আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১২- জানাযা-কাফন-দাফন সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ২০১০
আন্তর্জাতিক নং: ৯২৫
৫. রোগী দেখতে যাওয়া
২০১০। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না আন-আনাযী (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট বসা ছিলাম, তখন জনৈক আনসারী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে তাঁকে সালাম করলেন, এরপর আনসারী প্রস্থান করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে আনসারী ভাই! আমার ভাই সা’দ ইবনে উবাদা কেমন আছে? তিনি উত্তর দিলেন, ভাল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে তার খোঁজখবর নিতে যাবে? এ বলে তিনি দাঁড়ালেন, আমরাও তার সঙ্গে দাঁড়ালাম। আমরা দশ জনের অধিক ছিলাম। আমাদের কারো পায়ে জুতা, মোজা, মাথায় টুপি এবং গায়ে জামা ছিল না। আমরা সে খড়খড়ে রাস্তা দিয়ে চলছিলাম এবং তার কাছে গিয়ে পৌছলাম। আমাদেরকে দেখে তার গোত্রের লোকজন তাঁর নিকট হতে সরে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাথী সাহাবীরা তার কাছে এলেন।
باب فِي عِيَادَةِ الْمَرْضَى
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى الْعَنَزِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَهْضَمٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - عَنْ عُمَارَةَ، - يَعْنِي ابْنَ غَزِيَّةَ - عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ الْمُعَلَّى، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ كُنَّا جُلُوسًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَدْبَرَ الأَنْصَارِيُّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا أَخَا الأَنْصَارِ كَيْفَ أَخِي سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ " . فَقَالَ صَالِحٌ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ يَعُودُهُ مِنْكُمْ " . فَقَامَ وَقُمْنَا مَعَهُ وَنَحْنُ بِضْعَةَ عَشَرَ مَا عَلَيْنَا نِعَالٌ وَلاَ خِفَافٌ وَلاَ قَلاَنِسُ وَلاَ قُمُصٌ نَمْشِي فِي تِلْكَ السِّبَاخِ حَتَّى جِئْنَاهُ فَاسْتَأْخَرَ قَوْمُهُ مِنْ حَوْلِهِ حَتَّى دَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ الَّذِينَ مَعَهُ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির বর্ণনায় হযরত ইবন উমর রাযি. বলছেন- (আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বসা ছিলাম)। এরকম প্রায়ই হতো। সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে বসা থাকতেন। তিনি তাঁদের দীন শেখাতেন। ওহী নাযিল হলে তা তাদের শোনাতেন। তাঁরাও তাঁদের প্রয়োজনীয় বিষয় জিজ্ঞেস করে জেনে নিতেন। তাঁকে দেখে তাঁর কথা শুনে জীবনগঠনের রসদ সংগ্রহ করতেন। সেইসঙ্গে চোখ ও মন জুড়ানোর বিষয় তো ছিলই।
তাঁরা বসা থাকা অবস্থায় জনৈক আনসারী সাহাবী আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলেন। তারপর তিনি বসেছিলেন কি না, এ হাদীছে তার উল্লেখ নেই। এমনও হতে পারে যে, তিনি কোনও কাজে যাচ্ছিলেন। আর যেহেতু এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক নজর দেখা, তাঁকে সালাম দেওয়া ও তাঁর সালামের জবাবগ্রহণের সৌভাগ্যটুকু অর্জন করতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যেই তার আসা। তারপর তিনি যখন চলে যাচ্ছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে হযরত সা'দ ইবন উবাদা-এর খবর জানতে চেয়েছিলেন। এ সাহাবীর নাম জানা যায় না। এতটুকু তো স্পষ্ট যে, তিনি হযরত সা'দ রাযি.-এর কাছের কেউ হবেন। আত্মীয়, প্রতিবেশী, একই গোত্রীয় বা এমন কিছু।
জিজ্ঞাসার উত্তরে তিনি বলেছিলেন- (ভালো)। প্রকৃতপক্ষে তিনি অসুস্থ ছিলেন। সেজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিজ্ঞাসা। তা সত্ত্বেও যে বলেছেন 'ভালো', এটা রোগীর অবস্থা বর্ণনার একটা আদব। পরোক্ষভাবে এটা তার জন্য শুভকামনা। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যেন তাকে ভালো করে দেন। সরাসরি রোগীকে তার অবস্থা জানানোর বেলায় তো এমনই বলা উচিত, যাতে রোগী ভয় না পায়, দুশ্চিন্তায় না পড়ে; বরং আশাবাদী হয় ও মনের শক্তি বজায় থাকে। এটা আরোগ্য লাভের পক্ষে সহায়ক।
অপর এক বর্ণনায় আছে, উত্তরদাতা বলেছিল- (সংকটাপন্ন)। অর্থাৎ রোগীর অবস্থা ভালো নয়। এ শব্দ দ্বারা তাঁর বাস্তব অবস্থা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে এ শব্দটি সম্ভবত পরবর্তী কোনও বর্ণনাকারীর। একে বলা হয় 'রেওয়ায়াত বিল মা'না'। অর্থাৎ কোনও তথ্য বা ঘটনার বিষয়বস্তু মূল বর্ণনাকারীর শব্দ ও ভাষায় বর্ণনা না করে নিজ শব্দ ও নিজ ভাষায় বর্ণনা করা। যথাযথ শর্ত মোতাবেক হলে এরূপ বর্ণনা করার অনুমতি আছে। অবশ্য সাধারণজনদের এর থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন যে, হযরত সা'দ রাযি. সুস্থ হননি। তিনি তাঁকে দেখতে যেতে চাইলেন। রোগী দেখতে যাওয়া অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে- “যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায়, সে যতক্ষণ না ফিরে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতের ফল পাড়তে থাকে।"
অন্য এক হাদীছে আছে-
منْ عَادَ الْمَرِيْضَ خاضَ فِي الرَّحْمَةِ، فَإِذَا جَلَسَ عِنْدَهُ اغتَمَسَ فِيهَا.
“যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায়, সে আল্লাহর রহমতের মধ্যে অবতরণ করতে থাকে। যখন রোগীর কাছে গিয়ে বসে, তখন রহমতের মধ্যে ডুবে যায়।”
সুতরাং তিনি হযরত সা'দ রাযি.-কে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি সাহাবীদেরকে উদ্বুদ্ধ করলেন যেন এ মহৎ কাজে যার পক্ষে সম্ভব অংশগ্রহণ করে। ১০ জনেরও বেশি সাহাবী তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলেন। কেমন ছিল এ সকল সাহাবীর অবস্থা? হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন-আমাদের কারও পরিধানে জুতা, মোজা, টুপি ও জামা ছিল না। অর্থাৎ তাঁরা সকলেই কেবল লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। জামা দ্বারা যদি প্রচলিত পোশাক বোঝানো হয়, যা শরীরের উপর অংশের গঠন অনুযায়ী তৈরি করা হয়, তবে বলা যেতে পারে তাঁদের কেউ কেউ হয়তো চাদর পরিহিত ছিলেন। আর যদি সাধারণভাবে শরীরের উপর অংশ ঢাকার কাপড় বোঝানো হয়ে থাকে, তবে অর্থ হবে তাঁদের শরীরে লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই অর্থ গ্রহণের সুযোগ আছে এ কারণে যে, সাহাবায়ে কেরামের এ শুরু যমানায় প্রচলিত অর্থে জামা ব্যবহার খুব কমই ছিল। তাঁরা সাধারণত শরীর ঢাকার জন্য চাদরই ব্যবহার করতেন।
যাহোক, হাদীছটির সারকথা এই যে, এ দশ দশজন সাহাবী ন্যূনতম পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। খুবসম্ভব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁদের মতো একই অবস্থায় ছিলেন, যেহেতু এ বর্ণনায় তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু বলা হয়নি। তো তাঁরা সকলে খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললেন। হযরত ইবন উমর রাযি. বলেন-
(এ অবস্থায় আমরা লোনা ভূমির উপর দিয়ে চলছিলাম। যেতে যেতে আমরা তার কাছে এসে পৌঁছলাম)। - سبَاخ অর্থ এমন ভূমি, যার উপরিভাগ লবণাক্ত। তাতে ফসল জন্মায় না। বিশেষ কোনও গাছ-গাছালিও না। খালিপায়ে এরকম লোনা ভূমির উপর চলাচল করা কঠিন। তথাপি রোগী দেখার ছাওয়াব হাসিলের জন্য তাঁরা এ কষ্ট স্বীকার করেছিলেন। তারা হযরত সা'দ রাযি.-এর বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। হযরত ইবন উমর রাযি. বলেন-
(তার গোত্রের লোকজন তার চারপাশ থেকে সরে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহাহ ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীগণ তাঁর কাছে চলে আসলেন)। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পৌঁছলে হযরত সা'দ রাযি.-এর বাড়ির লোকজন এবং তাঁর স্বগোত্রীয় যারা সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা সকলে হযরত সা'দ রাযি.-এর চারপাশ থেকে সরে গেলেন, যাতে তিনি ও তাঁর সঙ্গীগণ রোগীর কাছে যেতে পারেন। এটাই নিয়ম। কেউ রোগী দেখতে আসলে উপস্থিত লোকদের উচিত নিজেরা সরে গিয়ে তাকে কাছে আসার সুযোগ দেওয়া, যাতে কাছ থেকে রোগী দেখতে পারে। সম্ভব হলে তার সঙ্গে কথা বলতে পারে, প্রয়োজনে তার হাতে, কপালে হাত রাখতে পারে। কাছ থেকে রোগীকে শুনিয়ে শুনিয়ে দু'আ করলেও তাতে রোগীর কষ্ট লাঘব হয় ও মনোবল ফিরে পায়। তাছাড়া এখানে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন। কাজেই তাদের সরে যাওয়ার এক কারণ ছিল তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোও।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও হক্কানী আলেম ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির সাহচর্যে কিছুক্ষণ কাটানোর সুযোগ হলে সে সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। বরং সেরকম সুযোগ বের করেই নেওয়া চাই।
খ. কেবল একনজর দেখা ও সালাম দেওয়ার লক্ষ্যেও যদি কোনও বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে আসা হয়, সেটাও অনেক বড় সৌভাগ্য।
গ. কোনও মাধ্যমে প্রিয় ব্যক্তির খোঁজখবর জানার সুযোগ হলে সে সুযোগ গ্রহণ করা চাই।
ঘ. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অনেক বড় পুণ্যের কাজ। সে ব্যক্তি কাছের মানুষ হলে দেখতে যাওয়ার গুরুত্ব বেড়ে যায়।
ঙ. কোনও পুণ্যার্জনের সুযোগ হলে অন্যদেরও তাতে অংশগ্রহণের উৎসাহ দেওয়া উচিত।
চ. বিশিষ্ট ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে গেলে বা অন্য কোনও কাজে বের হলে অনুমতি সাপেক্ষে তার সহযাত্রী হওয়ার শিক্ষাও এ হাদীছে পাওয়া যায়।
ছ. যারা কোনও রোগীকে দেখতে আসে, উপস্থিত ব্যক্তিদের উচিত তাদেরকে রোগীর কাছে আসার সুযোগ করে দেওয়া। আগুন্তুক যদি কোনও সম্মানী ব্যক্তি হয়, তখন অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গেই এটা করা চাই।
জ. এ হাদীছ দ্বারা আমরা জানতে পারি সাহাবায়ে কেরাম কী গরীবানা হালে দিন কাটিয়েছেন। জামা, জুতা, টুপি ইত্যাদি না থাকার চেয়ে বেশি গরীবানা হাল আর কী হতে পারে? তা সত্ত্বেও তাঁরা দীনের উপর কত মজবুত ছিলেন। তাই যে-কোনও কষ্ট-ক্লেশে আমাদের উচিত তাদের এ অবস্থা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করা।
তাঁরা বসা থাকা অবস্থায় জনৈক আনসারী সাহাবী আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলেন। তারপর তিনি বসেছিলেন কি না, এ হাদীছে তার উল্লেখ নেই। এমনও হতে পারে যে, তিনি কোনও কাজে যাচ্ছিলেন। আর যেহেতু এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক নজর দেখা, তাঁকে সালাম দেওয়া ও তাঁর সালামের জবাবগ্রহণের সৌভাগ্যটুকু অর্জন করতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যেই তার আসা। তারপর তিনি যখন চলে যাচ্ছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে হযরত সা'দ ইবন উবাদা-এর খবর জানতে চেয়েছিলেন। এ সাহাবীর নাম জানা যায় না। এতটুকু তো স্পষ্ট যে, তিনি হযরত সা'দ রাযি.-এর কাছের কেউ হবেন। আত্মীয়, প্রতিবেশী, একই গোত্রীয় বা এমন কিছু।
জিজ্ঞাসার উত্তরে তিনি বলেছিলেন- (ভালো)। প্রকৃতপক্ষে তিনি অসুস্থ ছিলেন। সেজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিজ্ঞাসা। তা সত্ত্বেও যে বলেছেন 'ভালো', এটা রোগীর অবস্থা বর্ণনার একটা আদব। পরোক্ষভাবে এটা তার জন্য শুভকামনা। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যেন তাকে ভালো করে দেন। সরাসরি রোগীকে তার অবস্থা জানানোর বেলায় তো এমনই বলা উচিত, যাতে রোগী ভয় না পায়, দুশ্চিন্তায় না পড়ে; বরং আশাবাদী হয় ও মনের শক্তি বজায় থাকে। এটা আরোগ্য লাভের পক্ষে সহায়ক।
অপর এক বর্ণনায় আছে, উত্তরদাতা বলেছিল- (সংকটাপন্ন)। অর্থাৎ রোগীর অবস্থা ভালো নয়। এ শব্দ দ্বারা তাঁর বাস্তব অবস্থা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে এ শব্দটি সম্ভবত পরবর্তী কোনও বর্ণনাকারীর। একে বলা হয় 'রেওয়ায়াত বিল মা'না'। অর্থাৎ কোনও তথ্য বা ঘটনার বিষয়বস্তু মূল বর্ণনাকারীর শব্দ ও ভাষায় বর্ণনা না করে নিজ শব্দ ও নিজ ভাষায় বর্ণনা করা। যথাযথ শর্ত মোতাবেক হলে এরূপ বর্ণনা করার অনুমতি আছে। অবশ্য সাধারণজনদের এর থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন যে, হযরত সা'দ রাযি. সুস্থ হননি। তিনি তাঁকে দেখতে যেতে চাইলেন। রোগী দেখতে যাওয়া অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে- “যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায়, সে যতক্ষণ না ফিরে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতের ফল পাড়তে থাকে।"
অন্য এক হাদীছে আছে-
منْ عَادَ الْمَرِيْضَ خاضَ فِي الرَّحْمَةِ، فَإِذَا جَلَسَ عِنْدَهُ اغتَمَسَ فِيهَا.
“যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায়, সে আল্লাহর রহমতের মধ্যে অবতরণ করতে থাকে। যখন রোগীর কাছে গিয়ে বসে, তখন রহমতের মধ্যে ডুবে যায়।”
সুতরাং তিনি হযরত সা'দ রাযি.-কে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি সাহাবীদেরকে উদ্বুদ্ধ করলেন যেন এ মহৎ কাজে যার পক্ষে সম্ভব অংশগ্রহণ করে। ১০ জনেরও বেশি সাহাবী তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলেন। কেমন ছিল এ সকল সাহাবীর অবস্থা? হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন-আমাদের কারও পরিধানে জুতা, মোজা, টুপি ও জামা ছিল না। অর্থাৎ তাঁরা সকলেই কেবল লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। জামা দ্বারা যদি প্রচলিত পোশাক বোঝানো হয়, যা শরীরের উপর অংশের গঠন অনুযায়ী তৈরি করা হয়, তবে বলা যেতে পারে তাঁদের কেউ কেউ হয়তো চাদর পরিহিত ছিলেন। আর যদি সাধারণভাবে শরীরের উপর অংশ ঢাকার কাপড় বোঝানো হয়ে থাকে, তবে অর্থ হবে তাঁদের শরীরে লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই অর্থ গ্রহণের সুযোগ আছে এ কারণে যে, সাহাবায়ে কেরামের এ শুরু যমানায় প্রচলিত অর্থে জামা ব্যবহার খুব কমই ছিল। তাঁরা সাধারণত শরীর ঢাকার জন্য চাদরই ব্যবহার করতেন।
