প্রশ্নঃ ১১৫১৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম শায়েখ, আমি কীভাবে বুঝব যে আমার ঈমান আছে?
১৪ ডিসেম্বর, ২০২১
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানু তায়ালা ব্যাতিত হেদায়াতের মালিক কেউ নেই।
.
আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছে যাদের জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে জাহালিয়াতে।
অতপর আল্লাহ তাদেরকে সত্য দ্বীন চেনার তাওফিক দান করেছেন।
তারা লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করেছে।
আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বলেনঃ
ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍ۟ ﺗُﻮﺑُﻮٓﺍ۟ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻧَّﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰٰ ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨﻜُﻢْ ﺳَﻴِّـَٔﺎﺗِﻜُﻢْ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন।
(সূরা আত তাহরিম, আয়াতঃ ৮)
.
কিন্তু আমাদের মানব জাতীয় স্বভাব হচ্ছে বার বার ভুল করা।
শয়তানের ফাদে পা দেওয়া।
নিজের নফসের খায়েসাতের কাছে পরাজিত হওয়া।
.
আমার এই লেখাটি তাদের উদ্দ্যেশ্য যারা দ্বীনে প্রবেশের পরেও বিভিন্ন হারাম কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছেন না। যারা নিজেকে জাহালাতের বাধন থেকে মুক্ত করতে চাইছেন কিন্তু বার বার তা আপনাদের আটকে ধরছে।
যারা মিউজিক, নেশা বা গার্লফ্রেন্ড ছারতে পারছেন না কিংবা যেসব আল্লাহর বান্দারা যারা দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন মিউজিক ছাড়া আমি কিভাবে চলব? ওকে ছাড়া কি আমি থাকতে পারব?তাদের উদ্যশ্যে এই গুনাগার বান্দার কিছু নসিহা।
.
সোজা কথা বলতে গেলে আমি কিছু নসিহা করব যেগুলা ইনশা আল্লাহ আপনাকে এসব থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করবে।
এগুলো আসলে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা কিংবা কাছের অনেক ভাইকে নীড়ে ফিরতে দেখার ফলে মনের গহিনে জরো হওয়া কিছু অনুভুতি।
.
প্রথমতঃ সর্বপ্রথম আমাদের কে অবশ্যই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহকে যাকে চান হেদায়াত দেন।
কিন্তু এই হেদায়াতটা রেডিমেট খিচুরির মত আপনার সামনে হাজির হবে এমনটা ভাবা ভুল।
এর জন্য আপনার পাক্কা নিয়ত থাকা দরকার।
ইনশা আল্লাহ! আল্লাহ সুবহানু তায়ালার রহমতে আমি হারাম থেকে বিরত থাকব। আমি পারবোনা এধরনের মানষিকতা দূর করাটা বেশী জরুরি।
.
হে আমার ভাই/বোন!
ইনশা আল্লাহ আপনি পারবেন।
আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হবেন না একই সাথে আল্লাহর আযাবেরও ভয় করুণ।
”ইনশা আল্লাহ আমি নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাতে পরিনত করব”- এমন নিয়ত করে আসুন মাঠে নামা যাক, দেখি যুদ্ধে জয় লাভ করে শয়তান না আমি।
.
যুদ্ধে নামার আগেই আল্লাহ মুমিনদের জানিয়ে দিচ্ছেন।
মুমিনগন হতাশ হবার কারন নেই।
শয়তান তোমাদের সামনে নিত্য নতুন ফিতনা নিয়ে আসবে।
তোমাদের ফিতনার জালে জরাতে চাইবে কিন্তু সেই ফিতনার জাল যে খুবই দুর্বল।
.
আল্লাহ বলেনঃ
“সুতরাং তোমরা জিহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।”
(নিসা ৪/৭৬)
.
কাজেই যুদ্ধ শুরু হবার আগেই।
আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য আল্লাহ বলে দিচ্ছেন শয়তানের চক্রান্ত দূর্বল।
.
এবার যুদ্ধের জন্য কিছু প্রস্তুতি নেয়া যাকঃ
.
১/ আল্লাহ সুবহানু তায়লার কাছে সাহায্য চাওয়াঃ
আমাদের মনে রাখা উচিত আমাদের মাথায় উপর আমাদের মাওলা আল্লাহ রয়েছেন।
কিন্তু শয়তান এবং তাদের চ্যালা চামুন্ডারা একা।
তারমানে তাদের সাহায্য করার মত কেও নেই।
আমাদের মুল শক্তির উৎস হচ্ছে আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালার দয়া ও রহমত।
কাজেই দয়া রহমত বেশি বেশি পুজি করে মাঠে নামতে হবে।
আল্লাহ সুবহানু তায়লার কাছে বেশী বেশী দোয়া করতে হবে তিনি যেন আমাদের সকল ফিতনা থেকে হেফাজত করেন। তিনি যেন শয়তানের চ্যালা চামুন্ডা পশ্চিমাদের পরাজিত করে দেন।
যাতে তারা এবং জ্বীন শয়তান গুলো একত্রিত না হয়ে মুমিনদের সাথে কোন রকম চক্রান্তে লিপ্ত না হয়।
আল্লাহর কাছে চাওয়ার বেস্ট সময় হচ্ছে সলাত।
ফরয সলাতের পাশাপাশি নফল সলাতে আমাদের উচিত হবে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা।
কোন ভুল হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে ঝুকে পড়া।
.
২/সলাতে মনোযোগী হওয়াঃ
দোয়ার পাশাপাশি সলাত হচ্ছে মুমিনের আরেক বড় অস্ত্র।
কেননা আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বলেছেন, সলাত মুমিনকে অস্লিলতা ও পাপাচার থেকে বিরত রাখে।
কিন্তু প্রশ্ন জাগতেই পারে আমি তো সলাত করি তবুও কেনো এমন হয়?
এর উত্তর হলো, আমার সলাতে খুশু খুযুর অভাব।
খুসু খুযু সলাতের বড় একটা ব্যাপার ।আসলে সত্যি বলতে খুসূ খুজু বিহিন সলাত অন্তরে কোন প্রভাব ফেলে না। কাজেই খুশু খুযু আনার চেস্টা করা উচিত।
আসলে আমাদের সলাতে খুশু খুযু না আসার অন্যতম কারন হচ্ছে আযান দেবার পরেও আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত থাকি।
অথচ আমরা যদি আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোর দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখতে পাবো আযানের সাথে সাথে তারা যেন ভিন্ন জগতে চলে যেতেন।
কেও কাওকে চিনিতেন না।
সমস্ত মনোযোগ চলে যেত সলাতে।
কাজেই আমাদের উচিত তাদের দেখানো পথেই হাটা।
আযান দেবার সাথে সাথে আমাদের উচিত সকল কাজে ইস্তফা দিয়ে সলাতের জন্য প্রস্ততি গ্রহন করা।
অতপর সুন্দর করে ওযু করে ধীরে সস্তে মসজিদে যাওয়া।
হ্যা মসজিদে।
আমাদের অনেক ভাইয়ের এই বাজে স্বভাব আছে আমরা বাসায় সলাত আদায় করি অথচ এটা খুবি মন্দ একটা কাজ।তাছাড়া ২৭ গুন সাওয়াবের কথা কি ভুলে গেলে চলবে?
কোথাও যদি ২০% ছাড় দেয়া হয় তাতেই তাদের বিক্রি বেড়ে যায় অথচ ২৭ গুন সাওয়াব এর কথা শুনেও আমরা উদাসীন।
আর আগে আগে মসজিদে গেলে আরেকটা লাভ আছে সেটা হচ্ছে সামনের কাতারে সলাতে দাঁড়ানো।
মসজিদে গিয়ে সুন্নত গুলো ঠিক মত আদায় করে সময় থাকলে একটু বসে ঠান্ডা মাথায় আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে ভাবুন।
নামায শেষে আমাদের অনেককেই দেখা যায় মসজিদ থেকে বের হবার জন্য তাড়াহুড়া লেগে যায় যেন আমরা ট্রেন মিস করে ফেলব।
তাছাড়া ফরয সলাতের শেষের যিকির গুলোর কথা ভুলে গেলে চলবেনা (আলাদা পয়েন্টে আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ)।
সলাত শেষে আমাদের উচিত আস্তে আস্তে আদবের সাথে বের হওয়া।
সুন্নত অনুযায়ি বাম পা আগে দেওয়া আর ঢোকার সময় ডান পা আর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া দোয়াটা মসজিদের সামনের লেখা থাকে।
আরেকটা কমন ব্যাপার হচ্ছে নামায শেষে হাত তুলে দোয়া করা।
সম্মেলিত মোনাযাতকে বেদাত বলতে বলতে আমরা যেন হাত তুলে দোয়ার কথা ভুলেই গেছি।
মনে রাখা উচিত দোয়া মুমিনের হাতিয়ার।
.
২য় পর্বঃ
আজকের পর্বের শুরুতেই একটা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বলের একটি ঘটনা।
একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমাদের জীবনে সুখ কখন আসবে? কবে আমরা স্বস্তি পাবো?
তিনি বললেন যখন জান্নাতে আমরা প্রথম কদম দিব তখন।
সুবাহান আল্লাহ! এটাই ছিল আমাদের সালাফদের চিন্তা ভাবনা।
একজন মুমিনের জীবনের আল্টিমেট গোলই তো জান্নাত।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দুনিয়া হচ্ছে মুমিনের জন্য কারাগার।
.
কাজেই হে আমার প্রিয় ভাই/বোন! কারাগারে থেকে আমরা কত সুখ শান্তি আশা করতে পারি?
আমাদের কত ভাই তো আজ কারাগারে বন্দি, তারা কি ইচ্ছা করলেই সব করতে পারে?
আর মুমিনদের জন্য তো দুনিয়াও কারাগার।
তো এই কারাগারে কিছু না বা পেলাম কিন্তু এই কারাগার থেকে যখন আমরা বিজইয়ী বেশে জান্নাতে প্রথম কদম রাখব সেই দৃশ্যের কথা কল্পনা করে আজকের পর্ব শুরু করা যাক।
.
গত পর্বে আমরা দোয়া ও সলাত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।
ইনশা আল্লাহ আজকে আমরা আরো কিছু ব্যাপারে কথা বলব।
যেগুলো আপনাকে সহয়তা করবে আল্লাহ্র নিকটে যেতে ইনশা আল্লাহ।
.
৩/ যিকরঃ
আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বলেন,
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।
[সূরা রা’দ ২৮]
.
আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বলেছেন,
একমাত্র আল্লাহ সুবহানু তায়ালার যিকিরেই আমাদের অন্তর গুলো প্রশান্ত হবে।
যে অন্তর তছনছ হয়ে আছে, যাতে দু;খের চাপা পাহাড় জমে আছে তা শান্ত হবে কেবল আল্লাহর স্মরনেই।
মাছের জীবিত থাকার জন্য যেমন পানি অপর্যিহার্য তেমনি আমাদের অন্তর গুলাকে যদি জীবিত রাখতে চাই আমাদের দরকার বেশী বেশী আল্লাহকে স্বরন করা।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বলেছেন, আমরা আল্লাহকে স্মরন করলে আল্লাহ আমাদের স্মরন করবেন। আমাদের রব আমাদের রব স্মরন করবেন এর চাইতে উত্তম আর কিইবা হতে পারে?
.
