আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১৩- যাকাতের অধ্যায়
হাদীস নং: ২১৯০
আন্তর্জাতিক নং: ১০০০ - ১
৯. নিকটাত্মীয়, স্বামী, সন্তান-সন্তুতি ও মাতা-পিতার জন্য খরচ করার ফযীলত, যদিও তারা মুশরিক হয়
২১৯০। হাসান ইবনুর রাবী (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, হে নারী সমাজ! তোমাদের অলংকার দিয়ে হলেও তোমরা সাদ্কা কর। তিনি বলেন, এ কথা শুনে আমি আমার স্বামী আব্দুল্লাহর নিকট চলে গেলাম এবং তাকে বললাম, আপনি তো অসচ্ছল। রাসূলুল্লাহ আমাদেরকে সাদ্কা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনি গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করুন যদি আপনাকে দিলে আমার সাদ্কা আদায় হয়ে যায় তা হলে তো হলই। আর যদি আদায় না হয় তাহলে আমি আপনাকে ছাড়া অন্যকে দিয়ে দিব।
তখন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) আমাকে বললেন, বরং তাঁর নিকট তুমি যাও। যায়নাব (রাযিঃ) বলেন, আমি গেলাম এবং এক আনসারী মহিলাকে আমার মত একই প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত দেখতে পেলাম। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চেহারায় ভীতিকর গাম্ভীর্য দেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় বিলাল (রাযিঃ) আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে গিয়ে বলুন, দরজার নিকট দু-জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে, তাদের নিজ নিজ স্বামীকে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ইয়াতীমদের সাদ্কা দিলে তাঁদের সাদ্কা আদায় হবে কি? তবে আমরা কারা রাসুল (ﷺ) কে তা জানাবেন না।
অতঃপর বিলাল (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে গিয়ে এ কথা জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, এরা কারা? বিলাল (রাযিঃ) বললেন, একজন আনসারী মহিলা এবং যায়নাব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কোন যায়নাব? তিনি বললেন, আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাদের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। আত্মীয়তার সাওয়াব এবং সাদ্কার সাওয়াব।
তখন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) আমাকে বললেন, বরং তাঁর নিকট তুমি যাও। যায়নাব (রাযিঃ) বলেন, আমি গেলাম এবং এক আনসারী মহিলাকে আমার মত একই প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত দেখতে পেলাম। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চেহারায় ভীতিকর গাম্ভীর্য দেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় বিলাল (রাযিঃ) আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে গিয়ে বলুন, দরজার নিকট দু-জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে, তাদের নিজ নিজ স্বামীকে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ইয়াতীমদের সাদ্কা দিলে তাঁদের সাদ্কা আদায় হবে কি? তবে আমরা কারা রাসুল (ﷺ) কে তা জানাবেন না।
অতঃপর বিলাল (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে গিয়ে এ কথা জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, এরা কারা? বিলাল (রাযিঃ) বললেন, একজন আনসারী মহিলা এবং যায়নাব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কোন যায়নাব? তিনি বললেন, আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাদের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। আত্মীয়তার সাওয়াব এবং সাদ্কার সাওয়াব।
باب فَضْلِ النَّفَقَةِ وَالصَّدَقَةِ عَلَى الْأَقْرَبِينَ وَالزَّوْجِ وَالْأَوْلَادِ وَالْوَالِدَيْنِ وَلَوْ كَانُوا مُشْرِكِينَ
