وَلَا تَہِنُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৬০. উহুদ যুদ্ধের ঘটনা সংক্ষেপে এ রকম প্রথম দিকে মুসলিমগণ হানাদার কাফিরদের উপর জয়লাভ করেছিল এবং কাফির বাহিনী পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পঞ্চাশ জন তীরন্দাজ সৈন্যের একটি দলকে একটি টিলায় নিযুক্ত করেছিলেন। যাতে শত্রু বাহিনী পেছন দিক থেকে আক্রমণ করতে না পারে। যখন শত্রুরা পলায়ন করতে শুরু করল এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র শূন্য হয়ে গেল, তখন সাহাবীগণ তাদের ফেলে যাওয়া মালামাল গনীমতরূপে কুড়াতে শুরু করলেন। তীরন্দাজ বাহিনী যখন দেখলেন শত্রুরা পলায়ন করেছে তখন তারা মনে করলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে এবং এখন আমাদেরও গনীমত কুড়ানোর কাজে লেগে যাওয়া উচিত। তাদের নেতা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রাযি.) এবং তাঁর আরও কিছু সঙ্গী ঘাঁটি ত্যাগ করার বিরোধিতা করলেন এবং সকলকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, তিনি আমাদেরকে সর্বাবস্থায় এ টিলায় অবস্থানরত থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই সে স্থলে অবস্থান করাকে অর্থহীন মনে করলেন এবং তারা ঘাঁটি ত্যাগ করলেন। শত্রুরা দূর থেকে যখন দেখল, সে জায়গা খালি হয়ে গেছে এবং মুসলিমগণ গনীমতের মালামাল কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, তখন তারা সে সুযোগকে কাজে লাগাল এবং ক্ষিপ্রগতিতে সেই ঘাঁটিতে হামলা চালাল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রাযি.) ও তাঁর সাথীগণ তাদের সাধ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে থাকলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সকলেই শহীদ হয়ে গেলেন। অতঃপর শত্রুগণ সেই টিলা থেকে নেমে আসল এবং যে সকল মুসলিম গনীমত কুড়াচ্ছিল তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালাল। তাদের এ আক্রমণ এমনই অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিক ছিল যে, মুসলিমদের পক্ষে তা প্রতিহত করা সম্ভব হল না। মুহূর্তের মধ্যে রণ পরিস্থিতি পাল্টে গেল। ঠিক এই সময়ে কেউ গুজব রটিয়ে দিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহীদ হয়ে গেছেন। এ গুজবে বহু মুসলিমের মনোবল ভেঙ্গে পড়ল। তাদের মধ্যে কতক তো ময়দান ত্যাগ করলেন এবং কতক যুদ্ধ ছেড়ে দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিন্তু যে সকল উৎসর্গিতপ্রাণ সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলেন, তাঁর চারপাশে অবিচল থেকে মুকাবিলা করতে থাকলেন। কাফিরদের আক্রমণ এতটাই তীব্র ছিল যে, এক পর্যায়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দাঁত শহীদ হয়ে গেল এবং মুবারক চেহারা রক্ত-রঞ্জিত হয়ে গেল। একটু পরেই অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম বুঝতে পারলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শহীদ হওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব। তখন তাদের হুঁশ ফিরে আসল এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই তাদের অধিকাংশ ময়দানে ফিরে আসলেন। অতঃপর কাফিরদেরকে আবারও পলায়ন করতে হল। কিন্তু মধ্যবর্তী এই সময়ের ভেতর সত্তরজন সাহাবী শাহাদত বরণ করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনায় সাবাহীবগণ ভীষণভাবে মর্মাহত হয়ে পড়েছিলেন। তাই কুরআন মাজীদের এ আয়াতসমূহ তাদেরকে সান্তনা দিচ্ছে যে, এটা কেবল কালের চড়াই-উতরাই। এতে হতাশ ও হতোদ্যম হওয়া উচিত নয়। সেই সঙ্গে আয়াতসমূহ এদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে যে, সাময়িক এ পরাজয় ছিল তাদের কিছু ভুলেরই খেসারত। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন।