আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১০০২
আন্তর্জাতিক নং: ৫০৩-১
৪৭. মুসল্লীর জন্য সুতরা, সুতরার দিকে নামায আদায় করার নির্দেশ, মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত নিষেধ ও তার হুকুম এবং যাতায়াতকারীকে বাধাপ্রদান, মুসল্লীর সম্মুখে শয়ন করার বৈধতা, সাওারীর দিকে মুখ করে নামায আদায় করা, সুতরার নিকটবর্তী হওয়ার নির্দেশ, সুতরার পরিমাণ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি
১০০২। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা ও যুহাইর ইবনে হারব (রাহঃ) ......... আবু জুহায়ফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় নবী (ﷺ) এর নিকট এলাম। তখন তিনি আবতাহ নামক স্থানে লাল চামড়ার তাবুতে অবস্থান করছিলেন। বিলাল (রাযিঃ) তার উযুর পানি নিয়ে বের হলেন, অতঃপর কেউ অবশিষ্ট পানি পেল আর কেউ অন্যের নিকট থেকে পানির ছিটা নিল। আবু জুহায়ফা (রাযিঃ) বলেন, নবী (ﷺ) লাল চাঁদর গায়ে দিয়ে বের হলেন। আমি যেন এখনও তাঁর পায়ের গোছাদ্বয়ের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি। তিনি উযু করলেন এবং বিলাল (রাযিঃ) আযান দিলেন।
আমি দেখেছিলাম তিনিحَىَّ عَلَى الصَّلاَ ةِ এবং حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলার সময় এদিক-ওদিক অর্থাৎ ডানে ও বামে মুখ ফিরাচ্ছেন। অতঃপর তার জন্য অগ্রভাগে লৌহযুক্ত ছোট যষ্টি (আনাযা) পুঁতে দেয়া হল। তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং যোহরের দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। তাঁর সামনে দিয়ে গাধা, কুকুর আসা-যাওয়া করছিল। তিনি তাদের বাধা দেননি। তারপর আসরের দু-রাকআত নামায আদায় করলেন। এরূপে মদীনায় পৌছা পর্যন্ত তিনি দুই দুই রাক’আত নামায আদায় করেছেন।
আমি দেখেছিলাম তিনিحَىَّ عَلَى الصَّلاَ ةِ এবং حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলার সময় এদিক-ওদিক অর্থাৎ ডানে ও বামে মুখ ফিরাচ্ছেন। অতঃপর তার জন্য অগ্রভাগে লৌহযুক্ত ছোট যষ্টি (আনাযা) পুঁতে দেয়া হল। তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং যোহরের দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। তাঁর সামনে দিয়ে গাধা, কুকুর আসা-যাওয়া করছিল। তিনি তাদের বাধা দেননি। তারপর আসরের দু-রাকআত নামায আদায় করলেন। এরূপে মদীনায় পৌছা পর্যন্ত তিনি দুই দুই রাক’আত নামায আদায় করেছেন।
باب سُتْرَةِ الْمُصَلِّي
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، جَمِيعًا عَنْ وَكِيعٍ، - قَالَ زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، - حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا عَوْنُ بْنُ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بِمَكَّةَ وَهُوَ بِالأَبْطَحِ فِي قُبَّةٍ لَهُ حَمْرَاءَ مِنْ أَدَمٍ - قَالَ - فَخَرَجَ بِلاَلٌ بِوَضُوئِهِ فَمِنْ نَائِلٍ وَنَاضِحٍ - قَالَ - فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ سَاقَيْهِ - قَالَ - فَتَوَضَّأَ وَأَذَّنَ بِلاَلٌ - قَالَ - فَجَعَلْتُ أَتَتَبَّعُ فَاهُ هَا هُنَا وَهَا هُنَا - يَقُولُ يَمِينًا وَشِمَالاً - يَقُولُ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ - قَالَ - ثُمَّ رُكِزَتْ لَهُ عَنَزَةٌ فَتَقَدَّمَ فَصَلَّى الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ يَمُرُّ بَيْنْ يَدَيْهِ الْحِمَارُ وَالْكَلْبُ لاَ يُمْنَعُ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ لَمْ يَزَلْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعَ إِلَى الْمَدِينَةِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির বর্ণনাকারী হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি.। তিনি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমনটা দেখেছিলেন, তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ হাদীছে প্রদান করেছেন। তাঁর সূত্রে অনেকেই এটি বর্ণনা করেছেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে বর্ণনার ধারাবাহিকতায় কিছুটা পার্থক্য আছে। এখানে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে পরের কথা আগে এবং আগের কথা পরে চলে এসেছে। যেমন এখানে প্রথমে হযরত বিলাল রাযি. কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বের হয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযু করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে পরে। অথচ ঘটনার ধারাবাহিকতা হবে এর বিপরীত।
যাহোক হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি, জানাচ্ছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবতাহ নামক স্থানে লাল চামড়ার একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। আবতাহ'র অপর নাম বাতহা। একে 'মুহাসসাব'-ও বলে। জায়গাটি মিনার কাছাকাছি। হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি. একদিন জোহরের সময় এখানে উপস্থিত হন। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাল হুল্লা পরিহিত অবস্থায় তাঁবু থেকে বের হয়ে আসতে দেখেন।
হুল্লা মানে একই কাপড়ের এক জোড়া লুঙ্গি ও চাদর। এটি লাল ছিল মানে লাল ডোরাযুক্ত ছিল, যেমনটা অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়। পুরোপুরি লাল রঙের কাপড় পরা পুরুষের জন্য মাকরূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরতে নিষেধ করেছেন।
হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি, যে সময়টার কথা বলছেন, তখন ছিল যোহরের ওয়াক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুর বাইরে এসে ওযু করেন। হযরত বিলাল রাযি. যোহরের আযান দেন। আযানে যখন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলছিলেন, তখন ডানদিকে এবং যখন حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ বলছিলেন, তখন বামদিকে মুখ ঘোরাচ্ছিলেন। হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি. এটা বিশেষভাবে লক্ষ করলেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় আযানে حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ . حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলার সময় যথাক্রমে ডানে ও বামে মুখ ঘোরানো নিয়ম। এটা সুন্নত। আযান শেষ হলে হযরত বিলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে আসেন। উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেল। কেউ তো সরাসরি সে অবশিষ্ট পানির একটা অংশ পেয়ে গেলেন। আর যারা সরাসরি পেলেন না, তাদেরকে যারা পেয়েছিলেন তারা নিজেদের অংশ থেকে খানিকটা ঢেলে দিলেন। তারা এতটা আগ্রহের সঙ্গে যে সেই অবশিষ্ট পানি নিচ্ছিলেন, তার কারণ ছিল তাবাররুক। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের স্পর্শ থাকায় তারা সে পানিকে বরকতপূর্ণ মনে করেছিলেন। এর দ্বারা নবীর স্পর্শে বরকত থাকার প্রমাণ মেলে। যারা নবীর খাঁটি উত্তরসূরী, সে আল্লাহওয়ালাদের স্পর্শেও বরকত লাভ হয়।
তারপর হযরত বিলাল রাযি. তাঁবুর ভেতর গিয়ে একটি 'আনাযা নিয়ে আসেন। 'আনাযা বর্শার মতোই একটা অস্ত্র। তবে তা বর্শার তুলনায় ছোট হয়ে থাকে। 'আনাযাটি এক জায়গায় গেড়ে দেওয়া হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটিকে সুতরা বানিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। সবাই তাঁর পেছনে কাতার বেঁধে ইকতিদা করলেন। তাদের সামনে কোনও সুতরা ছিল না। সুতরার ওপাশ দিয়ে কুকুর, গাধা ইত্যাদি চলাচল করছিল। কোনও কোনও বর্ণনায় নারীদের অতিক্রম করার কথাও আছে। তাতে তাদের যাওয়াটা হয় মুক্তাদীদের সম্মুখ থেকে। অথচ তাদের সামনে কোনও সুতরা ছিল না। বোঝা গেল ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট। তাদের আলাদা সুতরার প্রয়োজন নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পুরুষের জন্য লাল ডোরাযুক্ত কাপড় পরা জায়েয। পুরোপুরি লাল বর্ণের পোশাক পুরুষের জন্য পসন্দনীয় নয়।
খ. আযানে حَيَّ عَلَى الفَلَاح ও حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলার সময় যথাক্রমে ডান ও বামদিকে মুখ ফেরানো সুন্নত।
গ. আল্লাহওয়ালাদের স্পর্শযুক্ত বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয।
ঘ. জামাতে নামায পড়লে ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর সুতরা হিসেবে যথেষ্ট। তাদের আলাদা সুতরার প্রয়োজন নেই।
যাহোক হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি, জানাচ্ছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবতাহ নামক স্থানে লাল চামড়ার একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। আবতাহ'র অপর নাম বাতহা। একে 'মুহাসসাব'-ও বলে। জায়গাটি মিনার কাছাকাছি। হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি. একদিন জোহরের সময় এখানে উপস্থিত হন। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাল হুল্লা পরিহিত অবস্থায় তাঁবু থেকে বের হয়ে আসতে দেখেন।
হুল্লা মানে একই কাপড়ের এক জোড়া লুঙ্গি ও চাদর। এটি লাল ছিল মানে লাল ডোরাযুক্ত ছিল, যেমনটা অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়। পুরোপুরি লাল রঙের কাপড় পরা পুরুষের জন্য মাকরূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরতে নিষেধ করেছেন।
হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি, যে সময়টার কথা বলছেন, তখন ছিল যোহরের ওয়াক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুর বাইরে এসে ওযু করেন। হযরত বিলাল রাযি. যোহরের আযান দেন। আযানে যখন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলছিলেন, তখন ডানদিকে এবং যখন حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ বলছিলেন, তখন বামদিকে মুখ ঘোরাচ্ছিলেন। হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি. এটা বিশেষভাবে লক্ষ করলেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় আযানে حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ . حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলার সময় যথাক্রমে ডানে ও বামে মুখ ঘোরানো নিয়ম। এটা সুন্নত। আযান শেষ হলে হযরত বিলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে আসেন। উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেল। কেউ তো সরাসরি সে অবশিষ্ট পানির একটা অংশ পেয়ে গেলেন। আর যারা সরাসরি পেলেন না, তাদেরকে যারা পেয়েছিলেন তারা নিজেদের অংশ থেকে খানিকটা ঢেলে দিলেন। তারা এতটা আগ্রহের সঙ্গে যে সেই অবশিষ্ট পানি নিচ্ছিলেন, তার কারণ ছিল তাবাররুক। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের স্পর্শ থাকায় তারা সে পানিকে বরকতপূর্ণ মনে করেছিলেন। এর দ্বারা নবীর স্পর্শে বরকত থাকার প্রমাণ মেলে। যারা নবীর খাঁটি উত্তরসূরী, সে আল্লাহওয়ালাদের স্পর্শেও বরকত লাভ হয়।
তারপর হযরত বিলাল রাযি. তাঁবুর ভেতর গিয়ে একটি 'আনাযা নিয়ে আসেন। 'আনাযা বর্শার মতোই একটা অস্ত্র। তবে তা বর্শার তুলনায় ছোট হয়ে থাকে। 'আনাযাটি এক জায়গায় গেড়ে দেওয়া হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটিকে সুতরা বানিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। সবাই তাঁর পেছনে কাতার বেঁধে ইকতিদা করলেন। তাদের সামনে কোনও সুতরা ছিল না। সুতরার ওপাশ দিয়ে কুকুর, গাধা ইত্যাদি চলাচল করছিল। কোনও কোনও বর্ণনায় নারীদের অতিক্রম করার কথাও আছে। তাতে তাদের যাওয়াটা হয় মুক্তাদীদের সম্মুখ থেকে। অথচ তাদের সামনে কোনও সুতরা ছিল না। বোঝা গেল ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট। তাদের আলাদা সুতরার প্রয়োজন নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পুরুষের জন্য লাল ডোরাযুক্ত কাপড় পরা জায়েয। পুরোপুরি লাল বর্ণের পোশাক পুরুষের জন্য পসন্দনীয় নয়।
খ. আযানে حَيَّ عَلَى الفَلَاح ও حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলার সময় যথাক্রমে ডান ও বামদিকে মুখ ফেরানো সুন্নত।
গ. আল্লাহওয়ালাদের স্পর্শযুক্ত বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয।
ঘ. জামাতে নামায পড়লে ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর সুতরা হিসেবে যথেষ্ট। তাদের আলাদা সুতরার প্রয়োজন নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: