وَوَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ ۚ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ وَہۡنًا عَلٰی وَہۡنٍ وَّفِصٰلُہٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَلِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৮. হযরত লুকমানের উপদেশমালার মাঝখানে এটা একটা অন্তবর্তী বাক্য। এতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বিশেষভাবে পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিরক পরিহারের নির্দেশের সাথে এর সম্পর্ক এই যে, হযরত লুকমান তো নিজ পুত্রকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার ও তাওহীদকে আঁকড়ে ধরার উপদেশ দিচ্ছিলেন, অপর দিকে মক্কা মুকাররমার মুশরিকগণ হযরত লুকমানকে একজন মহাজ্ঞানী লোক হিসেবে স্বীকার করা সত্ত্বেও, যখন তাদের সন্তানগণ তাওহীদী আকীদা অবলম্বন করল, তখন তারা তাদেরকে তা থেকে ফেরানোর এবং পুনরায় শিরকে লিপ্ত করার জন্য জোরদার চেষ্টা করছিল। তাদের মুমিন সন্তানগণ এক্ষেত্রে পিতা-মাতার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করবে তা নিয়ে বেজায় পেরেশান ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত দ্বারা তাদেরকে পথনির্দেশ করছেন যে, আমিই মানুষকে আদেশ করেছি, তারা যেন আল্লাহ তাআলার সাথে তাদের পিতা-মাতারও শুকর আদায় করে। কেননা যদিও তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কিন্তু বাহ্যিক কারণ হিসেবে তাদের দুনিয়ায় আগমনের পেছনে পিতা-মাতার ভূমিকাই প্রধান। পিতা-মাতার মধ্যেও আবার বিশেষভাবে মায়ের কষ্ট-মেহনতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। মা কতই না কষ্টের সাথে তাকে নিজ গর্ভে ধারণ করে রাখে। তারপর একটানা দু’বছর তাকে দুধ পান করায়। বলাবাহুল্য শিশুর লালন-পালনের সুদীর্ঘ সময়ের ভেতর দুধ পানের সময়টাই মায়ের জন্য বেশি কষ্ট-ক্লেশের হয়ে থাকে। এসব কারণে মা’ই সন্তানের পক্ষ হতে সদ্ব্যবহারের বেশি হকদার হয়ে থাকে। কিন্তু এই সদ্ব্যবহারের অর্থ এ নয় যে, মানুষ তার দীন ও ঈমানের প্রশ্নে আল্লাহ তাআলার হুকুমকে পাশ কাটিয়ে পিতা-মাতার হুকুম মানতে শুরু করে দেবে। এ বিষয়টা স্মরণে রাখার জন্যই আয়াতে পিতা-মাতার শুকর আদায়ের নির্দেশ দেওয়ার আগে আল্লাহ তাআলার শুকর আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা পিতা-মাতা তো এক বাহ্যিক ‘কারণ’ ও মাধ্যম মাত্র। মানুষের প্রতিপালনের ব্যবস্থা হিসেবে এ কারণ আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃত স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তাআলাই। কাজেই এই বাহ্যিক কারণ ও মাধ্যমের গুরুত্ব কখনওই প্রকৃত স্রষ্টা ও আসল প্রতিপালকের গুরুত্ব অপেক্ষা বেশি হতে পারে না।