আল কাহ্‌ফ

সূরা নং: ১৮, আয়াত নং: ৯৮

তাফসীর
قَالَ ہٰذَا رَحۡمَۃٌ مِّنۡ رَّبِّیۡ ۚ  فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ رَبِّیۡ جَعَلَہٗ دَکَّآءَ ۚ  وَکَانَ وَعۡدُ رَبِّیۡ حَقًّا ؕ

উচ্চারণ

কা-লা হা-যা-রাহমাতুম মির রাববী ফাইযা-জাআ ওয়া‘দুরাববী জা‘আলাহূ দাক্কাআ ওয়া কা-না ওয়া‘দুরাববী হাক্কা-।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

যুলকারনাইন বলল, এটা আমার রবের রহমত (যে, তিনি এ রকম একটা প্রাচীর বানানোর তাওফীক দিয়েছেন)। অতঃপর আমার রবের প্রতিশ্রুত সময় যখন আসবে, তখন তিনি এ প্রাচীরটি ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবেন। ৫৫ আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত সত্য।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৫৫. মহাপ্রাচীর নির্মাণের এত বড় কাজ যখন সমাপ্তিতে পৌঁছল, তখন যুলকারনাইন দু’টি পরম সত্যের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। (এক) তিনি বললেন, এ-কাজ আমার বাহুবলের মাহাত্ম্য নয়। বরং এটা আল্লাহ তাআলারই রহমত। তিনি আমাকে তাওফীক দিয়েছেন বলেই আমার দ্বারা এটা করা সম্ভব হয়েছে। (দুই) দ্বিতীয়ত তিনি স্পষ্ট করে দেন, যদিও প্রাচীরটি এখন অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরি হয়েছে, যা শত্রুর পক্ষে ভেদ করা সম্ভব নয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষে এটা ভেঙ্গে ফেলা কিছু কঠিন কাজ নয়। আল্লাহ তাআলা যত দিন চাইবেন এটা প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারপর তিনি এর বিনাশের জন্য যেই সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, সেই সময় যখন আসবে, তখন এটা বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সাথে মিশে যাবে। যুলকারনাইনের এ বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করলে এ প্রাচীর কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে বলে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কুরআন মাজীদের ভাষা দ্ব্যর্থহীনভাবে তার প্রতি নির্দেশ করে না। বরং কিয়ামতের আগেও এটা বিধ্বস্ত হওয়ার অবকাশ আছে। কোন কোন গবেষক মনে করেন, প্রাচীরটি নির্মিত হয়েছিল রাশিয়ার দাগিস্তানের অন্তর্গত ‘দরবন্দ’ নামক স্থানে। এখন সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত। [অবশ্য তার যে ধ্বংসাবশেষ এখনও সেখানে বিদ্যমান আছে, গবেষকগণ অনুসন্ধান করে দেখেছেন কুরআন মাজীদে বর্ণিত নির্মাণ পদ্ধতির সাথে তার বেশ মিল রয়েছে]। ইয়াজুজ-মাজুজের বিভিন্ন বাহিনী বিভিন্ন সময় সভ্য এলাকায় নেমে এসে মহা ত্রাস সৃষ্টি করেছে এবং পর্যায়ক্রমে সভ্য মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে তারা নিজেরাও সভ্য হয়ে গেছে। তাদের সর্বশেষ ঢল নামবে কিয়ামতের কিছু আগে (দ্র. সূরা আম্বিয়া ২১ : ৯৬)। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ ও তথ্যবহুল আলোচনা হযরত মাওলানা হিফজুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘কাসাসুল কুরআন’ ও হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মাআরিফুল কুরআনে দেখা যেতে পারে। যুলকারনাইন সবশেষে বলেছেন, ‘আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য’। এর দ্বারা কিয়ামত সংঘটিত করার প্রতিশ্রুতি বোঝানো হয়েছে। তিনি বলতে চাচ্ছেন যে, আমি যে এই প্রাচীর নির্মাণ করলাম এটা কবে ধ্বংস হবে এবং তার জন্য আল্লাহ তাআলা কোন সময়কে নির্দিষ্ট করেছেন, তা তো এখনই কেউ বলতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ তাআলার একটা প্রতিশ্রুতি আমরা সুস্পষ্টভাবেই জানি। সকলেরই জানা আছে একদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। যখন তা ঘটবে তখন যত মজবুত জিনিসই হোক না কেন তা ভেঙ্গে-চুরে চুরমার হয়ে যাবে। যুলকারনাইন এস্থলে যে কিয়ামত বিষয়ের অবতারণা করেছেন, সেই প্রসঙ্গ ধরে আল্লাহ তাআলা সামনে কিয়ামতের কিছু অবস্থা তুলে ধরেছেন।
﴾﴿