আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ভুয়া/জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকুরী নেয়া যাবে? নিলে ইনকাম হালাল হবে?

প্রশ্নঃ ৭৭৫০৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ২ মাস যাবত কর্মরত আছি।আমি আমার সিভিতে আমার এই অভিজ্ঞতা কে ২ মাস না দেখিয়ে ১ বছর দেখিয়েছি। নতুন একটি কোম্পানিতে এপ্লাই করার পর তারা আমার সিভি শর্টলিস্ট করে এবং আমাকে ইন্টারভিউতে ডাকে।আমি রিটেন,ভাইভা সব শেষ করে মোটামুটি ৪ ধাপে ইন্টারভিউ প্রসেস শেষ হয় এবং তারা আমাকে নিয়োগ এর জন্য অফার লেটার পাঠায়।মাঝখানে অনেক নেগোসিয়েশন হয়।আমি সব ধরণের পরীক্ষাতেই উতরে যাই।এখন তারা কিছু ডকুমেন্ট আমার কাছে চেয়েছে যা দিতে গেলে আমাকে নকল/জাল ডকুমেন্ট বানিয়ে দিতে হবে যেমন অভিজ্ঞতা সনদ,ছাড়পত্র ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হলো যেহেতু আমি এই চাকুরির ক্ষেত্রে আমার মিথ্যা অভিজ্ঞতা দেখিয়েছি এবং কিছু কাগজপত্র জাল দেখাতে হবে ভবিষ্যতে, যদিও আমি তাদের সকল পরীক্ষায় উতরে গিয়েছি।এক্ষেত্রে এখানে জয়েন করলে আমার চাকুরির বেতন কি হালাল হবে?আমার এখানে চাকুরি করা কি জায়েয হবে?আমি কাজ ভালো জানলেও অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দেখানো টা কি জায়েয? দয়া করে জানাবেন।আমার তাদেরকে ফাইনাল ডিসিশন জানাতে হবে।দয়া করে একটু দ্রুত জানালে উপকৃত হবো।

৩ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


১- প্রশ্নে বর্ণিত কাজ একদম ঠিক হয়নি। এমনটি করা নাজায়েজ। কেননা এতে ধোঁকা ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়। এবং কি এতে অপরের হক (এই কাজে যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তির অধিকার) খর্ব করা হয়।
তাছাড়া এধরনের মিথ্যার আশ্রয় নেয়া চাকরির টাকায় বরকত নষ্ট হয়ে যায় বিধায় এর থেকে বিরত থাকা উচিত।

২- জাল/ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যামে চাকুরী নেয়া মারাত্মক অন্যায় এবং নাজায়েজ। এসকল বিষয় থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফরজ। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি এভাবে চাকুরী নেবার পর উক্ত পদে দায়িত্বশীলতার যথাযোগ্যভাবে কাজ আঞ্জাম দেয়,তার বেতনকে হারাম বলা যাবে না। যদিও চাকুরীর পদ্ধতিটি বৈধ ছিল না।

#পরামর্শ হচ্ছে, হালাল পন্থায় হালাল ইনকামের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তা'আলা সহজ করবেন। বিশেষ করে ফরজ নামাযের পর বেশি বেশি দুআ করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনাকে নৈরাশ করবেননা। কেননা হাদীসের মধ্যে আসছে, ফরয নামাযের পর দুআ কবুল হয়।


শরয়ী দলীলসমূহঃ
আল্লাহ তা'আলা বলেন,

قوله تعالى- وَاجْتَنِبُواْ قَوْلَ الزُّورِ  [الحج-30
এবং মিথ্যা কথা থেকে বাঁচো। {সূরা হজ্জ্ব-৩০}

কেয়ামতের আগে অধিক হারে মিথ্যা বলা হবে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَظْهَرَ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الْكَذِبُ، وَتَتَقَارَبَ الْأَسْوَاقُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ ” قِيلَ: وَمَا الْهَرْجُ؟ قَالَ: ” الْقَتْلُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অচিরেই কিয়ামতের পূর্বে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে। ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। অধিকহারে মিথ্যা বলা হবে। কাছাকাছি বাজার শপিংমল হতে থাকে। সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে। খুনাখুনি বৃদ্ধি পাবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৭২৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৭১৮]

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا (صحيح مسلم، كتاب الايمان، باب قَوْلِ النَّبِىِّ – صلى الله تعالى عليه وسلم – « مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا، رقم الحديث-294(
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে আমার উম্মতের উপর অস্ত্র উঁচু করে সে আমার উম্মতভূক্ত নয়, আর যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজী করে, সেও আমার উম্মতভূক্ত নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৫৯, ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭২১}

واأجر يطيب وإن كان السبب حراما (رد المحتار-9/62)

ثم المذهب عند جمهور العلماء والفقراء أن جميع أنواع الكسب فى الإباحة على السواء…. الخ (مجمع الأنهر، كتاب الكراهية، فصل فى الكسب-4/184، رد المحتار-10/46

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
رِجَالٌ ۙ  لَّا تُلۡہِیۡہِمۡ تِجَارَۃٌ وَّلَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَاِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَاِیۡتَآءِ الزَّکٰوۃِ ۪ۙ  یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡہِ الۡقُلُوۡبُ وَالۡاَبۡصَارُ٭ۙ
এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় থেকে গাফেল করতে পারে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যে দিন অন্তর ও দৃষ্টি ওলট-পালট হয়ে যাবে। .(সূরা নুর ৩৭ নং আয়াত। )

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَلَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا
হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোন ব্যবসায় করা হলে (তা জায়েয)। এবং তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা, আয়াত ২৯।)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন