আ-লু ইমরান

সূরা নং: ৩, আয়াত নং: ২৮

তাফসীর
لَا یَتَّخِذِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡکٰفِرِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَمَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَلَیۡسَ مِنَ اللّٰہِ فِیۡ شَیۡءٍ اِلَّاۤ اَنۡ تَتَّقُوۡا مِنۡہُمۡ تُقٰىۃً ؕ وَیُحَذِّرُکُمُ اللّٰہُ نَفۡسَہٗ ؕ وَاِلَی اللّٰہِ الۡمَصِیۡرُ

উচ্চারণ

লা-ইয়াত্তাখিযিল মু’মিনূনাল কা-ফিরীনা আওলিয়াআ মিন দূ নিল মু’মিমীনা ওয়া মাইঁ ইয়াফ‘আল যা-লিকা ফালাইছা মিনাল্লা-হি ফী শাইইন ইল্লাআন তাত্তাকূমিনহুম তুকা-তাওঁ ওয়া ইউহাযযিরুকুমুল্লা-হু নাফছাহূ ওয়া ইলাল্লা-হিল মাসীর।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

মুমিনগণ যেন মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে (নিজেদের) মিত্র না বানায়। যে এরূপ করবে আল্লাহর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তাদের (জুলুম) থেকে বাঁচার জন্য যদি আত্মরক্ষামূলক কোনও পন্থা অবলম্বন কর, ১১ সেটা ভিন্ন কথা। আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ (শাস্তি) সম্পর্কে সাবধান করছেন আর তাঁরই দিকে (সকলকে) ফিরে যেতে হবে।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

১১. ،ولى (বহুবচনে اولياء)-এর অর্থ করা হয়েছে ‘মিত্র ও সাহায্যকারী’। ওলী বা মিত্র বানানোকে ‘মুওয়ালাত’-ও বলা হয়। এর দ্বারা এমন বন্ধুত্ব ও আন্তরিক ভালোবাসাকে বোঝানো হয়, যার ফলে দু’জন লোকের জীবনের লক্ষ্য ও লাভ-লোকসান অভিন্ন হয়ে যায়। মুসলিমদের এ জাতীয় সম্পর্ক কেবল মুসলিমদের সাথেই হতে পারে। অমুসলিমদের সাথে এরূপ সম্পর্ক স্থাপন কঠিন পাপ। এ আয়াতে কঠোরভাবে তা নিষেধ করা হয়েছে। এই একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সূরা নিসা ( ৪ : ১৩৯, ১৪৪), সূরা মায়েদা (৫ : ৫১, ৫৭, ৮১), সূরা তাওবা (৯ : ২৩), সুরা মুজাদালা (৫৮ : ২২) ও সূরা মুমতাহিনায় (৬০ : ১)। অবশ্য যে অমুসলিম যুদ্ধরত নয়, তার সাথে সদাচরণ, সৌজন্যমূলক ব্যবহার ও তার কল্যাণ কামনা করা কেবল জায়েযই নয়, বরং এটাই কাম্য। যেমন কুরআন মাজীদেই সূরা মুমতাহানায় (৬০ : ৮) পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। গোটা জীবনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নীতি এটাই ছিল যে, এরূপ লোকদের সাথে তিনি সর্বদা সদয় আচরণ করেছেন। এমনিভাবে অমুসলিমদের সাথে এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতামূলক চুক্তি বা ব্যবসায়িক কারবারও করা যেতে পারে, যাকে অধূনা পরিভাষায় ‘মৈত্রী চুক্তি’ বলে। শর্ত হচ্ছে এরূপ চুক্তি ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থবিরোধী হতে পারবে না এবং তাতে শরীয়তের পরিপন্থী কোন কর্মপন্থাও অবলম্বন করা যাবে না। খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরে সাহাবায়ে কিরাম এরূপ কারবার ও চুক্তি সম্পাদন করেছেন। কুরআন মাজীদ অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকে নিষেধ করে দেওয়ার পর যে ইরশাদ করেছে, ‘তবে তাদের (জুলুম) থেকে বাঁচার জন্য আত্মরক্ষামূলক কোন পন্থা অবলম্বন করলে সেটা ভিন্ন কথা’, এর অর্থ কাফিরদের জুলুম ও নিপীড়ন থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে যদি এমন কোন পন্থা অবলম্বন করতে হয়, যা দ্বারা বাহ্যত মনে হয় তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা হয়েছে, তবে তা করার অবকাশ আছে।
﴾﴿