حَدَّثَنَا حَسَنُ بْنُ الرَّبِيعِ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ زَيْنَبَ، امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَصَدَّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ " . قَالَتْ فَرَجَعْتُ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقُلْتُ إِنَّكَ رَجُلٌ خَفِيفُ ذَاتِ الْيَدِ وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أَمَرَنَا بِالصَّدَقَةِ فَأْتِهِ فَاسْأَلْهُ فَإِنْ كَانَ ذَلِكَ يَجْزِي عَنِّي وَإِلاَّ صَرَفْتُهَا إِلَى غَيْرِكُمْ . قَالَتْ فَقَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بَلِ ائْتِيهِ أَنْتِ . قَالَتْ فَانْطَلَقْتُ فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ بِبَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَاجَتِي حَاجَتُهَا - قَالَتْ - وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أُلْقِيَتْ عَلَيْهِ الْمَهَابَةُ - قَالَتْ - فَخَرَجَ عَلَيْنَا بِلاَلٌ فَقُلْنَا لَهُ ائْتِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبِرْهُ أَنَّ امْرَأَتَيْنِ بِالْبَابِ تَسْأَلاَنِكَ أَتَجْزِي الصَّدَقَةُ عَنْهُمَا عَلَى أَزْوَاجِهِمَا وَعَلَى أَيْتَامٍ فِي حُجُورِهِمَا وَلاَ تُخْبِرْهُ مَنْ نَحْنُ - قَالَتْ - فَدَخَلَ بِلاَلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ هُمَا " . فَقَالَ امْرَأَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ وَزَيْنَبُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَىُّ الزَّيَانِبِ " . قَالَ امْرَأَةُ عَبْدِ اللَّهِ . فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَهُمَا أَجْرَانِ أَجْرُ الْقَرَابَةِ وَأَجْرُ الصَّدَقَةِ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা সাহাবীদের অনুরোধে সপ্তাহের নির্দিষ্ট একদিন তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করতেন। কোনও একদিনকার নসীহতে তিনি তাঁদেরকে বিশেষভাবে দান-সদাকা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। যেমন এ হাদীছে আছে-
تصدقن يا معشر النساء ولو من حليكن
(হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা সদাকা কর তোমাদের অলংকারাদি থেকে হলেও)। অর্থাৎ সদাকা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تصدقوا، فإن الصدقة فكاككم من النار ‘তোমরা সদাকা কর। সদাকা তোমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়।৯৩
কাজেই সকলের জন্যই এ আমল জরুরি। যেহেতু মহিলাদের মাহফিলে নসীহত হচ্ছিল, তাই আলোচ্য হাদীছে বিশেষভাবে তিনি তাদেরকে এ নির্দেশ দান করেন।
দান-সদাকা সাধারণত টাকাপয়সা ও খাদ্যসামগ্রী করা হয়ে থাকে। কিন্তু সকলের হাতে সবসময় তা থাকে না, বিশেষত মহিলাদের কাছে। তবে কিছু না কিছু অলংকার তাদের থাকেই। স্বভাবগতভাবে অলংকারের প্রতি মহিলাদের আকর্ষণও থাকে, যে কারণে গরীব হলেও তারা কিছু না কিছু অলংকার গড়িয়ে নেয়। বলাবাহুল্য এটা দু'দিনের সম্পদ, দু'দিনের শোভা। বড়জোর মৃত্যু পর্যন্ত কাছে থাকে। জান্নাতের অলংকারই আসল অলংকার। তা কোনওদিন হাতছাড়া হবে না। জান্নাত পেতে হলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই এবং চাই পাপের মার্জনা। এ উদ্দেশ্যে দুনিয়ার সবটা সম্পদও যদি দান করে দেওয়া যায়, তাও তুচ্ছই বটে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْ أَنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যারা জুলুমে লিপ্ত হয়েছে, যদি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তাদের থাকত এবং তার সমপরিমাণ আরও, তবে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্টতম শাস্তি হতে বাঁচার জন্য তা সবই মুক্তিপণস্বরূপ দিয়ে দিত।৯৪
এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে অন্ততপক্ষে নিজেদের অলংকার থেকে হলেও সদাকা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। মহিলাদের সে মজলিসে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি.-এর স্ত্রী যায়নাব রাযি.-ও একজন। তিনি সে নসীহতে খুব প্রভাবিত হলেন এবং দান-সদাকা করবেন বলে মনস্থ করলেন। ওদিকে তাঁর স্বামী হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. ছিলেন একজন গরীব সাহাবী। আয়-রোযগার কম ছিল। হযরত যায়নাব রাযি. ভাবলেন তিনি যা দান সদাকা করবেন তা স্বামীকেই দিয়ে দেবেন কি না। আবার স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে দান-সদাকা করলে তা সঠিক হবে কি না সে প্রশ্নও ছিল। তাই স্বামীকে অনুরোধ করলেন যেন এ বিষয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন।
হযরত ইবন মাস'ঊদ রাযি. বললেন, বরং তুমি নিজেই গিয়ে জিজ্ঞেস কর। সম্ভবত তাঁর লজ্জাবোধ হচ্ছিল অথবা ভাবছিলেন, যেহেতু বিষয়টা তার স্ত্রীর তাই সরাসরি তিনি জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়।
সুতরাং হযরত যায়নাব রাযি. নিজেই এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। তিনি গিয়ে যখন দরজায় পৌঁছলেন। দেখলেন সেখানে জনৈক আনসারী মহিলাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ মাস'উদ আনসারী রাযি.-এর স্ত্রী হুযায়লা বিনত ছাবিত রাযি.। তিনিও একই উদ্দেশ্যে এসেছেন। কিন্তু তাদের কেউ ভেতরে প্রবেশের সাহস পাচ্ছেন না। এর কারণ সম্পর্কে হযরত যায়নাব রাযি. বলেন-
وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم قد ألقيت عليه المهابة
‘আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে ছিল স্বভাবজাত বীর্যবত্তা (কাছে যেতে ভয় লাগত)'। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও অত্যন্ত নম্র-কোমল স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু পাশাপাশি অসাধারণ প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম যেমন তাঁকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন, তেমনি তাঁকে সমীহ ও ভয়ও করতেন অত্যধিক। তাঁরা তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে সাহস করতেন না। তাঁর সামনে অত্যন্ত শান্ত ও বিনীতভাবে বসতেন। একদম নড়াচড়া করতেন না। যেন মাথার উপর পাখি বসা আছে, একটু নড়লেই সেটি উড়ে যাবে। কাজেই হযরত যায়নাব রাযি. ও আবূ মাস'উদ আনসারী রাযি.-এর স্ত্রী সেখানে অপেক্ষা করতে থাকলেন। কখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসবেন আর তাঁর কাছে নিজেদের আর্জি পেশ করবেন। একটু পরে হযরত বিলাল রাযি. বের হয়ে আসলেন। তারা তাঁর কাছে নিজেদের আগমনের উদ্দেশ্য জানালেন এবং তাঁকে অনুরোধ করলেন যেন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা যদি তাদের স্বামীদেরকে এবং তাদের প্রতিপালনের অধীনে যে ইয়াতীমগণ আছে তাদেরকে দান-সদাকা করে, তবে তা সঠিক হবে কি না। সেইসঙ্গে এই অনুরোধও করলেন যে, তিনি যেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের পরিচয় না দেন।
হযরত বিলাল রাযি. ভেতরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, জনৈকা আনসারী মহিলা ও যায়নাব। জিজ্ঞেস করলেন, কোন যায়নাব? বললেন, আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদের স্ত্রী।
প্রশ্ন হয়, হযরত যায়নাব রাযি. ও তাঁর সঙ্গিনী হযরত বিলাল রাযি.-কে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন, তা সত্ত্বেও যে তা প্রকাশ করে দিলেন, এটা বিশ্বাসভঙ্গের মধ্যে পড়ে কি না? উলামায়ে কেরাম বলেন, তা পড়ে না। কেননা এক তো তিনি তাদেরকে প্রকাশ করবেন না বলে কথা দেননি, সেইসঙ্গে হয়তো চিন্তা করে দেখেছিলেন যে, এটা এমন কোনও বিষয় নয়, যা গোপন রাখার প্রয়োজন আছে। দ্বিতীয়ত তিনি প্রথমেই তাদের পরিচয় ফাঁস করেননি; বরং তা করেছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিজ্ঞাসার জবাবে। বলাবাহুল্য তাঁর আদেশ পালন করা তাঁর জন্য অবশ্যকর্তব্য ছিল এবং তাদের কথা রক্ষা করার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি ছিল।
যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে বললেন, এটা করলে তারা দ্বিগুণ ছাওয়াব পাবে। এক তো সদাকা করার ছাওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়ের সহযোগিতা করার ছাওয়াব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দান-সদাকা করার উৎসাহ লাভ হয়।
খ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় স্ত্রী তার স্বামীকে দান-সদাকা করতে পারে এবং তাতে দ্বিগুণ ছাওয়াব পাওয়া যায়।
গ. হাদীছটি দ্বারা আরও জানা যায় যে, মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে ওয়াজ-নসীহতের ব্যবস্থা থাকা চাই।
ঘ. সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুরুষ-নারী সকলের জন্যই আদেশ-উপদেশদানের কার্যক্রম চালু থাকা উচিত।
ঙ. দীনী কোনও বিষয়ে মনে খটকা জাগলে উলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমাধান নেওয়া চাই।
৯৩, বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮০৬০
৯৪. সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ৪৭
تصدقن يا معشر النساء ولو من حليكن
(হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা সদাকা কর তোমাদের অলংকারাদি থেকে হলেও)। অর্থাৎ সদাকা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تصدقوا، فإن الصدقة فكاككم من النار ‘তোমরা সদাকা কর। সদাকা তোমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়।৯৩
কাজেই সকলের জন্যই এ আমল জরুরি। যেহেতু মহিলাদের মাহফিলে নসীহত হচ্ছিল, তাই আলোচ্য হাদীছে বিশেষভাবে তিনি তাদেরকে এ নির্দেশ দান করেন।
দান-সদাকা সাধারণত টাকাপয়সা ও খাদ্যসামগ্রী করা হয়ে থাকে। কিন্তু সকলের হাতে সবসময় তা থাকে না, বিশেষত মহিলাদের কাছে। তবে কিছু না কিছু অলংকার তাদের থাকেই। স্বভাবগতভাবে অলংকারের প্রতি মহিলাদের আকর্ষণও থাকে, যে কারণে গরীব হলেও তারা কিছু না কিছু অলংকার গড়িয়ে নেয়। বলাবাহুল্য এটা দু'দিনের সম্পদ, দু'দিনের শোভা। বড়জোর মৃত্যু পর্যন্ত কাছে থাকে। জান্নাতের অলংকারই আসল অলংকার। তা কোনওদিন হাতছাড়া হবে না। জান্নাত পেতে হলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই এবং চাই পাপের মার্জনা। এ উদ্দেশ্যে দুনিয়ার সবটা সম্পদও যদি দান করে দেওয়া যায়, তাও তুচ্ছই বটে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْ أَنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যারা জুলুমে লিপ্ত হয়েছে, যদি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তাদের থাকত এবং তার সমপরিমাণ আরও, তবে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্টতম শাস্তি হতে বাঁচার জন্য তা সবই মুক্তিপণস্বরূপ দিয়ে দিত।৯৪
এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে অন্ততপক্ষে নিজেদের অলংকার থেকে হলেও সদাকা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। মহিলাদের সে মজলিসে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি.-এর স্ত্রী যায়নাব রাযি.-ও একজন। তিনি সে নসীহতে খুব প্রভাবিত হলেন এবং দান-সদাকা করবেন বলে মনস্থ করলেন। ওদিকে তাঁর স্বামী হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. ছিলেন একজন গরীব সাহাবী। আয়-রোযগার কম ছিল। হযরত যায়নাব রাযি. ভাবলেন তিনি যা দান সদাকা করবেন তা স্বামীকেই দিয়ে দেবেন কি না। আবার স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে দান-সদাকা করলে তা সঠিক হবে কি না সে প্রশ্নও ছিল। তাই স্বামীকে অনুরোধ করলেন যেন এ বিষয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন।
হযরত ইবন মাস'ঊদ রাযি. বললেন, বরং তুমি নিজেই গিয়ে জিজ্ঞেস কর। সম্ভবত তাঁর লজ্জাবোধ হচ্ছিল অথবা ভাবছিলেন, যেহেতু বিষয়টা তার স্ত্রীর তাই সরাসরি তিনি জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়।
সুতরাং হযরত যায়নাব রাযি. নিজেই এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। তিনি গিয়ে যখন দরজায় পৌঁছলেন। দেখলেন সেখানে জনৈক আনসারী মহিলাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ মাস'উদ আনসারী রাযি.-এর স্ত্রী হুযায়লা বিনত ছাবিত রাযি.। তিনিও একই উদ্দেশ্যে এসেছেন। কিন্তু তাদের কেউ ভেতরে প্রবেশের সাহস পাচ্ছেন না। এর কারণ সম্পর্কে হযরত যায়নাব রাযি. বলেন-
وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم قد ألقيت عليه المهابة
‘আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে ছিল স্বভাবজাত বীর্যবত্তা (কাছে যেতে ভয় লাগত)'। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও অত্যন্ত নম্র-কোমল স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু পাশাপাশি অসাধারণ প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম যেমন তাঁকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন, তেমনি তাঁকে সমীহ ও ভয়ও করতেন অত্যধিক। তাঁরা তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে সাহস করতেন না। তাঁর সামনে অত্যন্ত শান্ত ও বিনীতভাবে বসতেন। একদম নড়াচড়া করতেন না। যেন মাথার উপর পাখি বসা আছে, একটু নড়লেই সেটি উড়ে যাবে। কাজেই হযরত যায়নাব রাযি. ও আবূ মাস'উদ আনসারী রাযি.-এর স্ত্রী সেখানে অপেক্ষা করতে থাকলেন। কখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসবেন আর তাঁর কাছে নিজেদের আর্জি পেশ করবেন। একটু পরে হযরত বিলাল রাযি. বের হয়ে আসলেন। তারা তাঁর কাছে নিজেদের আগমনের উদ্দেশ্য জানালেন এবং তাঁকে অনুরোধ করলেন যেন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা যদি তাদের স্বামীদেরকে এবং তাদের প্রতিপালনের অধীনে যে ইয়াতীমগণ আছে তাদেরকে দান-সদাকা করে, তবে তা সঠিক হবে কি না। সেইসঙ্গে এই অনুরোধও করলেন যে, তিনি যেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের পরিচয় না দেন।
হযরত বিলাল রাযি. ভেতরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, জনৈকা আনসারী মহিলা ও যায়নাব। জিজ্ঞেস করলেন, কোন যায়নাব? বললেন, আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদের স্ত্রী।
প্রশ্ন হয়, হযরত যায়নাব রাযি. ও তাঁর সঙ্গিনী হযরত বিলাল রাযি.-কে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন, তা সত্ত্বেও যে তা প্রকাশ করে দিলেন, এটা বিশ্বাসভঙ্গের মধ্যে পড়ে কি না? উলামায়ে কেরাম বলেন, তা পড়ে না। কেননা এক তো তিনি তাদেরকে প্রকাশ করবেন না বলে কথা দেননি, সেইসঙ্গে হয়তো চিন্তা করে দেখেছিলেন যে, এটা এমন কোনও বিষয় নয়, যা গোপন রাখার প্রয়োজন আছে। দ্বিতীয়ত তিনি প্রথমেই তাদের পরিচয় ফাঁস করেননি; বরং তা করেছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিজ্ঞাসার জবাবে। বলাবাহুল্য তাঁর আদেশ পালন করা তাঁর জন্য অবশ্যকর্তব্য ছিল এবং তাদের কথা রক্ষা করার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি ছিল।
যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে বললেন, এটা করলে তারা দ্বিগুণ ছাওয়াব পাবে। এক তো সদাকা করার ছাওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়ের সহযোগিতা করার ছাওয়াব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দান-সদাকা করার উৎসাহ লাভ হয়।
খ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় স্ত্রী তার স্বামীকে দান-সদাকা করতে পারে এবং তাতে দ্বিগুণ ছাওয়াব পাওয়া যায়।
গ. হাদীছটি দ্বারা আরও জানা যায় যে, মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে ওয়াজ-নসীহতের ব্যবস্থা থাকা চাই।
ঘ. সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুরুষ-নারী সকলের জন্যই আদেশ-উপদেশদানের কার্যক্রম চালু থাকা উচিত।
ঙ. দীনী কোনও বিষয়ে মনে খটকা জাগলে উলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমাধান নেওয়া চাই।
৯৩, বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮০৬০
৯৪. সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ৪৭


বর্ণনাকারী: