আ-লু ইমরান

সূরা নং: ৩, আয়াত নং: ৯৯

তাফসীর
قُلۡ یٰۤاَہۡلَ الۡکِتٰبِ لِمَ تَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ مَنۡ اٰمَنَ تَبۡغُوۡنَہَا عِوَجًا وَّاَنۡتُمۡ شُہَدَآءُ ؕ وَمَا اللّٰہُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ

উচ্চারণ

কুল ইয়াআহলাল কিতা-বি লিমা তাসুদ্দূনা ‘আন ছাবীলিল্লা-হি মান আ-মানা তাবগূনাহা ‘ইওয়াজাওঁ ওয়া আনতুম শুহাদাউ ওয়ামাল্লা-হু বিগা-ফিলিন ‘আম্মা-তা‘মালূন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, হে কিতাবীগণ! মুমিনদেরকে আল্লাহর পথে বাধা দিচ্ছ কেন তাতে বক্রতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, অথচ তোমরা নিজেরাই (প্রকৃত অবস্থার) সাক্ষী? ৪৮ তোমরা যা-কিছু করছ, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৪৮. এখান থেকে ১০৮ নং পর্যন্ত আয়াতসমূহ একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। মদীনা মুনাওয়ারায় আউস ও খাযরাজ নামে দু’টো গোত্র বাস করত। প্রাক-ইসলামী যুগে এ দুই গোত্রের মধ্যে প্রচণ্ড শত্রুতা ছিল। তাদের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে থাকত। সেসব যুদ্ধ কখনও বছরের পর বছর স্থায়ী হত। গোত্র দু’টি যখন ইসলাম গ্রহণ করল তখন ইসলামের বরকতে তাদের পারস্পরিক শত্রুতা খতম হয়ে গেল এবং তারা পরস্পরে পরম বন্ধু ও ভাই-ভাই হয়ে গেল। তাদের এ ঐক্য ইয়াহুদীদের পক্ষে চোখের কাঁটায় পরিণত হল। একবার উভয় গোত্রের লোক একটি মজলিসে বসা ছিল। শাম্মাস ইবনে কায়স নামক এক ইয়াহুদী যখন তাদের সে সম্প্রীতিপূর্ণ দৃশ্য দেখল, তখন তার গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেল। সে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টির পাঁয়তারা করল এবং সেই লক্ষ্যে এই কৌশল অবলম্বন করল যে, এক ব্যক্তিকে বলল, জাহিলী যুগে আউস ও খাযরাজের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ‘বু‘আছ’-এর যুদ্ধ চলাকালে উভয় পক্ষের কবিগণ পরস্পরের বিরুদ্ধে যেসব কবিতা পাঠ করত, তুমি ওই মজলিসে গিয়ে তা আবৃত্তি কর। সেই ব্যক্তি গিয়ে তা আবৃত্তি করতে শুরু করল। তা শোনামাত্র পুরানো ঘা তাজা হয়ে উঠল। প্রথম দিকে উভয় পক্ষে কথা কাটাকাটি চলল। ক্রমে তা বিবাদে রূপ নিল এবং নতুনভাবে আবার যুদ্ধের দিন-ক্ষণ স্থির হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। ইত্যবসরে বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে গেল। তিনি ভীষণ দুঃখ পেলেন। দ্রুত সেখানে চলে আসলেন এবং তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, এটা এক শয়তানী চাল। পরিশেষে তাঁর বোঝানো-সমঝানোর ফলে সে ফিতনা খতম হয়ে গেল। আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা প্রথমে তো ইয়াহুদীদেরকে সম্বোধন করে বলছেন, প্রথমত তোমাদের নিজেদেরই তো ঈমান আনা উচিত। আর যদি নিজেরা সে সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হও, তবে অন্ততপক্ষে যে সকল লোক ঈমান এনেছে তাদের ঈমানের পথে অন্তরায় সৃষ্টি হতে তো ক্ষান্ত থাক। অতঃপর মুমিনদেরকে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় উপদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা ইয়াহুদীদের কথায় কর্ণপাত করো না। তাহলে তারা তোমাদেরকে ঈমানের আলো থেকে কুফরের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে। বরং তোমাদের সামনে আল্লাহর যে আয়াত পাঠ করা হয় তার অনুসরণ কর। আল্লাহর দীন ও তাঁর কিতাবকে আঁকড়ে ধর, মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের অনুশাসন মেনে চল ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ রেখে নিজেদের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখ। সবশেষে আত্মকলহ থেকে বাঁচার জন্য এই ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে যে, নিজেদেরকে দীনের তাবলীগ ও প্রচার কার্যে নিয়োজিত রাখ। তাতে যেমন ইসলাম প্রচার লাভ করবে, সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে সংহতিও গড়ে ওঠবে।
﴾﴿