অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আল্লাহর হুকুমে তারা তাদেরকে (জালূতের বাহিনীকে) পরাভূত করল এবং দাঊদ জালূতকে হত্যা করল। ১৮৭ এবং আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তিনি যে জ্ঞান চাইলেন তাকে দান করলেন। আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের কতকের মাধ্যমে কতককে প্রতিহত না করতেন, তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। কিন্তু আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অতি অনুগ্রহশীল।
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানীঃ
১৮৭. জালূত ছিল শত্রু সৈন্যের মধ্যে এক বিশালাকায় পালোয়ান। বাইবেলে সামুয়েল (আলাইহিস সালাম)-এর নামে যে প্রথম অধ্যায় আছে, তাতে বর্ণিত হয়েছে যে, সে কয়েক দিন পর্যন্ত বনী ইসরাঈলকে লক্ষ্য করে চ্যালেঞ্জ দিতে থাকে ‘কে আছে তার সাথে লড়াই করতে পারে?’ কিন্তু কারই তার সাথে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হওয়ার হিম্মত হল না। হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম তখন ছিলেন উঠতি নওজোয়ান। যুদ্ধে তার তিন ভাই শরীক ছিল। তিনি সবার ছোট হওয়ায় বৃদ্ধ পিতার সেবায় থেকে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পর যখন কয়েক দিন গত হয়ে গেল, তখন পিতা তাকে তার ভাইদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য রণক্ষেত্রে পাঠাল। তিনি ময়দানে গিয়ে দেখেন, জালূত অবিরাম চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে যাচ্ছে এবং কেউ তার সাথে লড়বার জন্য ময়দানে নামছে না। এ অবস্থা দেখে তার আত্মাভিমান জেগে উঠল। তিনি তালূতের কাছে অনুমতি চাইলেন যে, জালূতের সাথে লড়বার জন্য তিনি ময়দানে যেতে চান। তাঁর বয়সের স্বল্পতা দেখে প্রথম দিকে তালূত ও অন্যান্যদের মনে দ্বিধা লাগছিল। শেষ পর্যন্ত তার পীড়াপীড়ির কারণে অনুমতি লাভ হল। তিনি জালূতের সামনে গিয়ে আল্লাহর নাম নিলেন এবং একটা পাথর তুলে তার কপাল বরাবর নিক্ষেপ করলেন। পাথরটি তার মাথার ভেতর ঢুকে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তারপর দাঊদ আলাইহিস সালাম তার কাছে গিয়ে তার তরবারি দ্বারাই তার শিরোেদ করলেন (১ সামুয়েল, পরিচ্ছেদ ১৭)। এ পর্যন্ত বাইবেলে ও কুরআন মাজীদের বর্ণনায় কোনও দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু এরপর বাইবেলে বলা হয়েছে, তালুত (বা মাউল) হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের জনপ্রিয়তার কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে বাইবেলে তার সম্পর্কে নানা রকম অবিশ্বাস্য কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। খুব সম্ভব, এসব বনী ইসরাঈলের যে অংশ শুরু থেকেই তালূতের বিরোধী ছিল, তাদের অপপ্রচার। কুরআন মাজীদ যে ভাষায় তালূতের প্রশংসা করেছে, তাতে হিংসা-বিদ্বেষের মত ব্যাধি তার মধ্যে থাকার কথা নয়। যা হোক, জালূত নিধনের কৃতিত্ব প্রদর্শন করার কারণে হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম এমন জনপ্রিয়তা লাভ করলেন যে, পরবর্তীতে তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশাহীও লাভ করেন। তদুপরি আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুওয়াতের মর্যাদায়ও ভূষিত করেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যার সত্তায় একই সঙ্গে নবুওয়াত ও বাদশাহী উভয়ের সম্মিলন ঘটে।