আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৭- কুরআনে কারীমের ফাযায়েল ও আদাব-মাসাঈল
হাদীস নং: ১৮২২
আন্তর্জাতিক নং: ৮৪৩-১
১৯. ভয়-ভীতিকালে নামায আদায়ের পদ্ধতি
১৮২২। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাযিঃ) ......... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে যুদ্ধে যাত্রা করলাম এবং যাতুর-রিকা নামক স্থানে পৌহুলাম। তিনি বলেন আমাদের অবস্থা এরূপ ছিল যে, আমরা যখন কোন ছায়াযুক্ত গাছের কাছে পৌছতাম তখন আমরা তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য ছেড়ে দিতাম। রাবী বলেন, হঠাৎ মুশরিকদের এক ব্যক্তি এল। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর তরবারী গাছে ঝুলানো ছিল। মুশরিক লোকটি নবী (ﷺ) এর তরবারীটি হাতে তুলে নিয়ে খাপ থেকে বের করে নিল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় কর? তিনি বললেন, না।
মুশরিক বলল, তোমাকে আমার থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করবেন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীগণ ঐ ব্যক্তিকে তাড়া দিলেন। সে তরবারী খাপে ডুকিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখল। রাবী বলেন, ইতিমধ্যে নামাযের জন্য আযান দেওয়া হল। তখন একটি দলকে নিয়ে তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অপর দলকে নিয়ে দু-রাকআত নামায আদায় করলেন। রাবী বলেন, অতএব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হল চার রাক’আত এবং সাহাবীগণের হল দু’ রাক’আত।
মুশরিক বলল, তোমাকে আমার থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করবেন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীগণ ঐ ব্যক্তিকে তাড়া দিলেন। সে তরবারী খাপে ডুকিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখল। রাবী বলেন, ইতিমধ্যে নামাযের জন্য আযান দেওয়া হল। তখন একটি দলকে নিয়ে তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অপর দলকে নিয়ে দু-রাকআত নামায আদায় করলেন। রাবী বলেন, অতএব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হল চার রাক’আত এবং সাহাবীগণের হল দু’ রাক’আত।
باب صَلاَةِ الْخَوْفِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، بْنُ أَبِي كَثِيرٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ أَقْبَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى إِذَا كُنَّا بِذَاتِ الرِّقَاعِ قَالَ كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظَلِيلَةٍ تَرَكْنَاهَا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ - فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَسَيْفُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُعَلَّقٌ بِشَجَرَةٍ فَأَخَذَ سَيْفَ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاخْتَرَطَهُ فَقَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَتَخَافُنِي قَالَ " لاَ " . قَالَ فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قَالَ " اللَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْكَ " . قَالَ فَتَهَدَّدَهُ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَغْمَدَ السَّيْفَ وَعَلَّقَهُ - قَالَ - فَنُودِيَ بِالصَّلاَةِ فَصَلَّى بِطَائِفَةٍ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ تَأَخَّرُوا وَصَلَّى بِالطَّائِفَةِ الأُخْرَى رَكْعَتَيْنِ قَالَ فَكَانَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ وَلِلْقَوْمِ رَكْعَتَانِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ ঘটনাটি যাতুর-রিকার যুদ্ধকালীন। এ যুদ্ধটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বনু মুহারিবের বিরুদ্ধে হিজরী ৬ষ্ঠ সালে। কারও মতে ৪র্থ সালে। যে লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিল তার নাম গাওরাছ ইবনুল হারিছ। সে বনু মুহারিবেরই এক ব্যক্তি। সে তাদের সাথে সলাপরামর্শ করেই এ দুষ্কর্মটি করতে এসেছিল। সে যখন নাঙ্গা তরবারি নিয়ে আঘাত হানতে উদ্যত হয় এবং বলে উঠে, কে তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাবে, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিন্দুমাত্র ভয় পাননি। আল্লাহ তা'আলার উপর তাঁর ছিল শতভাগ তাওয়াক্কুল। আল্লাহর উপর নির্ভরতার এত উচ্চস্তরে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন যে, তিনি যেন সর্বক্ষণ আল্লাহ তা'আলাকে প্রত্যক্ষ করতেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর মুশাহাদা ও দর্শন এবং তাঁর যিকর ও স্মরণে যাঁর অন্তর সর্বক্ষণ নিমগ্ন থাকে, এক বেঈমান মুশরিকের উদ্যত তরবারি দেখে তিনি ভয় পাবেন? বরং তিনি যখন বললেন আল্লাহই আমাকে বাঁচাবে, তখন তাঁর আল্লাহ-নির্ভরতাজনিত হিম্মত ও উচ্চারণের বলিষ্ঠতায় সেই লোকটিরই অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠল। সে এমনই ভীত হয়ে পড়ল যে, তরবারিটি তার হাত থেকে পড়ে গেল। তারপর তিনি যখন সেই তরবারি নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন- এখন তোমাকে কে বাঁচাবে, তখন সে সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে গেল। আল্লাহর প্রতি যার ঈমান নেই, এরকম অবস্থায় সে কি-ই বা করতে পারে? অগত্যা সে আত্মসমর্পণ করল এবং তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করল। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদের আয়াত নাযিল হয়-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَنْ يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি'আমত স্মরণ কর। যখন একদল লোক তোমাদের বিরুদ্ধে হাত বাড়াতে চেয়েছিল, তখন আল্লাহ তোমাদের (ক্ষতিসাধন করা) থেকে তাদের হাত নিবৃত্ত করেছিলেন এবং (তার কৃতজ্ঞতা এই যে,) আল্লাহকে ভয় কর আর মুমিনদের তো কেবল আল্লাহরই উপর নির্ভর করা উচিত।সূরা মায়িদা, আয়াত ১১
অর্থাৎ এ ঘটনায় যে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গাওরাছের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, এটা আল্লাহ তা'আলার প্রতি তাঁর নির্ভরতার ফল। সুতরাং হে মু'মিনগণ! তাঁর থেকে শিক্ষা নিয়ে তোমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা কর। তা যদি করতে পার, তবে তোমরাও তাঁর সাহায্য লাভ করবে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইলে গাওরাছকে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু এটা তাঁর চরিত্র ছিল না। তিনি ছিলেন ক্ষমাপ্রবণ। ছিলেন সহনশীল। তাঁর চরিত্র ছিল মহানুভবতায় ভরা। মক্কী জীবনের নিঃসঙ্গতাকালেও সকলের প্রতি ক্ষমাশীল আচরণ করেছেন। মাদানী জীবনে যখন পর্যায়ক্রমে লোকবল ও অস্ত্রবলে বলীয়ান হয়ে উঠেছেন, তখনও প্রতিশোধপরায়ণ হননি। সর্বাবস্থায় মানুষ তাঁর কাছ থেকে মহানুভব আচরণই পেয়েছে। তিনি এর মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করেছেন। তাঁর এ শক্তিবলেই দলে দলে মানুষ ইসলামের কাছে পরাভব স্বীকার করেছে। এ লোকটিকেও তাঁর মহানুভবতার শক্তি স্পর্শ করেছিল। তখনই সে ইসলাম গ্রহণ না করলেও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তার অন্তরে ঠিকই দাগ কেটেছিল। ফলে সে তার কওমের কাছে ফিরে গিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল- আমি শ্রেষ্ঠতম মানুষের কাছ থেকে এসেছি। কারও কারও মতে তারপর তিনি বাস্তবেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য দ্বারা ধন্য হন। এ ঘটনাও সাক্ষ্য দেয় ইসলাম তলোয়ারে নয়, উদারতার জোরেই বিশ্বজয় করেছিল।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এ ঘটনা দ্বারা বোঝা যায় এসময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনও পাহারাদার ছিল না। এর আগে সাহাবায়ে কিরাম পালাক্রমে তাঁকে পাহারা দিতেন। পরিশেষে আয়াত নাযিল হয়– وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ “আল্লাহই তোমাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন।"
এরপর থেকে তিনি আর কাউকে পাহারায় নিযুক্ত করতেন না। কোনও কোনও বর্ণনা অনুযায়ী এ আয়াত যাতুর-রিকা'র এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই নাযিল হয়েছে। ইব্ন হাজার ‘আসকালানী রহ. বলেন, সম্ভবত এর আগে পাহারাদার রাখার ব্যাপারে তাঁকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত সাহাবায়ে কিরাম তাঁর পাহারাদারি করতেন। কিন্তু কখনও কখনও ইয়াকীন ও তাওয়াক্কুলের বলে তিনি একাকীও থাকতেন, কোনও পাহারাদার রাখতেন না। পরিশেষে যখন এ ঘটনা ঘটল এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত আয়াত নাযিল হল, তখন পাহারাদার নিয়োগ সম্পূর্ণরূপেই বাদ দিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কঠিন বিপদে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করলে আল্লাহ তা'আলা তা থেকে ঠিকই মুক্তিদান করেন।
খ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াক্কুলের কত উচ্চস্তরে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
গ. এ ঘটনা দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষমাশীলতা ও মহানুভবতারও পরিচয় পাওয়া যায়।
ঘ. আরও জানা যায় শত্রু থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, তবে সেটাই প্রকৃত মহানুভবতা।
ঙ. এর দ্বারা জানা যায় যে, মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য উদারতা ও ক্ষমাশীলতা একটি শক্তিশালী উপায়। সুতরাং ইসলামের দাওয়াতদাতার কর্তব্য এ গুণ অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَنْ يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি'আমত স্মরণ কর। যখন একদল লোক তোমাদের বিরুদ্ধে হাত বাড়াতে চেয়েছিল, তখন আল্লাহ তোমাদের (ক্ষতিসাধন করা) থেকে তাদের হাত নিবৃত্ত করেছিলেন এবং (তার কৃতজ্ঞতা এই যে,) আল্লাহকে ভয় কর আর মুমিনদের তো কেবল আল্লাহরই উপর নির্ভর করা উচিত।সূরা মায়িদা, আয়াত ১১
অর্থাৎ এ ঘটনায় যে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গাওরাছের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, এটা আল্লাহ তা'আলার প্রতি তাঁর নির্ভরতার ফল। সুতরাং হে মু'মিনগণ! তাঁর থেকে শিক্ষা নিয়ে তোমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা কর। তা যদি করতে পার, তবে তোমরাও তাঁর সাহায্য লাভ করবে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইলে গাওরাছকে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু এটা তাঁর চরিত্র ছিল না। তিনি ছিলেন ক্ষমাপ্রবণ। ছিলেন সহনশীল। তাঁর চরিত্র ছিল মহানুভবতায় ভরা। মক্কী জীবনের নিঃসঙ্গতাকালেও সকলের প্রতি ক্ষমাশীল আচরণ করেছেন। মাদানী জীবনে যখন পর্যায়ক্রমে লোকবল ও অস্ত্রবলে বলীয়ান হয়ে উঠেছেন, তখনও প্রতিশোধপরায়ণ হননি। সর্বাবস্থায় মানুষ তাঁর কাছ থেকে মহানুভব আচরণই পেয়েছে। তিনি এর মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করেছেন। তাঁর এ শক্তিবলেই দলে দলে মানুষ ইসলামের কাছে পরাভব স্বীকার করেছে। এ লোকটিকেও তাঁর মহানুভবতার শক্তি স্পর্শ করেছিল। তখনই সে ইসলাম গ্রহণ না করলেও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তার অন্তরে ঠিকই দাগ কেটেছিল। ফলে সে তার কওমের কাছে ফিরে গিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল- আমি শ্রেষ্ঠতম মানুষের কাছ থেকে এসেছি। কারও কারও মতে তারপর তিনি বাস্তবেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য দ্বারা ধন্য হন। এ ঘটনাও সাক্ষ্য দেয় ইসলাম তলোয়ারে নয়, উদারতার জোরেই বিশ্বজয় করেছিল।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এ ঘটনা দ্বারা বোঝা যায় এসময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনও পাহারাদার ছিল না। এর আগে সাহাবায়ে কিরাম পালাক্রমে তাঁকে পাহারা দিতেন। পরিশেষে আয়াত নাযিল হয়– وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ “আল্লাহই তোমাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন।"
এরপর থেকে তিনি আর কাউকে পাহারায় নিযুক্ত করতেন না। কোনও কোনও বর্ণনা অনুযায়ী এ আয়াত যাতুর-রিকা'র এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই নাযিল হয়েছে। ইব্ন হাজার ‘আসকালানী রহ. বলেন, সম্ভবত এর আগে পাহারাদার রাখার ব্যাপারে তাঁকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত সাহাবায়ে কিরাম তাঁর পাহারাদারি করতেন। কিন্তু কখনও কখনও ইয়াকীন ও তাওয়াক্কুলের বলে তিনি একাকীও থাকতেন, কোনও পাহারাদার রাখতেন না। পরিশেষে যখন এ ঘটনা ঘটল এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত আয়াত নাযিল হল, তখন পাহারাদার নিয়োগ সম্পূর্ণরূপেই বাদ দিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কঠিন বিপদে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করলে আল্লাহ তা'আলা তা থেকে ঠিকই মুক্তিদান করেন।
খ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াক্কুলের কত উচ্চস্তরে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
গ. এ ঘটনা দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষমাশীলতা ও মহানুভবতারও পরিচয় পাওয়া যায়।
ঘ. আরও জানা যায় শত্রু থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, তবে সেটাই প্রকৃত মহানুভবতা।
ঙ. এর দ্বারা জানা যায় যে, মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য উদারতা ও ক্ষমাশীলতা একটি শক্তিশালী উপায়। সুতরাং ইসলামের দাওয়াতদাতার কর্তব্য এ গুণ অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
