আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৯৭২
আন্তর্জাতিক নং: ৪৮৪ -
৪২. রুকু ও সিজদায় কি পাঠ করা হবে
৯৭২। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অধিকাংশ সময় এ দুআ পড়তেনঃ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আামি লক্ষ্য করছি যে, আপনি প্রায় سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ দুআটি পাঠ করে থাকেন। তিনি বললেন, আল্লাহ রবুল ইযযাত আমাকে সংবাদ প্রদান করেছেন যে, আমি আমার উস্মাতের মধ্যে অচিরেই একটি নিদর্শন দেখব। তাই যখন আমি তা দেখছি, অধিক মাত্রায় سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ পড়ছি। ঐ নিদর্শন সম্ভবত এই যে, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় অর্থাৎ মক্কা বিজয়-

وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا

এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তো তওবা কবুলকারী।
باب مَا يُقَالُ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنِي عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا دَاوُدُ، عَنْ عَامِرٍ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُكْثِرُ مِنْ قَوْلِ " سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ " . قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَاكَ تُكْثِرُ مِنْ قَوْلِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ . فَقَالَ " خَبَّرَنِي رَبِّي أَنِّي سَأَرَى عَلاَمَةً فِي أُمَّتِي فَإِذَا رَأَيْتُهَا أَكْثَرْتُ مِنْ قَوْلِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ . فَقَدْ رَأَيْتُهَا ( إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ) فَتْحُ مَكَّةَ ( وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا) " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

سبحانك এর অর্থ- হে আল্লাহ আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি সকল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
وبحمدك এর অর্থ- এবং আমি আপনার প্রশংসা আদায়ে রত হচ্ছি। আপনি যে কেবল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত তাই নয়, সেইসঙ্গে যতরকম ভালো ভালো গুণ আছে তাও সব আপনার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে আছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা কী বোঝানো উদ্দেশ্য তা ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে। সারকথা তিনি সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে মা'সূম ছিলেন। সমস্ত নবী-রাসূলই মা'সূম। তা সত্ত্বেও বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতেন এ কারণে যে, মাসূম ও নিষ্পাপ হওয়াটা তাঁর প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট রহমত। এর শোকর আদায়ের জন্য তিনি বেশি বেশি 'ইবাদত-বন্দেগী করতেন। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার যথাযথ শোকর আদায় কার পক্ষে সম্ভব? তিনি যে আল্লাহপ্রদত্ত নি'আমতের যথাযথ শোকর আদায় করতে পারছেন না, এ অনুভূতি ছিল তাঁর মধ্যে অতি প্রবল। এ না পারাকে তিনি নিজ ত্রুটিরূপে গণ্য করতেন। আর সে কারণেই এত বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। আল্লাহ তা'আলার সামনে তাঁর 'আবদিয়াত ও দাসত্বের অনুভূতি ছিল অতি প্রবল। এবং তা এতই উচ্চপর্যায়ের, যেখানে পৌছা আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সেই অবস্থান থেকে নিজ বন্দেগীর কর্তব্য এবং আল্লাহর রাবূবিয়াতের হকের বিপরীতে নিজ ‘ইবাদত-বন্দেগীকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা তোমার যথার্থ ‘ইবাদত করতে পারলাম না। তিনি এ কমতিকে নিজের এক অপরাধরূপে গণ্য করতেন বলেই বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। প্রকৃতপক্ষে এটা কোনও অপরাধ ছিল না, এটা ছিল তাঁর উচ্চপর্যায়ের তাওয়াযু ও বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ।
এ হাদীছে আল্লাহ তা'আলার হাম্দ ও তাসবীহ এবং তাঁর কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করার বিভিন্ন বাক্য বর্ণিত হয়েছে। এ বিভিন্নতা এ কারণে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সবগুলোই পড়তেন। একেকবার একেকটি পড়তেন। আমরাও এর যে-কোনওটি পড়তে পারি।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি রুকূ'-সিজদায় যে তাসবীহ বেশি বেশি পড়তেন তা হচ্ছেঃ- سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ،اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ বা এরই কাছাকাছি কোনও বাক্য, যেমনটা এ হাদীছের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। তাহলে আমরা কেন রুকূ'তে পড়ি سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ আর সিজদায় পড়ি سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى ?
এর উত্তর হচ্ছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের অধিকাংশ সময় রুকূ'তে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ আর সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى –ই পড়েছেন। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় যা পড়েছেন, ফকীহগণ সেটাকেই সুন্নতরূপে গ্রহণ করেছেন। তবে কেউ যদি এ হাদীছে বর্ণিত দু'আ পড়ে, তাতেও নামাযের কোনও ক্ষতি হবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছেরও শিক্ষা হচ্ছে বার্ধক্য এসে গেলে অথবা তার আগেই মৃত্যুর কোনও আলামত বোঝা গেলে যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত হয়ে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৯৭২ | মুসলিম বাংলা