মনে আছে আমরা কিন্তু প্রথমেই বলেছিলাম শয়তানকে আমরা একমাত্র আল্লাহর সাহায্যেই হারাতে পারব।
আর আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে যদি আল্লাহ আমাদের স্মরন করেন তাহলে আমাদের আর কি লাগে?
অনেক নেতাদের চ্যালাদের বাহাদুরি দেখে তো আমরা অভ্যস্ত।
সামান্য দুনিয়ার কোন জালেমের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকার ফলে তাদের দাপটে চলা যায় না।
আর আমাদের সাথে যদি আল্লাহর সম্পর্ক থাকে তাহলে আমাদের আর পায় কে?আমরা প্রাথমিক অবস্থাতে সলাতের পরের যিকির গুলো, সকাল সন্ধায় যিকির ও ঘুমানের যিকির গুলো দিয়ে শুরু করতে পারি ইনশা আল্লাহ।
যাদের এন্ডোয়েড আছে তারা হিসনুল মুসলীম এপটা নামাতে পারি।
প্রত্যেক ফরয সলাতের পর খুব বেশী হলে৬/৭ মিনিট সময় ব্যয় করলেই যিকির গুলো কমপ্লিট হবে ইনশা আল্লাহ।
.
৪/কোরান তেলায়াতঃ
এই জায়গাটাতেই এসেই আমাদের যাবতীয় আলসি শুরু হয়ে যায়।
হাজারটা ওজর চলে আসে।
আমাদের মাঝে অনেকেই হয়ত কোরান পড়তে পারি না।
তাদের উচিত হবে যত দ্রুত শিখে নেয়া।
এলাকার ইমাম সাহেব কিংবা মোয়াজ্জেন সাহেবের সাথে কথা বলুন।
খুব বেশী সময় লাগবে না ইনশা আল্লাহ।এতে আপনার আরেকটা লাভ হবে, সেটা হচ্ছে আপনি একজন নেক সংগি পেয়ে গেলেন।
আর যারা কোরান পড়তে পারি তাদের উচিত রেগুলার অন্তত দশ মিনিট কোরান তেলাওয়াত করা।
যে কোন সময়।
আমরা অনেকেই হয়ত ভার্সিটির স্টুডেন্ট, তাদের একটা বুদ্ধি দিতে পারি।
দেখা যায় অনেক সময় দুই ক্লাসের মাঝে ব্রেক থাকে।
আমরা সেই সময়টা কাজে লাগাতে পারি।
একদিকে যেমন আপনি ক্যাম্পাসের ফাহাসাত পূর্ন জায়গা থেকে মুক্তি পেলেন আরেক দিকে আপনার রবের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পেলেন।
আর আমরা যারা পারি না তারা রেগুলার কিছু আয়াত শুনতে পারি।
আমরা অনেকেই কোরান তেলাওয়াত ছেড়ে ফেসবুক ইউজ করি।
ওয়াল্লাহি ভাই এটা করা ঠিক নয়।আপনার রব আপনার সাথে কথা বলছে, আর আপনি…?
.
৫/ পরকালের ব্যাপারে চিন্তা করাঃ আমাদের অনেকের কাছেই হয়ত সাইদিনা আয়েশা (রাঃ) কথাটা পরিচিত, ”যদি কোরানে এই আয়াতটা সর্ব প্রথম নাযিল হত তোমরা মদ খেও না,
তাহলে লোকেরা তা অস্বীকার করত, যদি কোরানে যিনা ব্যাভিচার করো না, তাহলে লোকেরা বলত আমরা কখনই বিরত থাকব না।”
আমরা কোরানের দিকে তাকালেই দেখতে পাই প্রথমে জান্নাত জাহান্নামের আয়াত গুলো নাযিল হয়েছে।
আল্লাহ সুবহানু তায়ালা মানুষের অন্তরের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত।
কাজেই তিনি মানুষের অন্তর গুলোকে আগে জাহান্নামের ভয় আর জান্নাতের আশা দ্বারা পুর্ন করেছেন।
তারপর হুকুম আহকাম গুলো নাযিল করেছেন।
কাজেই আমাদের অন্তর গুলোতে আশা ও ভয় জাগাতে হবে যাতে আমরা হারাম থেকে বিরত থাকি।
এই জন্য আমাদের বেশী বেশী মৃত্যু জান্নাত জাহান্নাম তথা পরকালের ব্যাপারে চিন্তা করতে পারি।
আপনি ২৪ ঘন্টার থেকে কোন সময় মাত্র ১০ মিনিট সময় বের করুন।
এরপর ঠান্ডা মাথায় বসুন।
জান্নাত জাহান্নামের ব্যাপারে রেগুলার কিছু আয়াত অথবা হাদিস পড়ুন।
এই ব্যপারে আপনি হেয়ার আফটার অথবা শেইখ আরিফির পরকাল বই ফলো করতে পারেন।
.
তাহলে আমরা এই দুই দিনের আলোচোনা থেকে ৫টা কাজ পেলাম যেটা আমরা রেগুলার খুব সহজেই করতে পারিঃ
১/ বেশী বেশী দোয়া করা তথা আল্লাহর কাছে সাহয্য চাওয়া।
২/ নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সলাত খুশু খুযুর সাথে আদায় করা।
৩/ নিয়মিত সলাতের পর, সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানের আগে যিকর করা।
৪/ কোরান তেলায়র করা, না জানলে শিখে ফেলা।
৫/পরকালের ব্যাপারে পড়াশনা করা।
.
৩য় পর্বঃ
মাওলানা জুলফিকার আহমেদ নকশবন্দির লেকচারে একটা ঘটনা শুনেছিলাম।
ওহাব ইবনে মুনাব্বি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুসা (আঃ) এর যামানায় এক যুবক ছিলো।
যে কিনা গুনাহ ছাড়া থাকতেই পারত না।
এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা সে করত না।
তো তার এলাকার লোক ভাবল এর জন্য আবার না আমাদের উপর আযাব এসে যায়।
তাই তারা শহর থেকে বের করে দিল। সময়টা ছিল শীত কাল, যে অসুস্থ হয়ে পড়ল।
আর তখন সে তার রবের কাছে ফিরে গেলো।
সে তার একাকীত্ব বুঝতে পারল।
সে তাওবা করল।
এবং এক সময় সে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরন করে।
যাই হোক অনেক বড় ঘটনা আমি সংক্ষেপে বলছি, তার মৃত্যুর পর আল্লাহ সুবহানু তায়ালা মুসা (আঃ) এর উপর ওহী নাযিল করেন যে, আমার এক আওলিয়া মারা গেছেন।
কাজেই তুমি তার জানাযা পড়াও। সুবাহান আল্লাহ! এটা হচ্ছে তাওবার।
নেক দিলে খাস নিয়তে তাওবার ফলাফল।
আল্লাহর কাছে তার তাওবা এতটাই প্রিয় ছিল যে সে তার রাসুলকে বলছেন তার জানাযার জন্য।
আমরা হয়ত গত দুই দিনে অনেক গুনাহ করে ফেলেছি।
লজ্জায় হয়ত আমরা মাথা তুলে দাড়াতে পারছি না কিংবা আমাদের অন্তরের কোন এক জায়গায় জন্ম নিয়েছে অনুশোচনা।
.
হে ভাই/বোন! সেই অনুশোচনাকে নিভে যেতে দেবেন না।
আপনার রবের দরজা তো খোলা আছে। তাওবা করে ফিরে আসুন না।
দেখুন কেমন লাগে?
অন্তরের সজীবতা একবার না হয় অনুভব করে দেখুন।
.
আমাদের আজকের পর্বের শুরুতেই আমরা সেই সব ভাইবোনদের জন্য দোয়া করি, যেন তারা তাওবা করতে পারেন। সামিল হতে পারেন হুজুরদের কাতারে। একটা স্বপ্ন খুব দেখি আশে পাশের প্রিয় মানুষগুলো সবাই হজুজুর হয়ে যাবে। রাস্তায় দেখা হলে হাসি মুখে সালাম দিয়ে মুসাফা করবে।
গা থেকে ভেসে আসবে মনমাতানো আতরের ঘ্রান।
আড্ডার মেতে উঠব, যে আড্ডা শুধু দুনিয়াতে শেষ হবে না জান্নাতেও চলতে থাকবে।
.
যাই হোক আমাদের মুল আলোচোনায় আসা যাক।
গত দুই পর্বে আমরা কিছু কাজের ব্যাপারে আলোচোনা করেছিলাম।
আসলে কাজ গুলো তেমন কিছুই না আমাদের ডেইলি লাইফেই অংশই বলতে গেলে।
জাস্ট সেগুলই একটু সুচারু ভাবে করা। আজকেও আমরা কিছু কাজের ব্যাপারে আলোচোনা করব ইনশা আল্লাহ।
.
৬/ নেককার সংগী তৈরি করা, বদকারদের সংগ ত্যাগ করাঃ
আসলে বন্ধু জিনিসটা আমাদের লাইফের একটা অবিচ্ছেদ্দ অংশ।
যে কথা গুলো অন্য কাওকে বলা যায় না, সেগুলো অকপটে বন্ধুকে বলা যায়।
তাই বন্ধুর প্রভাবটাও আমাদের জীবনে ব্যাপক।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নেককার আর বদকার বন্ধু ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন।
তিনি নেককার বন্ধুকে তুলনা করেছেন আতর বিক্রেতার সাথে আর বদকার বন্ধুকে কামারের সাথে।
আসলে বন্ধু বললেও ইসলামে আসলে ভ্রাতৃত্বই বোঝানো হয়।
হয়ত বয়ষের ব্যাবধান অনেক, কিংবা অল্পদিনের পরিচয় কিন্তু দ্বীনি ভাইদের সাথে মিশলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। সারা দিনের ক্লান্তিতে যেন তারা এক কাপ ধোয়া উঠা গরম কফি।
কাজেই এলাকার একটা দ্বীনি সার্কেলের সাথে মেশা অত্যন্ত জরুরি।
যেমন তিন বেলা খাবার জরুরি সার্কেলটাও তেমন জরুরি।
সে না হোক আমার মানহাযের, আমার মাসালাকের কিন্তু তবুও আমার উচিত তার সাথে সময় কাটানো।
সব এলাকাতেই তাবলীগের কিছু সাথী ভাই থাকে।
তাদের সাথে মিশে যাওয়াটা খুবি সহজ। তাদের দারসে বসা যেতে পারে, কিংবা আসরের পর ভাইদের সাথে এক কাপ চা। একটু ঘুরতে যাওয়া।
মনটাকেই সতেজ করে দেবে।
আর বদকার বন্ধুদের যতটা সম্ভব এরিয়ে চলা উচিত।
আসলে আমাদের নফসের বৈশিষ্টই হচ্ছে তা স্থির থাকবে না।
লোহা যেমন চুম্বক পেলে তা আকর্ষন করবে।
তেমনি নফসও চাইবে শয়তানের ধোকায় ফেলতে।
আর শয়তানের জাল হচ্ছে এইসব জাহেল বন্ধু বান্ধব।
তাদের নারী, মিউজিক, নেশা এইসব আপনার নফকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। ইমানেই দাবীই হচ্ছে ফেতনা থেকে দূরে থাকা।
নিজের ঈমানকে চীনের মহা প্রাচীর ভাবা ভুল হবে।
তাই উচিত হবে তাদের থেকে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রাখা।
এখন একটা প্রশ্ন আসবে, তাদেরকে আমি দাওয়া দিব না?
হ্যা অবশ্যই দিব।
কিন্তু দাওয়া দেওয়া মানে এই না যে তাদের জাহেল আড্ডায় শরিক হওয়া। আমার মনে হয় আপনি তাদের দাওয়া দেওয়া শুরু করলে তারাই আপনার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে।
তাদের সলাতের জন্য ডাকতে পারেন, কিছু লেকচার দিতে পারেন।
দাওয়াত নিয়তে তাদের সাথে লেগে থেকে, তাদের জাহেল আড্ডায় শরিক না হওয়াই উচিত।
.
ফিতনা থেকে দূরে থাকাঃ
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ফিতনা সম্বলিত বস্তু থেকে দূরে থাকা।
যেমন রেডিও, টিভি, মিউজিক।
কারো মোবাইলে বা পিসিতে হয়ত প্রিয় গানটি রয়ে গেছে।
মন খারাপ কিংবা বিষন্ন লাগলে মনের অজান্তের গানটা বেজে উঠে।
এইসব থেকে দূরে থাকা জরুরি।
এখনি এইসব প্রিয় গান, প্রিয় ছবি , প্রিয় এস.এম.এস ডিলিট করুন।
তাছাড়া এগুলা আপনার পূর্বের গুনাহের রেকর্ড।
যা একদিকে আপনার গুনাহের প্রমান বহন করছে আরেকদিকে আপনার নফফকে ধংস করছে।
টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত।
চাই সেটা খেলাই হোক না কেনো। রোমান্টিক উপন্যাস এসব থেকে ১০০ হাত দুরত্ব বজায় রাখুন।
কারন এগুলো আপনার অন্তরের ভেতর ওসাওয়াসার আগুন জ্বালিয়ে দেবে।
.
হে আমার ভাই সব সময় আল্লাহকে ভয় করুণ।
আর আবারো বলব বেশী বেশী দোয়া করুণ যাতে তিনি আপনাকে হেদায়াতের উপর অটল রাখেন।
.
এক্সটা রিমাইন্ডাতঃ
বেশী বেশি এস্তেগফার করুণ।
.
৪ র্থ পর্বঃ
এ পর্বের শুরুতেই আগের পর্বের কাজ গুলার ব্যাপারে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
১/ বেশী বেশী দোয়া করা তথা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
২/ নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত সলাত খুশু খুযুর সাথে আদায় করা।
৩/ নিয়মিত সলাতের পর, সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানের আগে যিকর করা।
৪/ কোরান তেলাওয়াত করা, না জানলে শিখে ফেলা।
৫/পরকালের ব্যাপারে পড়াশনা করা এবং চিন্তা করা।
৬/ নেককার সংগী তৈরি করা, বদকারদের সংগ ত্যাগ করা ।
৭/ফিতনা থেকে দূরে থাকা।
.
আসলে শয়তানের সাথে আমাদের যুদ্ধ চলমান।
নফসকে ধোকা দিতে সে খুব পটু।
এত কিছুর পরেও হয়ত নফসের ধোকায় পরে যাবেন।
যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
সেক্ষেত্রে আমাদের করনীয় হচ্ছে, হতাশ না হয়ে সাথে সাথে তাওবা, ইস্তেগফার করে ফেলা।
ঐ কাজটি আর না করা।
ইনশানআল্লাহ এই পর্বেও আমরা কিছু বিষয়ে কথা বলব।
.
৮/ দাড়ি ও পোশাকের ব্যাপারে যন্তবান হওয়াঃ
ফেতনা থেকে বাঁচার অন্যতম এক অস্ত্র হচ্ছে দাড়ি টুপি।
দাড়ি রেখে দেওয়া একদিকে যেমন আপনাকে দাড়ি না রাখার কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচাবে।
পাশাপাশি আপনি দাড়ি রেখে দিলে দেখবেন দাড়ির প্রতি ভালোবাসার জন্য হোক কিংবা চক্ষু লজ্জার জন্য হলেও আপনে প্রকাশ্যে হারাম কাজে লিপ্ত হতে পারবেন না।
আপনার বিবেকে বাধা দেব।
কাজেই ভাই দাড়িটা রেখে দিন।
প্রথম প্রথম হয়ত একটু আনইজি লাগবে। অনেকে কটু কথা বলবে।
ফ্যামিলি থেকে বাধা আসবে।
কিন্তু ভাই ওয়াল্লাহি সেই কটু কথা গুলাই হবে আল্লাহর জন্য।
যা আপনাকে ইমানের মিস্টতা অনুভব করাবে।
আমাদের প্রানপ্রিয় রাসুল (সাঃ) কে লোকে পাগল বলত।
আর আমরা তার উম্মত হয়ে দাড়ি রাখার জন্য দুইটা কথা শুনতে পারবোনা।
দাড়ি রাখার সাথা সাথে পাঞ্জাবি টুপি পড়লে সব থেকে উত্তম হয়।
তাহলে আসলে পরিপুর্ন হুজুর মনে হবে। রাস্তায় নাম না জানা দ্বীনি/
বেদ্বিনী ভাইদের থেকে সালাম পেতে মজাই লাগে।
.
আর বোনেরা, আল্লাহ সুবহানু তায়ালার আপনাদেরকে সম্মানিতা করেছেন। আপনাদেরকে পশ্চিমা নারীদের মত বাজারের পন্যে পরিনত হবার থেকে বাচানোর জন্য পর্দার বিধান নাযিল করেছেন।
আর আপনি কিনা কিছু ধোকা বাজের কথায় একে কারাগার ভাবছেন?
বোন দামী জিনিস গুলো তো সব সময় মোরকের ভেতরেই থাকে।
রাস্তার পাশের খোলা খাবারের কি কোন মূল্য আছে।
আবার বলবেন না আপনাদের আমি খাবারের সাথে তুলনা করেছি।
আপনাদের উচিত হবে এই বিষয় গুলার ব্যাপারে কোন দ্বীনি বোনের পরামর্শ নেয়া।
.
৯/নফল সলাতে যত্নবান হওয়াঃ
আল্লাহর সুবহানু তায়লার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বেস্ট ওয়ে হচ্ছে নফল সলাত।
.
হে আমার ভাই/বোন! চিন্তা করুন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যার আগে পিছের সব গুনাহ মাফ করে দেয়ে হয়েছে।
তিনি সলাতে দাঁড়িয়ে পা ফুলিয়ে ফেলতেন।
আর আমাদের অবস্থা হচ্ছে আমরা প্রতিনিয়ত গুনাহ করে চলেছি।
তবুও আমরা রবের সামনে দাড়াচ্ছি না। আপনাদের অনেকেই হয়ত হারিকেন বাতি দেখেছেন।
হারিকেন বাতি জ্বলালে চিমনিতে কালি জমা হত।
সেই কালি পরিস্কার করার দরকার হতো।
তা না হলে আলো আসতো না ঠিক মত। আমাদের অন্তরের আসলে এরকম কালি জমে আছে।
সেই কালি পরিস্কার না করলে আসলে ইমানের স্বাদটা পাওয়া সম্ভব নয়।
এই জন্য আমাদের উচিত নফল সলাতে দাঁড়িয়ে চোখের পানির মাধ্যমে অন্তরের কালী গুলো পরিস্কার করা।
সলাতুল দোহা, তাহাজ্জুত সলাতে আমাদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করার অভ্যাস গড়তে হবে।
আমাদের অনেকের অভিযোগ আমাদের দুয়া কবুল হয় না।
আসলে আমরা আল্লাহর কাছে ঐভাবে চাইই না।
সলাতে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চান। নিজের ইমানকে মজবুত করার ব্যাপারে দুয়া করুন।
.
১০/ প্রিয় মানুষ গুলার ব্যাপারে জানাঃ আমাদের অনেকেই আছেন যারা ক্রিকেট, ফুটবলের প্রচুর ভক্ত।
তাদের সবাই প্রিয় কোন খেলোয়ার আছে।কারো কাছে মেসি, কারো কাছে রোনাল্ড কিংবা কেউ মাশরাফিকে ভালোবাসে।
এই প্রিয় খেলোয়ার গুলা কয় গোল করেছেন, কার কয়টা গাড়ি, কে কেমন খেললেন এগুলা আমাদের নখ দর্পনে। প্রিয় খেলোয়ারের ব্যাপারে না জানলে সে আবার প্রিয় হয় কিভাবে?
অথচ আমাদের মুসলীমদের সব থেকে প্রিয় মানুষ হবার কথা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে ভালোবাসার ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাকে সব কিছুর থেকে বেশী ভালোবাসতে না পারলে মুমিন হওয়া যাবে না।
অথচ এই মানুষটার ব্যাপারে আমরা কতটাই বা জানি?
তার নাম তার মাতার নাম আর পিতার নাম ছাড়া?
তাছাড়া তিনি হচ্ছেন আমাদের রোল মডেল।
দুনিয়ার সব থেকে সম্মানিত ব্যাক্তি। ইনি হচ্ছেন সেই ব্যাক্তি যিনি সারা রাত জেগে আমাদের জন্য তার রবের দরবারে কাঁদতেন।
আর আমরা কিনা তার ব্যাপারে জানিনা!!
কাজেই রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি আর দ্বীনের প্যাকটিক্যাল জ্ঞানের জন্য সিরাহ পাঠ আবশ্যই। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের বাংলা ভাষায় অনেক সিরাহ অনুবাদ হয়েছে।
প্রাথমিক অবস্থায় “আর রাহিকুল মাখতুম” দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। কেও লেকচার শুনতে চাইলে আনোয়ার আল আওলাকির (রাহিঃ) এর সিরাহ সিরিজ শুনতে পারেন।
রাসুল (সাঃ) এর পরে এই উম্মাহ শ্রেষ্ট ব্যাক্তি হচ্ছেন সাহাবাগন।
ওয়াল্লাহি সাহাবাদের ব্যাপারে আপনি যতই জানবেন, তাদের রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসার ঘটনা গুলা যখন পড়বেন।
তখন আপনার ইমানের লেভেল দেখবেন বেরে যাবে।
নিজের অজান্তেই চোখের পানি ঝরবে। সাহাবাদের জীবনির জন্য আমার জানা মতে সেরা বই হচ্ছে “আলোর কাফেলা।” সাইন্স ফিকশনে আমরা হয়ত টাইম মেশিনের ব্যাপারে পড়েছি।
এটাকে টাইম মেশিন বললে বোধহয় ভুল হবে না।
আপনি পড়তে থাকবেন আর আপনার মনে হবে আপনার সামনে ঘটনা গুলো ঘটছে।
.
৫ম পর্বঃ
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা গত কয়েক পর্বে কিছু বিষয়ের উপর আলোচোনা করেছিলাম, যা আমাদের দ্বীনের পথে চলতে সহায়তা করবে।
আমাদের মনে শক্তি জোগাবে শয়তানের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে।
আসলে শয়তানের সাথে আমাদের এই যুদ্ধ চলমান।
শয়তান অনবরত লেগে থাকবে আমাদের দ্বারা গুনাহ করানোর এমন কি সে যতক্ষন না আমাদের রুহ আমাদের দেহ ছেড়ে চলে যাবে ততক্ষন পর্যন্ত শয়তান আমাদেরকে পরাজিত করার চেস্টা করবে।
.
ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) মৃত্যু সময় উপস্থিত।
তার পূত্র তার পাশে বসা।
বারবার আহমেদ ইবনে হাম্বল জ্ঞান হারাচ্ছিলনে।
আর বলছিলেন এখনি নয় এখনি নয়। সুনাহান আল্লাহ!
ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর সামনে মৃত্যু উপস্থিত আর তিনি বলছেন এখনি নয়, এখনি নয় এর কারন কি? আমাদের মতই ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল ছেলেও বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন কেনো তার পিতা এই কথা বলছেন?
একটু পরে যখন তার পিতার একটু চেতনা ফিরে পেলেন তখন তিনি তাকে এর কারন জিজ্ঞেস করাতে ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) উত্তর দিলেন, শয়তান তার সামনে উপস্থিত হয়ে বলছিল হায় আমি তোমাকে হারাতে পারলাম না, হায় তোমার সাথে আমার যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলো।
তখন আমি বলছিলাম না এখনি নয়, যতক্ষন না আমার রুহু বেরিয়ে যাচ্ছে ততক্ষন আমি তোমার ধোকা থেকে নিরাপদ নই।
.
সুবাহান আল্লাহ!
এটাই ছিল সালাফদের চিন্তা ভাবনা তারা কখনই নিজেদের শয়তানের ধোকা থেকে নিরাপদ ভাবতেন না।
অথচ আমাদের অবস্থা?
আমরা কিভাবে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারি?
কাজেই আমাদের সব সময় বেশী বেশী ইস্তেগফার করা উচিত।
কখনই শয়তানের সাথে এই লড়াইড়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ঠিক না।
আমাদের অনলাইন অফ লাইনের প্রতিটি কাজের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।
বিপরীত লিঙ্গের স্টাটাস এ লাইক কমেন্টের ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
বোনদের ভাইদের পোস্টে লাভ ইমো এবং ভাইদের বোনদের পোস্টে লাভ ইমো না দেয়াই উচিত।
বিপরীত লিঙ্গের পোস্টে অহেতুক কমেন্ট থেকে বিরত থাকা উচিত।
অনেককে দেখা যায় তাদের পোস্ট অনেক লাভ ইমো ব্যাবহার করেন এটা এক দিকে দৃস্টিকটু একই সাথে ফিতনার কারনও হতে পারে।
.
যাই হোক আমরা মুল আলোচোনার প্রবেশ করি।
গত কয়েক পর্বে আমরা ১০টি টপিকের উপর আলোচনা করেছিলাম ইনশা আল্লাহ আমরা এই পর্বেও কিছু বিষয়ের উপর আলোচোনা করব।
.
১১/ দৃস্টির হেফাজত করাঃ
আল্লাহ সুবহানু তায়লা পবিত্র কোরানে বলেন,
“মু’মিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবিহিত।”
(সূরা নূর ৩০)
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের উপর জেনার একটা অংশ অবধারিত করে দিয়েছেন।
নিশ্চিতভাবে তা সে পাবে।
সুতরাং চোখের জিনা হল দৃষ্টি দেয়া।
জিহ্বার জিনা হল কথা বলা।
আর অন্তর কামনা করে।
লজ্জা স্থান তা সত্যে পরিণত করে, অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।”
অর্থাৎ লজ্জা স্থানের দ্বারা কেউ অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় আবার কেউ তা থেকে বিরত থাকে।
(বুখারী মুসলিম)
.
সুবাহান আল্লাহ, উপরের আয়াত ও হাদিসের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাবো।
দৃস্টি হেফাজত করা কতটা গুরুত্বপূর্ন। অথচ এ ব্যাপারে আমাদের অনেক দ্বিনি ভাইরা যেন একটু কম সিরিয়াস।
বেপর্দা বোনদের দিকে না তাকালেও তাদের চোখ গুলো ঠিকই হিজাবি বোনদের খুজে বের করে।
সুনাহান আল্লাহ! ভাই এসব থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কেননা এই কাজ গুলো আপনার অন্তরে কালিমা একে দেয়।
আপনার অন্তরে রবের ভালোবাসা কমিয়ে দেয়।
কাজেই আমাদের উচিত হবে এই সব বিষয় গুলো গুরুত্বের সাথে খেয়াল করা।
যেসব জায়গায় ফিতনা হবার সম্ভাবনা তা এরিয়ে চলা।
রাস্তা চলার সময় দৃস্টি যথা সম্ভব নিচে রাখা।
এ ক্ষেত্রে আপনি মনে মনে যিকর করতে পারেন।
বাসে চলার সময় আমাদের দৃস্টি হেফাজত করা জরুরি।
বিশেষ করে যারা ঢাকায় থাকেন তাদের অনেক সময়ই বাসে বা অনান্য যানবাহনে কাটাতে হয়।
এই সময়টা লেকচার বা কোরান তেলাওয়াত শুনতে ব্যয় করতে পারেন।
এতে করে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে চলে যাবার চাঞ্চ কম থাকবে।
.
শেষ করার আগে আগের কাজ গুলোর উপর একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাকঃ
১/ বেশী বেশী দোয়া করা তথা আল্লাহর কাছে সাহয্য চাওয়া।
২/ নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সলাত খুশু খুযুর সাথে আদায় করা।
৩/ নিয়মিত সলাতের পর, সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানের আগে যিকর করা।
৪/ কোরান তেলাওয়াত করা, না জানলে শিখে ফেলা।
৫/পরকালের ব্যাপারে পড়াশুনা করা এবং চিন্তা করা।
৬/ নেককার সংগী তৈরি করা, বদকারদের সংগ ত্যাগ করা।
৭/ফিতন থেকে দূরে থাকা।
৮/ দাড়ি ও পোশাকের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
৯/নফল সলাতে যত্নবান হওয়া।
১০/ প্রিয় মানুষ গুলার ব্যাপারে জানা।
.
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন:
মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১০৭৩২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আল্লাহ সাথে শিরক করা কাকে বলে
২১ নভেম্বর, ২০২১
ত্রিপুরা ৭৯৯১০৫
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
★ শিরক কি ?
রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সহিত আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শিরক ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়৷ যেমন আল্লাহর সাথে অন্য কারো নিকট দোয়া করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ, মান্নাত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির কোন কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা৷ এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
★ শিরকের প্রকারভেদ ?
#শিরক দুই প্রকার:
১. শিরকে আকবার (বড় শিরক)
যা বান্দাকে মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়৷ এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃতু্যবরণ করে, এবং তা থেকে তওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে দোজখে অবস্থান করবে৷
শিরকে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জি্বন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা৷ আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শিরকের প্রচুর চর্চা হচ্ছে৷ এদিকে ইশারা করে আল্লাহ বলেন:
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ ﴿18﴾ سورة يونس
‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’
২.শিরকে আসগার (ছোট শিরক)
শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়না, তবে তার একত্ববাদের আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে৷ এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ৷ এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
~ প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক
এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে৷
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ كَفَرَ أوْ أشْرَكَ.
‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শিরক করল’
অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, ”আল্লাহ এবং তুমি যেমন চেয়েছ” ماشاء الله وشئت কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ”আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন” কথাটি বললে তিনি বললেন, ”তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন৷”
আর একথাও বলা যে, ”যদি আল্লাহ ও অমুক ব্যক্তি না থাকত” ৷ لولا الله و فلان উপরোক্ত ক্ষেত্রদ্বয়ে বিশুদ্ধ হল নিম্নরূপে বলা – ”আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে” ماشاء الله ثم فلان ”যদি আল্লাহ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত” لولا الله ثم فلان । কেননা আরবীতে ثم (যার অর্থ: তারপর বা অতঃপর) অব্যয়টি বিলম্বে পর্যায়ক্রমিক অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ তাই”এবং ” শব্দের বদলে “তারপর” কিংবা “অতঃপর শব্দের ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়৷ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿29﴾ سورة التكوير
‘তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা করতে পারনা৷’
পক্ষান্তরে আরবী واو যার অর্থ : এবং অব্যয়টি দুটো সত্ত্ব বা বস্তুকে একত্রীকরণ ও উভয়ের অংশীদারিত্ব অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ এদ্বারা পর্যায়ক্রমিক অর্থ কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে সংঘটিত অর্থ বুঝা যায়না৷ যেমন একথা বলা যে, ” আমার জন্য তো কেবল তুমি এবং আল্লাহ আছ” ও ” এতো আল্লাহ এবং তোমার বরকতে হয়েছে”৷
#আর কাজের ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো৷ এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বলাথ-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে আসগার৷ কেননা আল্লাহ এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি৷ পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু স্বয়ং বালা- মুসীবত দূর করে, তবে তা হবে শিরক আকবর৷ কেননা এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট৷
#দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক
এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে৷ যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা৷ অথর্াত্ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা৷ যেমন সুন্দর ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির- আযকার পড়া ও সুকন্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে৷ যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন৷ আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿110﴾ سورة الكهف
‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر، قالوا يارسول الله وما الشرك الأصغر قال: الرياء
‘তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বিশী করছি তা হল শিরকে আসগরধ৷ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)
পার্থিব লোভে পড়ে কোন আমল করাও এ প্রকার শিরকের অন্তর্গত৷ যেমন কোন ব্যক্তি শুধু মাল- সম্পদ অর্জনের জন্যেই হজ্জ করে, আযান দেয় অথবা লোকদের ইমামতি করে, কিংবা শরয়ী জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে৷
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
تعس عبد الدينار و تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميصة، تعس عبدالخميلة إن أعطي رضي إن لم يعط سخط.
‘ দীনার , দিরহাম এবং খামিসা- খামিলা (তথা উত্তম পোশক-পরিচ্ছদ- এর যারা দাস, তাদের ধ্বংস৷ তাকে দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট হয়, আর না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়৷ ‘
#উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বাবে বুঝা যাচ্ছে যে,শিরকে আকবার ও শিরকে আসগারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে৷ সেগুলো হল:
১. কোন ব্যক্তি শিরকে আকবারে লিপ্ত হলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায়৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারের ফলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয় না৷
২. শিরকে আকবরে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবেনা৷
৩. শিরকে আকবার বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শিরকে আসগার সব আমল নষ্ট করেনা৷ বরং রিয়া ও দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত আমল শুধু তত্সংশ্লিষ্ট আমলকেই নষ্ট করে৷
৪. শিরকে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল মুসলমানদের জন্য হালাল৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল কারো জন্য হালাল নয়
★ #শিরক কেন সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসাবে বিবেচিত ?
১. এতে ‘ইলাহ’- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়৷ কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো৷ আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়৷’
জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা৷ সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে৷ আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়৷
২. আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্ল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ﴿48﴾ سورة النساء
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না৷ এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন৷ ‘
৩. আল্লাহ এও বলেনওয, তিনি মুশরিকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ তিনি বলেন
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ﴿72﴾ سورة المائدة
‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম৷ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই৷’
৪. শিরক সকল আমরকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿88﴾ سورة الأنعام
‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত৷’
আল্লাহ আরো বলেন:
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿65﴾ سورة الزمر
‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন৷’
৫. মুশরিক ব্যক্তির রক্ত (তথা প্রাণ সংহার) ও ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়া উভয়ই হালাল৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿5﴾ سورة التوبة
‘অতঃপর মুশরিকদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর৷ আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত্ পেতে বসে থাক৷’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أمِرْتُ أنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَاإلَهَ إلَّا الله، فإذَا قَالُوْاهَا عَصَمُوْا مِنِّي دِمَاءهُم وَأمْوَالَهُم إلَّا بِحَقِّهَا
‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক মা’বুদ নাই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে৷ অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল৷ অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে৷’
৬. কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ৷
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله . قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.
‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া৷’
শিরক হলো স্পষ্ট জুলুম ও অন্যায়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان
‘নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম’
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন:
মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১