অজুর সময় যেসব দোয়া পড়বেন
প্রশ্নঃ ১২৫৬৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অজু করার সময় কি দোয়া পড়তে হয়?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
অজুর সময় যেসব দোয়া পড়বেন
অজু করা ইবাদত। অনেক ইবাদতের জন্য অজু করা ফরজ। সব সময় অজু অবস্থায় থাকা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দায়েমি সুন্নাতও বটে। হাদিসের বর্ণনা মতে অজুর শুরু ও শেষে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ একাধিক দোয়া।
তাছাড়া নামাজ, হজ ও কুরআন তেলাওয়াতসহ অনেক ইবাদতের জন্যই কুরআনুল কারিমে অজু তথা পবিত্রতা অর্জনের অনেক নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও আর টাখনুসহ উভয় পা ধোও। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা শরীর পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রোগী হও, অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস কর; অতপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মণ্ডল ও উভয় হাত মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদের পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)
অজু করার শুরুতে, অজু করার সময় এবং শেষে ৪টি দোয়া পড়ার জন্য হাদিসের নির্দেশনা রয়েছে। এতে অনেক ফজিলত ঘোষণা করা হয়েছে। ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলো হলো-
> অজুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْم
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’
অর্থ : পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
> অজু করার সময় এ দোয়াটি পড়তে থাকা-
اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসিলি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফি রিযক্বি। (নাসাঈ)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিযিক্বে বরকত দিয়ে দাও।’
> অজুর শেষে কালেমার সাক্ষ্য ও উপকারিতা
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।’ (মুসলিম, মিশকাত)
উপকারিতা : হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে কালেমায়ে শাহাদাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে; ওই ব্যক্তি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, মিশকাত)
> অতপর এ দোয়াটি পড়া-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ ، وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঝআলনি মিনাত তাউয়্যাবিনা ওয়াঝআলনি মিনাল মুতাত্বাহ্হিরিন।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নিন।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উল্লেখিত দোয়াগুলো অনেক ফজিলত পূর্ণ। যা অজুকারীকে পবিত্র ও নেককার বান্দায় পরিণত করে দেয়। যার জন্য জান্নাতের সব দরজা উন্মুক্ত থাকে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, একান্ত মনোযোগের সঙ্গে সুন্নাতের অনুসরণে সব সময় অজু অবস্থায় থাকা। অজুর ফজিলত লাভে যথাযথভাবে অজু করা। হাদিসে ঘোষিত অজুর ফজিলত ও উপকারিতাগুলো অর্জন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় অজু অবস্থায় থাকার তাওফিক দান করুন। পবিত্রতা অবলম্বনকারী ও তাওবাহকারী হিসেবে কবুল করুন। দুনিয়াতে উত্তম রিজিক, মৃত্যুর আগে গোনাহ মাফ এবং পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
(সংগৃহীত)
এছাড়াও সুন্নাহসম্মত অজু সম্পর্কে জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৭২২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অজুর মাসালা পুরোটা কোরআন এবং হাদিসসহ উত্তর টা দিলে আমি উপকৃত হবো।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ওজু করার সঠিক নিয়অযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।আর শরীয়াতের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে অযু বলে।
পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদাতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
অর্থ : “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে, আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” [সূরা মায়িদাহঃ আয়াত-৬]
ওজুর ফরয চারটি।
(১) মুখ মন্ডল ধৌত করা।
(২) দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা।
(৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা এবং
(৪) দুই পা টাখনু সহ ধৌত করা।
এছাড়াও আমরা যে মিসওয়াক করি, কব্জি পর্যন্ত হাত ধুই,গড়গড়া করি বা নাকে পানি দেই ইত্যাদি করি, এগুলো সুন্নত। তাই পরিপূর্ণ ওজু করতে গেলে সময়ের এবং পানির অভাব না থাকলে, অবশ্যই এগুলোও পালন করতে হবে এবং তিনবার করে।
ওজুর পদ্ধতি-
বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন।
(১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
(২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে।
লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
(৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
(৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
(৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
(৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
(৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
(৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে।
বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।
(৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
(১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
(১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
(১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
(১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
(১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব।
ওজু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-
”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
পূর্ণাঙ্গ অজু শিক্ষা
প্রশ্নঃ ৭২২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অজুর মাসালা পুরোটা কোরআন এবং হাদিসসহ উত্তর টা দিলে আমি উপকৃত হবো।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ওজু করার সঠিক নিয়অযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।আর শরীয়াতের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে অযু বলে।
পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদাতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
অর্থ : “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে, আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” [সূরা মায়িদাহঃ আয়াত-৬]
ওজুর ফরয চারটি।
(১) মুখ মন্ডল ধৌত করা।
(২) দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা।
(৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা এবং
(৪) দুই পা টাখনু সহ ধৌত করা।
এছাড়াও আমরা যে মিসওয়াক করি, কব্জি পর্যন্ত হাত ধুই,গড়গড়া করি বা নাকে পানি দেই ইত্যাদি করি, এগুলো সুন্নত। তাই পরিপূর্ণ ওজু করতে গেলে সময়ের এবং পানির অভাব না থাকলে, অবশ্যই এগুলোও পালন করতে হবে এবং তিনবার করে।
ওজুর পদ্ধতি-
বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন।
(১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
(২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে।
লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
(৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
(৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
(৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
(৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
(৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
(৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে।
বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।
(৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
(১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
(১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
(১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
(১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
(১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব।
ওজু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-
”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন