধান্য দিলেন আর সেজন্য যত দৈন্য ও দুঃখের সম্মুখীন হতে হোক না কেন তাকে তারা তুচ্ছ গণ্য করলেন।
﴾﴿