আল কাহ্‌ফ

সূরা নং: ১৮, আয়াত নং: ৬০

তাফসীর
وَاِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِفَتٰىہُ لَاۤ اَبۡرَحُ حَتّٰۤی اَبۡلُغَ مَجۡمَعَ الۡبَحۡرَیۡنِ اَوۡ اَمۡضِیَ حُقُبًا

উচ্চারণ

ওয়া ইযকা-লা মূছা-লিফাতা-হুলাআবরাহুহাত্তাআবলুগা মাজমা‘আল বাহরাইনি আও আমদিয়া হুকুবা-।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (সেই সময়ের বৃত্তান্ত শোন) যখন মূসা তার যুবক (শিষ্য)কে বলেছিল, আমি দুই সাগরের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতেই থাকব অথবা আমি চলতে থাকব বছরের পর বছর। ৩৭

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৩৭. এখান থেকে ৮২ নং আয়াত পর্যন্ত হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সাথে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাক্ষাতকারের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দীর্ঘ হাদীসে এ ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বিবৃত করেছেন। বুখারী শরীফে কয়েকটি সনদে তা উদ্ধৃত হয়েছে। হাদীসটির সারসংক্ষেপ এস্থলে উল্লেখ করা হচ্ছে একবার কেউ হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করল, বর্তমান বিশ্বে সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে? যেহেতু প্রত্যেক নবী তার সমকালীন বিশ্বে দীনের সর্বাপেক্ষা বড় আলেম হয়ে থাকেন, তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম জবাব দিলেন, আমিই সবচেয়ে বড় আলেম। এ জবাব আল্লাহ তাআলার পছন্দ হল না। আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে অবহিত করা হল যে, প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন কে সবচেয়ে বড় আলেম। এতদসঙ্গে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে জ্ঞানের এমন এক দিগন্ত উন্মোচিত করতে চাইলেন, যে সম্পর্কে এ যাবৎকাল তার কোন ধারণা ছিল না। সুতরাং তাঁকে হুকুম দেওয়া হল, তিনি যেন হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পথ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হল যে, যেখানে দু’টি সাগর মিলিত হয়েছে, সেটাই হবে তার গন্তব্যস্থল। আর সেখানে একটা জায়গা এমন আসবে, যেখানে তাঁর সঙ্গে নেওয়া মাছ হারিয়ে যাবে। মাছ হারানোর সে জায়গাতেই হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সাক্ষাত পাওয়া যাবে। সুতরাং হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তার যুবক শিষ্য হযরত ইউশা আলাইহিস সালামকে সঙ্গে নিয়ে, যিনি পরবর্তীকালে নবী হয়েছিলেন, সফর শুরু করে দিলেন। এর পরের ঘটনা কুরআন মাজীদেই আসছে। প্রকাশ থাকে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের এ সফরকে সাধারণ কোন ভ্রমণের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। তাঁর এ সফরের ভেতর আল্লাহ তাআলার বিশেষ উদ্দেশ্য নিহিত ছিল। একটা উদ্দেশ্য তো অতি পরিষ্কার। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা শিক্ষা দিতে চেয়েছেন, নিজেকে নিজে সকলের বড় আলেম বলা কারও পক্ষেই শোভা পায় না। ইলম বা জ্ঞান হচ্ছে কুল-কিনারাহীন এক অথৈ সাগর। এর কোন দিক সম্পর্কে কে বেশি জানে তা বলা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ তাআলা নিজ জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা মহা বিশ্ব কিভাবে চালাচ্ছেন তার একটা ঝলক হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেওয়া। মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনে দুনিয়ায় বহু ঘটনা ঘটতে দেখে। অনেক সময় এমন কাণ্ড-কারখানাও তার চোখে পড়ে যার কোন ব্যাখ্যা সে খুঁজে পায় না এবং যার উদ্দেশ্য তার বুঝে আসে না। অথচ প্রতিটি ঘটনার ভেতরই আল্লাহ তাআলার কোন না কোন হিকমত নিহিত থাকে। মানুষের দৃষ্টি যেহেতু সীমাবদ্ধ তাই সে অনেক সময় তাঁর রহস্য বুঝতে সক্ষম হয় না। কিন্তু যেই সর্বশক্তিমান মালিকের হাতে বিশ্ব জগতের বাগডোর তিনি জানেন কখন কী ঘটনা ঘটা উচিত। ঘটনাটির শেষে এ বিষয়ে আরও আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ। (৪৬ নং টীকা দেখুন।)
﴾﴿