আন নূর

সূরা নং: ২৪, আয়াত নং: ১১

তাফসীর
اِنَّ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ بِالۡاِفۡکِ عُصۡبَۃٌ مِّنۡکُمۡ ؕ لَا تَحۡسَبُوۡہُ شَرًّا لَّکُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ لِکُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡہُمۡ مَّا اکۡتَسَبَ مِنَ الۡاِثۡمِ ۚ وَالَّذِیۡ تَوَلّٰی کِبۡرَہٗ مِنۡہُمۡ لَہٗ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

উচ্চারণ

ইন্নাল্লাযীনা জাঊ বিলইফকি ‘উসবাতুম মিনকুম লা তাহছাবূহু শাররাল্লাকুম বাল হুওয়া খাইরুল লাকুম লিকুল্লিমরিয়িম মিনহুম মাকতাছাবা মিনাল ইছমি ওয়াল্লাযী তাওয়াল্লা-কিবরাহূমিনহুম লাহূ‘আযা-বুন ‘আজীম।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই, যারা এই মিথ্যা অপবাদ রচনা করে এনেছে তারা তোমাদেরই মধ্যকার একটি দল। তোমরা একে তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। ১০ তাদের প্রত্যেকের ভাগে রয়েছে নিজ কৃতকর্মের গুনাহ। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এর (অর্থাৎ এ অপবাদের) ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি। ১১

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৯. এখান থেকে ২৬ নং পর্যন্ত আয়াতসমূহে যে ঘটনার প্রতি ইশারা, তার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ, মদীনা মুনাওয়ারায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের পর ইসলামের ক্রমবিস্তারে যে গতি সঞ্চার হয়, তা দেখে কুফরী শক্তি ক্ষোভে-আক্রোশে দাঁত কিড়মিড় করছিল। কাফেরদের মধ্যে একদল ছিল মুনাফেক, যারা মুখে মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তাদের অন্তর ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্বেষে ভরা। তাদের সার্বক্ষণিক চেষ্টা ছিল কিভাবে মুসলিমদের বদনাম করা যায় এবং কি উপায়ে তাদেরকে উত্যক্ত করা যায়। খোদ মদীনা মুনাওয়ারার ভেতরই তাদের একটি বড়সড় দল বাস করত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনুল মুস্তালিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালান তখন তাদের একটি দলও সে অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা এ যুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। অভিযান থেকে ফেরার পথে এক জায়গায় শিবির ফেলা হয়েছিল। সেখানে হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহার হার হারিয়ে যায়। তিনি তার খোঁজে শিবিরের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানা ছিল না। তিনি সৈন্যদেরকে রওয়ানা হওয়ার হুকুম দিলেন। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা ফিরে এসে দেখেন কাফেলা চলে গেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ সংযম শক্তি দিয়েছিলেন। তিনি অস্থির হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি না করে সেখানেই বসে থাকলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন টের পাবেন তিনি কাফেলায় নেই, তখন হয় নিজেই তাঁর খোঁজে এখানে আসবেন অথবা অন্য কাউকে পাঠাবেন। তাছাড়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল এক ব্যক্তিকে কাফেলার পিছনে রেখে আসা। কাফেলা চলে যাওয়ার পর কোন কিছু থেকে গেল কি না তা সেই ব্যক্তি দেখে আসত। এ কাফেলায় এ কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল হযরত সাফওয়ান ইবন মুআত্তাল রাযিয়াল্লাহু আনহুকে। তিনি খোঁজ নিতে গিয়ে যখন হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা যেখানে ছিলেন, সেখানে পৌঁছলেন তখন কী দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তা বুঝে ফেললেন। কালবিলম্ব না করে নিজের উটটি হযরত উম্মুল মুমিনীনের সামনে পেশ করলেন। তাতে সওয়ার হয়ে তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় পৌঁছলেন। মুনাফিকদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবন উবাই যখন এ ঘটনা জানতে পারল সে তিলকে তাল করে প্রচার করতে লাগল এবং আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় এ মায়ের প্রতি এমন ন্যাক্কারজনক অপবাদ দিল, যা কোন আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মুসলিমের পক্ষে উচ্চারণ করাও কঠিন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এ অপবাদকে এতটাই প্রসিদ্ধ করে তুলল যে, জনা কয়েক সরলমতি মুসলিমও তার প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গেল। মুনাফিক শ্রেণী বেশ কিছুদিন এই মাথামু-হীন বিষয় নিয়ে মেতে রইল এবং মদীনা মুনাওয়ারার শান্তিময় পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলল। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা সূরা নূরের এ আয়াতসমূহ নাযিল করলেন। এর দ্বারা এক দিকে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযিয়াল্লাহু আনহার চারিত্রিক নির্মলতার পক্ষে ঐশী সনদ দিয়ে দেওয়া হল, অন্যদিকে যারা চক্রান্তটির রুই-কাতলা ছিল তাদেরকে জানানো হল কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারী বার্তা।
﴾﴿