আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৬- মুসাফিরের নামায - কসর নামায
হাদীস নং: ১৬৮৭
আন্তর্জাতিক নং: ৭৭২
- মুসাফিরের নামায - কসর নামায
২১. রাতের নামাযে দীর্ঘ কিরা’আত পাঠ করা মুস্তাহাব
১৬৮৭। আবু বকর ইবনে শায়বা, যুহাইর ইবনে হারব, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম, ইবনে নুমাইর (রাহঃ) ......... হুযাইফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী (ﷺ) এর সঙ্গে নামায আদায় করছিলাম। তিনি সূরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে করলাম সম্ভবত একশত আয়াতের মাথায় রুকু করবেন। কিন্তু তিনি অগ্রসর হয়ে গেলেন। তখন আমি ভাবলাম, তিনি সূরা বাকারা দিয়ে নামায পূর্ণ করবেন। কিন্তু তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করলেন এবং তাও পড়ে আলে ইমরান শুরু করে তাও পড়ে ফেললেন। তিনি ধীর-স্থিরতার সাথে পাঠ করে যাচ্ছিলেন। যখন তাসবীহ যুক্ত কোন আয়াতে উপনীত হতেন তখন তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করতেন এবং যখন প্রার্থনার কোন আয়াতে উপনীত হতেন তখন তিনি প্রার্থনা করে নিতেন। আর যখন (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় গ্রহণের আয়াতে পৌছতেন তখন (আল্লাহর কাছে) পানাহ চাইতেন।
তারপর রুকু করলেন এবং রুকুতেسُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), বলতে থাকেন। তার রুকু ছিল প্রায় তার দাঁড়ানোর সমান (দীর্ঘ)। এরপর বললেন,سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শোনেন)। তারপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুতে যতক্ষণ ছিলেন তার কাছাকাছি। তারপর সিজদা করলেন এবংسُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى (আমার সুমহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), বললেন। তাঁর সিজদার পরিমাণ ছিল তার দাঁড়ানোর কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেন, জারীর (রাহঃ) এর হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে যে, নবী (ﷺ) বললেন,سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, তিনি তা শোনেন আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্য সকল প্রশংসা)।
তারপর রুকু করলেন এবং রুকুতেسُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), বলতে থাকেন। তার রুকু ছিল প্রায় তার দাঁড়ানোর সমান (দীর্ঘ)। এরপর বললেন,سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শোনেন)। তারপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুতে যতক্ষণ ছিলেন তার কাছাকাছি। তারপর সিজদা করলেন এবংسُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى (আমার সুমহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), বললেন। তাঁর সিজদার পরিমাণ ছিল তার দাঁড়ানোর কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেন, জারীর (রাহঃ) এর হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে যে, নবী (ﷺ) বললেন,سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, তিনি তা শোনেন আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্য সকল প্রশংসা)।
كتاب صلاة المسافرين وقصرها
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ ح وَحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، جَمِيعًا عَنْ جَرِيرٍ، كُلُّهُمْ عَنِ الأَعْمَشِ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ، نُمَيْرٍ - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ الأَحْنَفِ، عَنْ صِلَةَ بْنِ زُفَرَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ فَقُلْتُ يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَةِ . ثُمَّ مَضَى فَقُلْتُ يُصَلِّي بِهَا فِي رَكْعَةٍ فَمَضَى فَقُلْتُ يَرْكَعُ بِهَا . ثُمَّ افْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا يَقْرَأُ مُتَرَسِّلاً إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسْبِيحٌ سَبَّحَ وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ ثُمَّ رَكَعَ فَجَعَلَ يَقُولُ " سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ " . فَكَانَ رُكُوعُهُ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهِ ثُمَّ قَالَ " سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ " . ثُمَّ قَامَ طَوِيلاً قَرِيبًا مِمَّا رَكَعَ ثُمَّ سَجَدَ فَقَالَ " سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى " . فَكَانَ سُجُودُهُ قَرِيبًا مِنْ قِيَامِهِ . قَالَ وَفِي حَدِيثِ جَرِيرٍ مِنَ الزِّيَادَةِ فَقَالَ " سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ" .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকুর তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ এবং সিজদার তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى বলা। এ তাসবীহ ছাড়াও রসূলুল্লাহ স. মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন তাসবীহ পড়েছেন মর্মে হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তাঁর সার্বক্ষণিক আমল ছিলো এটাই। অতএব, রসূলুল্লাহ স. এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের অনুসরণে আমরা এটাই আঁকড়ে ধরবো।
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُمَرَ بْنِ كَيْسَانَ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ وَهْبِ بْنِ مَانُوسٍ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ صَلاَةً بِصَلاَةِ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْفَتَى يَعْنِي عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَحَزَرْنَا فِي رُكُوعِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ وَفِي سُجُودِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ. (رواه النسائى فى عَدَدِ التَّسْبِيحِ فِي السُّجُودِ-۱/۱۲٧)
হযরত আনাস রা. বলেন, আমি এই যুবক অর্থাৎ উমার বিন আব্দুল আজীজ-এর চেয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর নামাযের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামায আদায়কারী আর কাউকে দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর রুকুতে এবং সিজদাতে তাসবীহ পাঠের পরিমাণ দশবার হবে বলে অনুমান করেছি। (নাসাঈ: ১১৩৮)
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. রুকু-সিজদায় দশবার তাসবীহ পড়তেন। মুসল্লীদেরকে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তারা দীর্ঘ নামাযে আগ্রহী হলে এবং তাদের মধ্যে অসুস্থ, দুর্বল বা ব্যসত্ম মানুষ না থাকলে ইমাম এ আমল করতে পারেন। কিন্তু মুক্তাদীদের জন্য কষ্টকর হলে রুকু-সিজদার তাসবীহ আরো কম পড়বে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক এবং ইসহাক বিন ইবরাহীম (রাহওয়াইহ) ইমামের জন্য পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন যেন মুক্তাদীদের তিনবারের কম না হয়। (তিরমিযী-২৬১)
حَدَّثَنَا فَهْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: ثنا سُحَيْمٌ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ مُجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ صِلَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي سُجُودِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى ثَلَاثًا.
হযরত হুজাইফা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى বলতেন। (ত্বহাবী শরীফ: খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৯, হাদীস নং-১৪১৭)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল স. রুকু-সিজদায় তিনবার তাসবীহ পাঠ করতেন। সুতরাং সকল মুসল্লীকেই সতর্ক থাকতে হবে যে, কারো রুকু-সিজদার তাসবীহ যেন তিনবারের কম না হয়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৪)
এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,
وَقَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَأَبو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَالْأَوْزَاعِيُّ وَأَبو ثَوْرٍ وَأَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ يَقُولُ الْمصَلِّي فِي رُكُوعِهِ سبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي السُّجُودِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى ثَلَاثًا وَهُوَ أَقَلُّ التَّمَامِ وَالْكَمَالِ فِي ذَلِكَ وَقَالَ الثَّوْرِيُّ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَقُولَهَا الْإِمَامُ خَمْسًا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ حَتَّى يُدْرِكَ الَّذِي خَلْفَهُ ثَلَاثَ تَسْبِيحَاتٍ وَحُجَّتُهُمْ حَدِيثُ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ
হযরত সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আওঝাঈ, আবু ছাওর, আহমাদ বিন হাম্বল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. বলেন, মুসল্লী রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়বে। আর এটা হলো পূর্ণতার সর্বনি্ম পরিমাণ। হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, আমার নিকট পছন্দনীয় এই যে, ইমাম সাহেব পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করবে যেন মুক্তাদীগণ তিনবার পাঠ করতে পারে। এ সকল ইমামগণের দলীল হলো উকবা বিন আমের রা.-এর হাদীস। (আল ইসিত্মযকার: ১/৪৩২)
২. এ হাদীছে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে তা ছিল তাহাজ্জুদের নামায। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামায কখনও কখনও এরকম দীর্ঘ পড়তেন। তাঁর সাধারণ নিয়ম ছিল রাতের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ সময় তাহাজ্জুদে কাটানো। অর্থাৎ তিনি রাতে ইবাদতও করতেন এবং ঘুমাতেনও। কেবল ‘ইবাদতের ভেতর সমস্ত রাত পার করতেন না। তাঁর সবকিছুতে ছিল মধ্যপন্থা। তাঁর জীবন যেহেতু উম্মতের জন্য আদর্শ, তাই মধ্যপন্থা রক্ষা করে চলতেন, যাতে উম্মত সহজে তাঁর অনুসরণ করতে পারে।
তবে কখনও কখনও ব্যতিক্রমও হত, যেমন আলোচ্য হাদীছে দেখা যাচ্ছে। এক রাক'আতে সূরা বাকারা, সূরা আলে-ইমরান ও সূরা নিসা পড়েছেন। এ তিন সূরায় পাঁচ পারারও বেশি হয়। পড়েছেন তারতীলের সঙ্গে। তাসবীহের আয়াত আসলে তাসবীহ পড়তেন। প্রার্থনার আয়াত আসলে প্রার্থনা করতেন। তিনি তিলাওয়াত করতেন তাদাব্বুরের সাথে। অর্থাৎ আয়াতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর ধ্যান ও চিন্তা সহকারে পড়তেন। এভাবে এক রাক'আতে পাঁচ পারারও বেশি পরিমাণ তিলাওয়াত করতে নিশ্চয়ই অনেক দীর্ঘ সময় লাগার কথা। তারপর প্রায় সমপরিমাণ সময় রুকূ'তে, অনুরূপ সময় কওমায় (রুকুর পর দাঁড়ানো অবস্থা), অনুরূপ দীর্ঘ সময় সিজদায়, তারপর জলসা, তারপর দ্বিতীয় সিজদা, এভাবে প্রতিটি কাজ এতটা দীর্ঘ সময় নিয়ে করলে কতখানি সময়ের দরকার তা সহজেই অনুমান করা যায়।
নামায ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখের শীতলতা এবং সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল। তাই কখনও কখনও তিনি এরূপ দীর্ঘ নামাযও পড়তেন। এটা ছিল নামাযে তাঁর মুজাহাদা। নফসের বিরুদ্ধে জিহাদকারীর মত ‘ইবাদত-বন্দেগীতে তিনি এরূপ কষ্টক্লেশ বরদাশত করতেন। তবে সে কষ্টক্লেশ হত কেবলই শারীরিক। মনে কোনও কষ্টবোধ হত না। বরং যত দীর্ঘ নামায পড়তেন, ততই তাঁর মন প্রশান্তিতে ভরে উঠত।
পূর্বে ৯৮ নং হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তিনি তাহাজ্জুদে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফেটে যেত। সম্ভবত তা এরূপ দীর্ঘ কিরাআত সম্বলিত নামাযই ছিল। এমন দীর্ঘ নামাযে তাঁর কোনও ক্লান্তিবোধ হত না। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ, তাদের পক্ষে এটা অত্যন্ত কষ্টকর হবে। এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন এবং কখনও কখনও এতটা দীর্ঘ নামায পড়লেও আমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন, যেন নিজেদের শক্তিসামর্থ্যের দিকে লক্ষ রেখেই ইবাদত করি, যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা বাকারার পর সূরা নিসা পড়েছেন। তারপর পড়েছেন সূরা আলে-ইমরান। কিন্তু কুরআন মাজীদের বিন্যাসে দেখা যায় সূরা নিসাকে রাখা হয়েছে সূরা আলে-ইমরানের পর। কুরআনের বিন্যাসে সূরা আলে-ইমরান আগে হওয়া সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নিসা কেন আগে পড়লেন?
এর কারণ হল, এ কথা ঠিক যে, কুরআন মাজীদের সূরা ও আয়াতসমূহের বিন্যাস 'তাওকীফী' অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। আল্লাহ তা'আলাই হযরত জিবরীল 'আলাইহিস সালাম মারফত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দিয়েছেন কোন্ সূরার পর কোন্ সূরা হবে এবং কোন্ আয়াতের পর কোন্ আয়াত। কিন্তু এই চূড়ান্ত বিন্যাস হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একদম শেষপর্যায়ে। কুরআন মাজীদ শুরু থেকে এ বিন্যাস অনুযায়ীই যে নাযিল হয়েছে তা নয়। নাযিল করা হয়েছে যখন যা প্রয়োজন হয়েছে সে অনুপাতে। অনেক সূরাই নাযিল হয়েছে শুরুর দিকে, কিন্তু চূড়ান্ত বিন্যাসে তা স্থান পেয়েছে মাঝখানে বা শেষের দিকে। কাজেই চূড়ান্ত বিন্যাসের আগে যে সমস্ত নামায পড়া হয়েছে, তাতে সূরার তারতীব (বিন্যাস) বর্তমানে সূরাসমূহ যেভাবে আছে সেভাবে হওয়ার কথা নয়। আমাদের কাছে যেই কুরআন আছে তা কুরআনের চূড়ান্ত বিন্যস্ত রূপ। সুতরাং এ বিন্যাসের সাথে প্রথমদিকে পঠিত সূরাসমূহের মিল না হওয়ারই কথা। কাজেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা উলট-পালট করে পড়েছেন সে প্রশ্ন আসে না। এখন যদি কেউ নামাযে সূরা আলে-ইমরানের আগে সূরা নিসা পড়ে, তবে তার সে পড়া হবে কুরআনের বিন্যাস পরিপন্থি। আর একই রাক'আতে ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ পড়লে নামায মাকরূহ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন চূড়ান্তভাবে আয়াত ও সূরা বিন্যস্ত করে দেওয়া হয়েছে, তখন বান্দার কর্তব্য তিলাওয়াতে সে বিন্যাসের অনুসরণ করা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছেও আমাদের জন্য মুজাহাদার শিক্ষা রয়েছে। মা'সূম ও নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ‘ইবাদতে এত কষ্ট স্বীকার করতেন, তখন আমরা কিভাবে আরাম-আয়েশ খুঁজতে পারি?
খ. নফল নামাযে যখন কোনও দু'আর জায়গা আসে, তখন দু'আ করা মুস্তাহাব। যেমন, জান্নাতের আলোচনা আসলে জান্নাত প্রার্থনা করা, জাহান্নামের আলোচনা আসলে তা থেকে মুক্তি চাওয়া, আযাবের কথা আসলে তা থেকে আল্লাহর পানাহ চাওয়া ইত্যাদি।
গ. সূরা ফাতিহার পর যেমন একাধিক সূরা পড়া যায়, তেমনি রুকূ-সিজদায়ও দীর্ঘক্ষণ তাসবীহ পড়া যেতে পারে। বরং নফল নামাযে দীর্ঘক্ষণ তাসবীহ পড়া মুস্তাহাব।
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُمَرَ بْنِ كَيْسَانَ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ وَهْبِ بْنِ مَانُوسٍ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ صَلاَةً بِصَلاَةِ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْفَتَى يَعْنِي عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَحَزَرْنَا فِي رُكُوعِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ وَفِي سُجُودِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ. (رواه النسائى فى عَدَدِ التَّسْبِيحِ فِي السُّجُودِ-۱/۱۲٧)
হযরত আনাস রা. বলেন, আমি এই যুবক অর্থাৎ উমার বিন আব্দুল আজীজ-এর চেয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর নামাযের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামায আদায়কারী আর কাউকে দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর রুকুতে এবং সিজদাতে তাসবীহ পাঠের পরিমাণ দশবার হবে বলে অনুমান করেছি। (নাসাঈ: ১১৩৮)
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. রুকু-সিজদায় দশবার তাসবীহ পড়তেন। মুসল্লীদেরকে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তারা দীর্ঘ নামাযে আগ্রহী হলে এবং তাদের মধ্যে অসুস্থ, দুর্বল বা ব্যসত্ম মানুষ না থাকলে ইমাম এ আমল করতে পারেন। কিন্তু মুক্তাদীদের জন্য কষ্টকর হলে রুকু-সিজদার তাসবীহ আরো কম পড়বে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক এবং ইসহাক বিন ইবরাহীম (রাহওয়াইহ) ইমামের জন্য পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন যেন মুক্তাদীদের তিনবারের কম না হয়। (তিরমিযী-২৬১)
حَدَّثَنَا فَهْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: ثنا سُحَيْمٌ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ مُجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ صِلَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي سُجُودِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى ثَلَاثًا.
হযরত হুজাইফা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى বলতেন। (ত্বহাবী শরীফ: খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৯, হাদীস নং-১৪১৭)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল স. রুকু-সিজদায় তিনবার তাসবীহ পাঠ করতেন। সুতরাং সকল মুসল্লীকেই সতর্ক থাকতে হবে যে, কারো রুকু-সিজদার তাসবীহ যেন তিনবারের কম না হয়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৪)
এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,
وَقَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَأَبو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَالْأَوْزَاعِيُّ وَأَبو ثَوْرٍ وَأَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ يَقُولُ الْمصَلِّي فِي رُكُوعِهِ سبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي السُّجُودِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى ثَلَاثًا وَهُوَ أَقَلُّ التَّمَامِ وَالْكَمَالِ فِي ذَلِكَ وَقَالَ الثَّوْرِيُّ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَقُولَهَا الْإِمَامُ خَمْسًا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ حَتَّى يُدْرِكَ الَّذِي خَلْفَهُ ثَلَاثَ تَسْبِيحَاتٍ وَحُجَّتُهُمْ حَدِيثُ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ
হযরত সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আওঝাঈ, আবু ছাওর, আহমাদ বিন হাম্বল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. বলেন, মুসল্লী রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়বে। আর এটা হলো পূর্ণতার সর্বনি্ম পরিমাণ। হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, আমার নিকট পছন্দনীয় এই যে, ইমাম সাহেব পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করবে যেন মুক্তাদীগণ তিনবার পাঠ করতে পারে। এ সকল ইমামগণের দলীল হলো উকবা বিন আমের রা.-এর হাদীস। (আল ইসিত্মযকার: ১/৪৩২)
২. এ হাদীছে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে তা ছিল তাহাজ্জুদের নামায। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামায কখনও কখনও এরকম দীর্ঘ পড়তেন। তাঁর সাধারণ নিয়ম ছিল রাতের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ সময় তাহাজ্জুদে কাটানো। অর্থাৎ তিনি রাতে ইবাদতও করতেন এবং ঘুমাতেনও। কেবল ‘ইবাদতের ভেতর সমস্ত রাত পার করতেন না। তাঁর সবকিছুতে ছিল মধ্যপন্থা। তাঁর জীবন যেহেতু উম্মতের জন্য আদর্শ, তাই মধ্যপন্থা রক্ষা করে চলতেন, যাতে উম্মত সহজে তাঁর অনুসরণ করতে পারে।
তবে কখনও কখনও ব্যতিক্রমও হত, যেমন আলোচ্য হাদীছে দেখা যাচ্ছে। এক রাক'আতে সূরা বাকারা, সূরা আলে-ইমরান ও সূরা নিসা পড়েছেন। এ তিন সূরায় পাঁচ পারারও বেশি হয়। পড়েছেন তারতীলের সঙ্গে। তাসবীহের আয়াত আসলে তাসবীহ পড়তেন। প্রার্থনার আয়াত আসলে প্রার্থনা করতেন। তিনি তিলাওয়াত করতেন তাদাব্বুরের সাথে। অর্থাৎ আয়াতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর ধ্যান ও চিন্তা সহকারে পড়তেন। এভাবে এক রাক'আতে পাঁচ পারারও বেশি পরিমাণ তিলাওয়াত করতে নিশ্চয়ই অনেক দীর্ঘ সময় লাগার কথা। তারপর প্রায় সমপরিমাণ সময় রুকূ'তে, অনুরূপ সময় কওমায় (রুকুর পর দাঁড়ানো অবস্থা), অনুরূপ দীর্ঘ সময় সিজদায়, তারপর জলসা, তারপর দ্বিতীয় সিজদা, এভাবে প্রতিটি কাজ এতটা দীর্ঘ সময় নিয়ে করলে কতখানি সময়ের দরকার তা সহজেই অনুমান করা যায়।
নামায ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখের শীতলতা এবং সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল। তাই কখনও কখনও তিনি এরূপ দীর্ঘ নামাযও পড়তেন। এটা ছিল নামাযে তাঁর মুজাহাদা। নফসের বিরুদ্ধে জিহাদকারীর মত ‘ইবাদত-বন্দেগীতে তিনি এরূপ কষ্টক্লেশ বরদাশত করতেন। তবে সে কষ্টক্লেশ হত কেবলই শারীরিক। মনে কোনও কষ্টবোধ হত না। বরং যত দীর্ঘ নামায পড়তেন, ততই তাঁর মন প্রশান্তিতে ভরে উঠত।
পূর্বে ৯৮ নং হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তিনি তাহাজ্জুদে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফেটে যেত। সম্ভবত তা এরূপ দীর্ঘ কিরাআত সম্বলিত নামাযই ছিল। এমন দীর্ঘ নামাযে তাঁর কোনও ক্লান্তিবোধ হত না। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ, তাদের পক্ষে এটা অত্যন্ত কষ্টকর হবে। এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন এবং কখনও কখনও এতটা দীর্ঘ নামায পড়লেও আমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন, যেন নিজেদের শক্তিসামর্থ্যের দিকে লক্ষ রেখেই ইবাদত করি, যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা বাকারার পর সূরা নিসা পড়েছেন। তারপর পড়েছেন সূরা আলে-ইমরান। কিন্তু কুরআন মাজীদের বিন্যাসে দেখা যায় সূরা নিসাকে রাখা হয়েছে সূরা আলে-ইমরানের পর। কুরআনের বিন্যাসে সূরা আলে-ইমরান আগে হওয়া সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নিসা কেন আগে পড়লেন?
এর কারণ হল, এ কথা ঠিক যে, কুরআন মাজীদের সূরা ও আয়াতসমূহের বিন্যাস 'তাওকীফী' অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। আল্লাহ তা'আলাই হযরত জিবরীল 'আলাইহিস সালাম মারফত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দিয়েছেন কোন্ সূরার পর কোন্ সূরা হবে এবং কোন্ আয়াতের পর কোন্ আয়াত। কিন্তু এই চূড়ান্ত বিন্যাস হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একদম শেষপর্যায়ে। কুরআন মাজীদ শুরু থেকে এ বিন্যাস অনুযায়ীই যে নাযিল হয়েছে তা নয়। নাযিল করা হয়েছে যখন যা প্রয়োজন হয়েছে সে অনুপাতে। অনেক সূরাই নাযিল হয়েছে শুরুর দিকে, কিন্তু চূড়ান্ত বিন্যাসে তা স্থান পেয়েছে মাঝখানে বা শেষের দিকে। কাজেই চূড়ান্ত বিন্যাসের আগে যে সমস্ত নামায পড়া হয়েছে, তাতে সূরার তারতীব (বিন্যাস) বর্তমানে সূরাসমূহ যেভাবে আছে সেভাবে হওয়ার কথা নয়। আমাদের কাছে যেই কুরআন আছে তা কুরআনের চূড়ান্ত বিন্যস্ত রূপ। সুতরাং এ বিন্যাসের সাথে প্রথমদিকে পঠিত সূরাসমূহের মিল না হওয়ারই কথা। কাজেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা উলট-পালট করে পড়েছেন সে প্রশ্ন আসে না। এখন যদি কেউ নামাযে সূরা আলে-ইমরানের আগে সূরা নিসা পড়ে, তবে তার সে পড়া হবে কুরআনের বিন্যাস পরিপন্থি। আর একই রাক'আতে ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ পড়লে নামায মাকরূহ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন চূড়ান্তভাবে আয়াত ও সূরা বিন্যস্ত করে দেওয়া হয়েছে, তখন বান্দার কর্তব্য তিলাওয়াতে সে বিন্যাসের অনুসরণ করা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছেও আমাদের জন্য মুজাহাদার শিক্ষা রয়েছে। মা'সূম ও নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ‘ইবাদতে এত কষ্ট স্বীকার করতেন, তখন আমরা কিভাবে আরাম-আয়েশ খুঁজতে পারি?
খ. নফল নামাযে যখন কোনও দু'আর জায়গা আসে, তখন দু'আ করা মুস্তাহাব। যেমন, জান্নাতের আলোচনা আসলে জান্নাত প্রার্থনা করা, জাহান্নামের আলোচনা আসলে তা থেকে মুক্তি চাওয়া, আযাবের কথা আসলে তা থেকে আল্লাহর পানাহ চাওয়া ইত্যাদি।
গ. সূরা ফাতিহার পর যেমন একাধিক সূরা পড়া যায়, তেমনি রুকূ-সিজদায়ও দীর্ঘক্ষণ তাসবীহ পড়া যেতে পারে। বরং নফল নামাযে দীর্ঘক্ষণ তাসবীহ পড়া মুস্তাহাব।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
বর্ণনাকারী: