আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১১- সূর্য-চন্দ্র গ্রহনের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৯৮১
আন্তর্জাতিক নং: ৯০৭-১
১. সূর্যগ্রহণের নামাযে কবরের আযাবের উল্লেখ
১৯৮১। সুয়ায়দ ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায আদায় করলেন। লোকেরা তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন যে, এ সময়ের মধ্যে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা যায়। এরপর তিনি দীর্ঘ রুকু’ করলেন। এরপর তিনি মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। কিন্তু পূর্বের কিয়াম হতে কিছু কম। এর পর আবার দীর্ঘক্ষণ রুকু’ করলেন। কিন্তু পূর্ব রুকু হতে কিছু কম।
এরপর সিজদা করলেন ও দীর্ঘ কিয়াম করলেন। কিন্তু পূর্বপেক্ষা কিছু কম। আবার দীর্ঘ রুকু করলেন কিন্তু প্রথম রুকু হতে কিছু কম। এরপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। কিন্তু প্রথম কিয়ামের তুলনায় কিছু কম। আবার রুকু’ করলেন কিন্তু পূর্বের তুলনায় কম। তারপর সিজদা করলেন ও নামায থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে হতে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু ও জন্মের কারণে এগুলোতে গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে পাও তখন আল্লাহর যিক্র কর।
সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার এ অবস্থান থেকে আপনাকে কিছু নিতে দেখলাম। আবার আপনাকে দেখলাম, হাত গুটিয়ে নিতে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি জান্নাত দেখতে পেলাম এবং আঙ্গুর নিতে নিতে চাইলাম। যদি আমি তা নিতাম, তবে যত দিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা এ থেকে খেতে পারতে। এরপর জাহান্নাম দেখতে পেলাম। আজকের দিনের মত দৃশ্য আমি আর কখনো দেখিনি। আমি অধিক সংখ্যায়ে মহিলাদের জাহান্নামে দেখেছি। (উপস্থিত) মহিলাগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তা কেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাদের কুফরের কারণে। মহিলাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফর করে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না বরং তারা জীবন সহচরদের সাথেও কুফর করে এবং অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞ থাকে। তুমি যদি তাদের একজনের প্রতি সারা যুগ ধরে অনুগ্রহ কর, তারপর কখনো সামান্য ক্রটি দেখতে পায়, তখন সে বলে উঠে তোমার থেকে কখনো কোন ভাল ব্যবহার পাই নি।
এরপর সিজদা করলেন ও দীর্ঘ কিয়াম করলেন। কিন্তু পূর্বপেক্ষা কিছু কম। আবার দীর্ঘ রুকু করলেন কিন্তু প্রথম রুকু হতে কিছু কম। এরপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। কিন্তু প্রথম কিয়ামের তুলনায় কিছু কম। আবার রুকু’ করলেন কিন্তু পূর্বের তুলনায় কম। তারপর সিজদা করলেন ও নামায থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে হতে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু ও জন্মের কারণে এগুলোতে গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে পাও তখন আল্লাহর যিক্র কর।
সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার এ অবস্থান থেকে আপনাকে কিছু নিতে দেখলাম। আবার আপনাকে দেখলাম, হাত গুটিয়ে নিতে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি জান্নাত দেখতে পেলাম এবং আঙ্গুর নিতে নিতে চাইলাম। যদি আমি তা নিতাম, তবে যত দিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা এ থেকে খেতে পারতে। এরপর জাহান্নাম দেখতে পেলাম। আজকের দিনের মত দৃশ্য আমি আর কখনো দেখিনি। আমি অধিক সংখ্যায়ে মহিলাদের জাহান্নামে দেখেছি। (উপস্থিত) মহিলাগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তা কেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাদের কুফরের কারণে। মহিলাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফর করে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না বরং তারা জীবন সহচরদের সাথেও কুফর করে এবং অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞ থাকে। তুমি যদি তাদের একজনের প্রতি সারা যুগ ধরে অনুগ্রহ কর, তারপর কখনো সামান্য ক্রটি দেখতে পায়, তখন সে বলে উঠে তোমার থেকে কখনো কোন ভাল ব্যবহার পাই নি।
باب ذِكْرِ عَذَابِ الْقَبْرِ فِي صَلاَةِ الْخُسُوفِ
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ مَيْسَرَةَ، حَدَّثَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ، بْنِ يَسَارٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسُ مَعَهُ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلاً قَدْرَ نَحْوِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدِ انْجَلَتِ الشَّمْسُ فَقَالَ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ هَذَا ثُمَّ رَأَيْنَاكَ كَفَفْتَ . فَقَالَ " إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ مِنْهَا عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وَرَأَيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ مَنْظَرًا قَطُّ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ " . قَالُوا بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " بِكُفْرِهِنَّ " . قِيلَ أَيَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ " بِكُفْرِ الْعَشِيرِ وَبِكُفْرِ الإِحْسَانِ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী)। এটা বলা হয়েছে জাহান্নামের একটা বিশেষ সময় সম্পর্কে। এটা সাধারণভাবে জাহান্নামের সব সময়কার কথা নয়। মূলত প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি থাকবে। পরে যারা ঈমান নিয়ে মারা যাবে, ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে চলে যাবে। তখন জান্নাতে পুরুষ ও নারী উভয়ের সংখ্যাই সমান হয়ে যাবে।
প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ অনেক মুমিন নারী প্রথমে জাহান্নামে যাবে, তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। তাদের প্রথমদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তাদের এমনকিছু দোষ, যা সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি পাওয়া যায়। হাদীসে আছে,
تكثرن اللعن، وتكفرن العشير
“তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর।"
অন্যান্য পাপ নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণত সমানই করে। কিন্তু লানত করার পাপ তুলনামূলক নারীদের মধ্যে বেশি। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা তো তাদেরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই প্রথমদিকে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হবে।
হাদীছটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়া নয়; বরং নারীদের মধ্যেই যারা জাহান্নামে যাবে তাদের একদলের তুলনায় অন্যদলের সংখ্যা বেশি বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের অনেককেই বিভিন্ন কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বটে, কিন্তু লা'নত করা ও স্বামীর অবাধ্যতা করার অপরাধে যারা জাহান্নামে যাবে তাদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি হবে।
উল্লেখ্য : স্বামীর অবাধ্যতা করা যেমন পাপ, তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করাও পাপ বৈকি। অনেক স্বামীই এ পাপ করে থাকে। এর থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কারণে তাদেরকেও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে আছে।
খ. এমন কিছু পাপ আছে, যা সাধারণত মহিলারাই বেশি করে থাকে। তাদের উচিত সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, যাতে সেসব পাপের কারণে জাহান্নামে যেতে না হয়। তারা যাতে সেসব পাপ ছাড়তে পারে, পুরুষের উচিত সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা।
প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ অনেক মুমিন নারী প্রথমে জাহান্নামে যাবে, তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। তাদের প্রথমদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তাদের এমনকিছু দোষ, যা সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি পাওয়া যায়। হাদীসে আছে,
تكثرن اللعن، وتكفرن العشير
“তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর।"
অন্যান্য পাপ নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণত সমানই করে। কিন্তু লানত করার পাপ তুলনামূলক নারীদের মধ্যে বেশি। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা তো তাদেরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই প্রথমদিকে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হবে।
হাদীছটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়া নয়; বরং নারীদের মধ্যেই যারা জাহান্নামে যাবে তাদের একদলের তুলনায় অন্যদলের সংখ্যা বেশি বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের অনেককেই বিভিন্ন কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বটে, কিন্তু লা'নত করা ও স্বামীর অবাধ্যতা করার অপরাধে যারা জাহান্নামে যাবে তাদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি হবে।
উল্লেখ্য : স্বামীর অবাধ্যতা করা যেমন পাপ, তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করাও পাপ বৈকি। অনেক স্বামীই এ পাপ করে থাকে। এর থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কারণে তাদেরকেও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে আছে।
খ. এমন কিছু পাপ আছে, যা সাধারণত মহিলারাই বেশি করে থাকে। তাদের উচিত সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, যাতে সেসব পাপের কারণে জাহান্নামে যেতে না হয়। তারা যাতে সেসব পাপ ছাড়তে পারে, পুরুষের উচিত সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
