ইউসুফ

সূরা নং: ১২, আয়াত নং: ২৪

তাফসীর
وَلَقَدۡ ہَمَّتۡ بِہٖ ۚ وَہَمَّ بِہَا لَوۡلَاۤ اَنۡ رَّاٰ بُرۡہَانَ رَبِّہٖ ؕ کَذٰلِکَ لِنَصۡرِفَ عَنۡہُ السُّوۡٓءَ وَالۡفَحۡشَآءَ ؕ اِنَّہٗ مِنۡ عِبَادِنَا الۡمُخۡلَصِیۡنَ

উচ্চারণ

ওয়া লাকাদ হাম্মাত বিহী ওয়া হাম্মা বিহা-লাওলা-আর রাআ-বুরহা-না রাব্বিহী কাযা-লিকা লিনাসরিফা ‘আনহুছছূআ ওয়াল ফাহশাআ ইন্নাহূমিন ‘ইবা-দিনাল মুখলাসীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

স্ত্রীলোকটি তো স্পষ্টভাবেই ইউসুফের সাথে (অসৎ কর্ম) কামনা করেছিল আর ইউসুফের মনেও স্ত্রীলোকটির প্রতি ইচ্ছা জাগ্রত হয়েই যাচ্ছিল যদি না সে নিজ প্রতিপালকের প্রমাণ দেখতে পেত। ১৭ আমি তার থেকে অসৎ কর্ম ও অশ্লীলতাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই এরূপ করেছিলাম। নিশ্চয়ই সে আমার মনোনীত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

১৭. এ আয়াতের তাফসীর দু’ভাবে করা যায়। (এক) হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে একটি প্রমাণ না দেখলে তাঁর মনেও যুলায়খার প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যেহেতু তিনি একটি প্রমাণ দেখতে পেয়েছিলেন, (যার ব্যাখ্যা সামনে আসছে) তাই তাঁর অন্তরে সে নারীর প্রতি কোনও কু-ভাব দেখা দেয়নি। (দুই) আয়াতের অর্থ এমনও হতে পারে যে, শুরুতে তাঁর অন্তরেও কিছুটা ঝোঁক সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, যা একটা সাধারণ মানবীয় চাহিদা ছিল। হযরত হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) এর একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোযাদার ব্যক্তি পিপাসার্ত অবস্থায় যদি ঠাণ্ডা পানি দেখে, তবে তার অন্তরে স্বাভাবিকভাবেই সে পানির প্রতি একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, কিন্তু তাই বলে সে রোযা ভাঙ্গার মোটেই ইচ্ছা করে না। ঠিক এ রকমই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের অন্তরে অনিচ্ছাজনিত একটা ঝোঁক দেখা দিয়ে থাকবে। তিনি স্বীয় প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে না পেলে সেই ঝোঁক হয়ত আরও সামনে এগিয়ে যেত, কিন্তু তিনি যেহেতু প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেয়েছিলেন, তাই মুহূর্তের ভেতর সেই অনিচ্ছাকৃত ঝোঁকও লোপ পেয়ে যায়। অধিকাংশ তাফসীরবিদ এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাকেই গ্রহণ করেছেন। কেননা আরবী ব্যাকরণের দিকে লক্ষ্য করলে এ ব্যাখ্যাই বেশি নিয়মসিদ্ধ হয়। দ্বিতীয়ত এর দ্বারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের চরিত্র যে কতটা উচ্চ পর্যায়ের ছিল তা ভালো অনুমান করা যায়। তার অন্তরে এই অনিচ্ছাকৃত ঝোঁকও যদি সৃষ্টি না হত, তবে গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা খুব বেশি কঠিন হত না। এটা বেশি কঠিন হয় অন্তরে ঝোঁক দেখা দেওয়ার পরই। আর তখন বলিষ্ঠ নীতিবোধ ও অসাধারণ মনোবল ছাড়া নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না। কুরআন ও হাদীস দ্বারা জানা যায়, মনের চাহিদা সত্ত্বেও যদি আল্লাহ তাআলার ভয়ে নিজেকে সংযত রেখে গুনাহ থেকে বিরত থাকা যায়, তবে তা অধিকতর সওয়াব ও পুরস্কারের কারণ হয়। প্রশ্ন থেকে যায় যে, আয়াতে আল্লাহ তাআলা যে বিষয়টাকে “স্বীয় প্রতিপালকের দলীল” সাব্যস্ত করেছেন, সে দলীল আসলে কী ছিল? এ প্রশ্নের পরিষ্কার ও নিখুঁত উত্তর হল এই যে, এর দ্বারা সেই কাজটির গুনাহ হওয়ার দলীল বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সেটি যে একটা পাপকর্ম এই বিষয়টি তিনি চিন্তা করেছিলেন এবং এ কারণে তিনি তা থেকে বিরত থেকেছিলেন। কোন-কোন বর্ণনায় এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যে, তখন তাঁকে তাঁর মহান পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের প্রতিকৃতি দেখানো হয়েছিল আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
﴾﴿