আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১১- সূর্য-চন্দ্র গ্রহনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৬২
আন্তর্জাতিক নং: ৯০১-১
শিরোনামবিহীন পরিচ্ছেদ
১৯৬২। কূতায়বা ইবনে সাঈদ ও আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সময়ে সূর্য গ্রহণ হল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং কিয়ামকে দীর্ঘায়িত করলেন, রুকুকেও দীর্ঘায়িত করলেন। রুকু’ হতে মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিন্তু পূর্বের দাঁড়াবার সময়ের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর রুকু’ করলেন এবং দীর্ঘ রুকু’ করলেন, কিন্তু প্রথম রুকু’ হতে কিছু কম। এরপর সিজদা করলেন, তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। কিন্তু, প্রথম কিয়াম হতে কম, এরপর রুকু’ করলেন এবং রুকু’কে দীর্ঘায়িত করলেন। প্রথম রুকু’ হতে কম, এর পর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাড়ালেন, কিন্তু পূর্বের কিয়াম হতে কম। এরপর পূনরায় রুকু’ করলেন এবং রুকু’ দীর্ঘায়িত করলেন। কিন্তু পূর্ব হতে কম। অতঃপর সিজদা করলেন।

তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিরলেন। এদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অতঃপর লোকদের উদ্দেশে খুতবা দিতে গিয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা করলেন। এরপর বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না, যখন তোমরা সুর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর বলো, দুআ করো, নামায আদায় করো সাদ্‌কা দাও। হে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উম্মত! এ ব্যাপারে আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন কেউ নেই যে, তার বান্দা ব্যভিচার করবে এবং তাঁর বান্দী ব্যভিচার করবে (অথচ তিনি শাস্তি দিবেন না)। হে মুহাম্মাদের উম্মত! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা জানতে, আমি যা জানি, তবে তোমরা কান্নাকাটি করতে অধিক এবং হাসতে অনেক কম। আমি কি আল্লাহর হুকুম যথাযথ ভাবে প্রচার করেছি? মালিকের বর্ণনায় আছে যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর বিশেষ নিদর্শনাবলীর মধ্যে দু’টি নিদর্শন।
وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، ح. وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ خَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فَأَطَالَ الْقِيَامَ جِدًّا ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ جِدًّا ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَأَطَالَ الْقِيَامَ جِدًّا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ جِدًّا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ انْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ تَجَلَّتِ الشَّمْسُ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَإِنَّهُمَا لاَ يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَكَبِّرُوا وَادْعُوا اللَّهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ إِنْ مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرَ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ " . وَفِي رِوَايَةِ مَالِكٍ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি হাসাহাসি পসন্দ করতেন না। বেশি হাসিতে অন্তরে উদাসীনতা জন্ম নেয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন لا تكثر الضحك، فإن كثرة الضحك تميت القلب "বেশি হাসবে না। কেননা হাসির আধিক্য অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।”

একবার তিনি সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তাতে তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন যে (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়দানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে
ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش ولهجرتم النساء، ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون
"তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

হাদীছটি দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পার্থিব জীবনযাপন সম্পর্কে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, দুনিয়া আনন্দে মেতে থাকার জায়গা নয়। তা থাকা উচিতও নয়। তার সামনে আখিরাত আছে। সেখানকার পরিস্থিতি বড় কঠিন। সে কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকা উচিত। মনে ভয় রাখা উচিত। উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কাঁদা, যাতে তিনি সেখানে নাজাত দান করেন। যেন তিনি নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাঁদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।

খ. অল্প হাসি দোষের নয়, যদি অন্তরে আখিরাতের ভয় থাকে এবং সে ভয়ে ক্রন্দনও করা হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)