আলে ইমরান

সূরা নং: ৩, আয়াত নং: ৯৩

তাফসীর
کُلُّ الطَّعَامِ کَانَ حِلًّا لِّبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اِلَّا مَا حَرَّمَ اِسۡرَآءِیۡلُ عَلٰی نَفۡسِہٖ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تُنَزَّلَ التَّوۡرٰىۃُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِالتَّوۡرٰىۃِ فَاتۡلُوۡہَاۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ

উচ্চারণ

কুলুত্তা‘আ-মি কা-না হিল্লাল লিবানীইছরাঈলা ইল্লা-মা-হাররামা ইসরাঈলু‘আলানাফছিহী মিন কাবলি আন তুনাঝঝালাত তাওরা-তু কুল ফা’তূ বিত্তাওরা-তি ফাতলূহাইন কুনতুম সা-দিকীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

তাওরাত নাযিল হওয়ার আগে বনী ইসরাঈলের জন্য (-ও) সমস্ত খাদ্যদ্রব্য হালাল ছিল (-যা মুসলিমদের জন্য হালাল), কেবল সেই বস্তু ছাড়া, যা ইসরাঈল (অর্থাৎ ইয়াকুব আলাইহিস সালাম) নিজের জন্য হারাম করেছিল। (হে নবী! ইয়াহুদীদেরকে) বলে দাও, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তা পাঠ করো। ৪৬

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৪৬. ইয়াহুদীরা মুসলিমদের উপর আপত্তি তুলত যে, তোমরা নিজেদেরকে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী বলে দাবী কর, অথচ তোমরা উটের গোশত খাও? যা তাওরাতের দৃষ্টিতে হারাম। এ আয়াতে তার জবাব দেওয়া হয়েছে যে, উটের গোশত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দীনে হারাম ছিল না; বরং যে সকল জিনিস মুসলিমদের জন্য হালাল, তাওরাত নাযিল হওয়ার আগে তার সবই বনী ইসরাঈলের জন্যও হালাল ছিল। অবশ্য একথা ঠিক যে, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম নিজের জন্য উটের গোশত হারাম করেছিলেন। আর তার কারণ হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী এই ছিল যে, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম সায়্যাটিকা (ইরকুন নাসা) রোগে ভুগছিলেন। তাই তিনি মানত করেছিলেন, এ রোগ থেকে মুক্তি লাভ করলে আমি আমার প্রিয় খাদ্য ত্যাগ করব। উটের গোশত ছিল তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় খাবার। তাই আরোগ্য লাভের পর তিনি তা ছেড়ে দেন (রুহুল মাআনী, মুস্তাদরাক হাকিমের বরাতে, এর সনদ সহীহ)। পরবর্তীকালে বনী ইসরাঈলের জন্যও উটের গোশত হারাম করা হয়েছিল কি না, সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদ স্পষ্ট ভাষায় কিছু বলেনি। তবে সূরা নিসায় (৪ : ১৬০) আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি বনী ইসরাঈলের প্রতি তাদের নাফরমানীর কারণে বহু উৎকৃষ্ট জিনিস হারাম করে দিয়েছিলেন। আর এ সূরারই ৫০ নং আয়াতে গত হয়েছে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলকে বলেছিলেন, ‘আমার পূর্বে যে কিতাব নাযিল হয়েছে, আমি তার সমর্থক। আর (আমাকে এজন্য পাঠানো হয়েছে) যাতে আমি তোমাদের প্রতি যেসব বস্তু হারাম করা হয়েছিল, তন্মধ্যে কতক হালাল করে দেই’। তাছাড়া এস্থলে ‘তাওরাত নাযিল হওয়ার আগে’ কথাটি দ্বারাও বোঝা যায় যে, সম্ভবত তাওরাত নাযিলের পর উটের গোশত তাদের জন্য হারাম করা হয়েছিল। অতঃপর তাদেরকে যে চ্যালেঞ্জ করা হল ‘তোমরা সত্যবাদী হলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তা পাঠ করো’, এর অর্থ তাওরাতের কোথাও একথার উল্লেখ নেই যে, উটের গোশত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকেই হারাম হিসেবে চলে এসেছে। বরং বিষয়টি এর বিপরীত। এটা কেবল বনী ইসরাঈলের জন্যই হারাম করা হয়েছিল। এখনও বাইবেলের ‘লেবীয়’ পুস্তিকা, যা ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের মতে বাইবেলের অংশ, তাতে বনী ইসরাঈলের প্রতি উটের গোশত খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলকে বল, তোমরা এ পশু খেয়ো না, অর্থাৎ উট... এটা তোমাদের পক্ষে অপবিত্র (লেবীয় : ১১:১-৪)। সারকথা এই যে, উটের গোশত মৌলিকভাবে হালাল। কেবল হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের জন্য তাঁর মানতের কারণে আর বনী ইসরাঈলের জন্য তাদের নাফরমানীর কারণে হারাম করা হয়েছিল। এখন উম্মতে মুহাম্মাদীকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের মূল বিধান ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।