وَاِذِ ابۡتَلٰۤی اِبۡرٰہٖمَ رَبُّہٗ بِکَلِمٰتٍ فَاَتَمَّہُنَّ ؕ قَالَ اِنِّیۡ جَاعِلُکَ لِلنَّاسِ اِمَامًا ؕ قَالَ وَمِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ؕ قَالَ لَا یَنَالُ عَہۡدِی الظّٰلِمِیۡنَ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৮৭. এখান থেকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কিছু বৃত্তান্ত ও ঘটনা শুরু হচ্ছে। পেছনের আয়াতসমূহের সাথে দু’ভাবে এর গভীর সম্পর্ক আছে। একটি এভাবে যে, ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও আরব পৌত্তলিক- পূর্বোক্ত এ তিনও সম্প্রদায় হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নিজেদের ইমাম ও নেতা মনে করত। তবে প্রত্যেক সম্প্রদায় দাবী করত, তিনি তাদেরই ধর্মের সমর্থক ছিলেন। সুতরাং হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রকৃত অবস্থা পরিষ্কার করে দেওয়া জরুরী ছিল। কুরআন মাজীদ এ স্থলে জানাচ্ছে, এ তিন সম্প্রদায়ের কোনওটির ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাসের সাথে তাঁর কিছুমাত্র সম্পর্ক ছিল না। তার সমগ্র জীবন ব্যয় হয়েছে তাওহীদের প্রচারকার্যে। এ পথে তাকে অনেক বড়-বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাতে তিনি শতভাগ উত্তীর্ণ হন।
দ্বিতীয় বিষয় এই যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র ছিল- হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামেরই পুত্র ছিলেন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম, যার অপর নাম ইসরাঈল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগে নবুওয়াতের সিলসিলা তাঁরই আওলাদ তথা বনী ইসরাঈলের মধ্যে চলে আসছিল। এ কারণে তারা মনে করত, দুনিয়ার নেতৃত্ব দানের অধিকার কেবল তাদের জন্যই সংরক্ষিত। অন্য কোনও বংশে এমন কোনও নবীর আগমন সম্ভবই নয়, যার অনুসরণ করা তাদের জন্য অপরিহার্য হবে। কুরআন মাজীদ এস্থলে তাদের সে ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করেছে। কুরআন মাজীদ স্পষ্ট করে দিয়েছে, দীনী নেতৃত্ব কোনও বংশের মৌরুসী অধিকার নয়। খোদ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকেই একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিভিন্ন পন্থায় পরীক্ষা করেন এবং একথা প্রমাণ হয়ে যায় যে, তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ের ত্যাগ স্বীকার করে আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুম পালনের জন্য সদা প্রস্তুত; তাওহীদী আকীদায় বিশ্বাসের দরুণ তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তিনি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। স্ত্রী ও নবজাতক পুত্রকে মক্কার মরু উপত্যকায় রেখে আসার হুকুম দেওয়া হলে সে হুকুমও পালন করেন। এভাবে তিনি অকুণ্ঠ চিত্তে একের পর এক ত্যাগ স্বীকার করতে থাকেন। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমগ্র পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে বসানোর ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি নিজ সন্তানদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তাদের মধ্যে যারা জালিম তথা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে নিজ সত্তার প্রতি অবিচারকারী হবে, তারা এ মর্যাদার হকদার হবে না। বনী ইসরাঈলকে যুগের পর যুগ নানাভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাতে প্রমাণিত হয়েছে, তারা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবতার দীনী নেতৃত্ব দানের উপযুক্ত নয়। তাই শেষ নবীকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অপর পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশে পাঠানো হয়েছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর জন্য দু‘আ করেছিলেন যে, তাঁকে যেন মক্কাবাসীদের মধ্যে পাঠানো হয়। দীনী নেতৃত্ব যেহেতু স্থানান্তরিত হয়েছে, তাই কিবলাকেও পরিবর্তন করে বাইতুল্লাহ শরীফকে স্থির করে দেওয়া হয়েছে, যা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নির্মাণ করেছিলেন। এই যোগসূত্রে সামনে কাবা ঘর নির্মাণের ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে। এখান থেকে ১৫২ নং আয়াত পর্যন্ত যে আলোচনা-ধারা আসছে তাকে এই প্রেক্ষাপটেই বুঝতে হবে।