আ-লু ইমরান

সূরা নং: ৩, আয়াত নং: ১৭৩

তাফসীর
اَلَّذِیۡنَ قَالَ لَہُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدۡ جَمَعُوۡا لَکُمۡ فَاخۡشَوۡہُمۡ فَزَادَہُمۡ اِیۡمَانًا ٭ۖ وَّقَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰہُ وَنِعۡمَ الۡوَکِیۡلُ

উচ্চারণ

আল্লাযীনা কা-লা লাহুমুন্না-ছুইন্নান্না-ছা কাদ জামা‘ঊ লাকুম ফাখশাওহুম ফাঝা-দাহুম ঈমা-নাওঁ ওয়া কা-লূহাছবুনাল্লা-হু ওয়ানিমা‘ল ওয়াকীল।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

যাদেরকে লোকে বলেছিল, (মক্কার কাফির) লোকেরা তোমাদের (সাথে যুদ্ধ করার) জন্য (পুনরায়) সেনা সংগ্রহ করেছে, সুতরাং তাদেরকে ভয় কর। তখন এটা (এই সংবাদ) তাদের ঈমানের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তারা বলে ওঠে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক। ৭৭

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৭৭. মক্কার কাফিরগণ উহুদের যুদ্ধ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় রাস্তায় এই বলে পস্তাতে লাগল যে, যুদ্ধে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আমরা অহেতুক ফিরে আসলাম। আমরা আরেকটু অগ্রসর হলে তো সমস্ত মুসলিমকেই নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারতাম। এই চিন্তা করে তারা পুনরায় মদীনা মুনাওয়ারার দিকে অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা করল। অন্য দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্ভবত তাদের এ ইচ্ছা সম্পর্কে অবহিত হয়ে অথবা উহুদ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের ইচ্ছায় পর দিন ভোরে ঘোষণা করে দিলেন যে, আমরা শত্রুর পশ্চাদ্ধাবনের উদ্দেশ্যে বের হব আর এতে আমাদের সঙ্গে কেবল তারাই যাবে, যারা উহুদের যুদ্ধে শরীক ছিল। সাহাবায়ে কেরাম যদিও উহুদের যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত ও ক্লান্ত-শ্রান্ত ছিলেন, কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ডাকে সাড়া দিতে তারা এক মুহূর্ত দেরি করলেন না। এ আয়াতে তাদের সে আত্মোৎসর্গেরই প্রশংসা করা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ‘হামরাউল আসাদ’ নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে বনু খুযাআর এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়। তার নাম ছিল মা‘বাদ। কাফির হওয়া সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল। এ সময় মুসলিমদের উদ্যম ও সাহসিকতা তার নজর কাড়ে। অতঃপর সে আরও সামনে অগ্রসর হলে আবু সুফিয়ানসহ অন্যান্য কুরাইশ নেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাত হল। তখন সে তাদেরকে মুসলিম সৈন্যদের উদ্দীপনা ও সাহসিকতার কথা জানাল এবং পরামর্শ দিল যে, তাদের উচিত মদীনায় গিয়ে হামলা করার পরিকল্পনা ত্যাগ করে মক্কায় ফিরে যাওয়া। এতে কাফিরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার হল। ফলে তারা ওয়াপস চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার সময় তারা আবদুল কায়স গোত্রের মদীনাগামী এক কাফেলাকে বলে গেল যে, পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তাদের সাক্ষাত হলে যেন জানিয়ে দেয়, আবু সুফিয়ান এক বিশাল বাহিনী সংগ্রহ করেছে এবং সে মুসলিমদের নিপাত করার জন্য মদীনার দিকে এগিয়ে আসছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করা। সেমতে এ কাফেলা হামরাউল আসাদে পৌঁছে যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাত পেল তখন তাঁকে একথা বলল। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম তাতে ভয় তো পেলেনই না, উল্টো তাঁরা তাদের ঈমানদীপ্ত সেই কথা শুনিয়ে দিলেন, যা প্রশংসার সাথে আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
﴾﴿