আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

১৫- সূর্য-চন্দ্র গ্রহনের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১০৫২
৬৭২. সূর্যগ্রহণের নামায জামাআতে আদায় করা।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) লোকদেরকে নিয়ে যমযমের সুফফায় নামায আদায় করেন এবং আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) জামাআতে নামায আদায় করেছেন।
ইবনে উমর (রাযিঃ) গ্রহণের নামায আদায় করেছেন।
৯৯৪। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন নামায আদায় করেন এবং তিনি সূরা বাকারা পাঠ করতে যত সময় লাগে, সে পরিমাণ দীর্ঘ কিয়াম করেন। এরপর দীর্ঘ রুকু’ করেন। তারপর মাথা তুলে পুনরায় দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু করলেন। তবে তা প্রথম রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর তিনি সিজদা করেন। আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর আবার দীর্ঘ রুকু করেন, তবে তা আগের রুকুর চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। তারপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিয়াম করলেন, তবে তা প্রথম কিয়াম অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু করেন, তবে তা প্রথম রুকু অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং নামায শেষ করেন। ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গিয়েছে।
তারপর তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমুহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা গ্রহণ দেখবে তখনই আল্লাহকে স্মরণ করবে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা থেকে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পেছনে সরে এলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো জান্নাত দেখছিলাম এবং একগুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে, দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। এরপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা স্ত্রী লোক। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কী কারণে? তিনি বললেনঃ তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, এরপর সে তোমার থেকে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তা হলে বলে ফেলে, তোমার থেকে কখনো ভালো ব্যবহার পেলাম না।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী)। এটা বলা হয়েছে জাহান্নামের একটা বিশেষ সময় সম্পর্কে। এটা সাধারণভাবে জাহান্নামের সব সময়কার কথা নয়। মূলত প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি থাকবে। পরে যারা ঈমান নিয়ে মারা যাবে, ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে চলে যাবে। তখন জান্নাতে পুরুষ ও নারী উভয়ের সংখ্যাই সমান হয়ে যাবে।

প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ অনেক মুমিন নারী প্রথমে জাহান্নামে যাবে, তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। তাদের প্রথমদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তাদের এমনকিছু দোষ, যা সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি পাওয়া যায়। হাদীসে আছে,
تكثرن اللعن، وتكفرن العشير
“তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর।"

অন্যান্য পাপ নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণত সমানই করে। কিন্তু লানত করার পাপ তুলনামূলক নারীদের মধ্যে বেশি। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা তো তাদেরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই প্রথমদিকে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হবে।

হাদীছটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়া নয়; বরং নারীদের মধ্যেই যারা জাহান্নামে যাবে তাদের একদলের তুলনায় অন্যদলের সংখ্যা বেশি বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের অনেককেই বিভিন্ন কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বটে, কিন্তু লা'নত করা ও স্বামীর অবাধ্যতা করার অপরাধে যারা জাহান্নামে যাবে তাদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি হবে।

উল্লেখ্য : স্বামীর অবাধ্যতা করা যেমন পাপ, তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করাও পাপ বৈকি। অনেক স্বামীই এ পাপ করে থাকে। এর থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কারণে তাদেরকেও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে আছে।

খ. এমন কিছু পাপ আছে, যা সাধারণত মহিলারাই বেশি করে থাকে। তাদের উচিত সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, যাতে সেসব পাপের কারণে জাহান্নামে যেতে না হয়। তারা যাতে সেসব পাপ ছাড়তে পারে, পুরুষের উচিত সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন