আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১৩- যাকাতের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১০০৯
১১. প্রত্যেক কল্যাণকর কাজই সাদ্‌কা
২২০৭। মুহাম্মাদ ইবনে রাফি (রাহঃ) ......... হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,এ হচ্ছে আবু হুরায়রা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা। এরপর তিনি কিছু হাদীস বর্ণনা করলেন, তার মধ্যে এটিও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক দিন যখন সূর্য উদিত হয়, তখন মানুষের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কর জন্য সাদ্‌কা ওয়াজিব। তিনি বলেন, দু’ব্যক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করা সাদ্‌কা, কোন ব্যক্তিকে তার সওয়ারীর ব্যাপারে সাহায্য করা অথবা তার মাল সামগ্রী তুলে দেয়া সাদ্‌কা। তিনি আরও বলেছেন, ভাল কথা বলা সাদ্‌কা, নামাযের উদ্দেশ্যে গমনের পথে প্রতিটি পদক্ষেপ সাদ্‌কা। চলার পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া সাদ্‌কা।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে মানবদেহের জোড়াসমূহ ও প্রতিটি অঙ্গ যে আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং এর শোকর আদায়ের উপায় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
মানবদেহের জোড়াসমূহ কত বড় নিআমত তা একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসে। এ জোড়াসমূহের কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার অত্যন্ত সহজ হয়েছে। এগুলো না থাকলে সারা শরীর অখণ্ড এক কাঠের গুঁড়ি বা পাথরের মূর্তির মত হত। না তা ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করা যেত আর না সুবিধামত ব্যবহার করা সম্ভব হত। আল্লাহ জাল্লা শানুহু সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য যেমন পৃথক পৃথক অঙ্গ সৃষ্টি করেছেন, তেমনি ব্যবহারের সুবিধার্থে অঙ্গসমূহকে সুনিপুণভাবে পরস্পর জুড়ে দিয়েছেন।
প্রথমত অঙ্গসমূহের সুসমঞ্জস সৃষ্টি ও তার যথোপযুক্ত সন্ধিস্থাপন আল্লাহ তাআলার বিশাল নিআমত। তারপর এসব অঙ্গ ও অঙ্গসন্ধি সুস্থ ও সক্রিয় রাখা তাঁর অতি বড় মেহেরবানী। আমাদের প্রতি তিনি এ মেহেরবানী নিত্যদিন জারি রাখছেন। মানুষ সাধারণত দিন শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রাম যায় আবার ভোরবেলা সুস্থ ও চনমনে শরীর নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ে।
প্রতিদিন সকালবেলা আমরা আমাদের প্রতিটি অঙ্গকে সুস্থ ও সচল পাই। কখনও এমনও হয়ে যায় যে, ঘুম থেকে উঠার পর দেখা গেল হাঁটুতে খিল ধরে গেছে। আগের মত স্বাভাবিক নড়াচড়া করছে না। যার এমন হয় সে বুঝতে পারে হাঁটুর জোড়াটি কত বড় নিআমত। এতদিন সে কেমন অবলীলায় চলাফেরা করত, আজ তার চলতে কত কষ্ট। তারপরও অন্যসব অঙ্গ যেহেতু অবিকল আছে, তাই তার জীবন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়নি। সে তার বেশিরভাগ অঙ্গ নিয়ে সচল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তার সবগুলো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারতেন। বিশেষত এ কারণেও যে, অঙ্গগুলো তো আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটি অঙ্গ আল্লাহ তাআলার কত বড় নিআমত। এর কোনওটিকেই পাপকর্মে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু হামেশাই তা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এ নিআমত কেড়ে না নিয়ে বহাল তবিয়তে রেখে দিয়েছেন। তো ঘুম থেকে জাগার পর যখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তাদের সন্ধিসমূহ সুস্থ-সবল দেখতে পাওয়া যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কর্তব্য হয়ে পড়ে এসবের সৃষ্টিকর্তা ও রক্ষাকর্তার সামনে নিজেকে একজন শোকরগুযার বান্দারূপে পেশ করা। এ হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সংক্ষিপ্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যে এ বিষয়টাই তুলে ধরেছেন।
তিনি ইরশাদ করেন- كل سلامى من الناس عليه صدقة كل يوم تطلع فيه الشمس (সূর্য উদিত হয় এমন প্রতিটি দিনে মানবদেহের প্রতিটি জোড়ার উপর সদাকা আবশ্যিক হয়)। ‘সূর্য উদিত হয়' এ কথাটি 'দিন'-এর ব্যাখ্যামূলক বিশেষণ। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের দ্বারাই দিনের সূচনা ঘটে। যদি সূর্য না উঠত, দিন হত না। তাহলে সূর্যোদয়ও আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিরাট অনুগ্রহ। একটা সময় আসবে। যখন আর সূর্যোদয় হবে না। অনন্ত অন্ধকারে নিখিল বিশ্ব আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। সেটা রোজ কিয়ামত। যতদিন কিয়ামত না হচ্ছে, ততদিন সূর্যের উদয়-অস্ত ঘটতে থাকবে আর এর মাধ্যমে কুলমাখলূক আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভ করতে থাকবে। ভোগ করতে থাকবে বহুবিচিত্র নিআমত।
সূর্যোদয়ের মাধ্যমে মানুষ নিত্যনতুন দিন পায়। এভাবে প্রতিদিন নতুন করে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও অস্থিসমূহের নিআমত হাসিল করে। তাই প্রতিদিন নতুন করে আল্লাহর শোকর আদায় করা তার কর্তব্য হয়ে যায়। সদাকা আদায় কর্তব্য বলে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সারাদিন যাতে সবগুলো অঙ্গ সুস্থ ও সক্রিয় থাকে এবং নিজ গুনাহের কারণে কোনও অঙ্গ কেড়ে নেওয়া না হয়, তাও প্রত্যেকেরই একান্ত কাম্য। এ কামনা যাতে পূরণ হয়, সে লক্ষ্যেও সদাকা আদায় করা কর্তব্য। কেননা সদাকা দ্বারা বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন الصدقة تطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء ‘সদাকা আল্লাহর ক্রোধ নিবারণ করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।২১৮
মানবদেহে ৩৬০টি জোড়া আছে। প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একটি সদাকা ওয়াজিব হলে প্রতিদিন সর্বমোট ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কর্তব্য হয়। বাহ্যত বিষয়টা কঠিন। কোনও কোনও সাহাবী প্রশ্নও করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কী করে সম্ভব? তার উত্তরে তিনি এ হাদীছ পেশ করেন, যা দ্বারা জানা গেল যে, সদাকা বলতে কেবল অর্থ-সম্পদ খরচ করাই বোঝায় না; বরং যে-কোনও নফল ইবাদত-বন্দেগীকেও সদাকা বলে। এ হাদীছে সেরকম কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে দুই ব্যক্তির মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেওয়া।

দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করার দ্বারা সদাকার ছাওয়াব
হাদীছে ইরশাদ হয়েছে تعدل بين الاثنين صدقة (কেউ দুই ব্যক্তির মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিলে তা একটি সদাকা)। অর্থাৎ দুই ব্যক্তির মধ্যে যদি ঝগড়া-ফাসাদ হয় বা এমন মনোমালিন্য হয়, যদ্দরুন একে অন্যের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত বন্ধ করে দেয়, তবে তাদের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে মীমাংসা করে দেওয়া একটি সদাকা । গরীব-দুঃখীর প্রতি যেমন তাদের অভাবের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে দান-সদাকা করা হয়ে থাকে, মীমাংসার কাজটিও যেন তদ্রূপ বিবদমান দুই পক্ষের উপর একরকম মানবিক দান। এর দ্বারা তাদের মানসিক কষ্ট লাঘব হয়। সেইসঙ্গে কলহ-বিবাদের কারণে যেসকল অন্যায়-অনুচিত কথা ও কাজে তারা লিপ্ত হয়ে পড়ে, তা থেকেও
তাদেরকে রক্ষা করা হয়, যেমন দান-সদাকা দ্বারা অভাবগ্রস্তকে অনুচিত কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা হয়।
বিবদমান দুই পক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলে তখন তো মীমাংসা করাটা বিচারকের দায়িত্ব হয়ে যায় আর বিচারক ইনসাফসম্মত মীমাংসা করলে তারও এজন্য সদাকার ছাওয়াব অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে আদালতে মামলা রুজু হওয়ার আগেই যদি কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে সেও সদাকার ছাওয়াব লাভ করবে। যাদের এটা করার মত যোগ্যতা ও ক্ষমতা আছে তাদের এটা করাই উচিত। এটা ভ্রাতৃত্ববোধের দাবি। এক মুমিন যখন অপর মুমিনের ভাই, তখন দুই ভাইয়ের পারস্পরিক বিরোধে তৃতীয় ভাইয়ের মীমাংসামূলক ভূমিকা রাখা কর্তব্য বৈকি, যেমন উপরে বর্ণিত চতুর্থ আয়াত দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি।
মীমাংসায় ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা জরুরি
এ হাদীছে দু'জনের মধ্যে মীমাংসা করাকে تعدل (তুমি ইনসাফ করবে) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এটা ইঙ্গিত করে, সত্যিকারের মীমাংসা সেটাই, যা ন্যায় ও ইনসাফসম্মত হয় এবং সদাকার ছাওয়াব সেরকম মীমাংসা দ্বারাই অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে যে মীমাংসা ইনসাফসম্মত হয় না, তা প্রকৃত মীমাংসাই নয়; বরং জুলুম ও অন্যায় পক্ষপাত। সেরকম মীমাংসা ছাওয়াবের কাজ নয়; বরং কঠিন গুনাহ।
অন্যায় ও পক্ষপাতদুষ্ট মীমাংসা যখন কঠিন পাপ, তখন এর থেকে বিরত থাকা এবং সর্বদা ইনসাফসম্মত ফয়সালা করা অবশ্যকর্তব্য, তাতে বিচারপ্রার্থী যে-ই হোক না কেন বা বিবদমান কোনও পক্ষের সঙ্গে মীমাংসাকারীর সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ এবং অপর পক্ষ তার যত ঘোর শত্রুই হোক না কেন। সুতরাং কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا

“হে মুমিনগণ! তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যাও আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতারূপে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে কিংবা পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সে ব্যক্তি (যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার আদেশ করা হচ্ছে)। যদি ধনী বা গরীব হয়, তবে আল্লাহ উভয়প্রকার লোকের ব্যাপারে (তোমাদের চেয়ে) বেশি কল্যাণকামী। সুতরাং তোমরা ইনসাফ করার ব্যাপারে ইচ্ছা-অভিরুচির অনুসরণ করো না।২১৯
অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

'হে মুমিনগণ! তোমরা হয়ে যাও আল্লাহর (বিধানাবলি পালনের) জন্য সদাপ্রস্তুত (এবং) ইনসাফের সাথে সাক্ষ্যদানকারী এবং কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ইনসাফ পরিত্যাগে প্ররোচিত না করে। ইনসাফ অবলম্বন করো। এ পন্থাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী। এবং আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত।২২০

বাহনে ওঠা-নামায় সহযোগিতা করা
তারপর এ হাদীছে বলা হয়েছে- وتعين الرجل في دابته فتحمله عليها او ترفع له এই (কোনও ব্যক্তিকে সওয়ারিতে চড়তে সাহায্য করলে বা তার উপর তার মাল-সামানা তুলে দিলে তাও একটি সদাকা)। এটি এক উন্নত মানবিক শিক্ষা। অনেক সময় বৃদ্ধ, রুগ্ন, ভারী বোঝা বহনকারী ব্যক্তি কিংবা এরকম অনেকের পক্ষে যানবাহনে ওঠা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ হাদীছ আমাদের উৎসাহ দিচ্ছে যেন তাদেরকে যানবাহনে উঠতে সাহায্য করি। এতে সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায় এবং শরীরের জোড়ার উপর যে সদাকা ওয়াজিব হয় তা আদায় হয়ে যায়। অনুরূপ কারও মালামাল যানবাহনে তুলে দেওয়ার দ্বারাও একইরকম ছাওয়াব হাসিল হয়। এমনিভাবে যানবাহন থেকে নামতে বা মালামাল নামাতে সাহায্য করাটাও অনুরূপ ছাওয়াবের কাজ। আমরা অনেক সময়ই এ বিষয়টা লক্ষ করি না। ফলে নিজে যেমন ছাওয়াবের অংশীদার হওয়া থেকে বঞ্চিত থাকি, তেমনি মুসলিম ভাই-বেরাদারকেও অবাঞ্ছনীয় কষ্টের মধ্যে ফেলে রাখি, যা কিনা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এরকম আরও অনেক কাজ আছে, যা যানবাহনে ওঠানামায় সাহায্য করার পর্যায়ভুক্ত। যেমন, কাউকে বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামায় সাহায্য করা, নদী, খাল বা পথসেতু পার হতে সহযোগিতা করা, রাস্তা পারাপার করিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
কারও বাহনে তার মাল তুলে দেওয়া যখন সদাকারূপে গণ্য, তখন অন্যের বোঝা বহনে সাহায্য করা নিশ্চয়ই আরও বেশি ছাওয়াবের কাজ হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে ব্যাপক অবহেলা বিরাজ করে। যাত্রাপথে অনেক সময়ই দেখা যায় একই পথের যাত্রী ভারী বোঝা নিয়ে চলছে। কিন্তু আমার বোঝা হালকা। তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তির সাহায্যে আমরা কমই হাত বাড়াই। অথচ এটা করলে সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যেত এবং অস্থিসন্ধির পক্ষ থেকে একটা সদাকা আদায় হয়ে যেত। এ হাদীছ আমাদেরকে সে কাজেও উৎসাহ যোগায়।

উত্তম কথাও সদাকা
এ হাদীছে আরও ইরশাদ হয়েছে- الكلمة الطيبة صدقة , (উৎকৃষ্ট কথাও একটি সদাকা)। 'কালেমায়ে তায়্যিবা' বা উৎকৃষ্ট কথা বলতে এমন যে-কোনও কথাকে বোঝায়, যা দ্বারা মানুষের দুনিয়া বা আখেরাতের কোনও কল্যাণ সাধিত হয়, যেমন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা, কাউকে সুপরামর্শ দেওয়া, কারও পক্ষে সুপারিশ করা, কারও শোকতাপে সান্ত্বনা দেওয়া, কাউকে আশু বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা, কাউকে দীনী কোনও বিষয় শিক্ষাদান করা ইত্যাদি।
এমনকি কারও সঙ্গে বৈধ মনোরঞ্জনমূলক কথা বলাও সদাকার অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কারও মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেওয়াকেও সদাকা সাব্যস্ত করেছেন। যেমন হযরত আবূ যার রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে تبسمك في وجه أخيك صدقة “তোমার ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার মুচকি হাসি দেওয়াটাও একটি সদাকা।২২১
আমরা যাকে কালেমায়ে তায়্যিবা বলি অর্থাৎ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' (আল্লাহ ছাড়া কোনও মাবূদ নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার রাসূল), এটাও এক উৎকৃষ্ট কথা বৈকি। সুতরাং এটা মুখে উচ্চারণ করাও একটি সদাকা। এমনিভাবে এ কালেমা অন্যকে শিক্ষাদান করার মধ্যেও রয়েছে সদাকার ছাওয়াব।
কুরআন মাজীদে কালেমায়ে তায়্যিবা বা উৎকৃষ্ট কথাকে উৎকৃষ্ট গাছের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যে গাছের ফল মানুষ সর্বদা ভোগ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে-

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا

“তোমরা কি দেখনি আল্লাহ কালেমা তায়্যিবার কেমন দৃষ্টান্ত দিয়েছেন? তা এক পবিত্র বৃক্ষের মত, যার মূল (ভূমিতে) সুদৃঢ়ভাবে স্থিত আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। তা নিজ প্রতিপালকের নির্দেশে প্রতি মুহূর্তে ফল দেয়।২২২
অর্থাৎ বৃক্ষের মূল যেমন মাটির নিচে স্থাপিত থাকে, তেমনি কালেমায়ে তায়্যিবার মূল তথা ঈমান ও বিশ্বাস মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল থাকে। গাছের ডালপালার মত কালেমায়ে তায়্যিবারও ডালপালা আছে আর তা হচ্ছে সৎকর্মসমূহ। উৎকৃষ্ট গাছ বলতে মুফাসিরগণের মতে খেজুর গাছ বোঝানো হয়েছে, যার ফল সারা বছরই খেতে পাওয়া যায়। তেমনি কালেমায়ে তায়্যিবারও ফল অর্থাৎ আল্লাহ জাল্লা শানুহুর স্থায়ী ও অনন্ত সম্ভটি মুমিনগণ জান্নাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোগ করতে থাকবে। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ পবিত্র কালেমা তাঁরই দিকে আরোহণ করে এবং সৎকর্ম তাকে উপরে তোলে।২২৩
অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার যে তাসবীহ তাহলীল ও যিকর আযকার করে থাকে, তা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার কাছে পৌঁছতে থাকে।
যাহোক আলোচ্য হাদীছ দ্বারা জানা গেল কালেমায়ে তায়্যিবা তথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর সাক্ষ্যদান ও কুরআন তিলাওয়াতসহ যে-কোনও যিকর সদাকার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং অপর এক হাদীছে আছে-

يصبح على كل سلامي من أحدكم صدقة، فكل تسبيحة صدقة وكل تحميدة صدقة وكل تهليلة صدقة وكل تكبيرة صدقة، وأمر بالمعروف صدقة ونهي عن المنكر صدقة، ويجزئ من ذلك ركعتان يركعهما من الضحى

“প্রতিদিন ভোরে তোমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে সদাকা আবশ্যিক হয়ে যায়। তো প্রতিটি তাসবীহ একটি সদাকা; প্রতিটি তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ বলা) একটি সদাকা প্রতিটি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) একটি সদাকা; প্রতিটি তাকবীর একটি সদাকা; একবার সৎকাজের আদেশ করা একটি সদাকা: একবার অসৎকাজে নিষেধ করা একটি সদাকা আর এ সমুদয়ের পরিবর্তে চাশতের দুঃ রাকআত নামায পড়াই যথেষ্ট হয়ে যায় -মুসলিম।২২৪

মসজিদে যাতায়াতের প্রতিটি কদম সদাকা
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহামূল্যবান এ হাদীছে যেসকল বিষয়কে সদাকারূপে উল্লেখ করেছেন, তার একটি হচ্ছে নামাযের জন্য মসজিদে যাতায়াতের পদক্ষেপসমূহ। তিনি ইরশাদ করেন (কেউ নামাযে যাওয়ার জন্য যে পথ চলে, তার প্রতিটি কদম ফেলা একেকটি সদাকা)। সুবহানাল্লাহ, বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার এই মেহেরবানীরও কি কোনও সীমা আছে? দান-সদাকা করার দ্বারা নিজের যেমন ছাওয়াব হয়, তেমনি অন্যেরও উপকার হয়। কিন্তু মসজিদে নামাযের জন্য যাওয়া হয় কেবলই নিজ কল্যাণার্থে। সরাসরি এর দ্বারা অন্যের কোনও উপকার করা হয় না। তা সত্ত্বেও এ হাদীছে মসজিদে যাতায়াতের প্রত্যেকটি কদমকে একেকটি সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে। এটা কেবলই মাওলার মেহেরবানী।
প্রতিটি কদম যদি একটি সদাকা হয়, তবে প্রতিবার মসজিদে যাতায়াত দ্বারা কতগুলো সদাকা হয়ে থাকে? যার মসজিদে যেতে একশ' কদম লাগে তার একশ'টি সদাকা, যার পাঁচশ' কদম লাগে তার পাঁচশ'টি সদাকা আদায় হয়। এভাবে মসজিদ থেকে যার পথের দূরত্ব যতবেশি, তার ততবেশি সদাকার ছাওয়াব অর্জিত হবে। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে মুমিনদের পক্ষে এটা বড়ই আশার বাণী। এর দ্বারা জামাতের সঙ্গে নামায পড়া ও মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পর্ক স্থাপন করার প্রতি বিশেষ উৎসাহ পাওয়া যায়।
উলামায়ে কেরাম বলেন, এ ছাওয়ার কেবল নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কেউ যদি ইলমে দীনের সন্ধানে বা আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা কেবলই মুমিন ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাত করার লক্ষ্যে পথ চলে, তবে সে চলার প্রতিটি কদমেও সদাকার ছাওয়াব আছে।

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া
এ হাদীছে সর্বশেষ যে কাজটিকে সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে তা হচ্ছে وتميط الأذى عن الطريق صدقة (তুমি যদি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দাও, তাও একটি সদাকা)। কষ্টদায়ক বস্তু বলতে এমনসব বস্তু বোঝানো উদ্দেশ্যে, যা দ্বারা যাতায়াতকারীগণ কষ্ট পেতে পারে, যেমন পাথর, কাঁটা, মানুষ বা পশুর মল, কোনও ফলের ছিলকা ইত্যাদি। রাস্তায় খানাখন্দ বা গর্ত থাকলে তা ভরাট করে দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়ার দ্বারা সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়। অপর এক হাদীছে এটিকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে, যা দ্বারা কাজটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। অপর মুসলিমকে কষ্ট ও বিপদ থেকে হেফাজত করা ঈমানের দাবি। বরং প্রকৃত মুমিন সেই, যে কোনও মানুষকেই কোনওভাবে কষ্ট দেয় না।
পথ চলাকালে কষ্টদায়ক কোনও বস্তু চোখে পড়া সত্ত্বেও তা সরিয়ে না দেওয়া পরোক্ষভাবে অন্য মানুষকে কষ্ট দেওয়াই বটে। মূল কষ্টদাতা তো সেই ব্যক্তি, যে তা রাস্তায় ফেলল। কিন্তু দেখা সত্ত্বেও তা যদি না সরানো হয়, তারপর কেউ সে বস্তুটি দ্বারা কষ্ট পায়, তবে তা তো ওই ব্যক্তি তা না সরানোর কারণেই পেল। এ হিসেবে তার উপর একরকম দায় এসেই যায়। মহান ইসলাম আমাদেরকে কী সুন্দর শিক্ষাই না দান করেছে। পরোক্ষভাবেও কেউ যাতে পথিকের কষ্টের কারণ না হয়ে যায়, তাই কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াকে ঈমানের অঙ্গ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এ কাজ করার দ্বারা সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যাবে, যেহেতু এর দ্বারা দান-খয়রাতের মতই মানুষের উপকার সাধিত হয়।
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো যখন ঈমানের অঙ্গ এবং এটা করার দ্বারা যখন সদাকার ছাওয়াব মেলে, তখন যারা এর বিপরীতে রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু ফেলে, তাদের অবস্থাটা কী হতে পারে? তাদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কষ্টদানের গুনাহও কি তাদের হয়ে যায় না? এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষের চলাচলে কষ্ট হয় বা বিঘ্ন ঘটে, এমন অনেক কিছুই অবলীলায় করা হয়ে থাকে। জনসভা করে তো রাস্তা আটকেই দেওয়া হয়। এসবই ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী।
প্রকাশ থাকে যে, আলোচ্য হাদীছে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হল, সদাকা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। যেমন অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

تبسمك في وجه أخيك لك صدقة، وأمرك بالمعروف ونهيك عن المنكر صدقة، وإرشادك الرجل في أرض الضلال لك صدقة، وبصرك للرجل الرديء البصر لك صدقة، وإماطتك الحجر والشوكة والعظم عن الطريق لك صدقة، وافراغك من دلوك في دلو أخيك لك صدقة

'তোমার ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার হাসি দেওয়া তোমার জন্য একটি সদাকা; তোমার পক্ষ হতে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা একটি সদাকা; কোনও ভূমিতে পথহারা ব্যক্তিকে তোমার পথ দেখিয়ে দেওয়াটাও তোমার জন্য একটি সদাকা; যার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে তার জন্য তোমার দৃষ্টিশক্তির ব্যবহারও তোমার জন্য একটি সদাকা; রাস্তা থেকে পাথর কাঁটা ও হাড় সরিয়ে দেওয়াও তোমার জন্য একটি সদাকা এবং তোমার পাত্র থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্য একটি সদাকা।২২৫
এর দ্বারা বোঝা যায়, অন্যের পক্ষে কল্যাণকর যে-কোনও বৈধ কাজই সদাকারূপে গণ্য। এমনকি যে আমল দ্বারা নিজ আখেরাতের কল্যাণ হয় তাও সদাকা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তার জোড়াসমূহ আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিআমত। আমাদের কর্তব্য এর শোকর আদায় করা।

খ. সদাকা দ্বারা বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত হয়। তাই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকে, সে লক্ষ্যে সদাকা করা চাই।

গ. সূর্য আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার এক বিরাট দান। এর জন্যও আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত।

ঘ. বিবাদমান দুই ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া চাই। এতে সদাকারও ছাওয়াব পাওয়া যায়।

ঙ. কাউকে বাহনে উঠিয়ে দেওয়া বা মালামাল তুলে দেওয়া একটি নেক আমল।এটাও সদাকারূপে গণ্য। এটা আমাদেরকে মানবিকতাবোধের শিক্ষা দেয়।

চ. কালেমায়ে তায়্যিবা এবং উৎকৃষ্ট যে-কোনও কথাই সদাকা। সুতরাং বাকশক্তির অপব্যবহার না করে যতবেশি সম্ভব উৎকৃষ্ট কথায় তা ব্যবহার করা।

ছ. মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি কদমে যখন সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়, তখন আমাদের কর্তব্য বেশি বেশি মসজিদে যাতায়াতে অভ্যস্ত হওয়া।

জ. আমরা নিজেরা তো রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু ফেলবই না; বরং রাস্তায় এমনকিছু নজরে আসলে অবশ্যই তা সরিয়ে দেব।

ঝ. সামগ্রিকভাবে এ হাদীছটি আমাদেরকে আল্লাহর শোকরগুয়ার হয়ে থাকার পাশাপাশি মানুষের প্রতি সদয় আচরণ ও মানবিকতাবোধের চর্চা করার প্রেরণা যোগায়।

২১৮, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩০৯; তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত, হাদীছ না ৭৭৬১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮০

২১৯. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৩৫

২২০. সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৮

২২১. সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৭৪

২২২. সূরা ইবরাহীম (১৪), আয়াত ২৪-২৫

২২৩. সূরা ফাতির (৩৫), আয়াত ১০

২২৪. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭২০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৪৭৪; বায়হাকী, হাদীছ নং ৪৮৯৮; বাগাবী, হাদীছ নং ১০০৭

২২৫. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৫৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২৯; তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৩৪২
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন