আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৬- মুসাফিরের নামায - কসর নামায

হাদীস নং: ১৬১০
আন্তর্জাতিক নং: ৭৪৫-২
১৭. রাতের নামায, রাতের বেলা নবী (ﷺ) এর নামাযের রাক’আত সংখ্যা, বিতর নামায এক রাক’আত এবং এক রাক’আত নামাযও বিশুদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গ
১৬১০। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা ও যুহাইর ইবনে হারব (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিতর আদায় করেছেন রাতের প্রথম অংশে, মাঝরাতে এবং শেষ রাতে। অবশেষ তিনি বিতর আদায় করতেন সাহরীর সময়।
باب صَلاَةِ اللَّيْلِ وَعَدَدِ رَكَعَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي اللَّيْلِ وَأَنَّ الْوِتْرَ رَكْعَةٌ وَأَنَّ الرَّكْعَةَ صَلاَةٌ صَحِيحَةٌ
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ وَثَّابٍ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ مِنْ كُلِّ اللَّيْلِ قَدْ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَوَّلِ اللَّيْلِ وَأَوْسَطِهِ وَآخِرِهِ فَانْتَهَى وِتْرُهُ إِلَى السَّحَرِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রমযান ছাড়া বছরের অন্য সময় বিতর সাধারণত তাহাজ্জুদের সাথে পড়া হত। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ নিয়ম এবং সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাহাবায়ে কেরামও সাধারণত এই নিয়ম অনুসরণ করতেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। অর্থাৎ রাত্রে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার পর শেষে তিন রাকআত বিতর পড়া ।

কিন্ত কখনো কখনো রসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার পরপর বিতর পড়েছেন। সেক্ষেত্রে বিতরের পরে নফল নামায ও পড়েছেন।
তবে এটা নবীজীর সাধারণ মামুল ছিলনা তথা প্রতিদিন পড়তেন না। কখনো কখনো যখন রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার পরপর বিতর পড়েছেন সেসময়কার আমল এরকম ছিল।

উত্তম হলো, রাত্রে যথাসময়ে নফল-তাহাজ্জুদ পড়ে তারপর বিতর শেষে পড়া, তা সম্ভব না হলে ইশার পরপর বিতর পড়া যাবে।

বিতর নামাযের ব্যাপারে আজকাল এক ব্যাপক অবহেলা এই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, একে এমন এক নামায মনে করা হয় যার আগে কোন নফল নামায নেই, যেমন মাগরিবের নামায; এর আগে নফল নামায মাসনূন নয়; অথচ বিতরের ব্যাপারে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। সবচেয়ে ভাল এই যে, যার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগার নিশ্চয়তা রয়েছে, সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে। যদি বিতর রাতের শুরু ভাগে ইশার পর পড়া হয় তবুও উত্তম এই যে, দুই-চার রাকাত নফল নামায পড়ার পর বিতর আদায় করবে। মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে- لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب, ولكن أوتروا بخمس, أو بسبع, أو بتسع, أو بإحدى عشرة ركعة, أو أكثر من ذلك. তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। -মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩০৪, হাদীস ১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১, ৩২

মোটকথা, বিতরের আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়া-দুই, চার, ছয়, আট-যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নেয়া।


বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ, সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে, তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে-পরের রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়।

নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা।
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ১৬১০ | মুসলিম বাংলা