আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৬- মুসাফিরের নামায - কসর নামায

হাদীস নং: ১৬৪৫
আন্তর্জাতিক নং: ৭৫৮-১
- মুসাফিরের নামায - কসর নামায
১৭. রাতের নামায, রাতের বেলা নবী (ﷺ) এর নামাযের রাক’আত সংখ্যা, বিতর নামায এক রাক’আত এবং এক রাক’আত নামাযও বিশুদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গ
১৬৪৫। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমাদের বরকতময় ও মহান প্রতিপালক প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকার সময় নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কে আছে আমাকে ডাকবে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব; কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, তবে আমি তাকে দিয়ে দিব, কে আছে আমার কাছে মাগফিরাত কামনা করবে, তবে আমি তাকে মাফ করে দেব।
كتاب صلاة المسافرين وقصرها
باب صَلاَةِ اللَّيْلِ وَعَدَدِ رَكَعَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي اللَّيْلِ وَأَنَّ الْوِتْرَ رَكْعَةٌ وَأَنَّ الرَّكْعَةَ صَلاَةٌ صَحِيحَةٌ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الأَغَرِّ، وَعَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ وَمَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তাআলা নামা ও উঠা থেকে পবিত্র। তিনি কোন নির্দিষ্ট স্থানের মুখাপেক্ষী নন। তার কুরসী আসমান জমিনের সর্বত্র বিস্তৃত।

নেমে আসা সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মুতাশাবিহাতের অন্তর্ভূক্ত। এর সঠিক অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

সুতরাং এখানে আরবী শব্দ ‘নুজুল’ দ্বারা আমরা যে ধরণের ‘উপর থেকে নিচে নেমে আসা’ বুঝে থাকি, তেমন উদ্দেশ্য নয়। এর হাকীকী অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

তাই এ শব্দকে আমাদের নেমে আসার মত মনে করে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।

এখানে নেমে আসাকে এমন অর্থ করা যেতে পারে:

১ আল্লাহর হুকুম নেমে আসে।

২ রহমাতের ফেরেশতাগণ নেমে আসে।

৩ আল্লাহর রহমাত নেমে আসে।

৪ আল্লাহ তাআলার তাজাল্লী নেমে আসে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বুঝঃ

১ – ইমাম মালেক বলেনঃ আল্লাহ নন, আল্লাহর নির্দেশ নামে। ( তামহীদ ৭ / ১৪৩ – সিয়ার ৮ / ১০৫ – আল মিনহাজ ৬ / ৩৬ )
২ - ইমাম বায়জাবী বলেনঃ অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহর দেহ হওয়া বা কোন জায়গাতে সীমাবদ্ধ হওয়া অসম্ভব ফলে এই “নামা” শব্দকে আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা অসম্ভব সুতরাং এই নামার অর্থ হলঃ “তার রহমতের নুর নেমে আসে” । ( ফাতহুল বারী ৩ / ৩৬ )
৩ – ইবনে হাজার বলেনঃ এই নামাকে দুই ভাবে তাবীল করা যায়ঃ
ক – আল্লাহর নির্দেশ অথবা আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা নেমে আসে।
খ – ইসতেয়ারা অর্থাৎ যারা শেষ রাত্রে ডাকেন আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন।( ফাতহুল বারী ৩ / ৩৬ )

আল্লামা ইবনে হাজার আরো বলেনঃ কেউ কেউ উল্লেখিত হাদিসটা দ্বারা আল্লাহর জন্য দিক সাব্যস্ত করে, আর সেটা হল “উপরের দিক ”। "জুমহুর ওলামায়ে কেরাম এটাকে “অস্বীকার” করেছেন"। কারণ এই কথা বলা দ্বারা আল্লাহকে একটি যায়গাতে সীমাবদ্ধ করা হয়। আল্লাহ কোন যায়গাতে সীমাবদ্ধ হওয়া থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
এখানে একটা বিষয় লক্ষ করুন ইবনে হাজার ছিলেন অষ্টম শতাব্দীর ইমাম। তিনি বলছেন “অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম এটাকে অস্বীকার করেছেন"। অর্থাৎ ইবনে হাজারের যুগ এবং তার আগের যুগের ইমামরা এই আকিদা রাখতেন না।
এরপরে ইবনে হাজার বলেনঃ
নামার অর্থ নিয়ে ইখতেলাফ আছে। তবে কেউ কেউ এই "নামাকে" শব্দের শাব্দিক অর্থ এবং প্রকৃত অর্থে গ্রহণ করে। তারাই হল “মুশাব্বিহা” ( অর্থাৎ এরাই আল্লাহকে তাশবিহ দেয় ) আল্লাহ তাদের এমন কথা থেকে চির পবিত্র। ( সুবহানাল্লাহ )

আল্লামা ইবনে হাজার বলেনঃ ইবনে ফুরাক বিভিন্ন শায়েখ থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে "ينزل بفتح الياء " না এখানে " ينزل بضم الياء " অর্থাৎ নামানো। এবং খোদ আবু হুরাইরা থেকে ইমাম নাসায়ির একটি বর্ণনা এই অর্থকে আরো মজবুত করেঃ আল্লাহর তাআলা অবকশ দিতে থাকেন যখন অর্ধ রাত্রি অতিবাহিত হয়, তখন তিনি একজন আহবায়ককে নির্দেশ দেন , সে যেন আহব্বান করেন, আছে কী কোন দোয়াপার্থী..... ( আমালুল ইয়াওম ৪৪২ - সুনানে কুবরা ৯ / ১৮০ )
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এই বর্ণনা দ্বারাই অস্পষ্টতা দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ নামার সম্পর্ক ফেরেশতার সাথে আল্লাহর সাথে নয়। ( তাফসীরে কুরতুবি ৪ / ২২ )
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ১৬৪৫ | মুসলিম বাংলা