যাহোক, হাদীছটির সারকথা এই যে, এ দশ দশজন সাহাবী ন্যূনতম পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। খুবসম্ভব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁদের মতো একই অবস্থায় ছিলেন, যেহেতু এ বর্ণনায় তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু বলা হয়নি। তো তাঁরা সকলে খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললেন। হযরত ইবন উমর রাযি. বলেন-
(এ অবস্থায় আমরা লোনা ভূমির উপর দিয়ে চলছিলাম। যেতে যেতে আমরা তার কাছে এসে পৌঁছলাম)। - سبَاخ অর্থ এমন ভূমি, যার উপরিভাগ লবণাক্ত। তাতে ফসল জন্মায় না। বিশেষ কোনও গাছ-গাছালিও না। খালিপায়ে এরকম লোনা ভূমির উপর চলাচল করা কঠিন। তথাপি রোগী দেখার ছাওয়াব হাসিলের জন্য তাঁরা এ কষ্ট স্বীকার করেছিলেন। তারা হযরত সা'দ রাযি.-এর বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। হযরত ইবন উমর রাযি. বলেন-
(তার গোত্রের লোকজন তার চারপাশ থেকে সরে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহাহ ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীগণ তাঁর কাছে চলে আসলেন)। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পৌঁছলে হযরত সা'দ রাযি.-এর বাড়ির লোকজন এবং তাঁর স্বগোত্রীয় যারা সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা সকলে হযরত সা'দ রাযি.-এর চারপাশ থেকে সরে গেলেন, যাতে তিনি ও তাঁর সঙ্গীগণ রোগীর কাছে যেতে পারেন। এটাই নিয়ম। কেউ রোগী দেখতে আসলে উপস্থিত লোকদের উচিত নিজেরা সরে গিয়ে তাকে কাছে আসার সুযোগ দেওয়া, যাতে কাছ থেকে রোগী দেখতে পারে। সম্ভব হলে তার সঙ্গে কথা বলতে পারে, প্রয়োজনে তার হাতে, কপালে হাত রাখতে পারে। কাছ থেকে রোগীকে শুনিয়ে শুনিয়ে দু'আ করলেও তাতে রোগীর কষ্ট লাঘব হয় ও মনোবল ফিরে পায়। তাছাড়া এখানে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন। কাজেই তাদের সরে যাওয়ার এক কারণ ছিল তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোও।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও হক্কানী আলেম ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির সাহচর্যে কিছুক্ষণ কাটানোর সুযোগ হলে সে সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। বরং সেরকম সুযোগ বের করেই নেওয়া চাই।
খ. কেবল একনজর দেখা ও সালাম দেওয়ার লক্ষ্যেও যদি কোনও বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে আসা হয়, সেটাও অনেক বড় সৌভাগ্য।
গ. কোনও মাধ্যমে প্রিয় ব্যক্তির খোঁজখবর জানার সুযোগ হলে সে সুযোগ গ্রহণ করা চাই।
ঘ. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অনেক বড় পুণ্যের কাজ। সে ব্যক্তি কাছের মানুষ হলে দেখতে যাওয়ার গুরুত্ব বেড়ে যায়।
ঙ. কোনও পুণ্যার্জনের সুযোগ হলে অন্যদেরও তাতে অংশগ্রহণের উৎসাহ দেওয়া উচিত।
চ. বিশিষ্ট ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে গেলে বা অন্য কোনও কাজে বের হলে অনুমতি সাপেক্ষে তার সহযাত্রী হওয়ার শিক্ষাও এ হাদীছে পাওয়া যায়।
ছ. যারা কোনও রোগীকে দেখতে আসে, উপস্থিত ব্যক্তিদের উচিত তাদেরকে রোগীর কাছে আসার সুযোগ করে দেওয়া। আগুন্তুক যদি কোনও সম্মানী ব্যক্তি হয়, তখন অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গেই এটা করা চাই।
জ. এ হাদীছ দ্বারা আমরা জানতে পারি সাহাবায়ে কেরাম কী গরীবানা হালে দিন কাটিয়েছেন। জামা, জুতা, টুপি ইত্যাদি না থাকার চেয়ে বেশি গরীবানা হাল আর কী হতে পারে? তা সত্ত্বেও তাঁরা দীনের উপর কত মজবুত ছিলেন। তাই যে-কোনও কষ্ট-ক্লেশে আমাদের উচিত তাদের এ অবস্থা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
