আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১২- জানাযা-কাফন-দাফন সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ১৯৯৬
আন্তর্জাতিক নং: ৯১৬ - ২
১. মুমূর্ষকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর তালকীন করা
১৯৯৬। কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ......... সুলাইমান ইবনে বিলাল (রাহঃ) সবাই ঐ সনদে বর্ণনা করেছেন।
باب تَلْقِينِ الْمَوْتَى لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
وَحَدَّثَنَاهُ قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ يَعْنِي الدَّرَاوَرْدِيَّ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، جَمِيعًا بِهَذَا الإِسْنَادِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
তালকীন অর্থ শিক্ষা দেওয়া, আদেশ করা, উপদেশ দেওয়া। মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমার তালকীন করা মানে তার কাছে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কালেমা পড়া ও পড়তে থাকা, যাতে তা শুনে সে ব্যক্তি নিজেও পাঠ করে।
কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বড়ই গুরুত্বপূর্ণ বাক্য। এ বাক্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে নিরাপত্তা দেয়। দুনিয়ায় যে অমুসলিম কালেমা পাঠ করে, তার জান-মাল নিরাপদ হয়ে যায়। তার জান-মালে হস্তক্ষেপ করা কারও জন্য জায়েয থাকে না। অনুরূপ এ বাক্য আখিরাতেও নিরাপত্তা দেবে। এ কালেমার সঙ্গে মৃত্যু লাভ হলে জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়। এর আগের হাদীছটিতে জানানো হয়েছে, যার শেষকথা হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তাই মৃত্যুকালে যাতে এ কালেমা নসীব হয়, সকলেরই সে চেষ্টা থাকা উচিত। সেজন্য এক তো এ কালেমার যিকির বেশি বেশি করতে হবে, দ্বিতীয়ত কালেমার দাবি অনুযায়ী জীবন গঠনের চেষ্টা চালাতে হবে।
মুমূর্ষু ব্যক্তি যাতে কালেমা পড়তে পারে, সেজন্য তার কাছে উপস্থিত লোকজনকে সহযোগিতা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তারা তাকে তালকীন করবে। আদেশ করার করবে যে, তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ো। আর সেরকম অবস্থা না থাকলে নিজেরা তার কাছে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকবে। আশা করা যায় তা শুনে সে নিজেও কালেমা পড়বে। মুখে উচ্চারণ করতে না পারলেও মনে মনে পড়বে।
প্রকাশ থাকে যে, কালেমার তালকীন করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে মুমূর্ষু ব্যক্তি কষ্ট না পায়। তাই তাকে কালেমা পড়ার জন্য পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়। যদি একবার কালেমা পড়ে নেয়, তারপর অন্য কোনও কথা না বলে, তবে পুনরায় তালকীন করবে না। এটা করা মাকরূহ। কেননা তাতে মুমূর্ষু ব্যক্তি বিরক্ত হতে পারে। কোনও অনুচিত কথাও বলে ফেলতে পারে। হাঁ, যদি একবার কালেমা পড়ার পর অন্য কোনও কথা বলে ফেলে, তবে পুনরায় তালকীন করবে।
বর্ণিত আছে, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ.-এর মুমূর্ষু অবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁকে বারবার তালকীন করছিল। শেষে তিনি বলে উঠলেন, তুমি ভালো তালকীন করতে জান না। আমার আশঙ্কা তুমি আমার পর অন্য কোনও মুসলিমকেও কষ্ট দেবে। তুমি যখন তালকীন করলে, তারপর আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললাম, এ অবস্থায় আছি অন্য কোনও কথা না বলা পর্যন্ত ক্ষান্ত থাকো। হাঁ, যদি অন্য কোনও কথা বলি, তবে ফের তালকীন করো, যাতে আমার শেষকথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হয়।
মৃতব্যক্তিকে কালেমার তালকীন করা এ কারণেও জরুরি যে, এ সময় শয়তান তাকে নানারকম ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। তার ঈমান-আকীদা নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। কারণ এটা ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার শেষ সুযোগ। সে ঈমান নিয়ে মারা গেলে শয়তানের আর কিছু করার থাকবে না। তাই সে এ সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু কালেমার তালকীন করা হলে শয়তান সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
উল্লেখ্য, মুমূর্ষু ব্যক্তি কাফের হলেও যদি অনুকূল পরিস্থিতি থাকে, তবে তাকে তালকীন করা চাই। কেননা জান কবজের অবস্থা শুরু হওয়ার আগে আগে সে কালেমা পড়তে পারলে নাজাত পেয়ে যাবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অমুসলিম মুমূর্ষুকে তালকীন করেছেন। চাচা আবু তালিবকে তার মৃত্যুর আগে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালেমা পড়ার অনুরোধ করেছিলেন। তিনি তার শিয়রে বসে বলেছিলেন-
أي عم، قل لا إله إلا الله، كلمة أحاج لك بها عند الله
'চাচাগো! আপনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন। আমি এর অছিলায় আল্লাহর কাছে আপনার পক্ষে আবেদন-নিবেদন করব’।
(সহীহ বুখারী: ৩৮৮৪; সহীহ মুসলিম: ২৪; সুনানে নাসাঈ ২০৩৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৮২০; বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত: ১৭১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১২৭৪)
এমনিভাবে এক ইহুদি বালক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করত। তার মুমূর্ষকালেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। বালকটির তা বলার তাওফীক হয়েছিল।
(সহীহ বুখারী: ১৩৫৬; সুনানে আবু দাউদ: ৩০৯৫; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৩৩৫০; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৪৮৮৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১২১৫৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৫৭)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মৃতব্যক্তিকে কালেমার তালকীন করা উচিত।
খ. মৃতব্যক্তি যাতে আখিরাতে নাজাত পেয়ে যায়, প্রত্যেকের সেই দরদ ও আকাঙ্ক্ষা থাকা বাঞ্ছনীয়।
কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বড়ই গুরুত্বপূর্ণ বাক্য। এ বাক্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে নিরাপত্তা দেয়। দুনিয়ায় যে অমুসলিম কালেমা পাঠ করে, তার জান-মাল নিরাপদ হয়ে যায়। তার জান-মালে হস্তক্ষেপ করা কারও জন্য জায়েয থাকে না। অনুরূপ এ বাক্য আখিরাতেও নিরাপত্তা দেবে। এ কালেমার সঙ্গে মৃত্যু লাভ হলে জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়। এর আগের হাদীছটিতে জানানো হয়েছে, যার শেষকথা হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তাই মৃত্যুকালে যাতে এ কালেমা নসীব হয়, সকলেরই সে চেষ্টা থাকা উচিত। সেজন্য এক তো এ কালেমার যিকির বেশি বেশি করতে হবে, দ্বিতীয়ত কালেমার দাবি অনুযায়ী জীবন গঠনের চেষ্টা চালাতে হবে।
মুমূর্ষু ব্যক্তি যাতে কালেমা পড়তে পারে, সেজন্য তার কাছে উপস্থিত লোকজনকে সহযোগিতা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তারা তাকে তালকীন করবে। আদেশ করার করবে যে, তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ো। আর সেরকম অবস্থা না থাকলে নিজেরা তার কাছে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকবে। আশা করা যায় তা শুনে সে নিজেও কালেমা পড়বে। মুখে উচ্চারণ করতে না পারলেও মনে মনে পড়বে।
প্রকাশ থাকে যে, কালেমার তালকীন করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে মুমূর্ষু ব্যক্তি কষ্ট না পায়। তাই তাকে কালেমা পড়ার জন্য পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়। যদি একবার কালেমা পড়ে নেয়, তারপর অন্য কোনও কথা না বলে, তবে পুনরায় তালকীন করবে না। এটা করা মাকরূহ। কেননা তাতে মুমূর্ষু ব্যক্তি বিরক্ত হতে পারে। কোনও অনুচিত কথাও বলে ফেলতে পারে। হাঁ, যদি একবার কালেমা পড়ার পর অন্য কোনও কথা বলে ফেলে, তবে পুনরায় তালকীন করবে।
বর্ণিত আছে, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ.-এর মুমূর্ষু অবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁকে বারবার তালকীন করছিল। শেষে তিনি বলে উঠলেন, তুমি ভালো তালকীন করতে জান না। আমার আশঙ্কা তুমি আমার পর অন্য কোনও মুসলিমকেও কষ্ট দেবে। তুমি যখন তালকীন করলে, তারপর আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললাম, এ অবস্থায় আছি অন্য কোনও কথা না বলা পর্যন্ত ক্ষান্ত থাকো। হাঁ, যদি অন্য কোনও কথা বলি, তবে ফের তালকীন করো, যাতে আমার শেষকথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হয়।
মৃতব্যক্তিকে কালেমার তালকীন করা এ কারণেও জরুরি যে, এ সময় শয়তান তাকে নানারকম ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। তার ঈমান-আকীদা নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। কারণ এটা ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার শেষ সুযোগ। সে ঈমান নিয়ে মারা গেলে শয়তানের আর কিছু করার থাকবে না। তাই সে এ সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু কালেমার তালকীন করা হলে শয়তান সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
উল্লেখ্য, মুমূর্ষু ব্যক্তি কাফের হলেও যদি অনুকূল পরিস্থিতি থাকে, তবে তাকে তালকীন করা চাই। কেননা জান কবজের অবস্থা শুরু হওয়ার আগে আগে সে কালেমা পড়তে পারলে নাজাত পেয়ে যাবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অমুসলিম মুমূর্ষুকে তালকীন করেছেন। চাচা আবু তালিবকে তার মৃত্যুর আগে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালেমা পড়ার অনুরোধ করেছিলেন। তিনি তার শিয়রে বসে বলেছিলেন-
أي عم، قل لا إله إلا الله، كلمة أحاج لك بها عند الله
'চাচাগো! আপনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন। আমি এর অছিলায় আল্লাহর কাছে আপনার পক্ষে আবেদন-নিবেদন করব’।
(সহীহ বুখারী: ৩৮৮৪; সহীহ মুসলিম: ২৪; সুনানে নাসাঈ ২০৩৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৮২০; বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত: ১৭১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১২৭৪)
এমনিভাবে এক ইহুদি বালক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করত। তার মুমূর্ষকালেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। বালকটির তা বলার তাওফীক হয়েছিল।
(সহীহ বুখারী: ১৩৫৬; সুনানে আবু দাউদ: ৩০৯৫; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৩৩৫০; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৪৮৮৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১২১৫৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৫৭)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মৃতব্যক্তিকে কালেমার তালকীন করা উচিত।
খ. মৃতব্যক্তি যাতে আখিরাতে নাজাত পেয়ে যায়, প্রত্যেকের সেই দরদ ও আকাঙ্ক্ষা থাকা বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: