আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৫- মসজিদ ও নামাযের স্থান সমূহের বর্ণনা

হাদীস নং: ১৩৯৩
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬৫ -
৪৬. ফরয নামায জামাআতে আদায় করার ফযীলত এবং নামাযের জন্য অপেক্ষা করা ও মসজিদের দিকে অধিক ও যাতায়াতের ফযীলত
১৩৯৩। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রাহঃ) ......... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদের কাছাকাছি কিছু জায়গা খালী হয়। তাতে বনু সালামার লোকেরা মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করল। এই খবর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে পৌছলে তিনি তাদের বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা নাকি মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা রাখ? তারা বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা মসজিদের কাছাকাছি যাওয়ার মনস্থ করেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে বনু সালামা! তোমরা তোমাদের ঘরেই থাক, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হবে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَارِثِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي يُحَدِّثُ، قَالَ حَدَّثَنِي الْجُرَيْرِيُّ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَلَتِ الْبِقَاعُ حَوْلَ الْمَسْجِدِ فَأَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَنْ يَنْتَقِلُوا إِلَى قُرْبِ الْمَسْجِدِ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُمْ " إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تُرِيدُونَ أَنْ تَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْمَسْجِدِ " . قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَرَدْنَا ذَلِكَ . فَقَالَ " يَا بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বনু সালিমার লোকজন মসজিদে নববীর কাছে চলে আসতে চেয়েছিলেন নেক উদ্দেশ্যেই। তারা মনে করেছিলেন মসজিদের কাছে থাকলে জামাত ধরা সহজ হবে এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে দীনী ইলম শেখারও সুযোগ বেশি পাবেন। তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে তাদের এলাকা ছেড়ে আসতে নিষেধ করলেন। নিষেধ করলেন এ কারণে যে, যদিও কাছে আসার ভালো কিছু দিক রয়েছে, কিন্তু দূর থেকে আসার যে স্বতন্ত্র ফযীলত আছে তা তো পাবে না। সে ফযীলত যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানোর জন্য তিনি দু'-দু'বার বললেন- “তোমরা আপন বাসভূমিতেই থাক। তোমাদের পদক্ষেপসমূহ লেখা হবে। তোমরা আপন বাসভূমিতেই থাক। তোমাদের পদক্ষেপসমূহ লেখা হবে”।

অর্থাৎ মসজিদ থেকে দূরে থাকায় তোমাদের বেশি পথ হাঁটতে হবে। তাতে তোমাদের পদক্ষেপ-সংখ্যা অনেক বেশি হবে। যত পদক্ষেপ তত ছাওয়াব। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَ أَثَارَهُمْ

অর্থ : আমি লিখে রাখি তারা (আখিরাতের জন্য) যা অগ্রিম পাঠায় এবং তাদের পদক্ষেপসমূহ। সূরা ইয়াসীন, আয়াত ১২

অর্থাৎ নেক আমলের জন্য পথ চলতে গিয়ে যত কদম ফেলা হয় তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে ছাওয়াব লেখা হয়। বলাবাহুল্য, মসজিদে যাতায়াত করা অনেক বড় নেক আমল। তাই এর প্রত্যেকটি কদমের বিনিময়েও ছাওয়াব লেখা হয়ে থাকে। যেমন অপর এক হাদীছে আছে, প্রত্যেক কদমে একটি গুনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কাজেই দূর থেকে মসজিদে আসতে যেহেতু তোমাদের অনেক বেশি কদম পড়বে, সেহেতু তোমাদের গুনাহও অনেক বেশি মাফ হবে এবং মর্যাদাও অনেক বেশি উঁচু হবে। এমন ফযীলত তোমরা ছাড়বে কেন? কাছে চলে আসলে তো এটা পাবে না। তাই আপন জায়গায়ই থাক। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরামর্শ মোতাবেক তারা বাসস্থান পরিবর্তনের ইচ্ছা ত্যাগ করে আগের জায়গায়ই থেকে গেলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল কারও বাড়ি মসজিদ থেকে দূরে হওয়া দোষের নয়, যদি উদ্দেশ্য থাকে দূর থেকে মসজিদে আসার ছাওয়াব হাসিল করা।

খ. মসজিদে পায়ে হেঁটে আসা উত্তম। তাতে প্রত্যেক কদমে গুনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বাড়ে।

গ. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় দীনী বিষয়ে 'উলামায়ে কিরামের পরামর্শ মেনে চলা বাঞ্ছনীয় ।

ঘ. দীনী মুরুব্বীর কর্তব্য তার অনুসারীকে দীনের ব্যাপারে উৎকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টতর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন