আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৫- মসজিদ ও নামাযের স্থান সমূহের বর্ণনা
হাদীস নং: ১৩৯০
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬৩ - ৩
৪৬. ফরয নামায জামাআতে আদায় করার ফযীলত এবং নামাযের জন্য অপেক্ষা করা ও মসজিদের দিকে অধিক ও যাতায়াতের ফযীলত
১৩৯০। মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকর আল-মুকাদ্দামী (রাহঃ) ......... উবাই ইবনে কা’ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যক্তির বাড়ি ছিল মদীনার শেষ প্রান্তে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে তার নামায বাদ পড়ত না। আমার তার জন্য দুঃখিত হলাম এবং আমি তাকে বললাম, হে অমুক! তুমি যদি একটি গাধা কিনে নিতে তাহলে তা তোমাকে তাপ এবং মাটির কীট থেকে রক্ষা করত। লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমার বাড়ী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বাড়ীর নিকটবর্তী হোক, আমি তা পছন্দ করি না।
বর্ণানাকারী বলেন তার কথায় আমার মনে বাধল। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে তাকে তা অবহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে ডাকলেন। তার কাছেও সে অনুরূপ কথা বলল এবং জানাল যে, সে তার পায়ে হাটার সাওয়াব কামনা করে। তখন নবী (ﷺ) তাকে বললেন; তুমি যা আশা করেছ, তা তুমি পাবে।
বর্ণানাকারী বলেন তার কথায় আমার মনে বাধল। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে তাকে তা অবহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে ডাকলেন। তার কাছেও সে অনুরূপ কথা বলল এবং জানাল যে, সে তার পায়ে হাটার সাওয়াব কামনা করে। তখন নবী (ﷺ) তাকে বললেন; তুমি যা আশা করেছ, তা তুমি পাবে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي بَكْرٍ الْمُقَدَّمِيُّ، حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ عَبَّادٍ، حَدَّثَنَا عَاصِمٌ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ كَانَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ بَيْتُهُ أَقْصَى بَيْتٍ فِي الْمَدِينَةِ فَكَانَ لاَ تُخْطِئُهُ الصَّلاَةُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ - فَتَوَجَّعْنَا لَهُ فَقُلْتُ لَهُ يَا فُلاَنُ لَوْ أَنَّكَ اشْتَرَيْتَ حِمَارًا يَقِيكَ مِنَ الرَّمْضَاءِ وَيَقِيكَ مِنْ هَوَامِّ الأَرْضِ . قَالَ أَمَا وَاللَّهِ مَا أُحِبُّ أَنَّ بَيْتِي مُطَنَّبٌ بِبَيْتِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَحَمَلْتُ بِهِ حِمْلاً حَتَّى أَتَيْتُ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ - قَالَ - فَدَعَاهُ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ وَذَكَرَ لَهُ أَنَّهُ يَرْجُو فِي أَثَرِهِ الأَجْرَ . فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ لَكَ مَا احْتَسَبْتَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে যে সাহাবীর কথা বলা হয়েছে যে, তাঁর বাড়ি মসজিদে নববী থেকে অনেক দূরে ছিল এবং অতদূর থেকে তিনি হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাতায়াত করতেন, তার পরিচয় জানা যায় না। তবে তাঁর যে জযবার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তা ছিল সাহাবায়ে কিরামের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সকলেই ছিলেন আখিরাতমুখী এবং দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ। কিভাবে কত বেশি ছাওয়াব অর্জন করা যায় তা-ই ছিল তাঁদের ধ্যানজ্ঞান।
তাঁরা জানতেন নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মসজিদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। যে নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা হয় তার ফযীলত অনেক বেশি। এত বড় ফযীলতের কাজে আসা-যাওয়া করাও অনেক বড় নেক কাজ। সে আসা-যাওয়া যত বেশি আদবের সঙ্গে করা যায় ততই ভালো। বলাবাহুল্য, কোনও কিছুতে সওয়ার হয়ে যাতায়াত করা অপেক্ষা হেঁটে হেঁটে আসা-যাওয়া করাতেই আদব বেশি। তাই এ সাহাবী পাঁচ ওয়াক্ত নামায অতদূর থেকে মসজিদে নববীতে এসেই পড়তেন এবং হেঁটে হেঁটেই আসা-যাওয়া করতেন। তাঁর এ কষ্ট দেখে অপর এক সাহাবীর, হয়তো উবাঈ ইবন কা'ব নিজেরই, মায়া লাগল। কেননা রাতের অন্ধকারে অতদূর থেকে পায়ে হেঁটে আসা- যাওয়া করা তো অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এমনিভাবে দিনের বেলা রোদের খরতাপে যখন মরুভূমির বালু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন তার উপর দিয়ে হাঁটা তো আরও কঠিন। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন যে, ভাই তুমি তো একটা গাধা কিনে নিলে পার। গাধায় চড়ে আসা-যাওয়া করলে এ কষ্ট তোমার হয় না।
কিন্তু এ সাহাবীর মনে তো অন্য জোশ। মনের সে জোশের সামনে শরীরের কষ্ট কিছুই নয়। আখিরাতের সফলতা নির্ভর করে বেশি নেকীর উপর। যত বেশি হাঁটা যাবে, সে নেকী তত বেশি কামাই হবে। সওয়ারীর পিঠে চড়ে আসলে তো তা হবে না। শরীরের আরাম হবে বটে, তবে সে আরাম আরও বেশি হয় মসজিদের পাশে বাড়ি হলে। কিন্তু তিনি শরীরের আরাম চান না, চান রূহের শান্তি। তা হয় বেশি পুণ্য দিয়ে। তাই বললেন, আমি তো এটাও পসন্দ করি না যে, আমার বাড়ি মসজিদের পাশে হোক। মসজিদে হেঁটে আসতে যে ছাওয়াব হবে এবং হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরলে যে ছাওয়াব হবে, আমি চাই তা আমার আমলনামায় লেখা হোক।
তাঁর এ কথা কোনওভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে পৌঁছে গেল। তাঁর প্রথম কথাটি আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়। কেননা মসজিদের পাশে বাড়ি হওয়া তো অনেক ভালো। এর দ্বারা মসজিদের কল্যাণ অনেক বেশি অর্জন করা যায়। কিন্তু তিনি তা পসন্দ করছেন না। পসন্দ না করাটা কি সঠিক হয়েছে? এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেন? তাঁর মতামত জানার কৌতূহলেই হয়তো কেউ এ খবর তাঁকে জানিয়েছিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার আবেগের মূল্য দিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে মসজিদের কাছে বাড়ি না হওয়া পসন্দ করেছেন তাকে প্রশংসার চোখে দেখলেন। সুতরাং তাকে আশ্বাসবাণী শোনালেন যে, তুমি আসা-যাওয়ার পথে কদমে কদমে যে নেকীর আশা করেছ, আল্লাহ তা'আলা তোমার সে আশা পূরণ করেছেন। তোমার আমলনামায় সে নেকী লেখা হচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ছাওয়াব অর্জনের প্রতি সাহাবায়ে কিরামের কেমন জযবা ছিল তা জানা যায়। আমাদের উচিত তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া।
খ. মসজিদের কাছে বাড়ি হওয়া যেমন বরকতের, তেমনি দূরে হওয়াও ছাওয়াব অর্জনে সহায়ক। কাজেই প্রত্যেকের কর্তব্য আপন আপন বাড়ির অবস্থানকে কল্যাণকর মনে করা এবং অবস্থান অনুযায়ী তা থেকে কল্যাণ হাসিল করে নেওয়া।
গ. অন্যের কষ্ট দেখে সহানুভূতিশীল হওয়া সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ।
ঘ. শারীরিক কষ্টের উপর রূহের শান্তি তথা ছাওয়াব হাসিল করাকে প্রাধান্য দেওয়া সাহাবায়ে কিরামের নীতি।
ঙ. অন্যের দীনী ভাবাবেগকে অবজ্ঞা করতে নেই; বরং তার মূল্যায়ন করা উচিত।
তাঁরা জানতেন নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মসজিদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। যে নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা হয় তার ফযীলত অনেক বেশি। এত বড় ফযীলতের কাজে আসা-যাওয়া করাও অনেক বড় নেক কাজ। সে আসা-যাওয়া যত বেশি আদবের সঙ্গে করা যায় ততই ভালো। বলাবাহুল্য, কোনও কিছুতে সওয়ার হয়ে যাতায়াত করা অপেক্ষা হেঁটে হেঁটে আসা-যাওয়া করাতেই আদব বেশি। তাই এ সাহাবী পাঁচ ওয়াক্ত নামায অতদূর থেকে মসজিদে নববীতে এসেই পড়তেন এবং হেঁটে হেঁটেই আসা-যাওয়া করতেন। তাঁর এ কষ্ট দেখে অপর এক সাহাবীর, হয়তো উবাঈ ইবন কা'ব নিজেরই, মায়া লাগল। কেননা রাতের অন্ধকারে অতদূর থেকে পায়ে হেঁটে আসা- যাওয়া করা তো অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এমনিভাবে দিনের বেলা রোদের খরতাপে যখন মরুভূমির বালু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন তার উপর দিয়ে হাঁটা তো আরও কঠিন। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন যে, ভাই তুমি তো একটা গাধা কিনে নিলে পার। গাধায় চড়ে আসা-যাওয়া করলে এ কষ্ট তোমার হয় না।
কিন্তু এ সাহাবীর মনে তো অন্য জোশ। মনের সে জোশের সামনে শরীরের কষ্ট কিছুই নয়। আখিরাতের সফলতা নির্ভর করে বেশি নেকীর উপর। যত বেশি হাঁটা যাবে, সে নেকী তত বেশি কামাই হবে। সওয়ারীর পিঠে চড়ে আসলে তো তা হবে না। শরীরের আরাম হবে বটে, তবে সে আরাম আরও বেশি হয় মসজিদের পাশে বাড়ি হলে। কিন্তু তিনি শরীরের আরাম চান না, চান রূহের শান্তি। তা হয় বেশি পুণ্য দিয়ে। তাই বললেন, আমি তো এটাও পসন্দ করি না যে, আমার বাড়ি মসজিদের পাশে হোক। মসজিদে হেঁটে আসতে যে ছাওয়াব হবে এবং হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরলে যে ছাওয়াব হবে, আমি চাই তা আমার আমলনামায় লেখা হোক।
তাঁর এ কথা কোনওভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে পৌঁছে গেল। তাঁর প্রথম কথাটি আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়। কেননা মসজিদের পাশে বাড়ি হওয়া তো অনেক ভালো। এর দ্বারা মসজিদের কল্যাণ অনেক বেশি অর্জন করা যায়। কিন্তু তিনি তা পসন্দ করছেন না। পসন্দ না করাটা কি সঠিক হয়েছে? এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেন? তাঁর মতামত জানার কৌতূহলেই হয়তো কেউ এ খবর তাঁকে জানিয়েছিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার আবেগের মূল্য দিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে মসজিদের কাছে বাড়ি না হওয়া পসন্দ করেছেন তাকে প্রশংসার চোখে দেখলেন। সুতরাং তাকে আশ্বাসবাণী শোনালেন যে, তুমি আসা-যাওয়ার পথে কদমে কদমে যে নেকীর আশা করেছ, আল্লাহ তা'আলা তোমার সে আশা পূরণ করেছেন। তোমার আমলনামায় সে নেকী লেখা হচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ছাওয়াব অর্জনের প্রতি সাহাবায়ে কিরামের কেমন জযবা ছিল তা জানা যায়। আমাদের উচিত তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া।
খ. মসজিদের কাছে বাড়ি হওয়া যেমন বরকতের, তেমনি দূরে হওয়াও ছাওয়াব অর্জনে সহায়ক। কাজেই প্রত্যেকের কর্তব্য আপন আপন বাড়ির অবস্থানকে কল্যাণকর মনে করা এবং অবস্থান অনুযায়ী তা থেকে কল্যাণ হাসিল করে নেওয়া।
গ. অন্যের কষ্ট দেখে সহানুভূতিশীল হওয়া সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ।
ঘ. শারীরিক কষ্টের উপর রূহের শান্তি তথা ছাওয়াব হাসিল করাকে প্রাধান্য দেওয়া সাহাবায়ে কিরামের নীতি।
ঙ. অন্যের দীনী ভাবাবেগকে অবজ্ঞা করতে নেই; বরং তার মূল্যায়ন করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: