আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১২- জানাযা-কাফন-দাফন সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ২১২৮
আন্তর্জাতিক নং: ৯৭৪-২
২৯. কবরস্থানে প্রবেশের দুআ
২১২৮। হারুন ইবনে সাঈদ আয়লী (রাহঃ) ......... মুহাম্মাদ ইবনে কায়স (রাহঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমি কি তোমাদের কাছে নবী (ﷺ) ও আমার সম্পর্কে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই বর্ণনা করুন। ইমাম মুসলিম (রাহঃ) হাজ্জাজ আওয়ার (রাহঃ) থেকে যিনি শুনেছেন এরূপ উস্তাদ থেকে ......... জনৈক কুলায়শী আব্দুল্লাহ (রাহঃ) থেকে মুহাম্মাদ ইবনে কায়স ইবনে মাখরামা ইবনে মুত্তালিব (রাহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি একদিন বলেন, আমি কি তোমাদেরকে আমার ও আমার মায়ের কথা শুনাবো না? রাবী আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেন, আমরা মনে করলাম, তিনি তার জন্মদাত্রী মায়ের কথা বলতে চাচ্ছেন।

এরপর তিনি বললেন, আয়িশা (রাযিঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আমার কথা শুনাবো না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বর্ণনা করুন। রাবী বলেন তিনি বললেন, নবী (ﷺ) আমার পালার যে রাতে আমার কাছে ছিলেন, সে রাতে তিনি বাইরে থেকে এসে চাঁদর রেখে দিলেন, জুতা খুলে নিলেন এবং জুতা দুটি তার পায়ের দিকে রেখে চাঁদরের এক কিনারা বিছানার উপর বিছিয়ে দিলেন এবং শুয়ে পড়লেন। তিনি এতটুকু সময় অপেক্ষা করেন যতটুকু সময়ে তিনি আমার ঘুমিয়ে পড়ার ধারণা করলেন।

তারপর অতি সন্তর্পণে চাদর নিলেন, জুতা পরলেন ও দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন। তারপর সাবধানে দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন। আমিও আমার ওড়না মাথায় দিলাম, জামা পরে নিলাম এবং ইযার বেঁধে নিলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিছনে পিছনে রওয়ানা হলাম। তিনি গারাকাদে বাকীতে পৌঁছে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তিনবার হাত উঠালেন। তারপর ফিরে আসতে লাগলেন, আমিও রওয়ানা হয়ে পড়লাম। তিনি দ্রুতগতিতে আসতে লাগলেন, আমিও আমার গতি বাড়িয়ে দিলাম। তিনি দৌড়াতে শুরু করলেন আমিও দৌড়াতে লাগলাম। তিনি ঘরে এসে পৌছলেন, আমিও তাঁর পূর্বক্ষণে এসে পৌছলাম এবং ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়ার সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, হে আয়িশা! কী হয়েছে? তুমি ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করছ কেন? আমি বললাম, কিছুই না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি বলে দাও, নতুবা সর্বজ্ঞ সুক্ষ্মদর্শী আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিবেন।

আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান। অতঃপর ঘটনা বর্ণনা করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেলেন, আমার সামনে একটি মানুষের দেহের ছায়ার ন্যায় দেখা যাচ্ছিল তাহলে সে ছায়া তুমিই ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমার বুকে একটি ধাক্কা মারলেন, তাতে আমি ব্যাথা পেলাম। তারপর বললেন, তুমি কি ধারণা করেছিলে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল তোমার প্রতি অবিচার করবে? আয়িশা বললেন, হ্যাঁ, তাই। অনেক সময় মানুষ গোপন রাখতে চায়, আর আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এসেছিলেন। যখন তুমি আমাকে বের হতে দেখেছিলে। এসে আমাকে তিনি ডাকলেন এবং তোমার থেকে ব্যাপার গোপন রাখতে চাইলেন। আমি তাঁর ইচ্ছানূযায়ী তোমার থেকে গোপন রাখলাম তিনি তোমার ঘরে প্রবেশ করতে চাচ্ছিলেন না যেহেতু তুমি কাপড় রেখে দিয়েছিলে।

আর আমি ধারণা করলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই তোমাকে জাগানো পছন্দ করি নি এবং আমার আশঙ্কা হল তুমি (একাকীঁ) ভয় পাবে। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার রব আপনাকে আদেশ করেছেন, গারাকাদে বাকীতে গিয়ে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের জন্য আমরা কী বলব? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এভাবে বলঃ ″কবরবাসী মুমিন মুসলমানদের প্রতি সালাম, আল্লাহ অগ্রগামী পশ্চাৎগামী সবার প্রতি দয়া করুন আমরাও ইনশাআল্লাহ অবশ্য তোমাদের সাথে মিলিত হব।″
باب مَا يُقَالُ عِنْدَ دُخُولِ الْقُبُورِ وَالدُّعَاءِ لأَهْلِهَا
وَحَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَثِيرِ بْنِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ مُحَمَّدَ بْنَ قَيْسٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَائِشَةَ، تُحَدِّثُ فَقَالَتْ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَعَنِّي . قُلْنَا بَلَى ح. وَحَدَّثَنِي مَنْ، سَمِعَ حَجَّاجًا الأَعْوَرَ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - قَالَ حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهِ، - رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ - عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَخْرَمَةَ، بْنِ الْمُطَّلِبِ أَنَّهُ قَالَ يَوْمًا أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ عَنِّي وَعَنْ أُمِّي قَالَ فَظَنَنَّا أَنَّهُ يُرِيدُ أُمَّهُ الَّتِي وَلَدَتْهُ . قَالَ قَالَتْ عَائِشَةُ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ عَنِّي وَعَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قُلْنَا بَلَى . قَالَ قَالَتْ لَمَّا كَانَتْ لَيْلَتِيَ الَّتِي كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِيهَا عِنْدِي انْقَلَبَ فَوَضَعَ رِدَاءَهُ وَخَلَعَ نَعْلَيْهِ فَوَضَعَهُمَا عِنْدَ رِجْلَيْهِ وَبَسَطَ طَرَفَ إِزَارِهِ عَلَى فِرَاشِهِ فَاضْطَجَعَ فَلَمْ يَلْبَثْ إِلاَّ رَيْثَمَا ظَنَّ أَنْ قَدْ رَقَدْتُ فَأَخَذَ رِدَاءَهُ رُوَيْدًا وَانْتَعَلَ رُوَيْدًا وَفَتَحَ الْبَابَ فَخَرَجَ ثُمَّ أَجَافَهُ رُوَيْدًا فَجَعَلْتُ دِرْعِي فِي رَأْسِي وَاخْتَمَرْتُ وَتَقَنَّعْتُ إِزَارِي ثُمَّ انْطَلَقْتُ عَلَى إِثْرِهِ حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ انْحَرَفَ فَانْحَرَفْتُ فَأَسْرَعَ فَأَسْرَعْتُ فَهَرْوَلَ فَهَرْوَلْتُ فَأَحْضَرَ فَأَحْضَرْتُ فَسَبَقْتُهُ فَدَخَلْتُ فَلَيْسَ إِلاَّ أَنِ اضْطَجَعْتُ فَدَخَلَ فَقَالَ " مَا لَكِ يَا عَائِشُ حَشْيَا رَابِيَةً " . قَالَتْ قُلْتُ لاَ شَىْءَ . قَالَ " لَتُخْبِرِينِي أَوْ لَيُخْبِرَنِّي اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ " . قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي . فَأَخْبَرْتُهُ قَالَ " فَأَنْتِ السَّوَادُ الَّذِي رَأَيْتُ أَمَامِي " . قُلْتُ نَعَمْ . فَلَهَدَنِي فِي صَدْرِي لَهْدَةً أَوْجَعَتْنِي ثُمَّ قَالَ " أَظَنَنْتِ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ " . قَالَتْ مَهْمَا يَكْتُمِ النَّاسُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ نَعَمْ . قَالَ " فَإِنَّ جِبْرِيلَ أَتَانِي حِينَ رَأَيْتِ فَنَادَانِي فَأَخْفَاهُ مِنْكِ فَأَجَبْتُهُ فَأَخْفَيْتُهُ مِنْكِ وَلَمْ يَكُنْ يَدْخُلُ عَلَيْكِ وَقَدْ وَضَعْتِ ثِيَابَكِ وَظَنَنْتُ أَنْ قَدْ رَقَدْتِ فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَكِ وَخَشِيتُ أَنْ تَسْتَوْحِشِي فَقَالَ إِنَّ رَبَّكَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَأْتِيَ أَهْلَ الْبَقِيعِ فَتَسْتَغْفِرَ لَهُمْ " . قَالَتْ قُلْتُ كَيْفَ أَقُولُ لَهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " قُولِي السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কবরস্থানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরবাসীদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করতেন। তিনি তখন যা পড়তেন, তা বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।

কোন বর্ণনায় আছে, তিনি কবরবাসীদের লক্ষ্য করে বলতেন- السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِیْنَ – এর মূল অর্থ- ‘তোমাদের প্রতি সালাম, হে মুমিন সম্প্রদায়ের নিবাস'। ‘নিবাস’ বলে নিবাসী বা বাসিন্দাগণকে বোঝানো উদ্দেশ্য। কোন বর্ণনায় আছে- السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ (হে মুমিন ও মুসলিম বাসিন্দাগণ! তোমাদের প্রতি সালাম)। নিবাস বা বাসস্থান বলে কবর বোঝানো উদ্দেশ্য। কোন বর্ণনায় আছে- السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُوْرِ (হে কবরবাসীগন! তোমাদের প্রতি সালাম)। কবর যেহেতু একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য মৃতব্যক্তির থাকার জায়গা, তাই একে নিবাস বা ঘর শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরবাসীদের সম্বোধন করে বলেছেন- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (তোমাদের প্রতি সালাম)। এর দ্বারা বোঝা গেল, মায়্যিতের রূহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও এক রকম সম্পর্ক তারপরও অবশিষ্ট থাকে। ফলে সে জীবিত ব্যক্তির সম্বোধন বুঝতে পারে এবং তার সালাম শুনতে পায়। এমনকি যে ব্যক্তি তাকে সালাম দেয় তাকে চিনতেও পারে। সুতরাং এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا مِنْ رَجُلٍ يَمُرُّ بِقَبْرِ رَجُلٍ كَانَ يَعْرِفُهُ فِي الدُّنْيَا، فَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِلَّا عَرَفَهُ وَرَدَّ عَلَيْهِ
যে ব্যক্তি এমন কোনও কবরবাসীর পাশ দিয়ে যায়, যে দুনিয়ায় থাকাকালে তাকে চিনত, আর তাকে সালাম দেয়, সে কবরবাসী তাকে চিনতে পারে এবং তার সালামের উত্তর দেয়।(আল ইস্তিযকার ফাওয়াইদু তাম্মাম: ১৩৯; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৮৫৭
صححه الإمام ابن عبد البر كما قال الإمام الكشميري في فيض الباري. والإمام عبد الحق الإمام ابن الإشبيلي كما في فيض القدير. (المحرر)

কবরবাসী যে শুনতে পায়, তা আরও বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যে গর্তে মুশরিকদের নিহত সর্দারদের মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই সর্দারদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সত্য পেয়েছ কি? তখন হযরত উমর রাযি. বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যে দেহগুলোতে কোনও রূহ নেই, তাদের লক্ষ্য করে আপনি কীভাবে কথা বলছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-
مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ
‘তোমরা তাদেরচে' বেশি শুনতে পাও না।’(সহীহ বুখারী: ৩৯৭৬; সহীহ মুসলিম: ২৮৭৩; সুনানে নাসাঈ ২০৭৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ১৪০; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৭৭৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৪৭০১)

কোন বর্ণনায় দু'আর একটি অংশ হল- وَأَتاكُمْ مَا تُوْعَدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُوْنَ (তোমাদেরকে আগামী দিনের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছিল তা তোমাদের কাছে এসে গেছে এ অবস্থায় যে, তোমাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছিল)। অর্থাৎ তোমরা যখন দুনিয়ায় ছিলে, তখন তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল- আগামীতে একদিন তোমাদের মৃত্যু আসবে, তারপর তোমাদেরকে কবরবাসী হতে হবে। সে প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে। তার আগে তোমাদেরকে কিছুদিনের অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। সে অবকাশ শেষ হলে তোমাদের মৃত্যু ঘটানো হয়। এখন তোমরা কবরের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছ।

এর আরেক অর্থ হতে পারে- তোমাদের কাছে প্রতিশ্রুত মৃত্যু এসে গেছে। এখন তোমাদের সামনে রয়েছে কর্মফললাভের বিষয়টি। সেজন্য তোমাদের একটা কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সে কাল পূরণ হওয়ার পর অর্থাৎ কবরের জীবন শেষ হওয়ার পর তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। তারপর তোমাদেরকে তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।

হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দেওয়ার সময় কবরবাসীদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তাদের দিকে ফিরেই সালাম দেওয়া উচিত। এটা সালাম দেওয়ার আদব। জীবিত-মৃত সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আরও বোঝা গেল, মৃতব্যক্তিদেরও আদব রক্ষা করা চাই। কবরের পাশে এমন কোনও আচরণ করা উচিত নয়, যা জীবিত ব্যক্তির সামনে করলে বেয়াদবী বলে গণ্য হয়।

হাদীছে কবরবাসীর জন্য যে নিরাপত্তা ও মাগফিরাতের দু'আ করা হয়েছে, সেই দু'আ নিজের জন্যও করা হয়েছে। এটা দু'আ করার নিয়ম। অন্যের জন্য মাগফিরাত ও নাজাতের দু'আ করলে সেই দু'আয় নিজেকেও শামিল রাখা চাই এবং তাতেও নিয়ম হল নিজের কথা আগে উল্লেখ করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কবর যিয়ারত করা সুন্নত। মাঝেমধ্যে এর উপর আমল করা চাই।

খ. কবর যিয়ারতকালে হাদীছে বর্ণিত দু'আ পাঠ করা উত্তম।

গ. কবরও একটি ঠিকানা। একটা কাল পর্যন্ত প্রত্যেককে এ ঠিকানায় থাকতে হবে।

ঘ. কবরবাসী যিয়ারতকারীর সালাম শুনতে পায় এবং পরিচিত হলে সালামদাতাকে চিনতেও পারে।

ঙ. কবরবাসীকে সালাম দেওয়ার সময় কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো উত্তম।

চ. কবরবাসীর আদব ও সম্মান রক্ষা করা চাই, যেমন জীবিত অবস্থায় তার আদব ও সম্মান রক্ষা করা হতো।

ছ. অন্যের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করা হলে সে দু'আয় নিজেকেও শামিল রাখা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)