আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

১৩- বিতর নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১০০৪
৬৩৪. রুকুর আগে ও পরে কুনূত পাঠ করা।
৯৫০। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাগরিব ও ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করা হত।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দুআয়ে কুনূত রুকুর আগে,না পরে?

এ বিষয়ে মতভেদ আছে যে, কুনূত শুধু বিতর নামাযেই পড়া হবে, না ফজরের নামাযেও; তদ্রূপ রুকুর আগে পড়া হবে, না রুকুর পরে। হানাফী মাযহবের আলিমগণ বলেন, বিতরের কুনূত সারা বছর পড়া হবে এবং রুকুর আগে পড়া হবে।

পক্ষান্তরে কুনূতে নাযেলা রুকুর পরে ও বিশেষ বিশেষ অবস্থায় পড়া হবে। রুকুর আগেও রুকুর পরে কুনূত পড়া সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মাঝে হানাফী আলিমগণ এভাবেই সমন্বয় করে থাকেন।

সহীহ বুখারী ১/১৩৬, ‘বাবুল কুনূত কাবলার রুকু ওয়া বা’দাহ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আছে, ‘আসিম আহওয়াল বলেন, ‘আমি (হযরত) আনাস ইবনে মালিক রা.কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘কুনূত আছে।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকুর আগে, না পরে? তিনি বললেন, ‘রুকুর আগে।’ আমি বললাম, জনৈক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেন? তিনি বললেন, ‘সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন।’

حدثنا عاصم قال : سألت أنس بن مالك رضي الله عنه عن القنوت فقال : كانت القنوت، قلت : قبل الركوع أو بعده؟ قال : قبله، قلت : فإن فلانا أخبرني عنك إنك قلت : بعد الركوع، فقال : كذب، إنما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الركوع شهرا.

হযরত আনাস রা. থেকেই অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন। আবু বকর রা.ও মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন, উমর রা.ও মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন।’

إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت حتى مات، وأبو بكر رضي الله عنه حتى مات، وعمر رضي الله عنه حتى مات، رواه البزار، ورجاله موثقون.

(বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৩৯)

এই বর্ণনায় বিতরের কুনূতই উদ্দেশ্য। কারণ ফজরের কুনূত সর্বদা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না; বরং বিপরীত বিষয়টি সহীহ বুখারীর উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এজন্য মুসনাদে আহমদ ও বাযযারের নিম্নোক্ত বর্ণনায় ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ জীবনভর) ফজরের নামাযে কুনূত পড়েছেন।’

ما زال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت في الفجر حتى فارق الدنيا.

‘ফিল ফজর’ শব্দটি রাবীর ভুল না হয়ে থাকলে কুনূতে নাযিলা উদ্দেশ্য।

মোটকথা, বহু হাদীসের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত এই যে, কুনূতে নাযিলা, যা ফজরের নামাযে এবং (কখনো কখনো অন্য নামাযেও) পড়া হয় তা রুকুর পরে হবে আর তা হল বিশেষ পরিস্থিতির কুনূত। পক্ষান্তরে বিতরের কুনূত সর্বদা রুকুর আগে পড়া হবে। আর এটিই হচ্ছে সারা বছরের কুনূত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন